Saturday, March 30, 2013

রিকশা চালিয়ে লাখপতি!


চলে আমার রিকশা হাওয়ার বেগে... ঝড়ের বেগে তিন চাকার রিকশা ছুটিয়েছেন এতকাল
কিন্তু ভাড়া সেই ১০-২০ টাকার বেশি নয়। আর রিকশা চালিয়ে লাখপতি? ঢাকার রিকশাওয়ালারা নিশ্চয়ই স্বপ্নেও ভাবেন না। রিকশাওয়ালাদের সেই অসম্ভব স্বপ্নকেই পূরণ করল প্রথম ঢাকা রিকশা ফিয়েস্তা। বিশ্বাস না হয় জিগ্যেস করুন রিকশাওয়ালা আবদুর রহিমকেই। ‘ঢাহাতে ছয় বছর রিকশা চালাইছি কিন্তু এত টাহা এক লগে পাই নাই।’ বলছিলেন রিকশাচালক আবদুর রহিম। ১৫ মার্চ আবদুর রহিম আর তিন সঙ্গী মিলে সত্যিকার অর্থেই হাওয়ার বেগে রিকশা চালিয়েছেন। জিতে নিয়েছেন রিকশা দৌড় প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার এক লাখ টাকা। টিভি ক্যামেরার সামনে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন রাতারাতি ‘সেলিব্রেটি’ আবদুর রহিম।
জাতীয় সংসদ ভবন থেকে পুরান ঢাকা হয়ে আবার জাতীয় সংসদ ভবন। এই ছিল দূরত্ব। রিলে রেসের আদলে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন ৮৪ জন রিকশাচালক। এই আয়োজনে সহযোগী হিসেবে ছিল বাংলাদেশ জাপান দূতাবাস ও জাপান আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা (জাইকা)। আয়োজনে সহযোগিতা করে মোজো।
রিকশাপ্রেমী
রিকশা আর রিকশাওয়ালাদের ঘিরেই এমন ভরপুর আয়োজন? চোখে পড়ার মতো ঘটনা তো বটেই।
এই আয়োজনের পেছনের মানুষদের মধ্যে অন্যতম সিসিলিয়া আমি কিটাজিমা। কিতাজিমার জন্ম আর্জেন্টিনায়। বাবা-মা দুজনেই জাপানি। বছর দুয়েক আগে প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছিলেন এই চিত্রনির্মাতা। সেবারই বাংলাদেশি ঘরানার রিকশার সঙ্গে প্রথম পরিচয় কিতাজিমার। যাকে বলে প্রথম দেখাতেই প্রেম। কিতাজিমা মনে মনে তাঁর পরবর্তী তথ্যচিত্রের বিষয় খুঁজছিলেন। তথ্যচিত্রের বিষয় হিসেবে তিনি বেছে নেন রিকশাকে। কিতাজিমার সহায়তায় এগিয়ে আসেন এক জাপান-প্রবাসী বাংলাদেশি সলিমুল্লাহ কাজল। চারুকলা অনুষদের পড়ালেখা শেষে কাজল পাড়ি জমিয়েছিলেন জাপানে।
জাপানে দীর্ঘদিন কাজ করছেন টেলিভিশন প্রযোজক হিসেবে। কাজ করেছেন জাপানের এন টিভি, টিভি আশাহি, টিভি টোকিও এবং ফুজি টিভির সঙ্গে।
কিতাজিমার সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর তাঁরা শুরু করেন রিকশা উৎসব আয়োজনের ভাবন-চিন্তা। তারই সুবাদে এই রিকশা ফিয়েস্তা।
রিকশা উৎসবের দ্বিতীয় দিনে কথা হয় আমি কিতাজিমার সঙ্গে। কাজল এবং কিতাজিমা দুজনই তখন ব্যস্ত সম্পাদনার কাজে। সম্পাদনার ফাঁকেই কিতাজিমা শোনালেন রিকশা নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রিকশা নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রটির কাজ মাঝামাঝি পর্যায়ে আছে। রিকশাকে সামনে রেখেই বাংলাদেশকে বাইরের দুনিয়ার মানুষের কাছে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে চান তিনি। সামনে একটি পূর্ণদের্ঘ্য কাহিনিচিত্র তৈরি করতে চান কিতাজিমা। সেটিরও বিষয় বাংলাদেশের রিকশা এবং রিকশাওয়ালা। ছবির কাহিনিও মোটামুটি তৈরি।
বাংলাদেশের রিকশার কোন দিকটি বেশি ভালো লাগে কিতাজিমার?
‘এই রিকশাগুলো খুব দারুণভাবে সাজানো হয়। রঙিন আর ঝলমলে নতুন রিকশা দেখতে খুব ভালো লাগে’। বলছিলেন আমি কিতাজিমা।
রিকশার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন সত্যি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি কিতাজিমার রিকশার চেয়ে বেশি পছন্দ বাংলাদেশের রিকশাওয়ালাদেরই।
রিকশাওয়ালার স্বপ্ন
রিকশা হাঁকিয়ে যাচ্ছে বাঘ মামা। আর তার পেছনে সওয়ারি শিয়াল পণ্ডিত।
বনের পশুপাখির এমন চিত্রায়ন চোখে পড়বে আমাদের রিকশাচিত্রেই। রিকশা ফিয়েস্তার অংশ হিসেবে ‘রিকশাওয়ালার স্বপ্ন’ শিরোনামে সপ্তাহব্যাপী রিকশাচিত্রের প্রদর্শনী ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে।
জাপানি চিত্রনির্মাতা সিসিলিয়া আমি কিতাজিমা