দুটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ রেলওয়েতে ৬ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত আরও
৩৩টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায়
মোট ৯২টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এতে বাংলাদেশ রেলের ক্ষতির পরিমাণ নয় কোটি
টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
ধারাবাহিক নাশকতার ঘটনায় মন্ত্রণালয় রেল পুলিশ ও নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর
সঙ্গে থানার পুলিশ ও র্যাবের সদস্যদের যুক্ত করেছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল এবং দেশের উত্তর ও
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল গঠিত। গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে
পূর্বাঞ্চলে আরও ২৬টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ১০টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। নাশকতা
শুরু হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে। ওই দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলে ৮২টি
এবং পশ্চিমাঞ্চলে ১০টি নাশকতার ঘটনা ঘটে। রেলের ইতিহাসে এমন তাণ্ডব আর কখনো
হয়নি বলে রেল কর্মকর্তারা জানান। তাঁরা বলেন, এই দুর্বৃত্তরা যাত্রীদের
জীবনেরও পরোয়া করছে না। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ভোরে কুলাউড়ায় রেললাইনের
ফিসপ্লেট কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এতে ছয়টি কোচ ও ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হলে ঢাকা
ও চট্টগ্রামের সঙ্গে সিলেটের নয় ঘণ্টা ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা হরতাল চলাকালীন একই দিন সকাল নয়টায় ফৌজদারহাট
স্টেশন ভাঙচুর এবং রেললাইনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা
দেশের ট্রেন যোগাযোগ দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে। একই দিন সকালে মিরসরাইয়ের
বড়তাকিয়ায় এবং ব্রাহ্মবাড়িয়ায় রেললাইনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রেন
চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এর আগে গত সোমবার নরসিংদীর বাদুয়ারচর এলাকায় রেলসেতুতে
অগ্নিসংযোগ করা হয়।
রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক ধারাবাহিক নাশকতার জন্য আবারও জামায়াত-শিবিরকে
দায়ী করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য
স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সহিংসতা চালাচ্ছে। একাত্তরের পর রেলের সম্পদ ধ্বংসের
এই চিত্র দেশবাসী কখনো দেখেনি।
ধারাবাহিক নাশকতা প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে মন্ত্রী
মুজিবুল হক বলেন, রেলযাত্রী ও রেলের সম্পদের নিরাপত্তায় রেল পুলিশ ও নিজস্ব
নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে থানার পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা যুক্ত হয়েছেন।
নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। দুর্বৃত্তদের শনাক্ত ও
গ্রেপ্তারের জন্য কাজ চলছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে নাশকতা বেশি হচ্ছে। কারণ, গুরুত্বপূর্ণ আন্তনগর ট্রেন এ
পথেই বেশি চলাচল করে। যাত্রী পরিবহনও এ অঞ্চলে বেশি হয়। এ কারণে
দুর্বৃত্তরা পূর্বাঞ্চলকে নাশকতার লক্ষ্যস্থলে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য
করেন রেলের একাধিক কর্মকর্তা।
পশ্চিমাঞ্চলে ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ সিল্কসিটি ট্রেনের কোচ এবং বগুড়া
স্টেশন ভবন ও বামনডাঙ্গা স্টেশন পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি
হয়েছে। এরপর গতকাল পর্যন্ত আরও ১০টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এতে আরও সাত-আট
লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. ফেরদৌস আলম বলেন, ‘২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১
মার্চ পশ্চিমাঞ্চল রেলে বড় ধরনের নাশকতা হয়। সেটা কাটিয়ে উঠতে আমাদের অনেক
সময় লাগবে।’