দুপুরে হাশেমিয়া মাদ্রাসার সামনে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের গুলিবিনিময়
চলছিল। ওই সংঘর্ষে আটকে পড়া স্বামীকে (করিম উল্লাহ) উদ্ধারের জন্য
পাঠিয়েছিলাম ছেলে তোফায়েলকে। কিন্তু কে জানত, বাবাকে উদ্ধার করতে গিয়ে
গুলিতে ওর প্রাণ যাবে?’ এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন সুলতানা আরা বেগম।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে কক্সবাজার শহরের রুমালিয়ারছড়ায়
জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় তোফায়েল আহমদসহ (২০)
তিনজনের মৃত্যু হয়। শহরের উত্তর রুমালিয়াছড়ার গুদারপাড়ায় করিম উল্লাহর
বাড়ি।
গত বুধবার করিম উল্লাহর বাড়িতে গেলে স্ত্রী সুলতানা আরা বেগম (৪৮) ছেলে
হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। করিম উল্লাহ (৬৫) ওই
দিনের সহিংসতার বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, ‘হাশেমিয়া মাদ্রাসার সামনে তখন
ব্যাপক গুলি হচ্ছিল। এরই ফাঁকে তোফায়েল এসে আমার এক হাত ধরে বাড়ির দিকে
ছুটছিল। মনে চরম আতঙ্ক, কখন গুলিবিদ্ধ হই। ছিদ্দিক হাজির বাড়ির পাশে এলে
বিকট শব্দে একটি গুলি এসে তোফায়েলের পেটে লাগে। গুলিটি পুলিশের বলে সন্দেহ
হলো। তখন সে মাগো বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর পুলিশ এসে লাশ নিয়ে টানাটানি
শুরু করে। হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরদিন কক্সবাজার
সদর হাসপাতাল মর্গ থেকে লাশ এনে দাফন করি।’
ছেলে হত্যার দায়ে মামলা করলেন না কেন, জানতে চাইলে করিম উল্লাহ বলেন,
‘জীবনে কোনো দিন থানায় যাইনি। কার বিরুদ্ধে মামলা করব? আল্লাহর কাছে আমরা
ছেলে হত্যার বিচার চাই।’ তিনি বলেন, ‘তোফায়েল কোনো রাজনীতি করত না। শহরের
আলীরজাহান এলাকায় পানের দোকান করে সংসার চালাত। রাজনীতির বলী হলেও এ
পর্যন্ত কোনো দলের নেতারা বাড়িতে এসে একটু সান্ত্বনা দেয়নি।’
করিম উল্লাহর ছয় সন্তানের মধ্যে তোফায়েল চতুর্থ। বড় তিন ছেলে প্রবাসী,
কিন্তু সংসারের খোঁজ রাখেন না। তোফায়েলের মৃত্যুতে ছোট দুই ভাইবোনের
লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ছোট বোন হারেছা আকতার (১৪) টিএমসি বালিকা
উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে এবং ভাই আবদুল্লাহ আল নোমান (১২)
সাহিত্যিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসীম উদ্দিন
বলেন, ওই দিন তোফায়েলসহ তিনজন শিবিরের গুলিতে মারা গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ
বাদী হয়ে জামায়াত-শিবিরের প্রায় ছয় হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থকের বিরুদ্ধে
হত্যাসহ পৃথক তিনটি মামলা করেছে। ইতিমধ্যে ১৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে
পাঠানো হয়েছে।