মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা ৩২টি পাঠ্য বইয়ের ১৯০টি অধ্যায়কে কঠিন বলে মনে করে। 'মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম মূল্যায়ন' শীর্ষক এক জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে। জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ শ্রেণীর 'সামাজিক বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান, গার্হস্থ্য অর্থনীতি' বইয়ে দুটি অধ্যায়ের বিষয়বস্তু প্রায় একই রকম। অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের চারটি কবিতার ভাবার্থে মিল রয়েছে। অষ্টম ও নবম শ্রেণীর গণিত বইয়ের পিথাগোরাসের উপপাদ্যের প্রমাণও একই রকম। পর্যাপ্ত উদাহরণ না থাকায় পাঠ্য বই থেকে কিছু বিষয় বাদ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরাও বলেছেন, পাঠ্য বইয়ে বেশ কিছু বিষয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
প্রতিবেদনটি গত বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। মাধ্যমিক শিক্ষা খাতের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের শিক্ষাক্রম শাখা গত বছর এ জরিপ পরিচালনা করে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রতিবেদন পেয়েছি। এখনো পুরোটা পড়া হয়নি। প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী যেখানে যা প্রয়োজন, তা করা হবে।'
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মোস্তফা কামাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্য বইয়ে প্রতিবেদনের সুপারিশ কার্যকর করা হতে পারে।
জরিপে সিলেবাসের বিষয়বস্তু, নির্দিষ্ট সময়ে পাঠদান, সিলেবাস শেষ না হওয়ার কারণ, পাঠ্য বইয়ের ভাষা, বইয়ে ছবির পর্যাপ্ততা, বিষয়বস্তুর সঙ্গে ছবির সম্পৃক্ততা, পাঠ্য বইয়ে ব্যবহৃত উদাহরণ, চিন্তা ও দক্ষতার প্রতিফলন ইত্যাদি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মতামত নেওয়া হয়।
সিলেবাস সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯২ শতাংশ শিক্ষক বলেছেন, বাংলা, ইংরেজি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ইতিহাস, পৌরনীতি ও ভূগোল বিষয়ের সিলেবাস নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। দীর্ঘ সিলেবাসই এর কারণ। ৭২ শতাংশ শিক্ষক বলেন, সিলেবাস দীর্ঘ হওয়ায় নির্ধারিত পিরিয়ডে তা শেষ করা যায় না। তবে ১৭ শতাংশ শিক্ষক বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিদ্যালয় বন্ধ থাকার জন্যও সিলেবাস শেষ করা যায় না। ৯ শতাংশ শিক্ষক এর জন্য শিক্ষক স্বল্পতা এবং সাড়ে ৬ শতাংশ শিক্ষক শ্রেণীকক্ষের অপ্রতুলতাকে দায়ী করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেবাস শেষ করার জন্য শিক্ষার্থীদের বেছে নেওয়া উপায়গুলো খুবই উদ্বেগজনক। সেগুলো হচ্ছে_প্রাইভেট পড়া, কোচিংয়ের সাহায্য নেওয়া, নোট বই ও সাজেশন অনুসারে পড়া। এর কোনোটিই শিক্ষা কার্যক্রমের সহায়ক নয়।
৩৮ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মনে করেন, বর্তমান পাঠ্য বইয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় কৃষ্টি ও ঐতিহ্য জানার বিষয়বস্তু নেই। ৪৪.৮ শতাংশ শিক্ষক বলেছেন, পাঠ্য বইয়ের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের চিন্তাশীল করছে না। ৫০.৪ শতাংশ শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রচলিত পাঠ্য বই পড়ে বিজ্ঞানমনস্ক হচ্ছে না। বিজ্ঞানের বিষয়গুলো শিক্ষার্থীবান্ধব করে উপস্থাপন করা হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানো। অথচ বিদ্যালয়ের ৪৪ শতাংশ শিক্ষকের মতে, বর্তমান পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশে ব্যর্থ হচ্ছে।
পাঠ্যপুস্তকের যেসব বিষয় শিক্ষার্থীদের কঠিন মনে হয়, সে সম্পর্কেও জরিপে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় পত্রের 'লিঙ্গ ও বচন', ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের 'বাক্য গঠন ও রচনা লিখন', গণিতের পাটিগণিত অংশে 'অনুপাত, সমানুপাত, শতকরা', বীজগণিত অংশে 'সরল সমীকরণ ও সংখ্যা রেখা', জ্যামিতি অংশে 'সম্পাদ্য, উপপাদ্য ও সমান্তরাল রেখা', সাধারণ বিজ্ঞানের পদার্থ অধ্যায়ের 'বল, চাপ, গতি, বিদ্যুৎ শক্তি ও চুম্বক শক্তি' এবং রসায়ন অংশে 'ধাতু ও অধাতু এবং পানি'।
সপ্তম শ্রেণীতে কঠিন বিষয় হলো_ইংরেজি বইয়ের 'মডেল ভারব ও ন্যারেশন', গণিতের পাটিগণিত অংশে 'সমানুপাতিক ভাগ, ঐকিক নিয়ম', বীজগণিত অংশে 'বীজগণিতের প্রথম চারটি সূত্র প্রয়োগ', 'লসাগু, গসাগু ও বীজগণিতীয় ভগ্নাংশ', জ্যামিতি অংশে 'উপপাদ্য', সাধারণ বিজ্ঞানের পদার্থবিজ্ঞান অংশে 'আলো, চুম্বক ও বিদ্যুৎ', রসায়ন অংশে 'বায়ুমণ্ডল, কার্বন ডাই-অঙ্াইড, ভূত্বক ও শিলা', জীববিজ্ঞান অংশে 'উদ্ভিদের অঙ্গসংস্থান, কলা ও মানবদেহ' এবং সামাজিক বিজ্ঞানের 'মানচিত্র ও অক্ষাংশ'।
অষ্টম শ্রেণীর ইংরেজির 'র্যাপিড রিডার', 'ভয়েস', 'ন্যারেশন', গণিতের পাটিগণিত অংশে 'আবৃত দশমিক সংখ্যা, শতকরা পরিমাপ ও একক, মূলদ ও অমূলদ সংখ্যা এবং সুদকষা', বীজগণিত অংশে 'লেখ অঙ্কন ও প্রয়োগ এবং সরল সমীকরণ', জ্যামিতি অংশে 'উপপাদ্য' কঠিন বলে চিহ্নিত হয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ইতিহাস ও ভূগোল অংশের চারটি অধ্যায় কঠিন বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।
নবম ও দশম শ্রেণীর বাংলা প্রথম পত্রে কঠিন গদ্য হলো_রচনার শিল্পগুণ, শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব, দুরন্ত পথিক ও জাগো গো ভগিনী। দ্বিতীয় পত্রে ব্যাকরণের 'সমাস, ধ্বনিতত্ত্ব, প্রত্যয়, কারক ও ধাতু' অধ্যায়টি কঠিন। ইংরেজি প্রথম পত্রে 'ভোকাবুলারি', দ্বিতীয় পত্রে 'বাক্য গঠন, ন্যারেশন, প্রিপোজিশন' অংশ কঠিন।
গণিতে 'বাস্তব সংখ্যা, বীজগাণিতিক রাশি, লগারিদম, উৎপাদক বিশ্লেষণ, সামন্ত ধারা' ইত্যাদি অধ্যায় কঠিন। এ ছাড়া একই শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ভূগোল অংশের চারটি অধ্যায়, অর্থনীতি অংশে দুটি, ইতিহাস অংশে দুটি ও পৌরনীতি অংশে একটি অধ্যায় কঠিন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞানে ১০টি, রসায়নবিজ্ঞানে সাতটি এবং জীববিজ্ঞানের পাঁচটি অধ্যায় কঠিন। উচ্চতর গণিতের আটটি অধ্যায় কঠিন। ইতিহাসে আটটি, ভূগোলে ছয়টি, পৌরনীতিতে দুটি, অর্থনীতিতে চারটি অধ্যায় কঠিন। কম্পিউটারের দুটি, ব্যবসায় পরিচিতি বিষয়ে তিনটি, হিসাববিজ্ঞানের তিনটি অধ্যায়কে কঠিন মনে করে শিক্ষার্থীরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঠ্য বইয়ে বিষয়বস্তুর উপস্থাপন আকর্ষণীয় নয়। অপ্রাসঙ্গিক তথ্য বেশি। বইয়ের ভাষা কঠিন ও মুখস্থ করতে হয়। বিষয়ের সঙ্গে অনুশীলনীর মিল নেই। হাতে-কলমে শেখার সুযোগ নেই। এ কারণে ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয় থেকে কিছু অধ্যায় বাদ দিতে বলেছে। তারা বলেছে, বাংলা বিষয়ে অভিযাত্রী, সাত সাগরের মাঝি, জয়যাত্রা, দুরন্ত পথিক, পূর্বাশার আলো বাদ দেওয়া প্রয়োজন। কারণ এসব কবিতা ও প্রবন্ধ একই উদ্দেশ্য বহন করে। 'সামাজিক বিজ্ঞান' বইয়ে সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা কমানো উচিত। ভূগোল অংশে সৌরতাপ, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ অধ্যায় কমানো যেতে পারে। রসায়নবিজ্ঞানে জৈবযৌগ ও ধাতু নিষ্কাশন অংশ কমানো প্রয়োজন।
জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ শিক্ষক মনে করেন, পাঠ্য বইয়ে বিভিন্ন বিষয়বস্তুর পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে 'খাদ্য ও পুষ্টি', ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর সামাজিক ও সাধারণ বিজ্ঞানে 'জনসংখ্যা ও পরিবেশ' নামের অধ্যায়ে প্রায় একই তথ্য দেওয়া হয়েছে। অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের প্রবন্ধ_'বাংলা ভাষার জন্মকথা', কবিতা_'একুশের কবিতা', 'অবাক সূর্যোদয়' একই অর্থ বহন করে। নবম ও দশম শ্রেণীর 'ব্যবসায় উদ্যোগ', 'হিসাববিজ্ঞান' ও 'ব্যবসায় পরিচিতি' বিষয়ের ধারণা প্রায় একই দেওয়া হয়েছে। অষ্টম ও নবম শ্রেণীর গণিত বইয়ে পিথাগোরাসের উপপাদ্যের প্রমাণ একইভাবে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটি গত বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। মাধ্যমিক শিক্ষা খাতের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের শিক্ষাক্রম শাখা গত বছর এ জরিপ পরিচালনা করে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রতিবেদন পেয়েছি। এখনো পুরোটা পড়া হয়নি। প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী যেখানে যা প্রয়োজন, তা করা হবে।'
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মোস্তফা কামাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্য বইয়ে প্রতিবেদনের সুপারিশ কার্যকর করা হতে পারে।
জরিপে সিলেবাসের বিষয়বস্তু, নির্দিষ্ট সময়ে পাঠদান, সিলেবাস শেষ না হওয়ার কারণ, পাঠ্য বইয়ের ভাষা, বইয়ে ছবির পর্যাপ্ততা, বিষয়বস্তুর সঙ্গে ছবির সম্পৃক্ততা, পাঠ্য বইয়ে ব্যবহৃত উদাহরণ, চিন্তা ও দক্ষতার প্রতিফলন ইত্যাদি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মতামত নেওয়া হয়।
সিলেবাস সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯২ শতাংশ শিক্ষক বলেছেন, বাংলা, ইংরেজি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ইতিহাস, পৌরনীতি ও ভূগোল বিষয়ের সিলেবাস নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। দীর্ঘ সিলেবাসই এর কারণ। ৭২ শতাংশ শিক্ষক বলেন, সিলেবাস দীর্ঘ হওয়ায় নির্ধারিত পিরিয়ডে তা শেষ করা যায় না। তবে ১৭ শতাংশ শিক্ষক বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিদ্যালয় বন্ধ থাকার জন্যও সিলেবাস শেষ করা যায় না। ৯ শতাংশ শিক্ষক এর জন্য শিক্ষক স্বল্পতা এবং সাড়ে ৬ শতাংশ শিক্ষক শ্রেণীকক্ষের অপ্রতুলতাকে দায়ী করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেবাস শেষ করার জন্য শিক্ষার্থীদের বেছে নেওয়া উপায়গুলো খুবই উদ্বেগজনক। সেগুলো হচ্ছে_প্রাইভেট পড়া, কোচিংয়ের সাহায্য নেওয়া, নোট বই ও সাজেশন অনুসারে পড়া। এর কোনোটিই শিক্ষা কার্যক্রমের সহায়ক নয়।
৩৮ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মনে করেন, বর্তমান পাঠ্য বইয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় কৃষ্টি ও ঐতিহ্য জানার বিষয়বস্তু নেই। ৪৪.৮ শতাংশ শিক্ষক বলেছেন, পাঠ্য বইয়ের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের চিন্তাশীল করছে না। ৫০.৪ শতাংশ শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রচলিত পাঠ্য বই পড়ে বিজ্ঞানমনস্ক হচ্ছে না। বিজ্ঞানের বিষয়গুলো শিক্ষার্থীবান্ধব করে উপস্থাপন করা হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানো। অথচ বিদ্যালয়ের ৪৪ শতাংশ শিক্ষকের মতে, বর্তমান পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশে ব্যর্থ হচ্ছে।
পাঠ্যপুস্তকের যেসব বিষয় শিক্ষার্থীদের কঠিন মনে হয়, সে সম্পর্কেও জরিপে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় পত্রের 'লিঙ্গ ও বচন', ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের 'বাক্য গঠন ও রচনা লিখন', গণিতের পাটিগণিত অংশে 'অনুপাত, সমানুপাত, শতকরা', বীজগণিত অংশে 'সরল সমীকরণ ও সংখ্যা রেখা', জ্যামিতি অংশে 'সম্পাদ্য, উপপাদ্য ও সমান্তরাল রেখা', সাধারণ বিজ্ঞানের পদার্থ অধ্যায়ের 'বল, চাপ, গতি, বিদ্যুৎ শক্তি ও চুম্বক শক্তি' এবং রসায়ন অংশে 'ধাতু ও অধাতু এবং পানি'।
সপ্তম শ্রেণীতে কঠিন বিষয় হলো_ইংরেজি বইয়ের 'মডেল ভারব ও ন্যারেশন', গণিতের পাটিগণিত অংশে 'সমানুপাতিক ভাগ, ঐকিক নিয়ম', বীজগণিত অংশে 'বীজগণিতের প্রথম চারটি সূত্র প্রয়োগ', 'লসাগু, গসাগু ও বীজগণিতীয় ভগ্নাংশ', জ্যামিতি অংশে 'উপপাদ্য', সাধারণ বিজ্ঞানের পদার্থবিজ্ঞান অংশে 'আলো, চুম্বক ও বিদ্যুৎ', রসায়ন অংশে 'বায়ুমণ্ডল, কার্বন ডাই-অঙ্াইড, ভূত্বক ও শিলা', জীববিজ্ঞান অংশে 'উদ্ভিদের অঙ্গসংস্থান, কলা ও মানবদেহ' এবং সামাজিক বিজ্ঞানের 'মানচিত্র ও অক্ষাংশ'।
অষ্টম শ্রেণীর ইংরেজির 'র্যাপিড রিডার', 'ভয়েস', 'ন্যারেশন', গণিতের পাটিগণিত অংশে 'আবৃত দশমিক সংখ্যা, শতকরা পরিমাপ ও একক, মূলদ ও অমূলদ সংখ্যা এবং সুদকষা', বীজগণিত অংশে 'লেখ অঙ্কন ও প্রয়োগ এবং সরল সমীকরণ', জ্যামিতি অংশে 'উপপাদ্য' কঠিন বলে চিহ্নিত হয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ইতিহাস ও ভূগোল অংশের চারটি অধ্যায় কঠিন বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।
নবম ও দশম শ্রেণীর বাংলা প্রথম পত্রে কঠিন গদ্য হলো_রচনার শিল্পগুণ, শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব, দুরন্ত পথিক ও জাগো গো ভগিনী। দ্বিতীয় পত্রে ব্যাকরণের 'সমাস, ধ্বনিতত্ত্ব, প্রত্যয়, কারক ও ধাতু' অধ্যায়টি কঠিন। ইংরেজি প্রথম পত্রে 'ভোকাবুলারি', দ্বিতীয় পত্রে 'বাক্য গঠন, ন্যারেশন, প্রিপোজিশন' অংশ কঠিন।
গণিতে 'বাস্তব সংখ্যা, বীজগাণিতিক রাশি, লগারিদম, উৎপাদক বিশ্লেষণ, সামন্ত ধারা' ইত্যাদি অধ্যায় কঠিন। এ ছাড়া একই শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ভূগোল অংশের চারটি অধ্যায়, অর্থনীতি অংশে দুটি, ইতিহাস অংশে দুটি ও পৌরনীতি অংশে একটি অধ্যায় কঠিন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞানে ১০টি, রসায়নবিজ্ঞানে সাতটি এবং জীববিজ্ঞানের পাঁচটি অধ্যায় কঠিন। উচ্চতর গণিতের আটটি অধ্যায় কঠিন। ইতিহাসে আটটি, ভূগোলে ছয়টি, পৌরনীতিতে দুটি, অর্থনীতিতে চারটি অধ্যায় কঠিন। কম্পিউটারের দুটি, ব্যবসায় পরিচিতি বিষয়ে তিনটি, হিসাববিজ্ঞানের তিনটি অধ্যায়কে কঠিন মনে করে শিক্ষার্থীরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঠ্য বইয়ে বিষয়বস্তুর উপস্থাপন আকর্ষণীয় নয়। অপ্রাসঙ্গিক তথ্য বেশি। বইয়ের ভাষা কঠিন ও মুখস্থ করতে হয়। বিষয়ের সঙ্গে অনুশীলনীর মিল নেই। হাতে-কলমে শেখার সুযোগ নেই। এ কারণে ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয় থেকে কিছু অধ্যায় বাদ দিতে বলেছে। তারা বলেছে, বাংলা বিষয়ে অভিযাত্রী, সাত সাগরের মাঝি, জয়যাত্রা, দুরন্ত পথিক, পূর্বাশার আলো বাদ দেওয়া প্রয়োজন। কারণ এসব কবিতা ও প্রবন্ধ একই উদ্দেশ্য বহন করে। 'সামাজিক বিজ্ঞান' বইয়ে সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা কমানো উচিত। ভূগোল অংশে সৌরতাপ, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ অধ্যায় কমানো যেতে পারে। রসায়নবিজ্ঞানে জৈবযৌগ ও ধাতু নিষ্কাশন অংশ কমানো প্রয়োজন।
জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ শিক্ষক মনে করেন, পাঠ্য বইয়ে বিভিন্ন বিষয়বস্তুর পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে 'খাদ্য ও পুষ্টি', ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর সামাজিক ও সাধারণ বিজ্ঞানে 'জনসংখ্যা ও পরিবেশ' নামের অধ্যায়ে প্রায় একই তথ্য দেওয়া হয়েছে। অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের প্রবন্ধ_'বাংলা ভাষার জন্মকথা', কবিতা_'একুশের কবিতা', 'অবাক সূর্যোদয়' একই অর্থ বহন করে। নবম ও দশম শ্রেণীর 'ব্যবসায় উদ্যোগ', 'হিসাববিজ্ঞান' ও 'ব্যবসায় পরিচিতি' বিষয়ের ধারণা প্রায় একই দেওয়া হয়েছে। অষ্টম ও নবম শ্রেণীর গণিত বইয়ে পিথাগোরাসের উপপাদ্যের প্রমাণ একইভাবে দেওয়া হয়েছে।
No comments:
Post a Comment