Saturday, March 2, 2013

(ব্লগার রাজীব হত্যা) নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্র গ্রেপ্তার

ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যায় জড়িত সন্দেহে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ শনিবার ডিবি কার্যালয়ে এ ব্যাপারে সংবাদ ব্রিফিং করা হয়। সেখানে জানানো হয়, ডিবি পুলিশ মো. ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপ (২২), মো. মাকসুদুল হাসান অনিক (২৩), মো. এহসান রেজা রুম্মান (২৩), মো. নাঈম সিকদার ইরাদ (১৯) ও নাফিস ইমতিয়াজকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা সবাই বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য
ডিবি পুলিশ দাবি করেছে, গ্রেপ্তার আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন তাঁরা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামাজ কক্ষে নামাজ পড়তে গিয়ে পরষ্পরের সঙ্গে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ হন। সেই সূত্রে তাঁরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করতেন।
ডিবির দাবি, গ্রেপ্তার ছাত্ররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন তাঁদের দলের এক বন্ধু একসময় বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁদের কিছু ব্লগের ঠিকানা দেন। সেখান থেকেই তাঁরা ‘থাবা বাবা’সহ কয়েকজন ব্লগারের লেখার সঙ্গে পরিচিত হন এবং ‘থাবাবাবা’ নামধারী ব্লগারকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের পলাশনগর এলাকার নিজ বাসার সামনের রাস্তায় রাজীবকে খুন করেন।

রাজীবকে হত্যার জন্য দুটি দল গঠন?
ডিবি পুলিশ দাবি করেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ছাত্ররা পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাটি সম্পর্কে তাঁদের জানিয়েছে। সে ভাষ্য অনুযায়ী, রাজীবকে হত্যা পরিকল্পনার পর তাঁরা ‘ইনটেল গ্রুপ’ গঠন করেন। এই দলের কাজ ছিল ব্লগ ও ফেসবুক থেকে তাঁর সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করা ও তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। আর রাজীবকে হত্যার জন্য তাঁরা ‘এক্সিকিউশন গ্রুপ’ গঠন করেন। প্রায় এক মাস সময় ধরে তাঁরা রাজীবকে অনুসরণ করেছেন।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত সরঞ্জাম উদ্ধার
গ্রেপ্তার ছাত্রদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত দুটি চাপাতি, চারটি ছোরা, একটি বাই সাইকেল, এক জোড়া কেডস, সাতটি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল সেট ও একটি স্কুল ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ডিবি জানিয়েছে।
তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাকরাইলে জাতীয় চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের পুকুর পাড় থেকে জুতা জোড়া উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া একটি চাপাতি ও চারটি ছোরা শেরে বাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের রাস্তার পাশের ড্রেন থেকে উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য
ফয়সালের বাড়ি ঢাকার মাতুয়াইলে। তিনি কোডা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মাকসুদুলের বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জে। তিনি ম্যাপললিফ থেকে ও লেভেল এবং এ লেভেল পাস করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তাঁরা দুজনই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্র। এহসানের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায় ও নাঈমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবং তাঁরা দুজনই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। নাফিসের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। তিনি সানসাইন গ্রামার স্কুল থেকে ও লেভেল এবং এ লেভেল পাস করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ-তে ভর্তি হন। তিনি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

বিভিন্ন এলাকায় অভিযান
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য পশ্চিম বিভাগের ডিসি মোল্যা নজরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে এডিসি মশিউর রহমান, এডিসি মানস কুমার পোদ্দার ও জ্যেষ্ঠ এসি মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিবির একাধিক দল ঢাকার কাকরাইল, বারিধারা বসুন্ধরা, পান্থপথ ও খিলগাঁও এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রাজীব হত্যায় জড়িত সন্দেহে এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

১৫ ফেব্রুয়ারি খুন হন রাজীব
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুরের পলাশনগরে নিজ বাড়ির সামনে খুন হন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার। এ ব্যাপারে পল্লবী থানায় মামলা হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
প্রাথমিক তদন্তে হত্যার সঙ্গে সাতজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পায় ডিবি পুলিশ। পলাতক অন্য দুজনতে ধরতে পুলিশ তত্পরতা চালাচ্ছে।