গতবারের মতো এবারও দেশের সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে
জিপিএ’র ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে
ভর্তির জন্য আগামী ১৮ মে থেকে আবেদন পত্র গ্রহণ করা হবে। চলবে ৬ জুন
পর্যন্ত। শিক্ষার্থী ভর্তি শেষে ক্লাশ শুরু হবে ১ জুলাই।
টেলিটক মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন করা যাবে। তবে সনাতন
পদ্ধতিতেও আবেদন জমা দেওয়া যাবে। এবার ভর্তি ফরমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে
১২০ টাকা।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে
২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা সংক্রান্ত সভায় এ
সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ উপস্থিত থেকে এ সব তথ্য জানান।
সভায় শিক্ষা সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরীসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ফল পুনঃনিরীক্ষণে যাদের ফল পরিবর্তন হবে তারা ১০
জুন পযর্ন্ত আবেদন করতে পারবেন। ১৬ জুন ভর্তির জন্য মনোনীত প্রার্থীদের
তালিকা প্রকাশ করা হবে। বিলম্ব ফি ছাড়া ভর্তি ও টাকা জমা দেওয়া যাবে ৩০ জুন
পযর্ন্ত। ১৫ জুলাই বিলম্ব ফি ছাড়া ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা ও
নিবন্ধন ফি বোর্ডে জমা দিতে হবে। তবে বিলম্ব ফিসহ ভর্তি ও টাকা জমা দেওয়া
যাবে ১১ জুলাই পযর্ন্ত।
বিলম্ব ফিসহ ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের তালিকা ও নিবন্ধন ফি আগামী ২২ জুলাই
পর্যন্ত বোর্ডে জমা দেওয়া যাবে। ব্যবহারিক ক্লাস শুরু হবে ৫ সেপ্টেম্বর
থেকে। ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শাখা/বিষয় পরিবর্তনকারী শিক্ষার্থীর ডিডিসহ
তালিকা বোর্ডে পাঠানো যাবে।
ভর্তির নীতিমালা
কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করে
বিলম্ব ফিসহ অন্য কলেজে ভর্তি হতে চাইলে তাকে অভিভাবকের সম্মতিসহ সংশ্লিষ্ট
কলেজে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে ভর্তির সময় নেওয়া অর্থের ৫০ শতাংশ ফেরত
দেবে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
আটটি সাধারণ বোর্ডসহ মাদ্রাসা ও কারিগরি এবং
বোর্ডের পাশাপাশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১১-২০১৩ সালে এসএসসি
পাসকৃত শিক্ষার্থীরা এবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পাবে।
বিজ্ঞান শাখা থেকে উত্তীর্ণরা যে কোনো বিভাগে ভর্তি হতে পারবে। মানবিক
শাখা থেকে উত্তীর্ণরা মানবিকের পাশাপাশি ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভর্তি হতে
পারবে। আর ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে
ভর্তি হতে পারবে।
আসন সংরক্ষণ
সাতটি বিভাগীয় সদরের কলেজে ভর্তির
ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কলেজের ৯০ শতাংশ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। অবশিষ্ট
১০ শতাংশ আসনের মধ্যে ৩ শতাংশ সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সদরের বাইরের এলাকার
শিক্ষার্থীদের জন্য, ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ২ শতাংশ শিক্ষা
মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্ত দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এবং স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ
সদস্যদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
বিভাগীয় শহর ছাড়া অন্য জেলা
শহরের কলেজের ৯০ শতাংশ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বাকী ৩ শতাংশ
সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সদরের বাইরের এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য, ৫ শতাংশ
মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্ত দপ্তরের
কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এবং স্ব স্ব
প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্দের সদস্যদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত রাখা
হয়েছে।
জিপিএ-৫, ৪৩ গ্রেড
জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সব বিষয়ের উপর সর্বোচ্চ ৪৩ গ্রেড পয়েন্ট ধরে জিপিএর ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করতে হবে।
বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের মেধাক্রম
নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত অথবা জীববিজ্ঞানে প্রাপ্ত
জিপিএ বিবেচনায় আনা হবে।
আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের ভর্তির
ক্ষেত্রে পর্ায়েক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলায় অর্জিত গ্রেড পয়েন্ট বিবেচনা
করা হবে।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভর্তি
স্কুল ও কলেজ সংযুক্ত
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিজ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির
সুযোগ পাবে। তিনশ’র বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অনুমতি আছে এমন
প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। তবে পাঁচশ’র বেশি
শিক্ষার্থী হলে অবশ্যই অনলাইনে ভর্তি করাতে হবে।
অতিরিক্ত ফি নিলে ব্যবস্থা
কোনো শিক্ষার্থীর কাছ
থেকে অনুমোদিত ফির বেশি নেওয়া যাবে না উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে,
অতিরিক্ত ফি নিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আশা করি প্রতিষ্ঠানগুলো এ ব্যাপারে সজাগ থাকবে।
নটরডেমে ভর্তি পরীক্ষা
সকল
কলেজে মাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী করা হলেও গত বছর রাজধানীর
নটরডেম কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
এবারো প্রতিষ্ঠানটি ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে আবেদন করেছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারি।
অন্য
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে আবেদন করলে কি করবেন- এমন
প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানতো আর এক না। নটরডেম
কলেজে অল্প টাকায় দরিদ্র মেধাবীদের শিক্ষা দিচ্ছে। তাদের বিষয়টি তো বিবেচনা
করা যেতেই পারে।
সভায় শিক্ষা সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী,
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, ঢাকা
শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম উপস্থিত ছিলেন।
গত ৯ মে দশ বোর্ডের (আটটি সাধারণ বোর্ড, কারিগরি ও মাদ্রাসা) অধীনে
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে ৮৯ দশমিক ০৩ শতাংশ
শিক্ষার্থী পাস করেছে, যাদের মধ্যে ৯১ হাজার ২২৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাস ও
জিপিএ- প্রাপ্তির দিক থেকে রেকর্ড সৃষ্টি করে মাধ্যমিক স্তরের
শিক্ষার্থীরা।
গত ৩ ফ্রেবুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষায় ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করে ১১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৭৮ জন।
উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের শ্রেণিতে ভর্তির পরও এ বছর এক লাখের ওপরে আসন খালি থাকবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
No comments:
Post a Comment