বড় বোনকে বিয়ে দেওয়া হলেও যৌতুকের ৪০ হাজার টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি।
অসুস্থ প্রতিবন্ধী আরেক বোনকে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে হয়। ছোট দুই ভাই স্কুলে
পড়ে। আর বৃদ্ধ মা-বাবা তো আছেনই। পরিবারের সবার ভরসা ছিল মোহাম্মদ সেলিম।
১৬ বছরের এই কিশোর পরিবারের সবার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়েছিল। কিন্তু একটি
গুলি শেষ করে দিয়েছে পরিবারটির স্বপ্ন।
সেলিম বগুড়া নিউমার্কেটের ফপস টেইলারের কারিগর ছিল। পরিবারের সদস্যরা
জানিয়েছেন, তার কাজের সুনাম ছিল সবার কাছে। তাই আয়-রোজগারও ভালো ছিল।
সম্প্রতি টানা তিন দিনের হরতালে দোকান বন্ধ থাকবে বলে ২ মার্চ, শনিবার সারা
রাত কাজ করেছিল সেলিম। কাজ শেষে ভোরে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। কিন্তু
নিউমার্কেট থেকে বড়গোলা হয়ে চারমাথার দিকে আসতেই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে চলা
পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে সেলিম। এরপর হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে তার
পেটে। মুমূর্ষু অবস্থায় লোকজন তাকে নিয়ে যায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরদিন ভোরে মারা যায় সে। সেলিমের বাড়ি বগুড়া শহর
থেকে আট কিলোমিটার দূরে বানদীঘি গ্রামে। সেখানেই পরিবারের সবার সঙ্গে ছোট
একটি মাটির ঘরে থাকত সে।
৯ মার্চ বেলা ১১টার দিকে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির ফটকের সামনেই বসে আছেন বৃদ্ধ
বাবা দুদু মিয়া। শোকে স্তব্ধ। প্রতিবেশীরা জানালেন, গত কয়েক দিন ধরে এভাবে
বাড়ির সামনে ছেলের অপেক্ষায় বসে থাকেন তিনি। কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেন না।
সেলিমের মা রেহানা বেগম বলেন, ‘ছলডার টেকাত হামাগেরে সগলিরই মুখোত ভাত
জুটিচ্চিল। বাড়িত আসপার ধরে এক গুলিত হামাগেরে সব শেষ হয়্যা গেলো। এখন
হামাকেরে কী হবি?’
সেলিম কোনো রাজনীতি করত কি না, জানতে চাইলে রেহানা বেগম বলেন, ‘বাবা,
সক্কলিক জিজ্ঞেস করেন। হামার ছলডা খালি কাজ করিচ্চিল। সপ্তায় আড়াই হাজার
টেকা হামাক আন্যে দিত। কাজ ছাড়া কিচুই বুজিচ্চিল না।’
সেলিমের চাচা রিকশাচালক টুকু প্রামাণিক জানান, অসুস্থ বোনটার একটা ব্যবস্থা
করার কথা সব সময় বলত সেলিম। বাড়ির ঘর ঠিকঠাক করারও ইচ্ছা ছিল। কিন্তু
কিছুই করতে পারল না।
প্রতিবেশী সিদ্দিকুর রহমান জানান, সেলিম কোনো রাজনীতি করত না। ও সারাক্ষণ কাজ নিয়েই পড়ে থাকত। খুব ভালো টেইলার ছিল সে।
জামায়াত-শিবির দাবি করেছে, পুলিশের গুলিতেই সেলিম মারা গেছে। তবে সদর থানার
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ শহিদুল আলম জানান, শিবিরের সন্ত্রাসীদের
গুলিতেই সেলিম মারা গেছে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।