Saturday, March 30, 2013

বিদ্যালয়ের পথে পথে অশ্লীল পোস্টার

কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্চবিদ্যালয়। বিদ্যালয়সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কালভার্ট। কালভার্টের নিচে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর জটলা। তাদের দৃষ্টি সেতুর দেয়ালে। ওই স্থানে ইংরেজি ও বাংলা ছবির অশ্লীল পোস্টার সাঁটা।
‘কী দেখছ?’ জিগ্যেস করতেই মাথা নিচু করে বিদ্যালয়ের দিকে রওনা হয় শিক্ষার্থীরা। এটি গত বৃহস্পতিবার সকালের ঘটনা।
ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ টি এম খলিলুর রহমান বলেন, ‘অশ্লীল পোস্টার সাঁটার স্থান হিসেবে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীদের স্কুল-কলেজের সড়কগুলো যেন বেশি পছন্দ। আমার স্কুলের চারপাশে একই অবস্থা। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এসব দেখে আকৃষ্ট হচ্ছে। সর্বনাশ যা হওয়ার তা তো হয়েই যাচ্ছে।’
জানা গেছে, ভৈরব বাণিজ্যিক শহর। এখানে নৌবন্দর ও রেলওয়ে জংশন রয়েছে। কাজের প্রয়োজনে চারপাশের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন ভৈরবে আসা-যাওয়া করে।
ফলে স্বাধীনতার আগে থেকেই প্রেক্ষাগৃহগুলোর ব্যবসা সফল। ঢাকার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাণিজ্যিক ছবি প্রদর্শন করা হয় এখানকার প্রেক্ষাগৃহগুলোতে; একইসঙ্গে ইংরেজি ছবির দর্শকও প্রচুর। প্রচার হিসেবে শহরের একাধিক স্থানে পোস্টার সাঁটা হয়, যার বেশির ভাগই অশ্লীল।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কালভার্ট, শহীদ জিয়া তোরণ, মনামারা সেতু, বঙ্গবন্ধু সরণি সেতু, নতুন গলি, মালগুদাম, স্টেশন সড়ক, বাসস্ট্যান্ড ও ঋষিপট্টি সড়কে অশ্লীল পোস্টারের আধিক্য। এর মধ্যে ইংরেজি ছবির পোস্টারও রয়েছে। প্রতিটি পোস্টারে নারীদের অরুচিকর ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এসব স্থান দিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্চবিদ্যালয়, কে বি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, এম পি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, জিল্লুর রহমান মহিলা ডিগ্রি কলেজ ও রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে।
রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজর অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, এমন স্থানে পোস্টার সাঁটা হয়েছে, চোখ পড়বেই। এমন পরিবেশে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, আজ থেকে আট বছর আগে ভৈরবে অশ্লীল পোস্টারের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। তখন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রেক্ষাগৃহের মালিকদের নিয়ে উপজেলা প্রশাসন সভা করে।
সিদ্ধান্ত হয়, পোস্টার সাঁটার আগে তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নজরে আনা হবে। অনুমোদনের পর সাঁটা হবে। উদ্যোগের কয়েক বছর নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগ হয়। কিন্তু দুই বছর ধরে তা আর মানা হচ্ছে না।
জানতে চাইলে ভৈরবের ইউএনও সেলিম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভৈরবে আমি নবাগত। এ কারণে বিষয়টি নজরে আসেনি। মালিকদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিকারে যাব। না শুনলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’