ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে ফিরে গেছেন শেকড়ে। ২১ বছর আগে এই শেফিল্ড
শিল্ড দিয়েই শুরু হয়েছিল ভবিষ্যৎ এক মহাতারকার পথচলা। এই টুর্নামেন্টে আলো
ছড়িয়েই অস্ট্রেলিয়া দলে ঢোকা, পরে তাঁর দীপ্তি ছড়িয়েছে ক্রিকেট-বিশ্বে।
স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন ক্রিকেট ইতিহাসে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ছাড়ার পর
আবার ফিরলেন সেই টুর্নামেন্টে, কিছুটা ঋণ শোধের দায় থেকে। দেখিয়ে দিলেন
গোধূলিতেও ঔজ্জ্বল্য কমেনি খুব একটা। এ মৌসুমের ‘শেফিল্ড শিল্ড প্লেয়ার অব
দ্য ইয়ার’ রিকি পন্টিং!
হোবার্টে কাল অস্ট্রেলিয়ান স্টেট ক্রিকেট পুরস্কার অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ার
সাবেক অধিনায়ক পেলেন এই সম্মান। আর ট্রফি হাতে হাসিমুখে জানিয়ে দিলেন, অবসর
ভেঙে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই। ভারতে অস্ট্রেলিয়ার
ব্যাটিংয়ের দুর্দশা দেখে পিঠোপিঠি দুই অ্যাশেজের জন্য পন্টিং ও মাইক হাসিকে
ফেরানোর দাবি গত কয়েক দিনে জোরেশোরে উঠেছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট আঙিনায়।
তবে এই অনুষ্ঠানে পন্টিংয়ের মতো হাসিও জানিয়ে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
এখন অতীত।
ভারতে যখন ধুঁকছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং, শেফিল্ড শিল্ডে তখন পন্টিংয়ের
ব্যাটে রানবন্যা। ৮ ম্যাচে তিন সেঞ্চুরি ও চার ফিফটিতে
টুর্নামেন্ট-সর্বোচ্চ ৮৭৫ রান করেছেন ৮৭.৫০ গড়ে। তাসমানিয়াকে তুলেছেন
ফাইনালে, আগামীকাল শুরু ফাইনালে টাইগার্সের প্রতিপক্ষ কুইন্সল্যান্ড বুলস।
১৮ ভোট পেয়ে সেরার দৌড়ে পন্টিং পেছনে ফেলেছেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি (৪৮)
শাদ সেয়ার্সকে (১৬ ভোট)।
তবে এমন ফর্মের পরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা নয়, পন্টিং ভাবছেন আগামী
মৌসুমের শেফিল্ড শিল্ড নিয়ে, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে অনেক পেছনে ফেলে
এসেছি, আমি বরং রোমাঞ্চিত তাসমানিয়ান ক্রিকেটকে যতটা পারা যায় ফিরিয়ে দিতে
পেরে। অবসরের সিদ্ধান্ত অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত। অনেক সময় নিয়ে, সব দিক
ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সঠিক কারণেই নিয়েছি। এবার শেফিল্ড শিল্ডে খেলা
অনেক উপভোগ করেছি, মনে হচ্ছে এখনো খুব ভালো খেলছি...দেখা যাক, হয়তো পরের
মৌসুমেও খেলতে পারি।’
ভারত সিরিজের বিপর্যয়ে দলকে আরও অনেকের মতো সমালোচনার তিরে বিদ্ধ করেননি
পন্টিং। সবাইকে আস্থা রাখতে বলছেন ক্লার্ক-আর্থারের ওপর, ‘অবসরের পর
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছি, খুব বেশি খেলা
দেখিনি। দল আরেকটু ভালো খেলেনি বলে আমরা সবাই অবশ্যই হতাশ। তবে ভেঙে পড়ার
কিছু নেই। ভারতে প্রথম তিন-চার সফরে তো আমি রানই করতে পারিনি। ছেলেরা এবার
পরের সফরের জন্য অনেক কিছু শিখবে। মাইকেল ক্লার্ক ও মিকি আর্থার ভালো করেই
জানে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়।’
সদ্যই ছেড়েছেন বলে পন্টিংয়ের চেয়ে হাসিকে ফেরানোর ডাকটাই বেশি উচ্চকিত।
শেফিল্ড শিল্ডে সর্বশেষ দুই ম্যাচে অপরাজিত ৯৯ ও ৯৫ করেছেন হাসি। কোচ মিকি
আর্থার বলেছেন, হাসির জন্য দরজা এখনো খোলা। তবে পন্টিংয়ের মতো মি. ক্রিকেটও
আর পিছু ফিরে তাকাতে চান না, ‘এটা (ফেরার আহ্বান) সত্যিই অনেক সম্মানের।
তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ওই প্রেশার কুকারে আমি আর ফিরতে চাই না, বিশেষ
করে অ্যাশেজের আগে। আসছে শীতটা আমি পরিবারের সঙ্গে কাটাতে উন্মুখ হয়ে আছি।
দ্রুতই ফিরতে চাই স্বাভাবিক জীবনে।’