'প্রিয়'
মাঠে 'প্রিয়' প্রতিপক্ষ! ১০০তম টেস্টের মাইলফলক ছোঁয়া। মঞ্চটা প্রস্তুতই
ছিল তাঁর জন্য। তবে ফেরাটা রাঙিয়ে নিতে পারেননি হরভজন সিং। কিন্তু সেসব
রোমাঞ্চও উজ্জীবিত করতে পারেনি 'ভাজ্জি'কে। চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনটা
কেটেছে তাঁর একেবারে সাদামাটা, উইকেট পাননি একটাও। হরভজনের 'সেঞ্চুরি'র
ম্যাচের প্রথম দিনের আলোটা কেড়ে নিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও মাইকেল
ক্লার্ক। ঘূর্ণি বলের অনুপম প্রদর্শনীতে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের
নাকানি-চুবানি খাইয়ে ৮৮ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন এই অফ স্পিনার। অশ্বিনের
স্পিন ভেল্কির জবাবে হার না মানা ঝকঝকে অপরাজিত সেঞ্চুরি করে অস্ট্রেলিয়াকে
ম্যাচে সমান্তরালেই রেখেছেন ক্লার্ক। পর্তুগিজ বংশোদ্ভূত অলরাউন্ডার
হেনরিকস মোয়েজেসও বিখ্যাত ব্যাগি গ্রিন মাথায় পরে প্রথম দিনেই রেখেছেন নিজ
প্রতিভার স্বাক্ষর। ক্লার্কের সেঞ্চুরি ও মোয়েজেসের হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে ৭
উইকেটে ৩১৬ রান করে দিনের খেলা শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া।
আরেকবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলটে টেনে নিতে পারায় উচ্ছ্বসিত হওয়ারই
কথা ক্লার্কের। রিকি পন্টিংয়ের হাত থেকে অস্ট্রেলিয়ার দায়িত্ব নেওয়ার পর
থেকে তাঁর ব্যাটে রীতিমতো রূপকথার ফর্ম। চেন্নাইয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিক
স্কোর গড়ার পথে মোট টেস্ট রানে ছাড়িয়ে গেছেন কিংবদন্তি স্যার ডন
ব্রাডম্যানকে। অশ্বিনের ঘূর্ণিতে নাকাল হয়ে ১৫৩ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরও
এভাবে দিনটা শেষ করতে পেরে খুশিই থাকার কথা ক্লার্কের! হেনরিকসের সঙ্গে
ষষ্ঠ উইকেটেও ঠিক ১৫৩ রান যোগ করেছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক।
দিনটা অন্য রকম হতে পারত ভারতেরও। অশ্বিন ছাড়া ক্লার্ক বাহিনীর ওপর ছড়ি
ঘোরাতে পারেনি তাদের আর কোনো বোলারই। রঙির পোশাকে দ্যুতি ছড়ালেও সাদা
জার্সি গায়ে দিয়েই যেন ছন্দটা হারিয়ে ফেলেন ভুবনেশ্বর কুমার। নতুন বলে ধার
ছিল না ইশান্ত শর্মার বোলিংয়েও। দুই স্পিনার হরভজন ও রবীন্দ্র জাদেজাও
ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। কাজের কাজ যা করেছেন ওই অশ্বিনই, অস্ট্রেলিয়ার
হারানো সাতটি উইকেটের ছয়টিই তামিলনাড়ুর এই ছেলের। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট
হারিয়েও অস্ট্রেলিয়ার রানের গতিটাও তাই সচল ছিল সব সময়। ওয়ানডে স্টাইলে
শুরুটা করেছিলেন এড কাওয়ান ও ডেভিড ওয়ার্নার। অশ্বিন আক্রমণে এসেই ৮ রানের
মধ্যে তুলে নেন কাওয়ান ও হিউজেসকে। স্লিপে ১৮ রানের সময় বীরেন্দর শেবাগের
হাতে জীবন পাওয়া ওয়ার্নারের সঙ্গে জুটি বাঁধেন শেন ওয়াটসন। জোড়া উইকেট
হারানোর পরও রানের গতি ধরে রেখে লাঞ্চের আগের সময়টা নির্বিঘ্নেই কাটিয়ে দেন
তাঁরা, ২ উইকেটে ১২৬ রানে লাঞ্চে যায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু মধ্যাহ্নভোজের
বিরতি ছন্দপতন ঘটায় তাঁদের খেলায়! বিরতির পর খেলা শুরু হলে স্কোরবোর্ডে আর
কোনো রান যোগ না করেই সাজঘরে ফেরে ওয়াটসন, ৫ রান পরে তাঁকে অনুসরণ করেন হাফ
সেঞ্চুরিয়ান ওয়ার্নারও। অশ্বিনের স্পিনের বিপক্ষে বেশিক্ষণ টিককে পারেননি
ম্যাথু ওয়েডও। দারুণ শুরুর পরও হতাশার সাগরে তলিয়ে যেতে থাকে অস্ট্রেলিয়া।
অভিষিক্ত হেনরিকসের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ১৫০ রানের বেশি পার্টনারশিপ গড়ে ওই
বিপর্যয় থেকে দলকে টেনে তুলেছেন ওই ক্লার্কই। ক্রিকইনফো
সংক্ষিপ্ত স্কোর : অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস : ৩১৬/৭ (কাওয়ান ২৯, ওয়ার্নার,
৫৯, হিউজ ৬, ওয়াটসন ২৮, ক্লার্ক ১০৩*, ওয়েড ১২, হেনরিকস ৬৮, স্টার্ক ৩,
সিডল ১*; অশ্বিন ৬/৮৮, জাদেজা ১/৫৬)।