Sunday, May 12, 2013

‘এরা নাকি অনলাইন সাংবাদিক’

সাংবাদিক পরিচয়ে নগরীর কোতয়ালী থানার দেবপাহাড় এলাকায় অনলাইন সংবাদপত্রের অফিস খুলেছিলেন কয়েকজন যুবক। অনলাইন সংবাদপত্রের নাম ‘মোহনা টুয়েণ্টিফোর.কম’। একইসঙ্গে ছিল সংবাদ মোহনা নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ও। ভূইফোঁড় এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচয়ে সরকারী-বেসরকারী, রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচীও কাভার করতেন তারা।

কিন্তু শুক্রবার রাতে একটি অপহরণের ঘটনা তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছে।

শুক্রবার রাতে ‍কথিত অনলাইন সাংবাদিক নামধারী কয়েকজন দুর্বৃত্ত বেল্লাল হোসেন নামে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন কারারক্ষীকে আটকে রেখে দু’লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। জানতে পেরে পুলিশ হানা দেয় কথিত ওই ‍অনলাইন সংবাদপত্র অফিসের কার্যালয়ে। পুলিশ দেখে পাশের বাড়ির ছাদে উঠে পালিয়ে যায় কথিত ওই অনলাইন সংবাদপত্রের কথিত ব্যুরো প্রধান। ধরা পড়েন সাংবাদিক নামধারী তিন প্রতারক।

কোতয়ালী থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘অনলাইন সংবাদপত্রের নামে অফিস খুলে তারা মাদকের ব্যবসা করত। বিভিন্ন ধরনের মেয়ে নিয়ে আসত ‍অফিসের ভেতর। লোকজনকে জিম্মি করে টাকাপয়সা আদায় করত। এরা নাকি অনলাইন সাংবাদিক।’

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ছগীর মিয়া বাংলানিউজকে জানান, কারারক্ষী বেল্লাল শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তার বাসা থেকে বের হয়ে রুবেল নামে তার এক ভাতিজাকে খোঁজার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে কৌশলে বেল্লালকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

রাত ৮টার দিকে রাত ৮টার দিকে কারারক্ষী বেলাল ফোন করে আরেক কারারক্ষীকে জানায়, তিনজন সাংবাদিক তাকে নগরীর দেবপাহাড় এলাকায় মোহনা সংবাদ নামে একটি পত্রিকার অফিসে আটকে রেখেছে। দু’লক্ষ টাকা না দিলে তাকে ছাড়বেনা বলে জানিয়েছে ওই সাংবাদিকরা। এসময় কারারক্ষী বেলাল তাকে ‌উদ্ধারের আকুতি জানায়। ঘটনাটি জানতে পেরে জেল সুপার তাৎক্ষণিকভাবে কোতয়ালী থানার ওসিকে অবহিত করেন।

বেল্লাল তার স্ত্রীকেও একইভাবে ঘটনাটি জানায়। বেল্লালের স্ত্রীও কোতয়ালী থানার ওসিকে বিষয়টি অবহিত করেন।

এরপর রাতে ওসি’র নেতৃত্বে একদল পুলিশ দেবপাহাড় এলাকায় কথিত অনলাইন সংবাদপত্র কার্যালয়ে অভিযান চালায়। অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে কথিত ব্যুরো প্রধান জাহাঙ্গীরসহ ৬-৭জন পাশের বাসার ছাদে লাফিয়ে পড়ে পালিয়ে যান। পুলিশ ওই কার্যালয় থেকে তিনজনকে আটক করেন এবং বেল্লালকে মুক্ত করেন।

আটক তিন দুর্বৃত্ত হল, কুতুব উদ্দিন (৩৫), ওয়াসিম (২৯) এবং কফিল উদ্দিন (২৫)।

কোতয়ালী থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রথমে যখন পুলিশ ওই কার্যালয়ে যায় তখন তারা সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে হুমকি ধমকি দেয়া শুরু করেন। এরপর তারা যখন বুঝতে পারে, পুলিশের হাত থেকে এবার তাদের রক্ষা ‍নাই, তখন পালাতে শুরু করে।’

ওসি জানান, সাংবাদিক নামধারী এসব দুর্বৃত্তের কারণে এলাকাবাসীও বিরক্ত ছিল। আটকের পর এলাকার লোকজন কথিত তিন সাংবাদিককে গণপিটুনি দেয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ এসময় উপস্থিত জনতাকে সরিয়ে তাদের জনরোষের হাত থেকে রক্ষা করেন।

কোতয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) সদীপ কুমার দাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাতিজা রুবেলকে খুঁজতে গিয়ে চকবাজার এলাকায় অপসাংবাদিকদের কবলে পড়েন কারারক্ষী বেল্লাল। তারা ভাতিজার জন্য নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কথা বলে কৌশলে তাকে অফিসে নিয়ে গিয়ে জিম্মি করে রাখে। অবশ্য পরে রুবেল ফিরে এসেছেন।’

কথিত অনলাইন সংবাদপত্র কার্যালয় থেকে উদ্ধার করা মালামালের মধ্যে আছে, ৮ বোতল ফেনসিডিল, ৩২০ পিস ইয়াবা, নগদ ৩২ হাজার ৪’শ টাকা, একটি কম্পিউটার, একটি নোটবুক ও একটি ল্যাপটপ, একটি স্ক্যানার, একটি ডিজিটাল ক্যামেরা, রেভিনিউ স্ট্যাম্প, দু’টি ক্রিকেটের স্ট্যাম্প সাইজের লাঠিসহ আরও বিভিন্ন জিনিসপত্র।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

No comments: