Tuesday, April 2, 2013

‘পুলিশ কনস্টেবলরা তখন কী করছিলেন?’


‘আমার বাবা যখন শিবিরের কর্মীদের হাতে মার খাচ্ছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে থাকা পুলিশ কনস্টেবলরা কী করছিলেন? এ প্রশ্নটি আমার মনে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে।’
আজ মঙ্গলবার এ কথা বলছিলেন রাজশাহীতে শিবিরকর্মীদের বেদম পিটুনিতে আহত উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে ফয়সাল সিদ্দিকী (২৬)।  তিনি বলেন, ‘কেবল পুলিশ নয়, ঘটনাস্থলে তো র্যাবও মোতায়েন ছিল, তারা কেন এগিয়ে আসেনি? এ কথা গতকাল সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) বাবাকে দেখতে আসা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে করেছিলাম। এর কোনো উত্তর মেলেনি।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ফয়সাল জানান, ওই দিন ঘটনাস্থল উপশহর পুলিশ ফাঁড়িতে সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। একটি পিকআপ ভ্যানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন চালকসহ আরও ১৩ জন পুলিশ সদস্য। ভ্যানের সামনের আসনে বসেছিলেন জাহাঙ্গীর। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা যখন মিছিল বের করে চার রাস্তার মোড়ে এসে ককটেল ছুড়তে থাকেন, তখন পিকআপের পেছন থেকে পুলিশ কনস্টেবলরা বের হয়ে গেলেও কোনো পাল্টা জবাব দেননি; বরং ঘটনাস্থল থেকে তাঁরা সরে যান। এই সুযোগে তাঁর বাবা জাহাঙ্গীর আলমকে একা পেয়ে হামলা চালান জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা।
ফয়সাল অভিযোগ করেন, সকাল ১০টার দিকে তাঁর বাবা ওই হামলার শিকার হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের কোনো খবর দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘ঝর্ণা নামের এক মহিলা ঘটনাস্থল থেকে বাবাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং তিনিই আমাদের বাসায় খবর দেন।’
রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতকোত্তর করা ফয়সালের প্রথমে ধারণা ছিল, রাজশাহী শহরের ভদ্রা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন তাঁরা। তাই রাজশাহী শহরে জাহাঙ্গীর আলমের যথেষ্ট পরিচিতি আছে। এ জন্য তাঁর বাবা হয়তো সামান্য আহত হতে পারেন। কিন্তু এই হামলা যে এতটা ভায়বহ, তা বুঝতে পারেননি।
ফয়সালের মতে, শিবিরের বেশির ভাগ কর্মীই বাইরে থেকে এসে এ ধরনের হামলার কাজ করে থাকেন। সম্প্রতি রাজশাহী শহরে যেসব শিবিরকর্মী এসব ঘটনা ঘটাচ্ছেন, অজ্ঞাত কারণে তাঁরা প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এই হামলার সঙ্গে স্থানীয় শিবিরের কিছু নেতা-কর্মী জড়িত থাকতে পারেন বলে ফয়সালের সন্দেহ।
এ ব্যাপারে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, জাহাঙ্গীরের সঙ্গে থাকা ১২ জন কনস্টেবলের মধ্যে ছয়জনই নতুন নিয়োগ পেয়েছেন। শিবিরের আক্রমণে বিচলিত হয়ে তাঁরা পাল্টা অ্যাকশনে যেতে পারেননি। এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত ২৩ ও অজ্ঞাত ৩৫ জনকে আসামি করে গতকাল রাত ১১টায় একটি মামলা হয়েছে। জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া রিভলবারটি উদ্ধার করা গেছে। হামলার সঙ্গে জড়িত থাকা সোহান নামের একজনকে চাপাতিসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে সিএমএইচে চিকিত্সাধীন জাহাঙ্গীর আলমের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো জানিয়ে ফয়সাল বলেন, ‘চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, আমার বাবার মাথা থেঁতলে যাওয়ায় আঠা না দিয়ে নয়টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। ফেটে গেলে হয়তো বিপদ হতে পারত। তবে উচ্চমাত্রায় ডায়াবেটিসের কারণে ভীতি এখনো কাটেনি। মাঝেমধ্যে জ্ঞান ফিরলেও এ জন্যই আবার অচেতন হয়ে পড়ছেন তিনি। তাই চিকিত্সকেরা এখনো বাবাকে আইসিইউতে রেখেছেন।