Sunday, May 1, 2011

রুপকথার বিয়ে


পৃথিবীতে নাকি রূপকথার মৃত্যু হয়েছে। ধুলোয় মিশে গেছে

আবেগ, রোমান্স আর প্রণয়কথন। শেষবার পৃথিবী তা দেখেছিল চার্লস ও ডায়ানার বিয়ের দিন। আর প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে প্যারিসে সেই রূপকথারও অকাল মৃত্যু হয়েছিল। কেউ কি ভেবেছিল ৩০ বছর পর আবার সেই রূপকথা ফিরে আসবে? তাও আবার ডায়ানারই ছেলে উইলিয়াম আর সাধারণ ঘরের মেয়ে কেটের বিয়েতে। ২৯ এপ্রিল গোটা পৃথিবী অবাক চোখে তাকিয়ে দেখল ভালোবাসার দুর্বার শক্তিতে অতি সাধারণ কেট কিভাবে হয়ে ওঠলো ব্রিটিশ রাজ পরিবারের উত্তরাধিকারী প্রিন্স

উইলিয়ামের ঘরণী। ব্রিটিশদের সঙ্গে সঙ্গে ঘোটা বিশ্ব

অবাক বিস্ময়ে দেখেছে কিভাবে ভালোবাসার বন্যায় ভেসেছে লন্ডন। এমন রূপকথার দেখা সচরাচর মেলে না। আর এ জন্যই তা এত দুর্লভ। চার্লস-ডায়ানার মতো আর একটি রূপকথার অমর চরিত্র হয়ে সবার সামনে ধরা দিলেন উইলিয়াম ও কেট।

তোমাকে অপূর্ব দেখাচ্ছে

প্রিন্স সবার আগেই চলে এসেছেন। একে একে আসেন অন্যরাও। তবুও তার দেখা নেই। উইলিয়ামকে বেশ কিছুসময় অপেক্ষা করিয়ে সব শেষে এলেন কনে কেট। বিয়ের পোশাক পরে ওয়েস্টসমিনিস্টার অ্যাবের সামনে গাড়ি থেকে নামলেন কেট। ততক্ষণে ফিস্ফাস গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। ভাবিকে দেখে উচ্ছ্বসিত হ্যারি বড় ভাইকে বললেন, 'সে এসে গেছে।' উইলিয়ামের পাশে এসে দাঁড়ালেন কেট। তার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে কেটের কানে কানে উইলিয়াম বললেন, 'তোমাকে অপূর্ব দেখাচ্ছে।'

বেয়াড়া ঘোড়া
রাজসিক ঘোড়ার গাড়িতে তখন প্রাসাদে যাচ্ছেন নবদম্পতি। সামনে-পেছনে সারিবদ্ধ অশ্বারোহী। রাস্তার দু'ধারে হাজার মানুষের আকাশ ফাটানো চিৎকারে এক কালো ঘোড়ার মেজাজ গেল বিগড়ে। লাফিয়ে উঠে পিঠ থেকে ফেলেই দিল আরোহীকে। তাকে ধরে বাগে আনার চেষ্টা করলেন ওই ভূপতিত রক্ষী। লাভ হলো না। নবদম্পতির গাড়িকে পেরিয়ে ঘোড়া দিল দৌড়। গোটা সময়টায় হতভম্ব কেটকে সামলালেন।

পথ দেখায়...
মাকে স্মরণ করেই নিজের নতুন জীবনের পথ চলা শুরু করলেন রাজপুত্র উইলিয়াম। ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে বিয়ের প্রথা শুরু হয় ডায়নাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে। উইলিয়ামের নিজের পছন্দ করা রাগবি দলের 'অ্যানথেম'-এর কথা দিয়েই এদিন ডায়ানাকে স্মরণ করে ব্রিটেন। সজল চোখে উইলিয়াম গেয়ে ওঠেন 'আমার পথ দেখায় তোমারই কথা...'

মহাকাশ থেকে শুভেচ্ছা
উইলিয়াম আর কেটের বিয়েকে ঘিরে উৎসাহ শুধু পৃথিবীর গণ্ডিতেই আবদ্ধ নেই, শুভেচ্ছা বার্তা ভেসে এসেছে সুদূর মহাকাশ থেকেও। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন নভোচারীরা।

গুগলেও বিয়ে
উইলিয়াম এবং কেটের বিয়ে নিয়ে ঠিক কতটা উচ্ছ্বসিত বিশ্ববাসী তার আঁচ এদিন পাওয়া যায় গুগল দেখেই। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এই তথ্য অনুসন্ধান ওয়েবসাইটটি এদিন বিয়ে উপলক্ষে বিশেষ চিত্র বা 'ডুডুল' দিয়ে সাজিয়েছিল নিজেদের সাইটটি। কোনো বিয়ে উপলক্ষে এই সাজ এবারই প্রথম।

গাড়ি কাহিনী
মোটরগাড়িতে যাওয়া, ঘোড়ার গাড়িতে ফেরা। রাজপরিবারের বিয়ের গাড়ি কাহিনীটি বেশ মজাদার। বিয়ের পর চার ঘোড়ায় টানা যে ল্যান্ডোগাড়িতে কেট-উইলিয়াম প্রাসাদের পথ ধরলেন, সেটি কিন্তু ১৯০২ সালের সৃষ্টি। বিয়ের পর এই গাড়িতেই প্রাসাদে ফিরেছিলেন উইলিয়ামের বাবা-মা।

এবং বিপত্তি
কেট-উইলিয়ামের বিয়ের দিন ৪৩ জনকে গ্রেফতার করে লন্ডন পুলিশ। শান্তি ভঙ্গ, মাতলামি, চুরি, নিগ্রহ এমন নানা অভিযোগে ধরা হয়েছে তাদের। এমনিতেই শহরে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি ছিল। সব মসৃণভাবে যাতে হয়, সেটা তো দেখতে হবে! আবার রাজপরিবারের বিয়ের কিছু 'প্রতিবাদী'ও জড়ো হচ্ছিলেন লন্ডনে। পুলিশ অবস্থা সামলেছে। দু'জন প্রতিবাদীকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তারা।

আনন্দের ফোয়ারা
গ্রামের মেয়ের বিয়ে। তাও আবার রাজবাড়িতে। এর চেয়ে আনন্দের কিছু হয় নাকি? তাই গোটা বাকলবারি গ্রামই যেন উত্তাল হয়ে গেল কেট মিডলটনের বিয়েতে। শত শত মানুষ কাজকর্ম ভুলে পড়ে রইল শহরতলি বাকলবারির এক বিশাল সবুজ মাঠে। সেই মাঠের এক প্রান্তে টাঙানো মস্ত টিভি পর্দায় তাদের চোখ তখন মুগ্ধ এবং অপলক। তাদের গ্রামের মেয়ে কেট যে সেখানে পর্দাজুড়ে নতুন জীবনের প্রবেশপথে। হ্যাঁ, এই বাকলবারি গ্রামেরই মেয়ে রাজকন্যা কেট। এ কারণেই গ্রামের মানুষের ঢল নামে এদিন বাকলবাড়িতে। কেটের গ্রামের মানুষজনের এ আনন্দ যদি দেখতেন কেট!

উইলিয়াম ও কেটের নয়া উপাধি
বিয়ের পর নতুন উপাধি পেলেন প্রিন্স উইলিয়াম ও ক্যাথরিন মিডলটন। ডিউক অব কেমব্রিজ এবং ডাচেস অব কেমব্রিজ। বাকিংহাম প্যালেস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে কেবল একটি উপাধিতেই আবদ্ধ থাকছেন না প্রিন্স উইলিয়াম। ডিউক অব কেমব্রিজ ছাড়াও তার মুকুটে যুক্ত হচ্ছে আরও দুটি
নতুন পালক। আর্ল অব স্ট্র্যাথিয়ার্ন
এবং ব্যারন ক্যারিকফার্গাস।

No comments: