আহমেদ রাজীব হায়দারের মতো আরও আটজন ব্লগারকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ তরুণের। রিমান্ডে প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) এ তথ্য দিয়েছেন।
রাজীব হত্যা মামলার তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা ডিবির উপকমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আসামি এহসান রেজা ওরফে রুম্মান ও ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাঁরা ‘নাস্তিক’ হিসেবে রাজীবের মতো আরও আটজন ব্লগারকে চিহ্নিত করেন এবং তাঁদেরও খুনের পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই তাঁরা ধরা পড়ে গেছেন। এ কথা জানার পরপর গতকাল রোববার এই দুজনের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ধর্মভিত্তিক কিছু পুস্তিকা ও কম্পিউটারের দুটি হার্ডডিস্ক যাচাই-বাছাই করার জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিমান্ডের প্রথম দিনে গতকাল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পাঁচ ছাত্র এহসান রেজা, ফয়সাল, নাঈম সিকদার ওরফে ইরাদ, নাফিস ইমতিয়াজ ও মাকসুদুল হাসান ওরফে অনিক ব্লগার রাজীবকে খুন করার কথা স্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা বলেছেন, এ হত্যায় তাঁদের সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন। এ ছাড়া তাঁদের সমমনা আরেকটি দল এর আগে গত জানুয়ারিতে উত্তরায় ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনের ওপর হামলা করেছিল বলেও তাঁরা বলেছেন।
ডিবির জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, রাজীব হত্যার পরিকল্পনাকারী গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনের কথিত ওই বড় ভাই ও তাঁদের অপর সহযোগীকে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।
পরিবারের বক্তব্য: গতকাল বিকেলে রুম্মানদের কাকরাইলের বাসায় গেলে তাঁর বাবা আলী রেজা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারি রাজীব খুন হওয়ার পর রুম্মান খুব স্বাভাবিক ছিল, তার আচরণে মনে হয়নি সে মানুষ খুন করেছে। বরং রাজীব খুন হওয়া নিয়ে বাসায় আলাপকালে রুম্মান বলেছে, “নাস্তিক রাজীব ধর্মের বিরুদ্ধে লিখেছে। ও মারা গেছে ভালোই হইছে।” তখন ওর মা ছেলেকে বুঝিয়েছেন, “খারাপ কিছু কইরো না, তোমার বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। তুমি আমাদের একমাত্র ভরসা।’”
আলী রেজা আরও বলেন, কয়েক দিন আগে জামায়াতের আন্দোলন শুরু হলে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে রুম্মানকে পুলিশ আটক করে। এরপর মহল্লাবাসীর সুপারিশে পুলিশ ওকে ছেড়ে দেয়। তিনি বলেন, রুম্মান কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল না।
তবে অপর এক আত্মীয় প্রথম আলোকে বলেছেন, রুম্মান হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
গ্রেপ্তার হওয়া নাঈম সিকদার ওরফে ইরাদের মামা ব্যাংক কর্মকর্তা বেলাল আহমেদ দাবি করেন, ‘ইরাদ কোনোভাবেই মানুষ খুনের সঙ্গে জড়িত নয়। গ্রেপ্তারের পর আমি ফোনে তার সঙ্গে কথা বললে, সে খুন করার কথা অস্বীকার করেছে। সে ছোটবেলা থেকে রোজা-নামাজ করত। কারও সঙ্গে উচ্চবাচ্য করে কথাও বলত না।’ তিনি মনে করেন, ফেসবুকে কোনো মন্তব্য করা নিয়ে ইরাদ ফেঁঁসে গেছে। তাঁর জানামতে, ইরাদ কোনো দল বা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নন।
মাকসুদুল হাসান ওরফে অনিকের বাবা আবদুল আজিজ দাবি করেন, অনিককে ফাঁসানো হয়েছে। কোনোভাইে তিনি খুন করতে পারেন না। খুনের দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত নয়টায় অনিক বাসায় ছিলেন।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীর পলাশনগরের বাসার সামনে ব্লগার রাজীব হায়দারকে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এরপর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পাঁচ ছাত্রকে ডিবি গ্রেপ্তার করে। তাঁদের সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি!