Saturday, September 25, 2010
সজিনা' ফলবে বারো মাস
কাপ্তাই উপজেলার নারানগিরি এলাকায় রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে উদ্ভাবিত ভেষজ গুণসমৃদ্ধ মৌসুমি সবজি সজিনা এখন সারা বছরই গাছে ধরবে। একটি মৌসুমি সবজি সারা বছরের উৎপাদন লাভের সাফল্যে দেশে এক দুর্লভ অর্থকরী ফসলের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে বলে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা মত প্রকাশ করেছেন।
সজিনা ভেষজ গুণসমৃদ্ধ একটি ঔষধি সবজি ফসলের জাত। সাধারণ মানুষের নৈমিত্তিক আহারে সজিনা একটি প্রিয় সবজি। সুস্বাদু, পুষ্টিকর তদুপরি ঔষধি গুণান্বিত এ সবজির চাহিদা এবং দামি হলেও দেশে এর আবাদে তেমন উদ্যোগী ভূমিকা না থাকায় সজিনা প্রায় বিলুপ্ত ফসলের জাতে পরিণত হয়। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে সজিনা গাছে ধরে এবং পুরো বছরে মাত্র ৮-১০ দিন এ সজিনা চড়া দামে বাজারে পাওয়া যায়। সম্প্রতি রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সজিনার ওপর গবেষণা চালিয়ে এ দুর্লভ উদ্ভিদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি এর বারোমাসি জাত উদ্ভাবনে সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়।
সজিনা তরকারির তালিকায় অনেকের প্রিয় একটি সবজি। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই জাতীয় সবজি অনেকের প্রত্যাশা থাকলেও দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্যের কারণে বাজারে সহজে এ সবজি মেলে না। তদুপরি মৌসুমি ফসল হিসেবে যখন তখন এটি বাজারে পাওয়াও যায় না। বাংলা নববর্ষে মিশ্র সবজির তরকারি রান্নায় সজিনার সমন্বয় ঘটাতে প্রত্যয়ী হয়ে পড়ে অনেকে। বাজারে তখন আঁটি আকারে সজিনা সবজির প্রতিযোগিতামূলক বিকিকিনিও দেখা যায়। ভরা মৌসুমেও সজিনার অপর্যাপ্ততায় বাজারে সজিনার চাহিদায় ক্রেতাদের মধ্যে কেনার প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে।
রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে সরেজমিনে সজিনার ওপর গবেষণা ক্ষেত্র পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সজিনা ধরার মৌসুম ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল হলেও গবেষণা বাগানের গাছে ফুল আর ফসলের পর্যায়ক্রমিক উৎপাদনের সমারোহ। একদিকে ফুল অপরদিকে কচি সজিনা এবং অন্যদিকে পরিপক্ব সজিনা শিম জাতীয় ফসল। একই গাছে পর্যায়ক্রমে সজিনা ধরার এই আবহ আগামীতে এ জাতীয় ফসলের বারোমাসি উৎপাদনের সম্ভাবনার পরিবেশ তৈরি করেছে।
রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম হারুনুর রশিদ জানান, গবেষণাকৃত সজিনার গাছে ফুল আর ফল দুটোই এক সঙ্গে ধরেছে। দেশে কোথাও একই গাছে এই ধরনের ফলনের অবস্থা দেখা যায়নি। নতুনভাবে এখানে সজিনার ফলনের পরিবেশ বারোমাসি জাতের উদ্ভাবনের সম্ভাবনা বিরাজমান। দেশের মাটি ও আবহাওয়ায় সজিনা আবাদের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। এ অবস্থায় সজিনার বারোমাসি আবাদের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সজিনার বর্তমান চাহিদা এবং এর বাজার দাম হিসেবে এই সবজি আবাদে সহজলভ্যতার পাশাপাশি আর্থিক উপার্জনেরও সম্ভাবনার দিক উন্মোচিত করবে।
সম্ভাব্যতাকে সার্থক করতে দেশের মাটি ও আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশে সজিনা আবাদ প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দিতে রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে ইতিমধ্যে সজিনার গবেষণা ও আবাদের ব্যাপ্তি ঘটাতে ব্যাপক প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। বারোমাসি সজিনার বাণিজ্যিক চাষাবাদে কৃষকদের মাঝে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনা বিরাজমান বলে কৃষি বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment