বোনকে হারিয়েছি। এবার নিজের জীবন নিয়েই শঙ্কায় আছি। গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার কোর্টের এজলাসে দাঁড়িয়ে রেজা আমার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছিল যেন এখনই পারলে মেরে ফেলে। পরে বিভিন্ন সময় নানা লোক দিয়ে আমাকে হেনস্থা করার চেষ্টা করেছে। উকিলের কক্ষে বসা অবস্থায় রেজার বড় বোন আমাকে উল্টো পুলিশের ভয় দেখিয়েছে।' গতকাল এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন নিহত কামরুন্নাহার নাদিয়ার (৩৫) একমাত্র ছোট ভাই শাহরিয়ার সিরাজ সুজন। এদিকে গতকাল সকাল ১০টার দিকে পুলিশ তালা ভেঙে তল্লাশি চালায় রেজার রায়েরবাজার ৯০/এ হাতেমবাগের ভাড়া বাসায়। তবে ওই বাসা থেকে দুটি লাঠি ছাড়া আর কিছু উদ্ধার করতে পারেনি। ঘটনার এক সপ্তাহ পর গতকাল আদালতের অনুমতিক্রমে পুলিশ ওই বাসায় তল্লাশি করে। তবে বাসায় দুটি লাঠি পেলেও তা জব্দ করেনি পুলিশ। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই বাসার দারোয়ান ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওইদিন দুপুর ১২টা ও বিকাল ৪টার দিকে রেজাউলের ছোট ভাই জুয়েল ওই বাসায় গিয়েছিল। ওই সময় সে দুটি বস্তা নিয়ে বের হয়ে যায়। নিহতের ভাই সুজন এ প্রতিবেদককে বলেন, 'ওইদিন কয়েকজন হিজড়া নিয়ে আদালতের বিভিন্ন স্থানে হাজির হয়েছিলেন রেজার বড় বোন। হিজড়ারা নাম ধরেই আমাকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে থাকে। আসামি জামিন নিয়ে কোনোভাবে আসতে পারলে সে আমার অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে।' জানা গেছে, গত তিন মাস আগে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফেরার পথে নাদিয়াকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন রেজা। ওই সময় তাদের গাড়িচালক মোশাররফ নাদিয়াকে রেজার হাত থেকে রক্ষা করেন। এ কারণে রেজা মোশারফের ওপর চড়াও হন। পরে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন রেজা। এদিকে মামলা দায়েরের পর থেকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রহস্যজনক আচরণ করছেন। শুরু থেকেই মামলার ব্যাপারে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামাই আদরেই সময় পার করছেন রিমান্ডে থাকা আসামি শফিকুর রহমান ওরফে রেজা। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর রেজার আত্মীয়স্বজন তার সঙ্গে দেখা করার জন্য হাজারীবাগ থানায় আসছেন। পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন কোনো নিয়মের বালাই নেই সেখানে। দর্শনার্থীরা আসামি রেজার সঙ্গে দেখা করা ছাড়াও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ থানার পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বসে হাসি-ঠাট্টা করে সময় পার করছেন। এছাড়া শুক্রবার একটি টিভি চ্যানেলে ফুটেজ দেওয়ার জন্য পুরোপুরি মেকআপ করেই ক্যামেরার সামনে আসেন রেজা। অশোভন আচরণ করেন ওই মিডিয়া কর্মীদের সঙ্গে। এ ব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, এসব বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। মামলার অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ওসি জানান, রেজা অত্যন্ত ধূর্ত। সে একবার খুনের ব্যাপারে স্বীকার করলেও অন্য সময় তা অস্বীকার করছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে সব বলা সম্ভব হচ্ছে না। প্রসঙ্গত, স্ত্রী নাদিয়ার লাশ নিয়ে গাড়িতে করে ৯ ঘণ্টা ঘোরার পর ২৪ এপ্রিল শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে আটক হন রেজা।
No comments:
Post a Comment