Saturday, March 2, 2013

গণহত্যা বন্ধ না হলে পরিণাম ভয়াবহ

দেশময় সংঘাতে প্রাণহানির ঘটনাকে পৈশাচিক ‘গণহত্যা’ বলে বর্ণনা করে অবিলম্বে তা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। নইলে এর পরিণাম ভয়াবহ হবে বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এ হুঁশিয়ারি জানান। ব্লগে আল্লাহ, মহানবী (সা.) ও ইসলামের কথিত অবমাননার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও গত বৃহস্পতিবার জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর সারা দেশে সহিংসতায় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সরকারি দলের ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করেন খালেদা জিয়া।
এর প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ সব মহানগর ও জেলা সদরে আজ শনিবার প্রতিবাদ মিছিল এবং ৫ মার্চ মঙ্গলবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপির চেয়ারপারসন। রবি ও সোমবার জামায়াত আগেই হরতাল ডেকেছে। এখন মঙ্গলবারসহ তিন দিনের হরতালের ফাঁদে পড়ল দেশ।
কর্মসূচিতে বাধা না দিতে সরকার ও প্রশাসনকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আর একটি গুলিও যেন চালানো না হয়। জুলুম-নির্যাতনের পথ বেছে নিলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’ যেকোনো মূল্যে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখতে এই সংকটের মুহূর্তে দেশবাসীকে রাজপথে নেমে আসারও ডাক দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে শুধু বক্তব্য দিয়েই তিনি চলে যান, কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি।
‘আমি স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ ও গভীরভাবে মর্মাহত। এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর কোনো ভাষা আমার নেই’ —এই বলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য শুরু করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। প্রাণহানির ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার গণহত্যার পৈশাচিক তাণ্ডবে মেতে উঠেছে। পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা চলছে। এ ধরনের গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েই আমরা ১৯৭১ সালে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছিলাম। সেই স্বাধীন দেশে আবার অন্য কোনো অজুহাতে কখনো কোনো সরকার গণহত্যার পথ বেছে নেবে, তা আমরা মেনে নিতে পারি না।’
খালেদা জিয়া বলেন, দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম পবিত্র ইসলাম এবং মহান স্বাধীনতাকে আজ পরিকল্পিতভাবে প্রতিপক্ষ বানিয়ে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। গোটা জাতিকে আজ বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। একটি কুচক্রী মহল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে আল্লাহ, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলামের বিরুদ্ধে নোংরা কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়েছে।
শাহবাগ আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, একটি গোষ্ঠীকে সরকার উসকানিমূলক ও বেআইনি কর্মকাণ্ড সংঘটনে আশকারা ও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। ভিন্নমতাবলম্বীদের ধরে ধরে জবাই করার আওয়াজ তুলছে। সম্মানিত নাগরিকদের নাম ধরে হুমকি, সরকারবিরোধী সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলগুলো বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছে। নির্যাতিত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বেআইনিভাবে গ্রেপ্তারের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন ব্যাংক, বিমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরে উৎসাহিত করছে।
লিখিত বক্তব্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলা একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি বিরোধীদলীয় নেতা। তবে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের একটি রায়ের বিরুদ্ধে শাহবাগে যে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়, সরকার তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে অভিযুক্তদের ফাঁসি দেওয়ার যে দাবি জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে তার প্রতি শুধু সমর্থনই ব্যক্ত করেননি, বরং ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের প্রতি বিক্ষোভকারীদের দাবি বিবেচনায় রেখে রায় দেওয়ার আহ্বান জানান। কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। এসব ঘটনার মাধ্যমে ন্যায়বিচারের সর্বশেষ আশাটুকুও সম্পূর্ণ তিরোহিত হয়ে যায়। তাই এই ট্রাইব্যুনালের যেকোনো রায়ই এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।
খালেদা জিয়া দাবি করেন, জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার হীন উদ্দেশ্যে সরকার ইতিমধ্যে পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে আক্রমণ চালিয়ে দেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এরা একই উদ্দেশ্যে শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের ওপরও হামলা চালিয়েছিল। তিনি সরকারকে এমন আত্মঘাতী ষড়যন্ত্র থেকে বিরত থাকার এবং দেশবাসীকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের যেকোনো অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বিএনপির চেয়ারপারসন সব ধর্ম-মতের এবং পাহাড় ও সমতলবাসী প্রত্যেক গণতন্ত্রকামী নাগরিকের প্রতি এই বলে আহ্বান জানান, ‘আসুন, দল-মত-শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সকলে মিলে দেশ বাঁচাই, মানুষ বাঁচাই। ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা করে মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্রকে রক্ষা করি।