দুপুরের প্রখর রোদে রাজধানীর সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্যদের সামনে এগিয়ে
গেলেন কয়েকজন তরুণ। তাঁদের হাতে থাকা গোলাপ ফুল দিয়ে পুলিশ সদস্যদের
শুভেচ্ছা জানালেন তাঁরা। ফুল হাতে পেয়ে পুলিশ সদস্যরা রীতিমতো অবাক। আজ
শুক্রবার এ দৃশ্য দেখা গেল মত্স্য ভবনের সামনের সড়কে। উত্সুক পথচারীরা এ
দৃশ্য দেখে চমকিত হলেন।
এই উদ্যোগের শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের ‘স্যালুট’ গ্রুপের
মাধ্যমে। এর অন্যতম উদ্যোক্তা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
জিনাত জোয়ার্দার। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশের সবচেয়ে বেশি
সম্পৃক্ততা। আমাদের বিপদে তারাই সবার আগে এগিয়ে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের
বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় নিজের জীবন বিপন্ন করে পুলিশই সবার আগে এগিয়ে এসেছে।
কিন্তু আমরা তাদের শ্রদ্ধা দেখাই না। এ ছাড়া তাদের সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই
নেতিবাচক ধারণা। এই ধারণা বদলে দিতে এবং পুলিশ সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা
জানাতে আমাদের এই উদ্যোগ।’
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, আজ বেলা সাড়ে ১১টায় শাহবাগ থেকে তাঁরা দেড় হাজার
গোলাপ ফুল কিনে আনেন। প্রথমে মত্স্য ভবন থেকে ফুল দেওয়া আরম্ভ হয়। পরে
বেইলি রোডে রমনা থানা, পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের
ফুল দেন তাঁরা। সেখান থেকে তাঁরা রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আহত
পুলিশ সদস্য শরীফাকে দেখতে যান। তাঁর খোঁজখবর নিয়ে তাঁরা রাজারবাগ পুলিশ
লাইনে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এর পর উদ্যোক্তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ভেতরে একাত্তরের শহীদ পুলিশদের
স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তাঁরা বলেন, রাজধানীতে পুলিশদের ফুল
দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে গত সোমবার থেকে। ওই দিনে
তাঁরা শাহবাগ থানা, নিউমার্কেট থানা, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, কারওয়ান বাজার এবং
ফার্মগেট এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ফুল দেন।
জিনাত জোয়ার্দার জানান, এই উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবকেরা নিজেরাই চাঁদা তুলে ফুল
কেনেন। ফুল পেয়ে অনেক পুলিশ সদস্য আনন্দে কেঁদেও ফেলেছেন। তিনি বলেন, এই
ফুল দেওয়ার উদ্যোগ এখানেই শেষ নয়। এখন থেকে সপ্তাহে অন্তত এক দিন করে
প্রতিটি থানায় ও ওই এলাকায় দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের শুভেচ্ছা জানানো
হবে। মানুষের জীবন বাঁচাতে পুলিশদের সম্মান প্রাপ্য। তাই তাঁদের শ্রদ্ধা
জানাতে এবং মানুষের সঙ্গে তাঁদের বন্ধুত্ব বৃদ্ধি করতে এই উদ্যোগ।
ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগের সঙ্গে আরও আছেন, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থী মাহামুদুল ইসলাম, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বাবদ্যালয়ের
শিক্ষার্থী ফারাবি বিন জহির, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
তুষার।
উদ্যোক্তা সূত্রে জানা গেছে, উদ্যোগে শামিল হতে প্রতিদিনই স্বেচ্ছাসেবকদের
সংখ্যা বাড়ছে। তরুণদের পাশাপাশি নানা বয়সের মানুষ এতে যুক্ত হচ্ছেন।