রাজধানীর শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার কর্মী-সমর্থককে
সরিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে নানা রকম আলোচনা
চলছে।
ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ব্লগগুলোতে বলা হচ্ছে,
রোববার রাতের ওই অভিযানে হাজার হাজার লোক নিহত হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল
বিএনপির পক্ষ থেকে আড়াই থেকে তিন হাজার লোককে হত্যার কথা বলা হয়েছে।
হেফাজতে ইসলামও দাবি করেছে, এই সংখ্যা আড়াই থেকে তিন হাজার। তবে কেউই
সুনির্দিষ্ট সূত্রের উল্লেখ করেনি।
গতকাল গায়েবানা জানাজায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা দাবি
করেছেন, বিদেশি সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ওই অভিযানে
তিন হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।
অবশ্য বিবিসি ও সিএনএনের ওয়েবসাইট ঘেঁটে এ খবরের সত্যতা মেলেনি।
এই অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ
প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
অভিযানটি হয়েছে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে।’
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল
আহসান প্রথম আলোকে বলেন, অভিযানে পুলিশের একজন সদস্য নিহত হয়েছেন। আর
হেফাজতের মঞ্চের পাশ থেকে চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া আর কোনো
মৃতদেহ সেখানে পাওয়া যায়নি। তবে আহত দু-একজন পরে হাসপাতালে মারা গেলেও যেতে
পারেন।
অভিযানের আগে-পরে রোববার সারা দিন হতাহতের ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা
যায়, রোববার দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দুই দফায় হেফাজতে ইসলামের
কর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। দিন ও রাতের
সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের উপপরিদর্শকসহ (এসআই) মোট ২২ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের
মধ্যে ১১ জনের লাশ শাপলা চত্বরে অভিযানের পর বিভিন্ন হাসপাতাল ও মর্গে
নেওয়া হয়। অন্যরা দিনভর বিভিন্ন স্থানে নিহত হন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন এক
হাজার ৫৭৯ জন। তাঁদের মধ্যে ৫৭ জন পুলিশের সদস্য।
সূত্র জানায়, ওই দিনের আহত ব্যক্তিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পুরান
ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ
হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু
হাসপাতাল), সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক
হাসপাতাল ও রাজারবাগে দ্য বারাকা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এসব হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার রাতের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের
মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঁচটি, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে একটি
ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের হিমঘরে অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তির লাশ ছিল। এ
ছাড়া আর কোনো মৃতদেহের খবর কেউ বলতে পারেনি।
ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে
বলেন, তাঁদের হাসপাতালে দুজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। বারাকা জেনারেল
হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম শাহজাহান সিরাজ বলেন, রোববার
রাত সাড়ে ১০টার পর ছয়জনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। এর বাইরে তাঁরা আর কোনো খবর
জানেন না।
নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিদেশি গণমাধ্যম
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা
সোমবার জানায়, রোববার থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় ৩০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।
রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা থেকে হেফাজতের প্রায় ৭০ হাজার
কর্মী-সমর্থককে উচ্ছেদে অভিযান চালান নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় পাঁচ হাজার
সদস্য। এ সময় সংঘর্ষে প্রায় ২২ জন নিহত হন। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে,
নিহতদের অনেকেই মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়া পরদিন সোমবার নারায়ণগঞ্জের
কাঁচপুরে সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর তিন সদস্যসহ নিহত হন কমপক্ষে ১৮ জন।
বিবিসির সোমবারের খবরে বলা হয়, রাজধানী ঢাকা থেকে হেফাজতের কর্মীদের সরিয়ে
দিতে রোববার শব্দবোমা ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। এরপর দুই দিনের
সহিংসতায় কমপক্ষে ২৭ জন নিহত হন।
ফ্রান্সের বার্তা সংস্থা এএফপি গতকাল মঙ্গলবার জানায়, বাংলাদেশে গত তিন
দিনের সহিংসতায় কমপক্ষে ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। তবে বিএনপির মুখপাত্র খন্দকার
মোশাররফ এএফপিকে জানান, সহিংসতায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন। কর্তৃপক্ষ লাশ
গুম করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের
সিএনএনের গতকালের খবরে নিহতের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১৪ জন। তবে সিএনএন
একটি মন্তব্য করেছে—নিহতের প্রকৃত সংখ্যা কত, তা হয়তো কোনো দিন জানা যাবে
না।
আর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস-এর সোমবারের খবরে দুই দিনে নিহতের সংখ্যা ২২ বলে জানানো হয়।
কাতারভিত্তিক আল-জাজিরার সোমবারের খবরে বলা হয়, শুধু ওই দিনেই সহিংসতায়
নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৪ জন। এর আগে রোববার নিহত হন কমপক্ষে ১৪ জন।
একই দিনে ভারতের এনডিটিভির খবরে রোববার ও সোমবারের সহিংসতায় ৩২ জন নিহত
হওয়ার কথা বলা হয়। আর যুক্তরাজ্যের টেলিগ্রাফ পত্রিকার সোমবারের এক
প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা ২২ বলে উল্লেখ করা হয়।
No comments:
Post a Comment