বাফুফের ভবনে এখন পা রাখলে বিয়েবাড়ির একটা আবহ পাওয়া যায়। গোটা ভবনটা নতুন সাজে সাজছে। কর্মকর্তাদের কক্ষে দিনভর কোলাহল। সব মিলিয়ে মেসিদের বরণের পরিকল্পনা নিয়ে চলছে সাজ-সাজ রব।
এর মধ্যে কিছু সমস্যা আছে, আছে কিছু ভালো খবরও। ভালো খবরটাই আগে দেওয়া যাক। টিকিট বিক্রি নিয়ে হতাশাটা একটু একটু করে কমছে। কাল বিকেলে তো ম্যাচ আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হকের মুখে বেশ হাসিই ছিল, ‘টিকিটের চাহিদা বাড়ছে। আশা করছি, আগামী কয়েক দিনে আরও বাড়বে।’
এটা তিনি বলেছেন সাবেক ক্রিকেটার ইমরান হামিদ সাবেক ক্রিকেটারদের পক্ষে আটটি টিকিটের চাহিদাপত্র দিয়ে যাওয়ায়। সেখানেই শোনা গেল আতহার আলী, ফারুক আহমেদ, নাঈমুর রহমানসহ আরও কয়েকজন তাঁদের পক্ষে ইমরানকে পাঠিয়েছেন বাফুফের অফিসে। আজও নাকি আরও কিছু চাহিদাপত্র আসবে ক্রিকেটারদের। তাঁদের সবাইকে ক্লাবগুলোর জন্য বিশেষ মূল্যছাড়ের টিকিট দেওয়া হচ্ছে।
কাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাফুফে জানিয়েছে, ঈদের ছুটি বলে টিকিট কিনতে সমস্যা হবে না আগ্রহীদের। ২৭, ২৮ ও ২৯ আগস্ট এবং ৩, ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর আইএফআইসি ব্যাংকের মতিঝিল, গুলশান, মিরপুর, ইসলামপুর, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার, উত্তরা ও বসুন্ধরা শাখা খোলা থাকবে। এ ছাড়া ‘হ্যালভেসিয়া ফাস্ট ফুডের’ পাঁচটি শাখায় (রাইফেল স্কয়ার, ধানমন্ডি, বনানী, উত্তরা ও বেইলি রোড) গতকাল থেকে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।
সমস্যা আছে দুটি। একটি হলো টিভি সম্প্রচার। বাংলাদেশের দর্শক কোন টিভিতে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ঐতিহাসিক ম্যাচটি দেখতে পারবে, সেটি নিয়ে হঠাৎ করে জটিলতা দেখা যাচ্ছে। ৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ম্যাচটার সম্প্রচার প্রযোজনা স্বত্ব ইএসপিএনের। এর জন্য ইএসপিএনকে দিতে হবে ৯৩ হাজার ডলার। কিন্তু প্রোডাকশনের পর ম্যাচটা কি বাংলাদেশে শুধু ইনডিপেনডেন্ট টিভি দেখাবে, নাকি ইএসপিএনও দেখাবে, সেটি নিয়েই যত সমস্যা।
মেসিদের গোটা সফরের পৃষ্ঠপোষক বেক্সিমকোর দাবি, বাংলাদেশে শুধু তারাই ম্যাচটা দেখাবে। ইএসপিএন যদি দেখাতে চায়, তাহলে তা হতে পারে শুধু বাংলাদেশের বাইরের দর্শকদের জন্য। বাফুফে চায়, ইএসপিএন খেলা দেখাক, যাতে সারা বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারে।
কাল সারা দিনই ব্যস্ত ছিলেন বাফুফের কর্মকর্তারা। কিন্তু সিদ্ধান্ত কিছুই হয়নি। বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বিদেশে আছেন, দেশে ফিরে তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই চূড়ান্ত হবে বলে জানালেন আনোয়ারুল হক।
দ্বিতীয় সমস্যাটা হলো, মেসিদের থাকার হোটেল কাল পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। সোনারগাঁও হোটেলে বুকিং আছে গোটা আর্জেন্টিনা দলের এবং হোটেল কর্তৃপক্ষও চেষ্টা করছে মেসিদের রাখার জন্য। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এসে ওই হোটেলে উঠবেন বলে মেসিদের হোটেল বদলের আলোচনা হচ্ছে।
বাফুফের আবাসন কমিটির প্রধান শওকত আলী খান জানালেন, তাঁরা রূপসী বাংলায় আর্জেন্টিনাকে স্থানান্তর করে অন্য একটি হোটেল নাইজেরিয়াকে দিতে পারেন। কিন্তু অন্য দুটি বড় হোটেল থেকে টাকা আবার বেশি চাওয়া হয়েছে, এসব নিয়েই একটা ঘোরপ্যাঁচে পড়ে গেছে বাফুফে।
আর্জেন্টিনার কোচ আলেজান্দ্রো সাবেলা ২ সেপ্টেম্বর কলকাতায় আর্জেন্টিনা-ভেনেজুয়েলা ম্যাচের প্রস্তুতি দেখতে আগামী শনিবার কলকাতায় আসছেন। বাংলাদেশে এই সুযোগে আসবেন কি না, সেটি গতকাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনা থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।
অনুশীলনের মাঠ হিসেবে ফতুল্লা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অনুমোদন ঝুলে আছে। জানা গেছে, কলকাতা মোহনবাগান মাঠের ব্যাপারটাও একইভাবে নিষ্পত্তি হয়নি। মেসিদের অনুশীলনের জন্য ওই মাঠটাই দেখিয়েছেন সেখানকার আয়োজকেরা। অনুমোদন হবে কি না, সেটি তো পরের কথা। প্রস্তুতির জোর হাওয়া এখন মেসি-জ্বর ছড়াতে শুরু করেছে চারদিকে!