জিনের সংযুক্তি টানাপড়েনের গবেষণা জেনোমিক্সই সম্পূর্ণ নয়। এ বিষয়টি সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের দারুণ ভাবিয়ে তুলেছে। জিনের গঠন নেড়েচেড়ে তার উৎপন্ন প্রোটিন পর্যন্ত জানা হয়ে গেছে। এমন দুই বা তার বেশি প্রোটিন পরস্পর কিভাবে বিক্রিয়া করে তাই জানার সময়। এ সময় যদি কেউ বলেন_ না, জেনোমিক্সই সম্পূর্ণতা পায়নি। তখন বিষয়টি গোলমাল লাগবেই। এটাই স্বাভাবিক। কেন জিনের সংযুক্তির খোঁজ সম্পূর্ণ নয়! বিজ্ঞানীরা বলছেন, একই ধরনের জিন থেকে তৈরি যমজ শিশু কিভাবে বড় হলে বদলে যায়। আচার-ব্যবহার থেকে তাদের শারীরিক গঠন কেন দু'জনের মধ্যে পার্থক্য এনে দেয়? এটি জেনোমিক্স বা জিনতত্ত্বে নেই। এটাও পরীক্ষিত সত্য, যমজ ভাই বা বোনের মধ্যে ছোটবেলায় অনেক মিল থাকলেও বয়সের সঙ্গে এই মিল কমে আসে। দু'জনের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা থেকে উর্বরা শক্তি, মস্তিষ্কের বুদ্ধিমত্তা থেকে শারীরিক সৌষ্ঠব সবটাই কেমন যেন পাল্টে যায়। এমনকি রাসায়নাগারে তৈরি ক্লোনিংয়ের ক্ষেত্রেও এ ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। মনে করুন ডলির কথা। ডলিকে ক্লোনিং করে সার্থক ভেড়ার রূপ দেওয়া হলেও সে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত বার্ধ্যকে পেঁৗছে গেল। আর্থারাইটিস তাকে গ্রাস করে নিল। যমজ বা ক্লোনিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি একই। একই জিনগত প্রক্রিয়ায় তৈরি দুই ক্ষেত্রেই চারিত্রিকগত প্রভেদ চোখে পড়ার মতো। এসব থেকেই জিনের বাইরেও কিছু নিয়ামকের কথা ঘোরাফিরা করছিল বিজ্ঞানীদের মনে। যারা নিশ্চিত ছিলেন জেনেটিক্স বা জিনতত্ত্ব শুধু জিনের নিয়ামক শক্তি নয়। এতদিন জিনের 'ডিএনএ'-কে কোষের চর্বি বলে মনে করতেন সবাই। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে ঘটনা ডিএনএ তার একচ্ছত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না। এই জাতীয় প্রশ্নের সমাধানে জীববিজ্ঞানে এক নতুন ধারা আসছে। এর নাম এপি জেনেটিক্স। যদিও 'এপি জেনিটিক্স' শব্দটি খুব একটি নতুন নয়। ১৯৪২ সালে জীববিজ্ঞানী সিএইচ ওয়েডিংটন এই নতুন শাখার বিষয়ে প্রথম ধারণা দিয়েছেন। তিনি এপি জেনেটিক্সের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছিলেন_ এপি জেনেটিক্স জীববিজ্ঞানের এমনই একটি শাখা, যা জিন ও তার উৎপাদন নিয়ে চর্চা করে। জিনের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দেয়। জিনের পরিপ্রেক্ষিতে বাহ্যিক গঠন নিয়ে ধারণা দেয় এই শাখা। দীর্ঘ ১০০ বছর অতিক্রান্ত। ওয়েডিংটন তার মতবাদ দিয়েছেন। আজও তার চিন্তা প্রাণী বিজ্ঞানীদের নতুন করে ভাবাচ্ছে। কারণ জিনের গঠনশৈলী থেকে তার প্রকাশভঙ্গি জানা গেলেই জীবের গোটা বিষয়টি বোঝা সম্ভবপর হচ্ছে না। আধুনিক গবেষণা ওয়েডিংটনের ধারণাকে সমর্থন করেছে। এটা পরীক্ষাগতভাবে জানা গেছে। জিনোমে ডিএনএ-র চারটি তথ্যধারী বেসে (অ.ঞ..েঈ) যাবতীয় কোষের স্বভাবের খতিয়ান থাকে না। কিছু অতিরিক্ত তথ্যসূত্রও স্তন্যপায়ীর জিনোমের বহিঃস্তর হিসেবে জমা হয়ে থাকে। ব্যাপারটা অনেকটা তেলভর্তি পাত্র না পাত্রভর্তি তেলের মতো। বলা হচ্ছে, এপি জেনেটিক কোষের একটি অংশের তথ্যবিষয়ক ধারণা, যা কোষ বিভাজনের সময় বংশধারায় ঢুকে পড়ে। কিন্তু ডিএনএ গঠন পুনঃসংযুক্তির সময় অংশ নেয় না। বংশগত হয়েও ডিএনএ সংশ্লেষণে অনুপস্থিত এই এপি জিন। এপি জেনেটিক্স নিজে তো অংশ নেয় না, উল্টা ডিএনএ রাসায়নিক পুনর্গঠনকে প্রভাবিত করে। ডিএনএ-র সঙ্গে সরাসরি যুক্ত প্রোটিনকে (হিসটোন) পরিবর্তন করে দেয়।
No comments:
Post a Comment