Sunday, March 31, 2013
বোমায় কবজি উড়ে গেল পুলিশের
রাজশাহীতে আজ রোববার সকালে সংঘর্ষের সময় জামায়াত-শিবিরের বোমা হামলায় পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) হাতের কবজি উড়ে গেছে। তাঁকে প্রথমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সা দেওয়া হয়। পরে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষে পুলিশের আরও ছয় সদস্যসহ অন্তত ৩২ জন আহত হয়েছে।
আহত এসআইয়ের নাম মকবুল হোসেন (২১)। তিনি রাজশাহী মহানগরের মতিহার থানার একজন শিক্ষানবিশ এসআই। প্রশিক্ষণ শেষ করে মাস খানেক আগে তিনি এই থানায় যোগ দেন। তাঁর বাবা আনসার আলী রাজশাহী মহানগর পুলিশের হাবিলদার (নিরস্ত্র) হিসেবে কর্মরত। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জে।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জামায়াত-শিবিরের ছোড়া বোমার আঘাতে মকবুলের হাতের কবজি উড়ে গেছে। আর ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নিজেদের গ্রেনেড ছুড়তে গিয়ে পুলিশের ওই সদস্য আহত হয়েছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের চিকিত্সক বি কে দাম প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, মকবুল হোসেনের ডান হাতের কবজি ও বাম হাতের তিনটি আঙুল উড়ে গেছে। বাম হাতের বাকি দুটি আঙুলও ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে বোমার বেশ কিছু স্প্লিন্টার বের করা হয়েছে।
চিকিত্সক বি কে দাম আরও জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক ফোন করে মকবুল হোসেনের চিকিত্সার খোঁজ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তাঁকে উন্নত চিকিত্সার জন্য দ্রুত হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মকবুল হোসেন চিকিত্সকদের জানিয়েছেন, তাঁর মাথা বরাবর বোমাটি আসছিল। তিনি মাথা বাঁচাতে দুই হাত দিয়ে সেটি ঠেকানোর চেষ্টা করেন। তখনই এই দুর্ঘটনা ঘটে।
মকবুল হোসেনের বাবা আনসার আলী ছেলের সঙ্গে ঢাকায় যান। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ছেলে তাঁর সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। শুধু কয়েকবার চোখে মেলে তাকিয়েছেন। তবে ছেলের একজন সহকর্মী তাঁকে (আনসার) জানিয়েছেন, স্যার (মকবুল) মাথা বাঁচাতে দুই হাত দিয়ে বোমা ঠেকাতে গিয়েছিলেন।
এ ছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত পুলিশের দাঙ্গা দমন বিভাগের (আরসিডি) কনস্টেবল রফিকুল ইসলামকে (২২) হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। বোমার আঘাতে তাঁর বাম হাতের কুনুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। আহত অন্য পুলিশ সদস্যরা প্রাথমিক চিকিত্সা নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের বাটারমোড় এলাকায় জামায়াত-শিবিরের প্রায় ৩০০ নেতা-কর্মী মিছিল বের করেন। তাঁরা আমান ট্রেডিং করপোরেশনের সামনে এসে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল, ককটেল ও হাত বোমা ছুড়তে থাকেন। পুলিশও পাল্টা রাবারের গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে সংঘর্ষ রানীবাজার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
রানীবাজারের মোমিন সাইকেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ১০ থেকে ১২ মিনিট এমন তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে যে তাঁরা বোমা আর সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দে কিছু শুনতে পাননি। ধোঁয়ায় কিছু দেখাও যাচ্ছিল না। তাঁর দোকানের সামনে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে। অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। তিনি বলেন, ২১ বছর ধরে তিনি এই এলাকায় ব্যবসা করছেন। এমন ভয়ানক সংঘর্ষ কোনোদিন দেখেননি। তিনি জানান, জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের হাতে বাটুলও দেখা গেছে।
বাজারের মারুফ ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী ইসা শেখ বলেন, সংঘর্ষ এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে তিনি দোকানের পুরো শার্টারও নামাতে পারেননি। দোকানের ভেতরে দাঁড়িয়েই একজনের আর্তনাদ শুনেছেন তিনি। সংঘর্ষ থেমে গেলে বাইরে গিয়ে তিনি রাস্তায় রক্ত ও মাংস ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখেন।
রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, পুলিশ যে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করে, তাতে কেউ আহত হয় না। শিবিরের শক্তিশালী বোমার আঘাতেই পুলিশ আহত হয়েছেন।
আর এ ব্যাপারে শিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার সম্পাদক মহসিন আলম মুঠোফোনে প্রথম আলো ডটকমের কাছে দাবি করেন, শিবিরের কাছে হাত উড়িয়ে দেওয়ার মতো কোনো অস্ত্র নেই। নিজের গ্রেনেড ছুড়তে গিয়েই পুলিশ আহত হয়েছে।
CLICK THIS PIC :