মানবজমিন ডেস্ক: আর মাত্র তিন বছরের মধ্যে পৃথিবী অচল হবে! সূর্যে প্রচণ্ড এক শক্তির বিস্ফোরণে পুরো পৃথিবীতে দেখা দেবে ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খলা। সব বিদ্যুতের তার গলে গলে পড়ে যাবে মাটিতে।
অন্ধকারে ডুবে যাবে চারদিক। যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বিকল হয়ে যাবে। বিমান উড়বে না আকাশে। ইন্টারনেট ক্যাফেগুলোতে খুঁজে পাওয়া যাবে না কাউকে। এমন সতর্কতা জারি করেছেন নাসার একদল বিজ্ঞানী। গতকাল এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য সান। এতে বলা হয়েছে, সূর্যের চুম্বকীয় শক্তির বলয় তার চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছেছে বলে দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সূর্যে সৃষ্ট দাগ বা স্ফীতিগুলো ইতিমধ্যে বিপুল পরিমাণ বিকিরণ ঘটানোর মতো ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে। সূর্যকে ঘিরে গড়ে ওঠা আগুনের বলয়গুলো বিধ্বংসী ১০০টি হাইড্রোজেন বোমার সমান শক্তি ধরে। বিজ্ঞানীদের মতে, সূর্যের ওই বলয়ের চক্র সম্পন্ন হয়ে তিন বছরের মধ্যেই বিকিরণ শুরু হতে পারে। সূর্যের সৌর কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হয় উচ্চ ও নিম্ন পিরিয়ডের ১১ বছরের দু’টি চক্রের মাধ্যমে। বর্তমানে এটি খুবই শান্ত অবস্থায় রয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এখন খুব দ্রুতই সূর্যের স্ফীতিগুলো বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে চুম্বকীয় শক্তিও। এ হিসাবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, ২০১৩ সালেই চৌম্বক ঝড় দেখা দিতে পারে। তখন চুম্বকীয় শক্তির বিকিরণে পৃথিবীর সব কিছু অচল হয়ে পড়বে। দেখা দেবে ভূ-চৌম্বক ঝড়। আকাশ জুড়ে দেখা দেবে লাল বর্ণের আলোকচ্ছটা। পুরোপুরি বিকল হয়ে পড়বে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ ও স্যাটেলাইটসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিমান চলাচল, রেডিও সমপ্রচার। থমকে পড়বে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাও। এ ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবস্থা। এ অবস্থা চলতে পারে কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের জন্য। তবে তা এক মাসের বেশি সময়ও স্থায়ী হতে পারে। পৃথিবীকে এ ঝড় থেকে রক্ষা করতে অনেক আগে থেকেই গবেষণা শুরু করে নাসা। পৃথিবীকে ঘিরে কয়েক ডজন স্যাটেলাইট স্থাপন করেছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি। নাসার বিজ্ঞানীদের সামপ্রতিক এ ঘোষণায় রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বৃটিশ সরকার। গতকাল বৃটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিয়াম ফক্স জরুরি সভা ডেকেছিলেন। এতে তিনি দুর্যোগ এড়ানোর সম্ভাব্য পথ খুঁজে বের করতে বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানান। ইলেক্ট্রিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি কাউন্সিল এ সভার আয়োজন করে। এতে ফক্স বলেন, মহাকাশে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কোন বৈরী শক্তিও এ ধরনের দুর্যোগ ডেকে আনতে পারে। তার মতে, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো কিছু দেশ পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চাইছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যেভাবে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল, এ দেশগুলো হয়তো তার ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে পারে। তারা হয়তো মহাকাশে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, যার কারণে পৃথিবীতে বিদ্যুৎ-চৌম্বক ঝড় দেখা দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানান, প্রতি ১০০ বছর পর পর সূর্যে শক্তির এ বিস্ফোরণ দেখা দেয়। আধুনিক সময়ে সর্বশেষ এ ঘটনা ঘটেছিল ১৮৫৯ সালে। ওই সময় ইউরোপ ও আমেরিকা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছিল। দু’ মহাদেশের মধ্যে বিস্তৃত টেলিগ্রাফের তারগুলো ওই সময় পুড়ে বিকল হয়ে পড়েছিল। লন্ডন, প্যারিস ও নিউ ইয়র্কের মতো বড় শহরগুলো তখন ধূলিঝড়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল বিশ্বের সর্বাধুনিক শহরগুলো। অচল হয়ে পড়েছিল জনজীবন। আগুনরঙা লালে ঢেকে গিয়েছিল দুই-তৃতীয়াংশ আকাশ। ১৯৮৯ সালে কানাডার কিউবেকে ছোট মাত্রায় দেখা দিয়েছিল এ সৌর বিস্ফোরণ। তখন কিউবেকের সবগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র অচল হয়ে পড়েছিল।
No comments:
Post a Comment