চরবাঘাদারিয়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা (৩৫)। ছয়-সাত বছর আগে মোস্তফার সংসারের অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। কৃষিকাজের পাশাপাশি মহিষ ও গাভী পালন শুরু করেন তিনি। মহিষ আর গাভীর দুধ বিক্রি করে গোলাম মোস্তফার এখন হয়েছে পাকা বাড়ি। অর্থনৈতিকভাবে তিনি এখন স্বাবলম্বী। বর্তমানে গোলাম মোস্তফার দুধেল ৬টি মহিষ রয়েছে। শুধু গোলাম মোস্তফা নয়, গফরগাঁও-ময়মনসিংহ খানবাহাদুর ইসমাইল রোডের ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার কানিহারি ইউনিয়নের প্রায় ১৪টি গ্রামকে বলা চলে দুধের গ্রাম। চরবাঘাদারিয়া, ডাকবাঘাদারিয়া, বাঘাদারিয়া, থাপনহালা, গোবিন্দপুর, দেওপাড়া, কুষ্টিয়া, সুলতানপুর, বেরতা, তালতলা, কানিহারি, বরকান্দা ও বহুলিয়াকান্দা গ্রামসহ পুরো ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার পরিবার মহিষ ও গাভীর দুধ বিক্রি করে সংসার চালায়। তবে একটু সম্পদশালী মানুষ কৃষি কাজও করে। এ ইউনিয়নের নতুনবাজার ও আহম্মদাবাদ বাজারে প্রতিদিন বসে দুধের হাট। বেপারিরা দুধ কিনে নিয়ে যায় ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, মোহনগঞ্জ, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন ভোর থেকেই দুধওয়ালা বেপারিরা কাঁধে বার নিয়ে ছুটে চলে দুধ ক্রয় করতে। গত মঙ্গলবার কথা হয় দুধ বেপারি রমজান মিয়ার (৪৫) সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিন নতুন বাজার ও আহম্মদাবাদ বাজার থেকে প্রায় দুই আড়াইশ মণ দুধ বিক্রি হয়। কানিহারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রতন বলেন, দুধ ব্যবসায়ী সমিতির রেজিস্ট্রিভুক্ত সদস্য সংখ্যা শতাধিক। গাভী ও মহিষ পালন করতে খরচের তুলনায় দুধের দাম কম পায় পালনকারীরা। এছাড়া দুধের দাম প্রায় সময় উঠানামা করে। এখন অবশ্য দুধের দাম একটু ভালো বলে তিনি জানান। আহম্মদাবাদ বাজারের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানান, আগে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের আহম্মদাবাদ রেলস্টেশনে কয়েকটি ট্রেন থামত। বর্তমানে একটি ট্রেনের স্টপেজ রয়েছে। তাও এই ট্রেন কখন আসে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই বিভিন্ন স্থানে দুধ পরিবহনে সমস্যা হয় তাদের। চরবাঘাদারিয়া গ্রামে মহিষ ও গাভী পালন করেন মফিজ উদ্দিন। বর্তমানে তার ৩৫টি মহিষ রয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, প্রতিদিন এসব মহিষ ও গাভী ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে চরে দলবেঁধে নিয়ে যেতে হয়। নাজনীন (২৫) নামে এক গৃহবধূ। তার স্বামী ছাদিকুর রহমানকে দুধেল গাভী পালনে সহায়তা করেন। এমনকি দুধ দোহানোর কাজ করেন গ্রামের অনেক গৃহবধূ। গত মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের ওপাড়ে শত শত মহিষের বাতান। গাভী ও মহিষ পালনে ব্যস্ত রাখালরাও। হতদরিদ্র আ. জব্বারের বাড়িভিটা ও একটি দুধেল মহিষ সম্বল। এ মহিষের দুধ বিক্রি করে চলে সংসার। নতুন বাজারের ব্যবসায়ী হারুন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে এ ইউনিয়নের দুধ বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের সমস্যার সমাধান হতো।
No comments:
Post a Comment