ফাইভ স্টার থেকে ফুটপাতের হোটেল-রেস্তোরাঁ, অভিজাত ক্লাব, গাছতলা থেকে সুরম্য প্রাসাদের অন্দরমহল_ সর্বত্র আজ মাছের রাজা ইলিশের জয়জয়কার। ইলিশ-পান্তা ছাড়া এখন আর উৎসবপ্রিয় বাঙালির নববর্ষ বরণ ভাবাই যায় না। ইলিশের কদর তাই আজ ঘরে-বাইরে সর্বত্র বেশি। ইলিশ মৌ মৌ ঘ্রাণ, সঙ্গে পান্তা কাচালঙ্কা আর পোড়া মরিচের সঙ্গে পেয়াজ ভাবলেই জিভে আসে জল। তাই দিয়ে বর্ষবরণের উৎসবে মেতেছে বাঙালি সর্বত্র। গুলশান-ধানমন্ডি, উত্তরা-বনানী নগরীর সব রেস্তোরাঁয় বিজ্ঞাপনের ব্যানার ঝুলিয়ে জানান দেওয়া হয়েছে ইলিশের মহাআয়োজনের সুসংবাদ। ইলিশের মৌসুম এখন নয়। বাজারে দাম তাই চড়া। তবুও সরবরাহে ঘাটতি নেই। বাজার, শপ, বাড়ি হাঁক-ডাক দিয়ে গত রাত পর্যন্ত মহাধুমধামে ইলিশ বিক্রি হয়েছে। বুদ্ধিমতী গৃহিণীরা আগেভাগেই ইলিশের মজুদ ঘরের ফ্রিজে করে ফেলেছেন।
'দামাদামি নাই। নিলে এক দাম তেরশ টাকা। জোড়া আড়াই হাজার'_ বুধবার সকালে মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের বাজারে এক মাছ বিক্রেতা এক কেজি ওজনের একেকটি ইলিশের জন্য এভাবেই দাম হাঁকলেন। বিক্রেতার বলা 'এক দামে' অনেককেই মাছ কিনতে দেখা গেল। আর আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় অনেকেই আবার ফিরে যাচ্ছিলেন মাছ না কিনেই। মিরপুরের মতো রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরেও ইলিশের দাম একই রকম দেখা যায়। কারণ পহেলা বৈশাখ। মিরপুর এক নম্বর, কারওয়ানবাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ইলিশ কিনতে ভিড় দেখা যায়। ইলিশের সরবরাহও বেশ, তবে দাম বেশি। অন্য সময় যে ইলিশ ৩৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়, বুধবার তা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। বছরের অন্য সময় কেজি ধরে ইলিশ বিক্রি হলেও বাংলা নববর্ষের ঠিক আগের দিন তা আর কেজি দরে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। ইলিশের পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে জাটকা। মিরপুর এক নম্বর বাজারের বিক্রেতা শাহিন বলেন, 'ঝামেলা না করে এক দামে বিক্রি করছি। কেউ না নিলে অসুবিধা নাই। রাতে আরও বেশি দামে বিক্রি
করা যাবে।'
'পাইকারদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই খুচরা বাজারেও দাম বেশি', বলেন তিনি। ইলিশের দাম যে অনেক বেশি তা টের পাওয়া গেল এনজিও কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের কথায়। ৯০০ টাকা দিয়ে একটি ইলিশ কিনে তিনি বলেন, 'মেয়ের বায়না মেটাতেই ইলিশ কেনা। একটি ইলিশ কিনেই বাজারের টাকা শেষ, তাই বাসায় চলে যাচ্ছি। আর ফিরোজা বেগম বাজারের বিভিন্ন দোকানে ঘণ্টাখানেক ঘুরেও বড় সাইজের একটি ইলিশ কিনতে পারেননি। তাই তার আক্ষেপটাও অন্যরকম_ 'কোথায় ইলিশ, বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে সবই তো জাটকা। মহানগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, জাটকা থেকে একটু বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৪০০ টাকায়। আর এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। মেগাশপগুলোতে ৬৫০-৮০০ টাকা কেজি দরে ইলিশ বিক্রির ঘোষণা থাকলেও সেখানে ইলিশ মিলছে না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। কলেজ শিক্ষার্থী মুরাদ জানান, চিড়িয়াখানা রোডে একটি নামকরা মেগাশপে বৈশাখ উপলক্ষে ৬৫০ টাকা কেজি ধরে ইলিশ বিক্রির কথা থাকলেও বুধবার সকালে সেখানে ইলিশ পাওয়া যায়নি।
No comments:
Post a Comment