ভারত মহাসাগরের নীচে প্রাগৈতিহাসিক যুগের একটি ‘ক্ষুদ্র মহাদেশ’ রয়েছে বলে
সম্প্রতি দাবি করেছেন গবেষকেরা। মহাসাগরের লাভার নীচে ডুবে থাকা এ
মহাদেশটিকে ‘মরিশিয়া’ নামে ডাকতে শুরু করেছেন তাঁরা।
২৪ ফেব্রুয়ারি ‘নেচার জিওসায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক নিবন্ধের গবেষকেরা
‘মরিশিয়া’র উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন। গবেষকেরা আশা করছেন যে, এ ধরনের আরও
কয়েকটি ক্ষুদ্র মহাদেশের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে। ভারত মহাসাগরের দ্বীপ
মরিশাস অঞ্চলের বিশেষ ধরনের বালু পরীক্ষা করে এ তথ্য জানিয়েছেন গবেষকেরা।
গবেষকেরা ধারণা করছেন, মরিশিয়া নামের ওই ভূখণ্ড গঠিত হয়েছিল সম্ভবত ছয় কোটি
১০ লাখ থেকে আট কোটি ৩০ লাখ বছর আগে, ভারত থেকে মাদাগাস্কার বিচ্ছিন্ন হয়ে
যাওয়ার পর। কালক্রমে ঘন লাভার স্তূপে চাপা পড়ে যায় মরিশিয়া।
বিজ্ঞানীরা মরিশাসের সৈকত থেকে সংগৃহীত বালি বিশ্লেষণ করে ৬৬ কোটি থেকে
প্রায় ২০০ কোটি বছরের পুরোনো জিরকোনিয়াম মৌলের উপস্থিতি শনাক্ত করেন।
মরিশাস দ্বীপের তলদেশে একটি ক্ষুদ্র মহাদেশের অস্তিত্ব নির্দেশ করছে
জিরকোনিয়াম। গবেষকেরা ধারণা করছেন, আগ্নেয়গিরির সাম্প্রতিক ক্রিয়ার ফলে ওই
জিরকোনিয়াম ভূপৃষ্ঠে উঠে এসেছে।
মরিশাসের সঙ্গে মরিশিয়ার সম্পর্ক
বর্তমান মরিশাসের সঙ্গে প্রাচীন ক্ষুদ্র মহাদেশ মরিশিয়ার সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষকেরা ধারণা করছেন, মরিশাস আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খলের একটি অংশ। টেকটোনিক
প্লেটের প্রান্তের দিকে এ আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খল থাকে। তবে যে টেকটোনিক প্লেটের
ওপর বর্তমান মরিশাস অবস্থান করছে তার প্রান্ত থেকে এর অবস্থান অনেকটাই
দূরে। এর কারণ এখনও অজানা।
গবেষকেদের ভাষ্য, আমাদের পৃথিবী একাধিক পাত বা প্লেটের আবরণে মোড়ানো। একে
বলে টেকটোনিক প্লেট। এ প্লেটের প্রান্তদেশের আগ্নেয়গিরিগুলোই পৃথিবীর
ভূ-ভাগ তৈরি করেছে। তবে হাওয়াই দ্বীপের মতো কোনো টেকটোনিক প্লেটের মাঝামাঝি
অঞ্চলে আগ্নেয়গিরি থাকলে তা লাভার উদিগরণ করে এবং টেকটোনিক প্লেটগুলো
দুর্বল করে তাতে ভাঙন ধরায়।
গবেষকেদের ধারণা ১৭ কোটি বছর আগে পূর্ব গন্ডোয়ানা মহাদেশের ক্ষেত্রে এ
ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। তাঁদের মতে, দক্ষিণ গোলার্ধে গন্ডোয়ানা নামে বিশাল একটি
মহাদেশের অস্তিত্ব ছিল যা বিভক্ত হয়ে যায়। গন্ডোয়ানাকে গন্ডোয়ানাল্যান্ডও
বলা হয়।
এদিকে, মরিশাসের সঙ্গে মরিশিয়ার সম্পর্ক প্রসঙ্গে নরওয়ের অসলো
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ এব হার্জ জানিয়েছেন, ৯০ লাখ বছর আগে
ভূ-উদিগরণে নির্গত শিলার ক্ষয়ের নিদর্শন হচ্ছে মরিশাসের সমুদ্র সৈকত। আর এই
সমুদ্র সৈকতের বালিতেই পাওয়া গেছে জিরকোনিয়াম।
জিরকোনিয়াম দানার সন্ধান করতে গবেষকেরা স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের
সাহায্যে তৈরি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রের ম্যাপ নিয়ে গবেষণা করেন।
পৃথিবীর সব খানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সমান নয়। কোথাও খুব বেশি আবার কোথাও
খুবই কম।
গবেষকেরা মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রের মানচিত্র নিয়ে গবেষণা চালাতে গিয়েই ভারত
মহাসাগরের তলদেশে ক্ষুদ্র মহাদেশটির অস্তিত্ব রয়েছে বলে জানতে পারেন।
গবেষকেদের মতে, পুরোনো সেই মরিশিয়ার সঙ্গে বর্তমান মরিশাসের সম্পর্ক রয়েছে,
যার নিদর্শন ওই জিরকোনিয়াম। গবেষকেরা মহা দেশীয় ফাটল বা চ্যুতি গবেষণা করে
দেখেছেন। তাঁরা ধারণা করছেন, প্রায় ১০ কোটি বছর আগে ভারত মহাসাগর তৈরির
সময় মাদাগাস্কারের সঙ্গে আলদা হয়ে যায় মরিশিয়া। আর সেই থেকেই আগ্নেয়গিরির
লাভার নীচে চাপা পড়ে যেতে শুরু করে। গবেষকেরা মনে করছেন, এরকম ছোটো ছোটো
অনেক মহাদেশের ক্ষেত্রেই এ ধরনের ঘটনা হয়তো ঘটেছে।
অবশ্য ভারত মহাসাগরে পানজিয়া নামের একটি বিশাল মহাদেশের অস্তিত্ব ছিল বলে বিজ্ঞানীরা এর আগেই দাবি করেছিলেন।