‘রাস্তায় কয়েকজন পিকেটার টায়ারে আগুন দিচ্ছিল। পরিস্থিতি দেখে তাড়াহুড়ো করে
হাঁটতে শুরু করি। আমি ছিলাম বাম দিকে। মেয়ে আমার ডান হাত ধরে হাঁটছিল।
হঠাৎ পর পর দুইটা বিকট শব্দ। তারপর আমার মেয়ে ডান চোখ চেপে ধরে কান্না শুরু
করে। দেখি ওর চোখ থেকে রক্ত ঝরছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে
কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন ককটেল বিস্ফোরণে আহত
স্কুলছাত্রী অন্তু বড়ুয়ার (১৪) মা শিল্পী বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনের
মতো সকালে অন্তু আমার হাত ধরে চেরাগী পাহাড় এলাকার কোচিং সেন্টারে যাচ্ছিল।
এ সময় আমার মেয়ে হরতালের নির্মম শিকার হয়।’
জানা গেছে, অন্তু নগরের অপর্ণাচরণ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম
শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। ১৮-দলীয় জোটের ডাকা ৩৬ ঘণ্টার হরতালের
দ্বিতীয় দিন সকালে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার মোমিন রোডের হেমসেন
লেনের মুখে টায়ারে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় ওই পথ দিয়ে মায়ের সঙ্গে সে কোচিং
সেন্টারে যাচ্ছিল।
ঘটনার পর অন্তুকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে ৪৮ নম্বর বেডে ভর্তি করানো হয়। দুপুরে চিকিৎসকেরা
অস্ত্রোপচার করেন।
অন্তুর বাবা অঞ্জন বড়ুয়া ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমার কপালের দোষ। আমি ঈশ্বরের কাছে বিচার চাই। যারা এসব করছে তাদের যেন সুমতি হয়।’
গতকাল বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে আছে অন্তু।
কেমন লাগছে জানতে চাইলে মুখ দিয়ে শুধু গোঙানির মতো শব্দ করে আবার নীরব হয়ে
যায় সে। হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার সুব্রত দাশ প্রথম
আলোকে বলেন, ‘স্প্লিন্টারের আঘাতে অন্তুর ডান চোখের কর্নিয়ায় কিছুটা আঁচড়
লেগেছে। চোখের ভ্রুতে সেলাই দিতে হয়েছে। ডান গাল থেকে স্প্লিন্টার বের করা
হয়েছে। সে অসম্ভব ভয় পেয়েছে। ভয় না কাটায় সে কথা বলছে না।’
কোতোয়ালি অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মির্জা সায়েম মাহমুদ বলেন,
‘হরতাল-সমর্থকেরা যে টায়ারটিতে আগুন দেয়, তার ভেতরে একটি ককটেল ছিল। অন্য
একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয় রাস্তায়। ককটেলের স্প্লিন্টারে স্কুলছাত্রী
আহত হয়। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।’