Saturday, May 11, 2013

সাভারের ভবন ধস: বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা

সাভারের রানা প্লাজার ধসকে এর আগে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে ধরা হলেও বর্তমানে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় এটিকে এখন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে দ্বীতিয় বৃহত্তম হিসেবে ধরা হচ্ছে।

এর আগে ইকোনোমিস্ট পত্রিকা তাদের অনলাইন সংস্করণে সাভারের ভবন ধসে নিহতের ঘটনায় ‘বাংলাদেশে বিপর্যয়: ধ্বংসস্তূপে ছিন্নবস্ত্র’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ ছেপেছে এবং এটাকে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করেছে।

তারা তাদের নিবন্ধে এটিকে ১৯৮৪ সালের ২ ও ৩ ডিসেম্বর ভারতের মধ্য প্রদেশের ভুপাল ইউনিয়ন কারবাইড ইন্ডিয়া লিমিটেডে গ্যাস বিস্ফোরণে ৩ হাজার ৭৮৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

নিয়ম ভঙ্গ করে ভবন নির্মাণের বিষয়টিও উঠে আসে ইকোনোমিস্টের ওই নিবন্ধে। তাতে বলা হয়েছে, পাঁচ তলার অনুমতি নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে আটতলা ভবন।

এছাড়া বাংলাদেশে পোশাক কারখানার “বিস্ফোরণ” ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নিবন্ধে। আর এর অন্যতম কারণ হিসেবে সস্তায় শ্রমিকের সহজলভ্যতাকে উল্লেখ করেছে ইকোনোমিস্ট। বাংলাদেশে একজন শ্রমিকের বেতন মাত্র তিন হাজার টাকা, যা চীনের চেয়ে এক পঞ্চমাংশ।

গত বছর পাকিস্তানের পোশাক কারখানায় অগ্নিকান্ডে ২৬০ জন নিহত হয়েছিল। একই বছর বাংলাদেশের “তাজরীন ফ্যাশনে” অগ্নিকান্ডে ১১২ জন নিহত হন। সম্প্রতি (৮ মে) ঢাকার মিরপুরে ‘তুন হাই’ একটি নামক তৈরি পোশাক কারখানায় অগ্নিকান্ডে পুলিশের ডিআইজিসহ ৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ‘স্পেকটাম’ গার্মেন্টসে ধসের ঘটনায় অনেক শ্রমিকের প্রাণহনি ঘটে।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানায় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। চীনের পরে সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক শিল্পের বাজার বাংলাদেশে। এরকম দুর্ঘটনা বন্ধ না করা গেলে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পের বিশাল এ বাজার হারাতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট বোদ্ধাদের ধারণা।

আর তাই সরকারকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তারা মত ব্যক্ত করেন।

এদিকে, ধসে পড়া রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ১৭তম দিন শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে সকাল দুপুর পর্যন্ত আরও ২০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে ভবন ধসের উদ্ধার করা মরদেহের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৩ জনে। এর মধ্যে ৭১০ জনের মৃতদেহ শনাক্ত হওয়ার পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে স্থাপিত সেনাবাহিনীর কন্ট্রোলরুম থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

উদ্ধারকর্মীরা জানান, এখন যেসব লাশ উদ্ধার করা হচ্ছে, সেগুলোর অধিকাংশই গলিত, অর্ধগলিত। ফলে মরদেহ শনাক্ত ও হস্তান্তর করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাসস্ট্যান্ড বাজারে যুবলীগ নেতা সোহেল রানার মালিকানাধীন নয়তলা বাণিজ্যিক ভবন ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে। এতে হাজারের অধিক প্রাণহানির এ ভয়বহ ঘটনা ঘটে। এছাড়া আহত ও জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় দুই হাজার ৪৩৭ জন শ্রমিককে।

সাভারের মর্মান্তিক এ ঘটনায়  আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে দেশের পোশাক শিল্প। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও, জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো পোশাকশিল্পের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে। এমনকি বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কয়েকটি পোশাক কারখানার পরিবেশ ও মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

এর আগে গত নভেম্বর মাসে সাভারের আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক পোশাক শ্রমিকের প্রাণহানি হয়।

No comments: