সুবিখ্যাত কবি ওমর খৈয়ামের একটি অনবদ্য রচনা_ 'এইখানে এই তরুতলে, তুমি আমি কুতুহলে আর কটা দিন কাটিয়ে যাব প্রিয়ে, সঙ্গে রবে সুরার পাত্র, অল্প কিছু আহার মাত্র, আর একখানি কাব্য হাতে নিয়ে'। সুরসিক খৈয়াম যার এত গুণগান করেছেন তার সম্পর্কে কিছু জানার চেষ্টা করা যাক। সুরা নিয়ে পৃথিবীর দেশে দেশে রয়েছে নানা রকম নিয়ম-কানুন, রীতিনীতি, বিধি-নিষেধ। কোথাও সুরাপান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হলেও পৃথিবীর এমন অনেক দেশ আছে যেখানে আপ্যায়ন থেকে শুরু করে পানীয় হিসেবে এর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ইসলামের বিধানমতে আমাদের দেশে মদ্যপান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং তা রাখা ও বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে কিছু বৈধ নিয়ন্ত্রিত বার রয়েছে রাজধানী ঢাকা শহরে এবং দেশের অন্য বড় শহরগুলোতে। যা হোক, সুরার ইতিহাস কত দিনের? কবে, কি জন্য মদ তৈরি করা হয়েছিল এবং কি কারণে তৈরি করেছিল? আর নেশা হিসেবে কবে থেকে মদ পান শুরু হয়_ এ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। তবে সম্প্রতি আবিষ্কৃত তথ্য থেকে ধারণা পাওয়া যায়, ছয় হাজার বছর আগ থেকে পৃথিবীতে সুরা তৈরি এবং পান করার প্রচলন ছিল। পশ্চিম পারস্যের জাগরাউস পর্বতরাজি অঞ্চলে সাম্প্রতিক এক খননকাজের সময় দুই হাতলবিশিষ্ট একটি পানীয়ের ভাঙা আধার পাওয়া যায়। একদল গবেষক ভাঙা টুকরোগুলো জোড়া দিয়ে পানীয় আধারটি পুনর্গঠন করেন। দেখা গেল, ব্রোঞ্জ-পূর্ব যুগের সুমেরীয় সভ্যতার আমলে তৈরি করা হয়েছিল এই পানীয় আধার। তখন সবেমাত্র লিপির আবিষ্কার হয়েছে এবং পানি সেচের মাধ্যমে চাষাবাদের কাজও প্রথম প্রথম করা হচ্ছে। উদ্ধার করা পাত্রের তলায় লাল দাগ দেখে এবং পরীক্ষা করে জানা যায়, এতে তরল পদার্থ রাখা হতো। বাটলার ও তার সহযোগীরা দাগটির ইনফ্লারেড বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এতে ফেনোলিক এসিড ও টারটারিক এসিড রয়েছে। দাগের ঠিক উল্টো দিকে রয়েছে একটি ছিদ্র। পাত্র যেন ফেটে না যায় সে জন্যই এ ব্যবস্থা। সুরার এ ইতিহাস থেকে এটা বেশ ভালোভাবেই বোঝা যায়, আমাদের পূর্বপুরুষও বেশ রসিক ছিলেন, তা না হলে এমন সৃষ্টিকর্ম কি তারা আমাদের জন্য রেখে যেতেন?
No comments:
Post a Comment