‘ভগবানের কাছে একটাই চাওয়া, আমার মেয়ের চোখটি যেন ভালো করে দেন। আমার মেয়ে
যেন আবার আগের মতো হয়, আবার পড়ালেখা করতে পারে।’ এই চাওয়া অন্তু বড়ুয়ার মা
শিল্পী বড়ুয়ার। অন্তু বড়ুয়া নগরের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গত ২৮ মার্চ চট্টগ্রামে ১৮-দলীয় জোটের টানা ৩৬ ঘণ্টা হরতালের সময় ককটেল
বিস্ফোরণে চোখে আঘাত পায় অন্তু। গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে অন্তুকে
ভর্তি করা হয় রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। গতকাল
সোমবার বিকেলে অন্তুর চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড বসে। ছয় সদস্যবিশিষ্ট এই
বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অন্তুর চিকিৎসা আপাতত এই হাসপাতালেই চলবে। কাল
বুধবার আবার অন্তুর সার্বিক বিষয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
গতকাল দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে কথা হলো অন্তু মা-বাবার সঙ্গে। হাসপাতালের
শয্যায় বিমর্ষ অন্তু। গণমাধ্যমের কর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে
কিছুটাও বিরক্তও সে।
গতকাল স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্যসচিব এম এম
নিয়াজউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক জুলফিকার আলীসহ অনেকেই
অন্তু বড়ুয়াকে দেখতে হাসপাতালে যান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী,
প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের
ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দেন তাঁরা।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক দীন মো. নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে
অন্তুর ৭০ শতাংশ দৃষ্টি ঠিক আছে। তবে তার চোখের অবস্থা আরও খারাপ হবে কি
না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ছয় মাস থেকে এক বছর পরে গিয়ে তা হয়তো বলা যাবে।
চোখের আঘাতের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে রেটিনা, কর্নিয়া, লেন্সে ক্ষতি হতে
পারে। এ কারণে গ্লুকোমা হতে পারে, চোখে ছানিও পড়তে পারে।
চিকিৎসকেরা জানালেন, অন্তুর চোখের বাইরের দিকে পাঁচটি সেলাই দিতে হয়েছে।
ব্যান্ডেজ খোলা হলেও সে ভালো করে তাকাতে পারছে না। ঝাপসা দেখছে।
অন্তুর মা বলেন, ‘আমার মেয়ে চোখ হারাতে বসেছে। এর যে কী যন্ত্রণা, তা আমি
বুঝতে পারছি। আর কোনো মাকে বা অভিভাবককে যেন এই পরিস্থিতির মুখে পড়তে না
হয়।’
পাশে বসা অন্তুর বাবা ব্যাংক কর্মকর্তা অঞ্জন বড়ুয়া বলেন, ‘সরকার অপরাধীদের শাস্তি দেবে। আমরা সরকারের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চাই।’
প্রধানমন্ত্রী অন্তুর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ায় অন্তুর বাবা ও মা প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারকে ধন্যবাদ জানান।