দলটি
পাকিস্তান হলে কেউ অবাক হতেন না। সেখানে অন্তঃকোন্দল প্রায় প্রাত্যহিক
ঘটনা, শৃঙ্খলাজনিত কারণে গৃহদাহের আগুনের আঁচ দলীয় ক্যাম্প পেরিয়ে যায়
প্রায়ই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া? মাঠে তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের নিয়ামক
যে মাঠের বাইরের শৃঙ্খলা, সেটি কে না জানে! অথচ সেই অস্ট্রেলিয়া দলের চার
ক্রিকেটারকে কিনা এ কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টের
দল থেকে। কপালে চোখ তুলে দেওয়ার মতোই ব্যাপার!
সময়টা যে তাই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের জন্য টালমাটাল, সেটি না বললেও চলছে।
শেন ওয়াটসন, মিচেল জনসন, জেমস প্যাটিনসন ও উসমান খাজাকে অমন শাস্তি দেওয়ার
পর ঝড় বইছে ক্রিকেট-বিশ্বে। সাবেক ক্রিকেটার অ্যালান বোর্ডার, মার্ক ওয়াহরা
তো এর সমালোচনাও করতে ছাড়েননি। অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক অবশ্য
সিদ্ধান্তটিকে বলছেন যথার্থ, 'যা খুশি হোক, এমন ভাবনায় দায়িত্ব ছেড়ে চলে
যাওয়া খুব সহজ। তবে সবাই জানে, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা আমি কত উপভোগ করি।
আমি নিশ্চিত যে, ওই চারজনও তা করে। ওরা জানে, এই দলটির সাফল্য দেখার জন্য
আমি কতটা মুখিয়ে আছি। ওরাও তাই। একটা উপায়েই আমরা অস্ট্রেলিয়াকে কাঙ্ক্ষিত
জায়গায় নিয়ে যেতে পারি। সবাই একসঙ্গে মিলে চেষ্টা করলেই কেবল তা সম্ভব।'
ভারতের কাছে দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারের পর অস্ট্রেলিয়ার
প্রত্যেকের কাছে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় জানতে চেয়েছিলেন কোচ। ওই
চতুষ্টয় বাদে প্রত্যেকেই তাতে সাড়া দিয়েছেন। এটি যে গ্রহণযোগ্য নয়, তা মনে
করিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক, 'আমাদের কাছে যে উপায়গুলো জানতে চাওয়া হয়েছিল, সেটি
অমন কঠিন কিছু না। সেটি না করে ওরা দলকে ডুবিয়েছে, কোচের মাথা হেঁট করে
দিয়েছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।' তবে শাস্তি যে এই এক ঘটনার
কারণে নয়, তাও বলেছেন ক্লার্ক, 'খুব কঠিন সময় পার করছি আমরা। সমর্থক ও
গণমাধ্যমকে আমি অনুরোধ করব এটি বুঝতে যে, শুধু একটি ঘটনার প্রতিফলনে এই
শাস্তি নয়। সফরে এখন পর্যন্ত আমরা যেভাবে খেলছি, সেটি অগ্রহণযোগ্য। এর
পেছনে মাঠের বাইরের নানান ঘটনার প্রভাবও রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের মানদণ্ড যথার্থ জায়গায় থাকবে না।'
সতীর্থদের শাস্তি দেওয়ার পরও ব্যক্তিগত সম্পর্কে ফাটল ধরবে না বলে
ক্লার্কের বিশ্বাস, 'এ ঘটনার জন্য ওই চারজনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বে ফাটল
ধরবে না। কারণ জানি, ওরা আমাকে কতটা সম্মান করে। আর আমিও যে ওদের সম্মান
করি, তাও ওদের অজানা নয়। এমন ঘটনার মুখোমুখি হতে তাই আমার ভেতর অস্বস্তির
খচখচানি নেই।' অভিমানে দেশে ফিরে যাওয়া সহ-অধিনায়ক শেন ওয়াটসন অবসর নিয়ে
ফেলতে পারেন বলে যে গুঞ্জন, সেটিও হালে পানি পায়নি অধিনায়কের কাছে, 'ওয়াটো ও
তার সহ-অধিনায়কত্ব নিয়ে অনেকে অনেক প্রশ্ন এখন তুলবে। তবে আমার পূর্ণ
বিশ্বাস আছে ওর ওপর। আমি নিশ্চিত যে এই অবস্থা থেকে ও ফিরে আসতে পারবে।
আবার হতে পারবে অস্ট্রেলিয়ার সহ-অধিনায়ক। ফর্মে থাকা ওয়াটো বিশ্বের অন্যতম
সেরা ক্রিকেটার। তবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমরা ব্যক্তিগত কিছু বিবেচনায়
আনিনি। দলের স্বার্থের কথা ভেবে নিয়েছি সিদ্ধান্ত।'
টেস্ট সিরিজের মাঝে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু ক্লার্ক যে
দূর-ভবিষ্যতের কথাই ভাবছেন, 'এসব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সঠিক সময় বলে কিছু
নেই। সঠিক শাস্তির নির্দিষ্ট কিছুও নেই। আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ
নিয়েছি। আশা করি, এ ঘটনার পর আমরা দল হিসেবে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠব।' তৃতীয়
টেস্টে সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বানও তিনি জানিয়েছেন সতীর্থদের প্রতি, 'পুরো
দলের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ। এখন স্কোয়াডের অন্যদের সামনে সুযোগ এসেছে
নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণের। তৃতীয় টেস্টে সেটি যদি তারা কাজে লাগাতে না
পারে, কে জানে, হয়তো আর কোনো সুযোগ তারা পাবে না।'
এদিকে 'অপরাধী' চতুষ্টয়ের একজন প্যাটিনসন মাথা পেতে দোষ মেনে নিচ্ছেন। দলের
কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি, 'এখন বুঝতে পারছি যে, এটি
কোচ-অধিনায়ক এবং বাকি দলের প্রতি একধরনের অসম্মান প্রদর্শন। ওদের জায়গায়
থাকলে আমিও এমন স্বার্থপর আচরণের জন্য হতাশ হতাম। সফল এক দল হতে হলে এমন
আচরণ করা যাবে না। কাল অনুশীলনে পুরো দলের কাছে তাই ক্ষমা চেয়েছি।' সফরে
অস্ট্রেলিয়ার এই সফলতম ফাস্ট বোলারের কাছে শাস্তিটা মনে হচ্ছে যথার্থ,
'আমার জন্য এই অজুহাত দেওয়াই সবচেয়ে সহজ যে, শাস্তিটা বেশি কঠোর হয়ে গেছে।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যাপারটা তা নয়। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ক্রিকেট খেলতে হলে
আপনাকে এসব মেনে নিতেই হবে। সব ঠিকঠাক মতো করতে হবে। হ্যাঁ, বাদ পড়ার কারণে
আমি ব্যক্তিগতভাবে হতাশ। তবে দীর্ঘমেয়াদে এতে দলের উপকারই হবে।