রূপকথার রাজ্যে রাজা, রানী, দৈত্য, দানব, উড়ন্ত পক্সখীরাজ ঘোড়া আরও কত কি-ই না আছে! রূপকথার পৃথিবী শুধু শিশু নয় ছোট-বড় সবার কাছেই ভীষণ প্রিয়। সেই রূপকথার রাজ্যের আরেক রাজার নাম 'ব্লাক রোজ'। ব্লাক রোজ বা কালো গোলাপ কিংবদন্তি হয়ে আছে প্রায় শত বছর ধরে। আজও সে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। একটা সময় কালো গোলাপ নিয়ে মাতামাতির অন্ত ছিল না। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ফ্লাওয়ার্স ল্যাঙ্গুয়েজ সৃষ্টি হয়। এ সময় কালো গোলাপ মৃত্যু, ঘৃণা, বিদায় এবং ভয়ের প্রতীক হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, জীবনের লম্বা সময় অতিবাহিত করাকেও কালো গোলাপ দিয়ে বোঝানো হতো। তবে কালো গোলাপ যে শুধু খারাপ অর্থেই ব্যবহার হতো, তা নয়। খুব প্রিয় বন্ধুকে বা যুদ্ধে গমনরত সৈনিককেও কালো গোলাপ দেওয়া হতো আগের দিনে। কিন্তু সত্য হলো, যে কালো গোলাপ নিয়ে এত মাতামাতি, প্রকৃতপক্ষে তার কোনো অস্তিত্ব আছে কি? সত্যিই নেই। অনেকটা 'মোল্লার গরু খাতায় আছে, গোয়ালে নেই' অবস্থা আর কি। তাই কালো গোলাপকে রূপকথার গোলাপ বলাই বোধ হয় ভালো। কালো গোলাপ নামে কোনো ফুলই নেই। কালো টিউলিপ নামে যে ফুলকে আমরা চিনি, সেটা আসলে খুব গাঢ় বেগুনি রংয়ের ফুল। আর যুগ যুগ ধরে মানুষ যেটাকে কালো গোলাপ বলে জানে, সেটা আসলে গাঢ় লাল রংয়ের গোলাপ। যুগে যুগে কালো গোলাপ ধ্বংস-রহস্যময়তা ও মোহিনীশক্তির প্রতীক হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসী সৈন্যরা কালো গোলাপকে কল্যাণের প্রতীক হিসেবে গণ্য করত। এছাড়া কালো গোলাপ নিয়ে রচিত হয়েছে রোমান্স ও রহস্যময় গল্প। তৈরি হয়েছে ইন দ্য ফরেস্ট অব দ্য নাইট, ডেমন ইন মাই ভিউ, কার্টারেড মিরর, মিডনাইট প্রিবেটরের মতো সায়েন্স ফিকশন। আমাদের দেশেও তৈরি হয়েছে 'কালো গোলাপ' নামে একটি বাংলা সিনেমা। ভিক্টোরিয়ান যুগে কালো গোলাপের প্রচলন ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ফ্যাশন সচেতনদের তালিকায় ঠাঁই নেয় কালো গোলাপ। বিশ শতকে শৈল্পিক নিদর্শনের দৃষ্টান্ত হিসেবেও কালো গোলাপ বিশেষ মূল্য পায়। অনেকের মতে কালো গোলাপের অভাবনীয় ও অনৈসর্গিক রং আধ্যাতিক শক্তিসম্পন্ন হওয়ার প্রত্যাশায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। প্রাচীন যুগেও নাকি অভিজাত তরুণীদের স্নানঘরে সৌরভের জন্য রাখা হতো কালো গোলাপ। সম্প্রতি চীনের উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে উৎপন্ন করেছেন নীল গোলাপ। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো তারা সত্যি সত্যিই কালো গোলাপ উৎপন্ন করবেন।
No comments:
Post a Comment