‘প্রতিদিন সকালে মুসা বের হওয়ার সময় দোয়া পড়ে দেই। আজ মুসা আমাকে ঘুমে রেখে
চুপচাপ বেরিয়ে পড়ে। আজ দোয়া পড়ে দেইনি বলেই আগুনে পুড়তে হলো মুসাকে! আমি
সরকারের কাছে বিচার চাই, বিচার চাই আল্লাহর কাছে।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন ইজিবাইকের চালক মোহাম্মদ মুসার (২৫) মা বিবি সখিনা।
গতকাল সোমবার জামায়াতের ডাকা হরতাল চলাকালে সকাল নয়টায় চট্টগ্রামের
বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকায় যাত্রীবাহী ইজিবাইক নিয়ে রাহাত্তারপুলে
যাচ্ছিলেন মুসা। নূরনগর হাউজিং সোসাইটির সামনে একদল যুবক তাঁর গাড়িটি
থামান।
প্রত্যক্ষদর্শী মিজানুর রহমান বলেন, যুবকেরা প্রথমে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে
পেট্রল ঢেলে গাড়িতে আগুন দেন। মুসার গায়েও পেট্রল দিয়ে আগুন দেন। মুসার
বাড়ি পার্শ্ববর্তী পূর্ব বাকলিয়া ওয়াজেরপাড়া এলাকায়। ফলে অনেকেই তাঁকে চিনে
ফেলেন। তাঁরা আগুন নিভিয়ে মুসাকে উদ্ধার করেন। ততক্ষণে গায়ের পোশাক পুড়ে
যায়। বাসায় নেওয়া হয় অজ্ঞান মুসাকে। পরে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি
করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসকেরা যখন চিকিৎসা দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর শরীর ছিল
নিস্তেজ, কথা বলতে পারছিলেন না। তিনি এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বলে
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আশিকুর রহমান সিদ্দিকী
প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুসার শরীরের ৭৫ শতাংশই দগ্ধ। এত বেশি পোড়া রোগীর
চিকিৎসাও বেশ জটিল। আমরা তাই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই তাঁকে ঢাকা মেডিকেল
কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
পাঁচ বোন, তিন ভাই আর মা-বাবাকে নিয়ে ১০ জনের সংসারে মুসাই একমাত্র
উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দুই ভাই ছোট। বাবা আবদুল মোনাফ (৫৫) অসুস্থ, কাজ করতে
পারেন না। বোনদের কারও বিয়ে হয়নি। মুসার মা সখিনা বলেন, ‘মুসা ছোটবেলা
থেকে নিয়মিত নামাজ আদায় করত, দাড়িও রেখেছিল। ওরা আমার ছেলের দাড়ি পুড়িয়ে
দিল কেন?’ বাবা আবদুল মোনাফ বলেন, ‘আমার ছেলে বাঁচবে কি না আল্লাহ জানেন।
যারা এভাবে মানুষ খুন করে, আমি তাদের বিচার চাই। অভাবের কারণে ছেলে গাড়ি
নিয়ে বের হয়েছিল। তা না-হলে বের হতে হতো না।’
হাসপাতালে মুসাকে দেখতে আসা আত্মীয়রা বলেন, মুসার চিকিৎসার ভার বহনের খরচ
পরিবারের নেই। কাল কীভাবে তাদের খাবার জুটবে, তা কেউ জানে না। চট্টগ্রাম
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন,
‘পিকেটাররা চোরাগোপ্তাভাবে এই হামলা চালিয়েছে। এর পরও আমরা হাতেনাতে
তিনজনকে ধরেছি।’