জুমার
নামাজ আদায় শেষ না করেই বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ভেতরে তাণ্ডব
চালিয়েছে জামায়াত-শিবির ও তাদের সমর্থক ১২ দলের নেতা-কর্মীরা। মসজিদের
ভেতরে জায়নামাজে (কার্পেট আকারে বিছানো) এবং সংরক্ষিত ধর্মীয় গ্রন্থে আগুন
দিয়েছে তারা। মসজিদের টাইলস ও আসবাবপত্র ভেঙে পুলিশের দিকে ছুড়ে মেরেছে।
শাহবাগের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিজেদের পছন্দমতো ফতোয়া দেওয়ার জন্য
খতিবের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এতে কাজ না হওয়ায় মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে
স্লোগান দিয়েছে। এ কারণে সাধারণ মুসল্লিরাও ঠিকমতো জুমার নামাজ আদায় করতে
পারেনি।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল জুমার নামাজের সুযোগ নিয়ে
বায়তুল মোকাররম মসজিদে জড়ো হয় ১২ দলের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের লোকজন। তাদের
টার্গেট ছিল বিশাল মিছিল নিয়ে শাহবাগ দখল করা। এ কারণে সাধারণ মুসল্লির
চেয়ে গতকাল বায়তুল মোকাররমে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদেরই উপস্থিতি ছিল
বেশি। নামাজের আগে থেকেই মসজিদের ভেতরে তারা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
প্রজন্ম চত্বরের তরুণদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেওয়ার দাবিতে রাজনৈতিক স্লোগান
দেওয়া শুরু হলে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় মসজিদের ভেতরে। এক পর্যায়ে
তারা মসজিদের জায়নামাজ ও ইসলামী গ্রন্থে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় সাধারণ
মুসল্লিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা কোনোমতে নামাজ আদায় করে মসজিদ
ত্যাগ করে।
আব্দুর রহমান ও মজিবুর রহমান নামের দুজন মুসল্লি কালের কণ্ঠকে জানান, জুমার
নামাজ আদায় করার জন্য তাঁরা দুপুর ১২টার দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে আসেন।
এ সময় গেটে তাঁদের তল্লাশি করে পুলিশ। ভেতরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, মসজিদে
জামায়াত-শিবির ও তাদের সমর্থকরা খুবই তৎপর। সংঘর্ষকারীরা নামাজ না পড়েই
নানা ধরনের অপতৎপরতা শুরু করে। তারা খতিবকে দিয়ে প্রজন্ম চত্বরের সমাবেশের
ব্লগারদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করে। এতে খতিব রাজি না হলে
হট্টগোল শুরু করে তারা। এক পর্যায়ে মসজিদের ভেতরেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, গতকাল সকাল থেকেই বায়তুল মোকাররম কেন্দ্রীয় মসজিদের চারদিকে
পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কড়া নজরদারি ছিল। তল্লাশি করেই মুসল্লিদের ভেতরে ঢুকতে
দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই মসজিদের ভেতরে হট্টগোল শোনা যায়।
পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, মসজিদের ভেতরে আগুন দিয়েছে কিছু লোকজন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার নাজমুল আলম বলেন, গতকাল সকাল
থেকে মসজিদের ভেতরে জামায়াত-শিবির ও তাদের সমর্থক ১২ দলের নেতা-কর্মীদের
উপস্থিতি ছিল। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধসহ শাহবাগের আন্দোলনকারীদের
বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের উসকানি সৃষ্টির চেষ্টা করে। এসব কর্মকাণ্ড সাধারণ
মুসল্লি ও মসজিদের খতিবসহ অন্যরা মেনে না নেওয়ায় তারা মসজিদেই আগুন
জ্বালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং মসজিদে দাঁড়িয়ে পুলিশ ও সাংবাদিকদের গালাগাল
দেওয়া শুরু করে। মসজিদের দামি টাইলস ভেঙে তারা পুলিশকে ছুড়ে মারে।