Friday, March 29, 2013

বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা জয়

১৯৮৬ সালের পর থেকে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ১৫টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। প্রতিটিতেই দেখেছে হারের মুখ। অবশেষে আজ ১৬তম ম্যাচে এসে সফল হলো টাইগাররা। জয় পেল শ্রীলঙ্কার মাটিতেও। আর পাল্লেকেলের বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৩ উইকেটের দুর্দান্ত এই জয় দিয়ে ওয়ানডে সিরিজেও সমতা ফিরিয়েছে সফরকারী বাংলাদেশ।
২৭ ওভারে ১৮৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করে এক ওভার হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় মুশফিক বাহিনী। ৩৩ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন নাসির হোসেন। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪০ রান এসেছে এনামুল হকের ব্যাট থেকে।
শ্রীলঙ্কা সফরের ওয়ানডে সিরিজের প্রতিটি ম্যাচেই ছিল বৃষ্টির বাধা। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশকে হারিয়েছিল ৮ উইকেটের ব্যবধানে। দ্বিতীয় ম্যাচটি পরিত্যক্তই ঘোষণা করতে হয়েছিল বৃষ্টির কারণে। আজ তৃতীয় ম্যাচও ছিল বৃষ্টিবিঘ্ন। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় বৃষ্টির কারণে দীর্ঘসময় খেলা বন্ধ থাকে। অবশেষে খেলা পুণরায় শুরু হলেও ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে ফেলা হয় ২৩ ওভার। ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের সামনে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ২৭ ওভারে ১৮৩ রান। বৃষ্টি শুরু আগ পর্যন্ত ১৩.৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ৭৮ রান। সেই হিসেবে জয়ের জন্য ৮০ বলে ১০৫ রানের লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় দফা ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ।
খেলা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই সাজঘরের পথ ধরেন এনামুল হক। ৪০ রান করে আউট হন এই ডানহাতি ওপেনার। উইকেটে নেমেই ঝড়ো ব্যাটিং করে ২৬ রানের একটা ইনিংস খেলেন জহুরুল ইসলাম। তিনি আউট হন দলীয় ১১৯ রানের মাথায়। এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ফিরে যান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ। স্কোরবোর্ডের চেহারা দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৪৪ রান। ষষ্ঠ উইকেটে ২২ রানের সময়োপযোগী জুটি গড়ে ভালোভাবেই জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন নাসির হোসেন ও মমিনুল হক। কিন্তু নিজের শেষ ওভারে বাংলাদেশকে বড় একটা ধাক্কা দেন লাসিথ মালিঙ্গা। ঐ ওভারেই তিনি তুলে নেন মমিনুল ও জিয়াউর রহমানের উইকেট। ১১ রান করে ফিরে যান মমিনুল। জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন ছিল ১২ বলে ১৭ রান। এই পর্যায়ে হয়তো জয়ের আশাই ভর করেছিল শ্রীলঙ্কান সমর্থকদের মনে। কিন্তু তাদেরকে চরমভাবে হতাশ করেন নাসির হোসেন। থিসারা পেরেরার করা পরবর্তী ওভারের তিনটি চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। জয়টা বিলম্বিত করতে চাননি বলেই বোধহয় শেষ বলটাতেও চার মেরে বসলেন সোহাগ গাজী। সিরিজে সমতা আনল টাইগাররা।
বৃষ্টি শুরুর আগে শুরুটাও ভালোভাবেই করেছিল বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতেই ৭৭ রান যোগ করেছিলেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ আশরাফুল ও এনামুল হক। ১৩তম ওভারে বাংলাদেশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন সেনানায়েকে। ২৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন আশরাফুল। পরের ওভারেই খেলা বন্ধ করতে হয় বৃষ্টির বাধায়।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে তিলকারত্নে দিলশানের ১২৫ রানের ইনিংসটির সুবাদে ৩০২ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। এছাড়া জানিথ পেরেরা ৫৬ ও কুমার সাঙ্গাকারা ৪৮ রান করেন। বাংলাদেশের পক্ষে পাঁচটি উইকেট শিকার করেছেন আব্দুর রাজ্জাক।

Thursday, March 28, 2013

হরতালে দুটি স্কুলে হামলা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আহত ১৪

লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের দুটি স্কুলে আজ বৃহস্পতিবার সকালে হামলা চালিয়েছে হরতালের সমর্থকেরা। এতে তিন শিক্ষক ও ১১ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
হরতালে স্কুল খোলা রাখায় ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতার নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে ১২-১৩ কিলোমিটার দূরে তিস্তা নদীর পাড়ে খুনিয়াগাছ ইউনিয়নে পাশাপাশি স্কুল দুটি অবস্থিত। আজ ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের দ্বিতীয় দিনে খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খুনিয়াগাছ উচ্চবিদ্যালয় খোলা ছিল।
স্কুল সূত্র ও স্থানীয় লোকজন জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হরতালের সমর্থক একদল দুর্বৃত্ত লাঠিসোঁটা নিয়ে স্কুল দুটিতে হামলা চালায়। এ সময় তাদের হামলায় খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল হাই, শিক্ষক নাজনীন জাহান ও সাবিনা ইয়াসমিন এবং অন্তত ১১ শিশু শিক্ষার্থী আহত হয়। আহত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে।
স্কুল এলাকায় বিএনপির স্থাপন করা দুটি বিলবোর্ড নষ্ট হওয়া এবং হরতালের দিন স্কুল খোলা রাখার অভিযোগে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে মারধর করে।
ঘটনা সম্পর্কে খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল হাই বলেন, ‘হামলাকারীরা অমানুষের মতো ক্লাস চলাকালীন সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। তারা বিদ্যালয়টিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। শ্রেণীকক্ষের বেঞ্চ, অফিসকক্ষের চেয়ার-টেবিলসহ অন্যান্য আসবাব ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। তারা অফিসের কাগজপত্র ও ফাইল ছিঁড়ে ফেলে।’
আবদুল হাই বলেন, ‘হামলাকারীদের বাধা দিতে গিয়ে আমি এবং স্কুলের অপর দুই শিক্ষক সাবিনা ইয়াছমিন ও তাজনীন জাহান লাঞ্ছিত হয়েছি। স্কুলের কমপক্ষে ১১ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। অনেকে ভয়ে বই-খাতা ও স্যান্ডেল ফেলে চলে যায়।’
একই সময় হামলাকারীদের অপর একটি দল খুনিয়াগাছ উচ্চবিদ্যালয়ে হামলা চালায়। এ সময় সেখানে অ্যাসেম্বলি চলছিল। হামলাকারীরা স্কুলের জাতীয় পতাকা নামিয়ে সেই বাঁশ দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তাড়া করে। এ সময় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি নেমে আসে।
খুনিয়াগাছ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘স্কুল এলাকায় লাগানো বিএনপির কয়েকটি বিলবোর্ড কে বা কারা নষ্ট করেছে। সেই কারণে এবং হরতালের দিন বিদ্যালয় খোলা রাখার অভিযোগে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। এই হামলায় স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রী আহত হয়েছে।’
হামলার ঘটনার একপর্যায়ে খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাজনীন জাহান স্কুলের মাইকে গ্রামবাসী ও অভিভাবকদের সাহায্য চান। মাইকিং শুনে শত শত অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
শিক্ষিকা নাজনীন জাহান বলেন, ‘নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে স্কুলের আমানত এবং দেশ ও জাতিসহ পরিবারের সম্পদ শিশু শিক্ষার্থীদের হামলার হাত থেকে বাঁচাতে বিদ্যালয়ের মাইকে এলাকাবাসীসহ অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, স্কুলে হামলা হয়েছে। ওরা আমাদের লাঞ্ছিত করছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মারছে। আমরা কিছুই করতে পারছি না। দয়া করে অভিভাবক ও এলাকাবাসী এখানে আসুন। হামলাকারীদের ঠেকান। আমাদের বাঁচান।’
নাজনীন জাহান বলেন, এই মাইকিংয়ের পর স্কুলের চারদিক থেকে গ্রামবাসী, অভিভাবক ও অন্যরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
হামলার শিকার খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র আহত মাসুদ রানা বলে, ‘ওরা স্কুলের স্যারোক মারছে, মোকো থাপড়াইছে, ধাক্কেয়া ফেলে দিছে, কইছে হরতালের দিনত স্কুলে আসলে আবার মারিম, তোমরা কন তাইলে আমরা কি স্কুলত পড়বার পাবারনং।’
মাইকিং শুনে এগিয়ে আসা অভিভাবক মো. নুরুন্নবী বলেন, ‘স্কুলের আপার মাইকিং শুনিয়া স্কুলোত আসি দেখোং সে এক ধুলায় অন্ধকার, ছাওয়া পাওয়া যায় যেদিকে পাবারনাকছে কান্দাকাটি করি দৌড়ে পালাবার নাগছে। আমরা আসলে হামলাকারীরা পালেয়া গেইছে।’
এ ঘটনায় জেলার শিক্ষক ও অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্কের পাশাপাশি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদ পেয়ে লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। লালমনিরহাট সদর থানার ওসি জমির উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। জেলা শহর থেকে সেখানে শিক্ষকতা করতে যাওয়া শিক্ষকদের পুলিশের গাড়িতে করে শহরে নিয়ে আসা হয়েছে। স্কুল দুটির পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম মোসলেম উদ্দিন এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. নবেজ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেন, এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন ও ন্যক্কারজনক। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া না হলে হরতালের দিন বিদ্যালয় খোলা রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
হামলার ঘটনার সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ মোতাহার হোসেন লালমনিরহাট জেলায় ছিলেন।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘ওই স্কুল এলাকায় আমাদের দলের বিলবোর্ড আওয়ামী লীগের লোকজন নষ্ট করেছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘আজকের ঘটনার সঙ্গে বিএনপি বা এর অঙ্গসংগঠনের কেউ জড়িত নয়। বিএনপির লোকজন হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করলেও কেউ হামলা বা ভাঙচুর করেনি। তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর হামলা চালিয়ে আমাদের দোষারোপ করছে।’

চিকিৎসক হয়ে ৩০০ রোগীকে হত্যা!

হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউয়ের বিছানা খালি করতে ৭ রোগীকে হত্যা করেছেন নারী চিকিৎসক ভার্জিনিয়া সোয়ারেস ডি সুজা। এমন অভিযোগ আগেই আনা হয়েছে। ব্রাজিলের ৫৬ বছর বয়সী এ চিকিৎসক তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ৩০০ রোগীকে হত্যা করে থাকতে পারেন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কর্মকর্তারা। এ ঘটনা ঘটেছে ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় কিউরিটিবা অঞ্চলের ইভানজেলিকো হাসপাতালে। গত মাসে ৭ রোগীকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। ভার্জিনিয়ার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ২০টি অভিযোগ আনা হয়েছে। আরও ৩০০ অভিযোগ আনা হতে পারে তার বিরুদ্ধে। একা নয়, সহযোগীদের নিয়ে এ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন তিনি। ৩ চিকিৎসক ও ৩ নার্সের বিরুদ্ধে তাকে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি ও তার সহযোগীরা রোগীদের দেহে পেশী শিথিল করা ওষুধ প্রয়োগ ও অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। টেলিফোনে রেকর্ড করা কথোপকথন থেকে তার এ ভয়াবহ ইচ্ছার কথা জানতে পেরেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। অবশ্য ভার্জিনিয়ার আইনজীবী তার মক্কেলকে নির্দোষ প্রমাণের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন।

স্পিন প্রতিরোধের পরেও শ্রীলঙ্কা ৩০২

শুরুটা ভালো না হলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচের শেষপর্যায়ে ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম ৩৬ ওভার পর্যন্ত দিলশান, জানিথ পেরেরা ও সাঙ্গাকারা যেভাবে ব্যাটিং করেছিলেন তাতে সংগ্রহটা আরও বড় হতে পারত শ্রীলঙ্কার। কিন্তু শেষপর্যায়ে বোলারদের সাফল্যে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহকে ৩০২ রানেই সীমাবদ্ধ রাখা গেছে।
আজ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে উইকেটে প্রায় পুরোটা সময়ই বাংলাদেশের বোলারদের ‘সমস্যা’ হয়ে ছিলেন তিলকরত্নে দিলশান। ১২৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে ৪৭তম ওভারে আউট হন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তাঁর এই শতকে ভর করে শেষপর্যন্ত ৩০২ রান সংগ্রহ করে ইনিংস শেষ করে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। আরেক ওপেনার জানিথ পেরেরার ব্যাট থেকে এসেছে ৫৬ রান। কুমার সাঙ্গাকারা করেছেন ৪৮ রান। বাংলাদেশের পক্ষে পাঁচটি উইকেট শিকার করেছেন আব্দুর রাজ্জাক। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ২০০ উইকেটের মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন এই বামহাতি অফস্পিনার।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। অধিনায়কের এই সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণের কঠোর মিশন নিয়েই যেন মাঠে নেমেছেন দুই শ্রীলঙ্কান ওপেনার দিলশান ও পেরেরা। বাংলাদেশি বোলারদের নাজেহাল করে শুরুটা দুর্দান্ত করেছিলেন দুই লঙ্কান ওপেনার তিলকরত্নে দিলশান ও জেনিথ পেরেরা। দু’জনই অর্ধশতক হাঁকিয়ে মাত্র ১৯ ওভারের মধ্যে দলের সংগ্রহ একশ পার করিয়েছিলেন। বাইশতম ওভারে এসে অবশেষে হাসির উপলক্ষ্য তৈরি করেন মাহমুদউল্লাহ। তাঁর বলে পয়েন্টে নাসিরের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন জেনিথ পেরেরা। দ্বিতীয় উইকেটে আবার ৮৯ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের উপরে চাপ সৃষ্টি করেন দিলশান ও কুমার সাঙ্গাকারা। ৩৬তম ওভারে দলীয় ২০৩ রানের মাথায় এই জুটি ভাঙ্গতে সক্ষম হন আবদুর রাজ্জাক। ৪৮ রান করে ফিরে যান সাঙ্গাকারা। নিজের পরবর্তী দুই ওভারে থিসারা পেরেরা ও লঙ্কান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকেও সাজঘরে ফেরান বামহাতি স্পিনার রাজ্জাক। জিভান মেন্ডিসকে বোল্ড করেন সোহাগ গাজী। চান্দিমাল ফেরেন জিয়ার বলে বোল্ড হয়ে। দুই ওভার পরে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত উইকেটটির দেখা পায় বাংলাদেশ। শাহদাত হোসেনের শিকারে পরিণত হয়ে ফিরে যান তিলকারত্নে দিলশান। তবে তার আগে ১২৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে শ্রীলঙ্কাকে বড় সংগ্রহ এনে দিয়েছেন এই ডানহাতি ওপেনার। ইনিংসের শেষ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করে নতুন এক মাইলফলক স্পর্শ করেছেন আব্দুর রাজ্জাক। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট শিকারের অনবদ্য কীর্তি গড়লেন এই বামহাতি স্পিনার।
বাংলাদেশের পক্ষে পাঁচটি উইকেট তুলে নিয়েছেন রাজ্জাক। একটি করে উইকেট পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, সোহাগ গাজী ও জিয়াউর রহমান ও শাহাদাত হোসেন।

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে জেসি রাইডার

ব্যক্তিজীবনে খুব সুনাম নেই নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যান জেসি রাইডারের। মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান ও মাঠের বাইরে খবরের শিরোনাম হওয়ার জন্য কুখ্যাত এই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। কিন্তু বৃহস্পতিবার মাঠের বাইরের এক ঘটনা তাঁকে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে ‘জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ক্রাইস্টচার্চে একটি বারের বাইরে মারামারির ঘটনায় মাথায় আঘাত পেয়ে এখন ‘কোমা’য় আছেন এই কিউই ক্রিকেটার।
রাইডার আসলে কী কারণে ওই মারামারির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন, তার আদ্যোপান্ত জানা না গেলেও খবরে প্রকাশ, ক্রাইস্টচার্চের একটি বারের বাইরে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির আঘাতে মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়ে তিনি এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
‘ব্যক্তিগত কারণে’ রাইডার এই মুহূর্তে নিজেকে স্বেচ্ছায় নিউজিল্যান্ড দলের বাইরে রেখেছেন। আপাতত নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে। ঘরোয়া ক্রিকেটের সমাপনী উদযাপন করতে তিনি নিজের দল ওয়েলিংটনের কয়েকজন সতীর্থকে নিয়ে ক্রাইস্টচার্চের ওই বারে গিয়েছিলেন মদ পান করতে। মদ্যপান সেরে বার থেকে বেরোতেই কয়েকজনের সঙ্গে বচসার জের ধরে মারমারির ঘটনা ঘটে। বেশ কয়েকজন মিলে রাইডারকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। অজ্ঞাত ওই কয়েকজনের হামলায় মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়ে সংজ্ঞা হারান রাইডার। এই মুহূর্তে ক্রাইস্টচার্চের একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে চিকিত্সাধীন তিনি।
রাইডারের ঘটনাটি মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে ঘটেছে—এমনটা অবশ্য মনে করেন না ক্রাইস্টচার্চের গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্রায়ান আর্চার। তিনি বলেছেন, ‘বার থেকে বের হওয়ার পর দুই-তিনজন লোকের সঙ্গে রাইডারের কথা-কাটাকাটি হয়। এর পরপরই ঘটনাটি ঘটে।’
এদিকে, রাইডারকে ক্রাইস্টচার্চের যে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসকের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এই মুহূর্তে রাইডার্সের অবস্থা সংকটাপন্ন।’
একজন প্রত্যক্ষদর্শী পুরো ঘটনাটির বর্ণনা করতে গিয়ে জানান, দুই-তিনজন লোকের সঙ্গে প্রথমে রাইডারের কিছু বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়; এর পরই তারা রাইডারকে নির্দয়ভাবে পেটাতে থাকে।’
প্রত্যক্ষদর্শী অবশ্য বলতে পারেননি ওই ‘তিন-চারজন লোক’ জেসি রাইডারের পূর্বপরিচিত ছিল কি না।’
জেসি রাইডার সম্প্রতি মদ্যপান বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিথ মিল। তবে ক্রাইস্টচার্চের ঘটনাটি রাইডারের মদ্যপানকেন্দ্রিক কোনো কিছু নয় বলেই মনে করেন মিল।
প্রায় এক বছর আগে সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাঠে নেমেছিলেন জেসি রাইডার। সম্প্রতি, ব্যক্তিগত কিছু ব্যাপার সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিজেকে দূর রেখেছিলেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে ৪০.৯৩ গড় ও একটি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক রাইডার সম্প্রতি দুই লাখ ৬০ হাজার ডলারে নাম লিখিয়েছিলেন আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে। গতবার তিনি পুনে ওয়ারিয়র্সের হয়ে আইপিএলে খেলার সময় সঙ্গে করে একজন ব্যক্তিগত মনোবিদ নিয়ে এসেছিলেন।

Wednesday, March 27, 2013

আজ থেকে উন্মুক্ত মিরপুর-বিমানবন্দর উড়ালসড়ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার সকালে মিরপুর-বিমানবন্দর উড়ালসড়কের উদ্বোধন করেছেন। নির্ধারিত সময়ের তিন মাস আগেই এটি উদ্বোধন করা হলো। এরপর প্রধানমন্ত্রী উড়ালসড়কটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া। উড়ালসড়কটি সর্বসাধারণের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনের অধীনে ১৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে মীর আক্তার অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড।
উড়ালসড়কটি মিরপুরের মাটিকাটা থেকে শুরু হয়ে বিমানবন্দর সড়কে (জিয়া কলোনিসংলগ্ন) শেষ হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য এক হাজার ৭৯৩ মিটার। সেনাবাহিনীর অধীনে এই প্রকল্পের আওতায় মিরপুর-বিমানবন্দর সড়ক উড়ালসড়ক, সংযোগ-সেতু এবং বনানী রেলক্রসিংয়ের ওপর আরেকটি উড়ালসড়ক নির্মিত হয়েছে। সব কটি প্রকল্পের ব্যয় ৩৬০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। রেলক্রসিংয়ের ওপর নির্মিত উড়ালসড়কটি গত ডিসেম্বর মাসে চালু হয়। আজ মিরপুর-বিমানবন্দর সড়ক উড়ালসড়ক ও সংযোগ সড়কটি চালু হলো।
৫৬১ মিটার সংযোগ সেতুটি বনানী রেলক্রসিংয়ের ওপর নির্মিত ৮০৪ মিটার দীর্ঘ উড়ালসড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে বনানীর রেলক্রসিংয়ে ট্রেন চলাচলের সময় যানবাহনগুলোর অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। এতে মিরপুর থেকে সেনানিবাসের ওপর দিয়ে উড়ালসড়ক ধরে বিমানবন্দর সড়কের দূরত্ব দাঁড়াবে তিন কিলোমিটার। এই পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ১৫-২০ মিনিট। বর্তমানে মিরপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে হলে আগারগাঁও হয়ে প্রায় ১১ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়।

রেলে ৯২টি নাশকতা, নয় কোটি টাকা ক্ষতি

দুটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ রেলওয়েতে ৬ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত আরও ৩৩টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় মোট ৯২টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এতে বাংলাদেশ রেলের ক্ষতির পরিমাণ নয় কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
ধারাবাহিক নাশকতার ঘটনায় মন্ত্রণালয় রেল পুলিশ ও নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে থানার পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্যদের যুক্ত করেছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল এবং দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল গঠিত। গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্বাঞ্চলে আরও ২৬টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ১০টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। নাশকতা শুরু হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে। ওই দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলে ৮২টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ১০টি নাশকতার ঘটনা ঘটে। রেলের ইতিহাসে এমন তাণ্ডব আর কখনো হয়নি বলে রেল কর্মকর্তারা জানান। তাঁরা বলেন, এই দুর্বৃত্তরা যাত্রীদের জীবনেরও পরোয়া করছে না। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ভোরে কুলাউড়ায় রেললাইনের ফিসপ্লেট কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এতে ছয়টি কোচ ও ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে সিলেটের নয় ঘণ্টা ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা হরতাল চলাকালীন একই দিন সকাল নয়টায় ফৌজদারহাট স্টেশন ভাঙচুর এবং রেললাইনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে। একই দিন সকালে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়ায় এবং ব্রাহ্মবাড়িয়ায় রেললাইনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এর আগে গত সোমবার নরসিংদীর বাদুয়ারচর এলাকায় রেলসেতুতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক ধারাবাহিক নাশকতার জন্য আবারও জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সহিংসতা চালাচ্ছে। একাত্তরের পর রেলের সম্পদ ধ্বংসের এই চিত্র দেশবাসী কখনো দেখেনি।
ধারাবাহিক নাশকতা প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে মন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, রেলযাত্রী ও রেলের সম্পদের নিরাপত্তায় রেল পুলিশ ও নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে থানার পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্যরা যুক্ত হয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। দুর্বৃত্তদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য কাজ চলছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে নাশকতা বেশি হচ্ছে। কারণ, গুরুত্বপূর্ণ আন্তনগর ট্রেন এ পথেই বেশি চলাচল করে। যাত্রী পরিবহনও এ অঞ্চলে বেশি হয়। এ কারণে দুর্বৃত্তরা পূর্বাঞ্চলকে নাশকতার লক্ষ্যস্থলে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেন রেলের একাধিক কর্মকর্তা।
পশ্চিমাঞ্চলে ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ সিল্কসিটি ট্রেনের কোচ এবং বগুড়া স্টেশন ভবন ও বামনডাঙ্গা স্টেশন পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এরপর গতকাল পর্যন্ত আরও ১০টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এতে আরও সাত-আট লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. ফেরদৌস আলম বলেন, ‘২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ পশ্চিমাঞ্চল রেলে বড় ধরনের নাশকতা হয়। সেটা কাটিয়ে উঠতে আমাদের অনেক সময় লাগবে।’

বন্ধু তুমি প্রেমিক নও

অর্ণব ও সেঁজুতি (ছদ্মনাম)। স্কুলজীবন থেকেই ওদের বন্ধুত্ব। একসঙ্গে টিফিন ভাগাভাগি থেকে সুখ-দুঃখের ভাগাভাগিটা কখন যে শুরু হলো, তা কেউই টের পায়নি। এর মধ্যে হঠাৎ করেই অর্ণব টের পেল সেঁজুতিকে শুধু যেন বন্ধু ভাবতে পারছে না সে। বন্ধুত্বের চাহনিটা ক্রমেই পরিণত হয়ে উঠছে ভালো লাগায়।
একদিন বিকেলে কলেজ থেকে ফেরার পথে অর্ণব সেঁজুতিকে জানিয়ে দেয় ভালো লাগার কথা। বন্ধুর মুখে এমন কথা শুনে চমকে ওঠে সেঁজুতি। কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। বন্ধুকে যে শুধু বন্ধু হিসেবেই চায় সে, প্রেমিক হিসেবে নয়।
আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়তই ঘটছে এমন ঘটনা। কম বয়সের কোনো ছেলে বা মেয়ে ভবিষ্যতের কথা ভেবে বা বুঝে-শুনে যে বন্ধুর প্রতি ভালো লাগার কথা জানায় তা কিন্তু নয়। আবার যাকে ভালো লাগার বিষয়টি জানাচ্ছে, সেও তার মতো একই বয়সী বলে বুঝে উঠতে পারে না যে কী করবে। ‘তোমাকে না পেলে মরে যাব’ বন্ধুর এমন কথায় সে ভড়কে গিয়ে হয়তো না বুঝেই হ্যাঁ বলে ফেলে। আবার বন্ধুর পক্ষ থেকে উত্তরটি নেতিবাচক হলে ঘুমের ওষুধ খাওয়া, পরীক্ষা না দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। অপর পক্ষের বন্ধুর মানসিক অবস্থাও যে তখন খুব স্বাভাবিক থাকে তা নয়। কারণ, সে নিজেও তার বন্ধুর ভালো চায়। তাকে হারাতে চায় না।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহ এহসান হাবীব বলেন, ‘আমাদের জীবনে অন্যতম নিরাপদ আশ্রয়স্থল হলো বন্ধু। কৈশোরে বা কম বয়সে বন্ধুত্বকে ছাপিয়ে ভালো লাগা তৈরি হলে তখন উভয় পক্ষেরই বিষয়টি গ্রহণ ও মোকাবিলা করার মানসিক প্রস্তুতি থাকে না। ফলে না বুঝে তারা নানা রকম ভুল করে ফেলে। এ জন্য বাড়িতে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেন সন্তান যেকোনো কথা এসে বলতে পারে। সন্তানকে ভুল না বুঝে তাকে সাহায্য করতে হবে।’
বন্ধুর প্রতি ভালো লাগা আসতেই পারে। এটি অপরাধও নয়, লজ্জা পাওয়ার মতো কোনো বিষয়ও নয়। এটি পরিবার ও শিক্ষকদের বোঝাতে হবে। তাহলে তারা সঠিক নির্দেশনা খুঁজে পাবে। বাবা-মায়ের পাশাপাশি শিক্ষকেরাও হয়ে উঠতে পারেন তাদের বন্ধু—মনে করেন সানিডেল স্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সালমা পারভীন।
ভালো লাগার অনুভূতিটা খুব সুন্দর। আবার বন্ধুত্বের সম্পর্কটিও খুব চমৎকার। বন্ধুকে না বলা নিয়ে মনে যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, তাকে মোকাবিলা করতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহজাবীন হক। যাতে বন্ধু বুঝতে পারে একসময়ের কাছের বন্ধুটি চায় তাদের বন্ধুত্বটা টিকে থাকুক।
 কোনো বন্ধুকে বিশেষভাবে ভালো লাগলে আগে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে। কথাটি বলার উপযুক্ত সময় হয়েছে কি না তা বুঝতে হবে। যদি ভেবেই নেন না বলে থাকতে পারছেন না, তাহলে বলে ফেলুন। তবে এটিও মনে রাখতে হবে, যে বন্ধুকে ভালো লাগার কথা বলবেন তাঁর ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে। তিনি প্রেমিক হিসেবে আপনাকে নাও মানতে পারেন। এটি মেনে নেওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে।
 ভালো লাগা ভালোবাসায় জোর খাটে না, তাই বন্ধুকে কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয়। বন্ধুর যেকোনো সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান রেখে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
 সবকিছু ভাবাভাবির পর ধরা যাক বন্ধুটি বলেই দিল মনের না-বলা কথা। অপর পক্ষেরও তখন বন্ধু হিসেবে কিছু কর্তব্য আছে। যেকোনো ব্যর্থতাই মেনে নেওয়া কষ্টকর। নিজের অপারগতার কথা হঠাৎ করেই রূঢ়ভাবে প্রকাশ না করে বা তাঁকে এড়িয়ে না গিয়ে স্বাভাবিক থাকতে হবে। বন্ধুকে বোঝাতে হবে এ মুহূর্তে পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়া বেশি জরুরি।
 অন্য বন্ধুদের সামনে বন্ধুর ভালো লাগা নিয়ে হাসিঠাট্টা করা উচিত নয়। তাঁকে অপমানিত ও লজ্জিত না করে আগের মতো বন্ধু হয়ে পাশে আছেন, এটি বোঝাতে হবে।
 বন্ধুকে সময় দিতে হবে। শুধু দুজন একসঙ্গে না থেকে দলের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে।
 বন্ধুর ভালোর জন্য সব বন্ধু মিলে আলোচনা করতে পারেন। তবে বন্ধু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে মনোবিজ্ঞানীর শরণাপন্ন হতে হবে। আপনি যে তাঁর সত্যিকারের বন্ধু, তা প্রকাশ পাবে এভাবেই।

শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করলে এরশাদও লড়বেন!

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, রাষ্ট্রপতি কে হবেন, তা দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচনের মতোই অস্পষ্ট। তবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি রাষ্ট্রপতিশাসিত পদ্ধতি প্রবর্তন করে রাষ্ট্রপতি হতে চান, তাহলে সে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এরশাদও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে স্বাধীনতা দিবসের এক আলোচনা সভায় ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক এরশাদ এসব কথা বলেন। জাপার ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা এ আলোচনার আয়োজন করে।
এরশাদ বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন করেন, কে রাষ্ট্রপতি হবেন। একটু আগে একজন প্রশ্ন করলেন, “শুনেছি, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি হবেন?” আমি বলেছি, যদি উনি (প্রধানমন্ত্রী) রাষ্ট্রপতিশাসিত পদ্ধতি প্রবর্তন করে রাষ্ট্রপতি হন, আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি তাঁর সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। ইনশা আল্লাহ জয়ী হয়ে আসব।’ তিনি বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রপতি ছিলাম, সরকারপ্রধান ছিলাম। সেই রাষ্ট্রপতি যদি হতে পারি, তাহলে রাষ্ট্রপতি হব, নইলে হব না।’
‘দেশের সবকিছুই অস্পষ্ট’ এ মন্তব্য করে জাপার চেয়ারম্যান বলেন, ‘এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে আছে দেশ। এর থেকে বাঁচতে হলে নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু নির্বাচনও অনিশ্চিত। দেশ অবশ্যম্ভাবী সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে।’
মহাজোট ছাড়ার কথা পুনরুল্লেখ করে এরশাদ বলেন, ‘একা নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই আমাদের মহাজোট ছাড়তে হবে। এর দায়িত্ব আপনারা আমাকে দিয়েছেন। জাস্ট ওয়েট ফর মাই ডিসিশন। আমি এ পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্ত নিইনি, যা আমাদের জন্য বিপজ্জনক হবে। মনে রাখবেন, আমি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেব।’
শাহবাগের সমালোচনা: শাহবাগ চত্বর হওয়ার ফলে সরকারের অনেক ক্ষতি হয়েছে মন্তব্য করে এরশাদ বলেন, এ কারণে বিএনপি-জামায়াত অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে গেছে। তাই শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ যত তাড়াতাড়ি শেষ হবে, ততই সরকারের জন্য মঙ্গল হবে।
এরশাদ বলেন, ‘শাহবাগ চত্বরের ছেলেরা যখন স্লোগান দিল, আপসের রায় মানি না। তখন আমি সমর্থন দিয়েছিলাম। পরবর্তীকালে দলীয়করণ হয়ে গেল, তখন বিরিয়ানির প্যাকেট আসল, পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করে রাখল। পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করে কখনো গণজাগরণ সৃষ্টি হয় না।’
জাপার ঢাকা মহানগর (উত্তর) সভাপতি এস এম ফয়সাল চিশতীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর জ্যেষ্ঠ সদস্য কাজী জাফর আহমদ, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

সেনাবাহিনীকে নিয়ে মেঠো বক্তৃতা

‘বিরোধীদলীয় নেতা সংসদ অকার্যকর করার জন্য জোট সরকারকে অভিযুক্ত করেন। তিনি সতর্ক করেন যে সংস্কার করা ছাড়া নির্বাচন হবে না। তিনি আগামী নির্বাচনে কারচুপির পরিকল্পনা পরিত্যাগ করতে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি থাইল্যান্ডের সামরিক অভ্যুত্থান থেকে শিক্ষা নিতে এবং “ক্ষমতার লোভে” সংসদীয় সরকারব্যবস্থা ধ্বংস না করার আহ্বান জানান। বিরোধীদলীয় নেতা অবশ্য বাংলাদেশে থাই রাজনীতির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা নাকোচ করেন।’
বাংলাদেশের বিরোধী দলের নেতা এই উক্তি করেছিলেন সংসদে, ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর। আজ তিনি প্রধানমন্ত্রী। অথচ ওই মন্তব্য আজকের বিরোধী দলের নেতার বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এর অর্থ, সাত বছর আগে ও পরের রাজনৈতিক অবস্থার কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি। এ প্রসঙ্গের অবতারণা সেনাবাহিনীকে নিয়ে খালেদা জিয়ার অনভিপ্রেত উক্তির কারণে। তিনি বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীরও দেশের প্রতি কর্তব্য আছে। তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না। মানুষ খুন করবে আর তারা চেয়ে চেয়ে দেখবে। কাজেই সেনাবাহিনী সময়মতোই তাদের দায়িত্ব পালন করবে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়েরের হুমকি সম্পর্কে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, এটা তো রাজনৈতিক। সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমানও বলেন এটা তো ‘রাজনৈতিক’। এটা আসলে একটা স্বীকারোক্তি যে, রাজনীতি কতটা দায়িত্বহীন কিংবা ভয়ানক। অবশ্য এ নিয়ে উভয় পক্ষের বাক্যবাণ বিনিময় পরিণামে শূন্যগর্ভ। কিন্তু যা অশুভ তা হলো, মাত্রাভেদে উভয় বিবদমান পক্ষ ক্রমশ সেনাবাহিনীকে বিতর্কের কেন্দ্রে টানার জোরালো প্রবণতা দেখাচ্ছে। নির্বাচনকালে সেনার ভূমিকা নিয়ে এই তর্ক আরও উত্তাপ সৃষ্টি করতে পারে।
থাইল্যান্ডের নির্বাচিত সরকারের অপমানিত হওয়া থেকে আমাদের রাজনীতিকেরা কী শিখেছেন? থাই অভ্যুত্থান ঘটে ২০০৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার জনপ্রিয়তা কম ছিল না। অথচ পাঁচ বছরের মেয়াদ পুরো করার আগেই তিনি বিতর্কিত হন, দুর্নীতিগ্রস্তের তকমা তাঁর ললাটে অঙ্কিত হয়। বৌদ্ধ-অধ্যুষিত দেশটির প্রথম মুসলিম সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল সোনধিকে নিয়োগ করে থাকসিন প্রশংসা কুড়ান। অথচ এই জেনারেলই তাঁকে অপসারিত করেন। কিন্তু ক্ষমতার লোভেই তিনি তা করেছিলেন, সেই অভিযোগ জোরালো হয়নি। বলা হয়, থাই ক্যু আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার মতো সহিংস নয়। মৌলিক অধিকারও খর্ব করে না।
ব্যাংককে যেদিন সেনা অভ্যুত্থান ঘটে, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেদিন টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সেনানিবাসে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শুধু বাইরে থেকে নয়, দেশের ভেতর থেকেও স্বাধীনতার ওপর আঘাত আসতে পারে। সংঘাত, নৈরাজ্য ও বিভ্রান্তির কারণে এই হামলা হতে পারে। তিনি এ জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যদের সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানান। প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৬ থাইল্যান্ডে সামরিক অভ্যুত্থান শিরোনামে যে খবরটি ছাপা হয়েছিল, তার ঠিক পাশের শিরোনামটি ছিল ‘বিচারপতি হাসানের বাসায় কড়া পাহারা’। বিচারপতি কে এম হাসানকে মানতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এর চূড়ান্ত খেসারত হলো শেখ হাসিনার সম্মতিতে সৈয়দ আবুল মকসুদ বর্ণিত ‘তিনোদ্দীন’ সরকারের উত্থান।
খালেদা জিয়াকে থাই অভ্যুত্থান থেকে শিক্ষা নেওয়ার যে আহ্বান তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা এবং আজকের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তা যথার্থ ছিল বৈকি। সেনা দ্বারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর অপদস্থ হওয়া কারও কাম্য নয়। কিন্তু ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ থাকসিনের জন্য থাইল্যান্ড কান্না করেনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী চুয়ান লিকপাই মন্তব্য করেছিলেন, ‘রাজনীতিক হিসেবে আমরা কোনো ধরনের ক্যু সমর্থন করতে পারি না। কিন্তু গত পাঁচ বছরে থাকসিন এমন কতিপয় অবস্থার সৃষ্টি করেছেন, যা সামরিক বাহিনীকে অভ্যুত্থান ঘটাতে বাধ্য করে। থাকসিনই সংকট সৃষ্টি করেছেন।’ খালেদা জিয়া ও থাকসিনের আসা-যাওয়ার মধ্যে বেশ মিল ছিল। শেখ হাসিনা তা ধরতে পেরেছিলেন।
থাইল্যান্ডের শ্রদ্ধাভাজন বুদ্ধিজীবী আনন্দ পেনিয়ারাচুন। র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত আনন্দ একবার নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি অনেকটা থাইল্যান্ডের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন। থাকসিনের ক্ষমতাচ্যুতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন আনন্দ। ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘১৯৯২ সাল থেকে থাইল্যান্ড চারটি সাধারণ নির্বাচন দেখেছে। অভ্যুত্থানের কোনো চিন্তা বা গুজব মিলিয়ে গিয়েছিল। সেনারা ব্যারাকে ফিরেছিল। এবং তারা সত্যিকারের পেশাদার সেনা হয়ে উঠছিল। এ অবস্থায় যে অভ্যুত্থানটা ঘটল, তার কারণ সরকার একটা চরম দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা ডেকে এনেছিল, বেরোনোর রাস্তাটা শেষ হয়ে গিয়েছিল।’ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ নিউজ উইককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর আরও মন্তব্য ছিল, ‘গত পাঁচ বছরে থাকসিন ও তাঁর দল প্রবল প্রতাপশালী হয়ে উঠেছিল। সমগ্র সরকারি যন্ত্র ও সশস্ত্র বাহিনী এবং পার্লামেন্টের কতিপয় মহলের ওপর থাকসিন তাঁর কর্তৃত্ব সংহত করেছিলেন। সুতরাং আমি মনে করি, একটি অধিকতর আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।’
থাইল্যান্ডের চেয়ে বাংলাদেশ নির্বাচিত সরকারের ধারায় পুনরায় ফিরে আসতে কম সময় নিয়েছে। থাকসিন ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থাই রাজনীতিতে পাগলা ঘণ্টা বেজেই চলছিল। কেবল ২০০৮ সালই চারজন প্রধানমন্ত্রী প্রত্যক্ষ করে। এঁদের তিনজনই এসেছেন সাংবিধানিক আদালতের ডিক্রিতে। থাকসিনের আর ফেরা হয়নি। জনপ্রিয়তার মানদণ্ডই নির্বাচিত নেতা হিসেবে দীর্ঘকাল টিকে থাকার রক্ষাকবচ নয়। থাকসিন ক্ষমতাই শুধু হারাননি, দলও হারিয়েছেন। নির্বাচনে কারচুপির দায়ে আদালত থাকসিনসহ ১১১ জন বড় নেতা ও তাঁদের দলকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন। থাকসিনের অনুসারীরা দুবার দল পাল্টিয়ে ২০১১ সালে একটি নতুন দল নিয়ে জয়ের মুখ দেখলেন। থাকসিনের ছোট বোন ২০১১ সালে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন।
দুর্নীতির কালিমা নিয়ে থাকসিন রাজনীতিতে পরিত্যক্ত। বাংলাদেশের নেতা হলে তিনি উতরে যেতেন। এখানে কালি মুছতে বেশি সময় লাগে না। প্রধানত খালেদা জিয়ার অপরিণামদর্শিতার কারণে সেনা হস্তক্ষেপ অনিবার্য হয়েছিল। এর পরের ছয়-সাত বছরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন কিছু ঘটেনি, যাতে বিরোধীদলীয় নেতার উল্লিখিত মূল্যায়ন কোনো সরকারপ্রধানের জন্য একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল ও বিচারকদের বয়স বাড়ানোর সংশোধনীর চেতনা অভিন্ন। সেটা ক্ষমতা। ‘ক্ষমতার লোভ’। রাজনীতিকেরা সেটা স্বীকার করবেন না। বরং মওকা বুঝে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতেই তাঁরা ও তাঁদের চাটুকাররা সিদ্ধহস্ত।
এটা খুবই চিন্তার বিষয় যে সশস্ত্র বাহিনীকে ক্রমাগত রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। এই দুর্মতির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মেঠো বক্তৃতায় কে কত বেশি ক্ষতিকর ভূমিকা রেখেছে, তার একটা প্রতিযোগিতামূলক ফলাফল গবেষণার বিষয় হতে পারে। কিন্তু এ ধরনের মেঠো বক্তৃতার সূচনা করার সুযোগ হাতছাড়া না করা এবং তা থেকে সুবিধা নেওয়ার ঝোঁক বা প্রবণতার লাগাম টেনে ধরার সংযম আমরা দেখি না। গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সেনানিবাসে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাজনিত ছিল বলেই প্রতীয়মান হয়। তাঁর কিছু বক্তব্য ছিল কেবল জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য। যেমন ‘কনিষ্ঠ কর্মকর্তারা যাতে কোনো অপপ্রচারের শিকার না হন, সে জন্য জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার’ করে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কনিষ্ঠদের ‘শ্রদ্ধা ও আনুগত্য জ্যেষ্ঠদের অর্জন করতে হবে।’ এ ধরনের বিবৃতি জনসমক্ষে আসার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
অতীতেও আমরা দেখেছি, সেনানিবাসে আয়োজিত পেশাদারি অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধানেরা পরোক্ষভাবে হলেও দলীয় প্রতিপক্ষের উদ্দেশে ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন। যেমন প্রধানমন্ত্রী ওই সমাবেশে আশা প্রকাশ করেন যে সেনাবাহিনী তাদের সর্বশক্তি দিয়ে যেকোনো ‘অসাংবিধানিক কিংবা অগণতান্ত্রিক কার্যক্রম’ প্রতিহত করবে। তাঁর আহ্বান ছিল ‘সর্বোচ্চ সতর্কতায় নিজেদের সজাগ রাখুন, যাতে সেনাবাহিনীর ওপর ভর করে কেউ ক্ষমতা দখল করতে না পারে।’
তারিখটি মনে নেই। সময়টা ১৯৯৪-৯৫ সাল হবে। সিলেটের এক জনসভায় দেওয়া আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেই খবরটিও সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিতে অনমনীয় বিএনপিকে ঘায়েল করতে সেটাও একটা ‘উসকানি’ ছিল। খবরটি বিদেশি একটি পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়েছিল এবং সেটির ক্লিপিং সম্ভবত হংকং মিশন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বিস্মিত লেখক আওয়ামী লীগের একজন বড় নেতার কাছে জানতে চান, এটাই কি আওয়ামী লীগের অবস্থান? তিনি ত্বরিত উত্তর দেন: আলবৎ! মির্জা ফখরুলের মতো বলেননি, উসকানি নয়, প্রশংসা।
বগুড়ায় বিএনপি নেত্রীর দায়িত্বহীন উক্তির পর তাঁদের পলায়নপরতা দেখার মতো। অথচ এখানে অনুশোচনার কিছু নেই! জাতীয় ভান্ডার তো মহাসমৃদ্ধ। প্রতিপক্ষের ভান্ডার থেকে এ রকমের বা কাছাকাছি কোনো দৃষ্টান্ত খুঁজে বের করলেই হলো। খারাপের সঙ্গে খারাপের তুলনার একটা আত্মঘাতী প্রক্রিয়া চলছে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ভারে চিড়েচ্যাপ্টা মির্জা ফখরুল বেচারা। কেমন ডাহা মিথ্যা বলছেন। তবে প্রহসনের বিষয়, বিএনপির চেয়ারপারসনের নিন্দনীয় উসকানির দায়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরে প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞাতসারে কিংবা কথিতমতে অনাগ্রহী প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিচ্ছেন সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি তথাকথিত ‘জনতার মঞ্চের’ অনুঘটক। সেখানে অবশ্যই ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ গুরুতর উপাদান ছিল। এর সবটাই ‘রাজনৈতিক’ তবে সমাজ-রাষ্ট্রের জন্য বিষাক্ত। আশা করব, সব পক্ষই সেনাবাহিনীকে নিয়ে রাজনৈতিক মেঠো বক্তৃতা পরিহার করবে। এর আগে ব্যর্থ ক্যু চেষ্টার সঙ্গে বিএনপিকে কেবলই মেঠো বক্তৃতায় অভিযুক্ত করতে দেখা গেছে। কোথাও আইনের লঙ্ঘন হলে আইনের স্বাভাবিক গতিতে তার প্রতিকার হোক। কিন্তু বক্তৃতাবাজি পরিবেশ দূষিত করে। সেনাবাহিনীকে অহেতুক বিব্রত করে।