Thursday, March 7, 2013

পাঁচবিবিতে তওবা পড়িয়ে 'নতুন মুসলমান'!

আওয়ামী লীগের সমর্থন করলে মুসলমানিত্ব থাকে না—এমন অপবাদ রটিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক মুসলমানদের তওবা পড়িয়ে 'নতুন করে মুসলমান' বানানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত এ রকম ১৬ জনকে নতুন মুসলমান হতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত প্রত্যন্ত পল্লী আওলাই ইউনিয়নের ভারাহুত গ্রামের।

অভিযোগ মতে স্থানীয় জামায়াত নেতা ভারাহুত গ্রামের মসজিদের ইমাম জফিরউদ্দিন (এলাকায় রাজাকার হিসেবে পরিচিত) ও পার্শ্ববর্তী জাবেকপুর গ্রামের মসজিদের ইমাম ময়েজউদ্দিন এই তওবা পড়ানোর কাজটি সম্পন্ন করেছেন।

জানা গেছে, তওবার সময় যে বাক্য কয়টি পাঠ করতে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাধ্য করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে— 'প্রতিজ্ঞাপূর্বক ওয়াদা করিতেছি যে, আমি আওয়ামী লীগ করায় অমুসলিম ছিলাম। বর্তমানে জামায়াত-বিএনপি দলের সাথে থাকার ওয়াদা করে মুসলমান হচ্ছি। আওয়ামী লীগ যে করে সে ইহুদি। আমি কোনদিন ওয়াদার বরখেলাফ করলে আবার অমুসলিম হয়ে যাব, আমিন'।

জানা যায়, গত রবিবার ফজরের নামাজের পর ওই গ্রামের আওয়ামী লীগ সমর্থক আব্দুল কাদের, আব্দুল কুদ্দুস, গোলাম, ইয়াসিন, হাসান, নূরুন্নবী, এনামুল, বকুল, আজিজুল হক, আব্দুল হাকিমসহ ১১ জন ও পরদিন ফজরের নামাজের পর আরও পাঁচজনকে তওবা পড়িয়ে 'নতুন করে মুসলমান' বানানো হয়। স্থানীয় একাধিক সূত্রের মতে গ্রামেরই মাতুব্বর আব্দুর রহিম, তার সহযোগী আব্দুল মালেক মাস্টার, ময়েজউদ্দিন, সিদ্দিক ও আশরাফ তওবা পড়ানোর ঘটনায় নেতৃত্ব দেন।

তওবাকারীরা জানান, জীবন রক্ষার্থে তারা বাধ্য হয়ে তওবা পড়ে আবার মুসলমান হতে রাজি হয়েছিলেন। তারা আরো জানান, গ্রামের বকুল নামের এক যুবক এ প্রস্তাবে রাজি না হলে গ্রামবাসীদের সামনে তাকে ভুল স্বীকার করে মাফ চাইতে হয়। এ অপমান সইতে না পেরে সে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়।

মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর এলাকায় জামায়াত-শিবির কর্তৃক অপবাদ ছড়ানো হয় যে, যারা আওয়ামী লীগ করে বা সমর্থন করে তাদের মুসলমান বলা যাবে না। তারা মুসলমান সম্প্রদায় থেকে খারিজ হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে আওলাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী, এলাকার ফতেহপুর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আ. বারী সরদারের সঙ্গে কথা বললে তারা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। এ ব্যাপারে পাঁচবিবি উপজেলা সদরের দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আ. গফুর সরদার জানান, যারা এসব কাজ করেছে তারা ঠিক করেনি। কোন রাজনৈতিক দল করার জন্য ধর্ম চলে যাবে—এমন বিধান ইসলামে নেই।

জয়পুরহাট জেলা পুলিশ সুপার হামিদুল আলম, পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম, জয়পুরহাট র্যাব-৫ কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আ. রাজ্জাক ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহসানুল হক গতকাল বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্থানীয় গোড়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জনসভা করে তারা জনগণকে ধর্মীয় ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানান।