একুশের চেতনায় প্রাণের বইমেলা গতকাল তার চিরাচরিত
রূপ ফিরে পায়। মাতৃভাষার চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে মেলায় আসেন অগণিত
আবালবৃদ্ধবনিতা। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, আ ম রি বাংলা ভাষাসহ নানা ধরনের
স্লোগানে অঙ্কিত লাল-সবুজের পোশাক আর আলপনায় গোটা মেলা প্রাঙ্গণে ছিল
একুশের আবহ। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে এবারের মেলায় একাত্তরের
চেতনাও প্রতিফলিত হয়েছে। সকালে শহীদ মিনার থেকেই জনস্রোত নেমেছিল মেলা
প্রাঙ্গণে। সারিবদ্ধ হয়ে মেলায় ঢুকার পাশাপাশি স্টলগুলোতে ছিল উপচে পড়া
ভিড়। শহীদ মিনারের বেদিতে শহীদদের পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন শেষে অনেকেই ছুটে
আসেন বইমেলায়। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ছিল বইপ্রেমীদের উপচে পড়া
ভিড়। বিক্রি বাড়ায় প্রকাশকদের মুখে ছিল হাসি। তবে বরাবরের মতো এবারও
নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের বই বেশি বিক্রি হয়েছে। অন্যপ্রকাশের স্টলে
হুমায়ূন আহমেদের 'দেয়াল' কিনতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
২৩৪৭ নতুন বই : প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২১ দিনে মেলায় ২৩৪৭টি নতুন বই
প্রকাশিত হয়েছে। গতবার এ সময়ে প্রকাশ হয়েছিল ২৭৯২টি। সে হিসাবে গতবারের
তুলনায় এবার ৪৪৫টি বই কম প্রকাশ হয়েছে। এর আগে ২০১১ সালে ২২৭৩টি, ২০১০
সালে ২৬৩০টি, ২০০৯ সালে ২১৯৭টি, ২০০৮ সালে ১৯৫৫টি, ২০০৭ সালে ১৪৬৪টি ও ২০০৬
সালে ১৬৬০টি প্রকাশ হয়। এ বছর প্রকাশের দিক থেকে এখন পর্যন্ত এগিয়ে
রয়েছে কবিতার বই (৫৭৫টি)। এ ছাড়া গল্প ৩০৮, উপন্যাস ৪২৪, প্রবন্ধ ১৫৯,
গবেষণা ৩২, ছড়া ৭৩, শিশুসাহিত্য ৮২, জীবনী/ স্মৃতিচারণ ৭৩, রচনাবলি ১,
ভাষা আন্দোলন/ মুক্তিযুদ্ধ ৪৭, নাটক ১৪, গণিত/ বিজ্ঞান ৪২, ভ্রমণ ৪১,
ইতিহাস ৩২, রাজনীতি ১৬, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ২১, কম্পিউটার ২, রম্য/ ধাঁধা
৪৯, ধর্মীয় ১৭, অনুবাদ ২৭, অভিধান ১, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ও গোয়েন্দা ১৯
এবং অন্যান্য বিষরের ওপর ২৮৭টি বই।
গতকাল নজরুল মঞ্চে ১৩টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। এর মধ্যে আবদুস
সোবহান সিকদারের 'দুই পাখি এক বনে'; আবদুর রউফের 'পর্বতকন্যা' ও গীতালী
হাসানের 'বিগ ফাইভ আর পাখির দেশে' অন্যতম। এদিকে ২২৫টি নতুন বই এসেছে। এর
মধ্যে গল্প ৩৯, উপন্যাস ৩৬, প্রবন্ধ ১৫, কবিতা ৫২, গবেষণা ৪, ছড়া ১০,
শিশুসাহিত্য ৬, জীবনী ৬, মুক্তিযুদ্ধ ২, নাটক ১, বিজ্ঞান ৩, ভ্রমণ ৪,
ইতিহাস ২, রাজনীতি ১, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ৪, কম্পিউটার ১, রম্য/ধাঁধা ৫,
ধর্মীয় ২, অনুবাদ ২, অভিধান ১ এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর ২৯টি। সকালে মেলার
মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত স্বরচিত কবিতা পাঠের আসরে সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ
চৌধুরী। সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাড়া জাগানো 'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির
দাবি নিয়ে এসেছি' কবিতার কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে নিয়ে নির্মিত
তথ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। পরে সংগীত পরিবেশন করেন ফকির আলমগীর,
আবদুল জব্বার, তিমির নন্দী, নমিতা ঘোষ, মহাদেব ঘোষ, শ্রেয়সী রায়, বিমান
চন্দ্র বিশ্বাস, আবদুল হালিম খান ও দীপঙ্কর মণ্ডল