Tuesday, March 12, 2013

মাদকাসক্ত স্বামীর নির্যাতনে প্রধান শিক্ষিকা খুন

‘মা-বাবা দুজনেই খুব ভালো ছিলেন। দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসতেন। বাবা এমনিতে খুব ভালো, শুধু মাদক সেবন করলে পাগলের মতো হয়ে যেতেন। তখন মাকে মারধর করতেন। মা নেই—ভাবতে কষ্ট লাগছে। ছোট ভাইটি শুধু মাকে খুঁজছে। এখন বাবাও পলাতক। আমি কাউকে হারাতে চাই না, মা-বাবা দুজনকেই চাই।’ দুই বছর বয়সী ছোট ভাই থোয়াইচিং মারমাকে কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিল মাংসুচিং মারমা (১০)। তার বাবার নির্যাতনে মা ক্রাঞোরী মারমা (৩০) গত রোববার রাতে মারা যান।
ক্রাঞোরী মারমা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা হারুন হেডম্যানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি মাটিরাঙা পৌরসভার বাবুপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার রাতে জুয়া খেলায় হেরে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে স্বামী লাব্রাচাই মারমা (৩৬) টাকার জন্য ক্রাঞোরীর ওপর নির্যাতন শুরু করেন। নির্যাতনের একপর্যায়ে ক্রাঞোরী অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে মাটিরাঙা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাঁকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। রোববার ভোরে তাঁকে মাটিরাঙা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে সেখান থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ওই দিন রাতে তিনি মারা যান। হাসপাতাল থেকে লাব্রাচাই মারমা কৌশলে পালিয়ে যান।
ক্রাঞোরী মারমা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ রোববার সেঁতু মারমা (২২) নামে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় ক্রাঞোরীর ভাই মংচাথোয়াই মারমা বাদী হয়ে লাব্রাচাই মারমাসহ দুজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর থেকে লাব্রাচাই মারমা পলাতক। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রোববার মিছিল ও সমাবেশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও একটি নারী সংগঠন।
হারুন হেডম্যানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগম ও আয়শা আক্তার জানান, ক্রাঞোরী মারমা প্রায়ই আমাদের কাছে তাঁর স্বামীর নির্যাতনের ঘটনাগুলো বলতেন। ৭ মার্চ বিদ্যালয়ে এসে ক্রাঞোরী তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, ‘প্রতি মাসে বেতনের ছয় হাজার টাকা স্বামী নিয়ে নেন। জুয়া খেলে আমার গয়নাগুলো শেষ করেছে। এক নারীর সঙ্গে তাঁর পরকীয়ার সম্পর্ক আছে বলে জানতে পেরেছি। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে আমাকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করে।’
ক্রাঞোরীর শ্বশুর সুইচা মারমা বলেন, ‘মাঝে মাঝে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো। ছেলে একটু নেশা করত। তবে ছেলের বউ ভালো ছিল। ওই দিন কী হয়েছে আমি জানি না।’
মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ইউসুফ মিঞা জানান, ক্রাঞোরী মারমা হত্যার ঘটনায় তাঁর ভাই বাদী হয়ে দুজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। ক্রাঞোরীর স্বামী লাব্রেচাই মারমাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।