কত মানুষ কি করছে। কেউ হেঁটেই সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে আবার কেউ পানির ওপর রীতিমতো হেঁটে সবাইকে চমকে দিচ্ছে। তবে এবার নতুন করে আরও একটি হাঁটার কাহিনী বিশ্বব্যাপী বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করল। হেঁটে পৃথিবীর দীর্ঘতম বন আমাজন পাড়ি দেওয়ার এক দুঃসাহসী পরিকল্পনা আঁটলেন সাবেক ব্রিটিশ সেনা অকুতোভয় অ্যাড স্ট্যাফোর্ড। পূর্বঅভিজ্ঞতা নেই। শুধু জানা আছে, তার আগে আর কেউ সাহস করেননি এ কাজে। সফল হলেই বিশ্বরেকর্ড। সব গুছিয়ে রওনা হলেন একদিন। শুরু হলো নতুন অধ্যায়। তবে আমরা সেই দুঃসাহসী অ্যাড স্ট্যাফোর্ডের কাছ থেকেই শুনব তার এই অভিযানের কথা। বিখ্যাত ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি মেইল থেকে ভাষান্তর করে আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো : আমাজানের গহিন বন। ঘন পত্রপল্লবের শামিয়ানা ফুঁড়ে সূর্যের আলো ঢুকতে পারে না। রবারের ডিঙিটাকে পানিতে নামাতে যাচ্ছি, চোয়ের সতর্ক কণ্ঠ, পেছনে, অ্যাড! ঘুরেই হিম হয়ে গেল বুকের রক্ত। পাঁচ ক্যানোভর্তি (বিশেষ ধরনের নৌকা) অর্ধনগ্ন লালমুখো একদল আদিবাসী। ধনুকে টানটান বিষাক্ত তীর। মেয়েদের হাতে চকচকে ধারাল দা। মনে হলো থমকে গেছে সময়। চো আর আমার অবস্থা দাঁড়াল ফাঁদে আটকাপড়া বুনো জন্তুর মতো। একটাই ভাবনা ঘুরপাক দিচ্ছে মাথায়-ওরা কী জানে না এসবের জন্য আমাদের হাতে সময় নেই এক মুহূর্ত! হেঁটে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মাইল দীর্ঘ আমাজান পাড়ি দেওয়ার চিন্তা প্রথম মাথায় আসে ২০০৫ সালে। দিনগুলো ছিল ঠাণ্ডা। জঙ্গল নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখা শুরু হলো আমার। মনে হলো, অরণ্যে সূর্য নিশ্চয়ই আরও উষ্ণ। সামনে কী অপেক্ষা করছে ধারণা ছিল না। শীঘ্রই এলাম বিশ্বের গভীরতম কোলচা ক্যানিয়নে। দেখা হলো হাজার বছর আগে মমিকৃত ইনকাদের সঙ্গে। সামনে কুখ্যাত রেড জোন। মাদক কারবারি আর সন্ত্রাসবাদী দলের ঘাঁটি। ওজ নামে এক পেরুভিয়ান গাইড জুটিয়ে নিলাম। মাইলের পর মাইল গোপন কোক ক্ষেত। গুলি খেয়ে মরার ভয়ে কেটে পড়ল ওজ। পুয়ের্টো ওকোপার কাছে ইলিয়াস নামে ১৬ বছরের এক আশানিনকা ইন্ডিয়ান ছেলেকে বানালাম গাইড। গল্পচ্ছলে ওর পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলাম। জানাল ছয় দিন আগে ওর মাকে গলায় পেরেক ঢুকিয়ে হত্যা করেছে গোত্রের লোকেরা। কেন, তা জানার আগ্রহ উবে গেল নিমেষে।
এক গ্রামে মাসাটো নামে মেয়েদের থুতু দিয়ে বানানো এক প্রকার চোলাই দিয়ে আপ্যায়ন করা হলো আমাদের। না খেলে অপমান! বাধ্য হয়ে গিলতে হলো তা-ই। পামাকিয়ারিতে বালতি ভর্তি পানি ছুড়ে মারা হলো আমাদের ওপর। বন্ধুভাবাপন্ন এক ইন্ডিয়ান জানাল, পরের গ্রামে আমাকে চড়ানোর জন্য শূল বানিয়ে অপেক্ষা করছে সবাই। আমি নাকি ওদের মাটির নিচে থাকা তেল চুরি করতে আসছি। আমার মন খারাপ হয়ে গেল এসব শুনে। এ সময় গাইড হিসেবে যোগ দিল ৩০ বছরের টসবগে যুবক চো। হাঁটার গতি এখন মন্থর। নদী কোথাও আঁকাবাঁকা, কোথাও খাড়া ঢালু। বুক সমান নিবিড় ঘাসবন। হাঁটতে গেলে জড়িয়ে যায় পায়ে। আগস্টের ২৪ তারিখে শুরুতেই বলা খুনে ইন্ডিয়ানগুলোর সামনে পড়লাম আমরা। ওরা আমাদের বন্দি করে নিয়ে গেল প্রধান কুঁড়েতে। গ্রামপ্রধান জানালেন বিনা অনুমতিতে এলাকায় ঢুকে আমরা নিয়ম ভঙ্গ করেছি। ব্যাখ্যা শুনে শান্ত হলো। যেতে দেবে, শর্ত একটাই, গ্রামপ্রধান আর তার ভাইকে আমাদের গাইড হিসেবে নিতে হবে। দা দিয়ে ঝোপ কেটে পথ বানিয়ে হাঁটছি। প্রতি মিনিটে গড়ে ১০টি মশার কামড় খাচ্ছি। একবার খেলাম মোরগের অণ্ডকোষ। আরেকবার বানরের মাংস। একবার খেলাম বিলুপ্তপ্রায় দুর্লভ প্রজাতির টাপির। একবার হাঁটার মাঝখানে আচমকা থামতে ইশারা করল চো। আঙ্গুল তুলল ঝোপের নিচে। কুণ্ডলী পাকিয়ে ফণা মেলে ছোবল দিতে প্রস্তুত কুখ্যাত এক পিট ভাইপার। এক ছোবলেই চুলের গোড়া, চোখ, কান আর নখের গোড়া থেকে বলক দিয়ে বেরিয়ে আসবে রক্ত। এ অভিজ্ঞতার মাঝেই আসবে মৃত্যু। ২০০৯ সালের ২১ ডিসেম্বর অভিযানের ২১ মাস পূর্ণ হলো। আমাজানের ওপর বিষিয়ে উঠেছে মন। কেবল ভাবছি বন্ধুদের মুখ। নিজেকে উজ্জীবিত রাখার জন্য আমি গাইতাম প্রয়াত রয় ক্যাসেলের গাওয়া 'ডেডিকেশন'। অবশেষে ৮ আগস্ট রোববার নাকে ভেসে এলো সমুদ্রের নোনা ঘ্রাণ। পিঠের ঝোলা ছুড়ে ফেললাম। ছুটে গিয়ে ঝাঁপ দিলাম অথৈ জলরাশির আটলান্টিকের বুকে। জীবনে এই প্রথমবার সাগর দেখছে চো। খতম হলো কিস্সা। ৮৬০ দিনে ৮ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ হাঁটা, ৯০ লাখ পদক্ষেপ, মাথাপিছু ২ লাখের বেশি মশার কামড়, ৬০০ মাকড়সার দংশন, এক ডজন বিছার কামড় আর একটি গিনেস বিশ্বরেকর্ড। জীবনে এত সুখ আগে কখনো পাইনি!
এক গ্রামে মাসাটো নামে মেয়েদের থুতু দিয়ে বানানো এক প্রকার চোলাই দিয়ে আপ্যায়ন করা হলো আমাদের। না খেলে অপমান! বাধ্য হয়ে গিলতে হলো তা-ই। পামাকিয়ারিতে বালতি ভর্তি পানি ছুড়ে মারা হলো আমাদের ওপর। বন্ধুভাবাপন্ন এক ইন্ডিয়ান জানাল, পরের গ্রামে আমাকে চড়ানোর জন্য শূল বানিয়ে অপেক্ষা করছে সবাই। আমি নাকি ওদের মাটির নিচে থাকা তেল চুরি করতে আসছি। আমার মন খারাপ হয়ে গেল এসব শুনে। এ সময় গাইড হিসেবে যোগ দিল ৩০ বছরের টসবগে যুবক চো। হাঁটার গতি এখন মন্থর। নদী কোথাও আঁকাবাঁকা, কোথাও খাড়া ঢালু। বুক সমান নিবিড় ঘাসবন। হাঁটতে গেলে জড়িয়ে যায় পায়ে। আগস্টের ২৪ তারিখে শুরুতেই বলা খুনে ইন্ডিয়ানগুলোর সামনে পড়লাম আমরা। ওরা আমাদের বন্দি করে নিয়ে গেল প্রধান কুঁড়েতে। গ্রামপ্রধান জানালেন বিনা অনুমতিতে এলাকায় ঢুকে আমরা নিয়ম ভঙ্গ করেছি। ব্যাখ্যা শুনে শান্ত হলো। যেতে দেবে, শর্ত একটাই, গ্রামপ্রধান আর তার ভাইকে আমাদের গাইড হিসেবে নিতে হবে। দা দিয়ে ঝোপ কেটে পথ বানিয়ে হাঁটছি। প্রতি মিনিটে গড়ে ১০টি মশার কামড় খাচ্ছি। একবার খেলাম মোরগের অণ্ডকোষ। আরেকবার বানরের মাংস। একবার খেলাম বিলুপ্তপ্রায় দুর্লভ প্রজাতির টাপির। একবার হাঁটার মাঝখানে আচমকা থামতে ইশারা করল চো। আঙ্গুল তুলল ঝোপের নিচে। কুণ্ডলী পাকিয়ে ফণা মেলে ছোবল দিতে প্রস্তুত কুখ্যাত এক পিট ভাইপার। এক ছোবলেই চুলের গোড়া, চোখ, কান আর নখের গোড়া থেকে বলক দিয়ে বেরিয়ে আসবে রক্ত। এ অভিজ্ঞতার মাঝেই আসবে মৃত্যু। ২০০৯ সালের ২১ ডিসেম্বর অভিযানের ২১ মাস পূর্ণ হলো। আমাজানের ওপর বিষিয়ে উঠেছে মন। কেবল ভাবছি বন্ধুদের মুখ। নিজেকে উজ্জীবিত রাখার জন্য আমি গাইতাম প্রয়াত রয় ক্যাসেলের গাওয়া 'ডেডিকেশন'। অবশেষে ৮ আগস্ট রোববার নাকে ভেসে এলো সমুদ্রের নোনা ঘ্রাণ। পিঠের ঝোলা ছুড়ে ফেললাম। ছুটে গিয়ে ঝাঁপ দিলাম অথৈ জলরাশির আটলান্টিকের বুকে। জীবনে এই প্রথমবার সাগর দেখছে চো। খতম হলো কিস্সা। ৮৬০ দিনে ৮ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ হাঁটা, ৯০ লাখ পদক্ষেপ, মাথাপিছু ২ লাখের বেশি মশার কামড়, ৬০০ মাকড়সার দংশন, এক ডজন বিছার কামড় আর একটি গিনেস বিশ্বরেকর্ড। জীবনে এত সুখ আগে কখনো পাইনি!
No comments:
Post a Comment