নার্গিস আলমগীর
প্রবাসফেরত, ডুয়েল সিটিজেন, কবি-গীতিকার নার্গিস আলমগীর দেশেই বাকি জীবনটা কাটাতে চান। স্বদেশে থেকেই চালাতে চান তার সৃষ্টিকর্ম। প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি নিয়ে আজ তার সাক্ষাৎকার।
আপনার গান, কবিতা, গীতিকাব্যের মধ্যে ধর্ম, সাধনা, আধ্যাতিকতার প্রভাব বেশি কেন? এর রহস্য কি?
এটি আসলে আমার জন্মগত বিষয়। ছোটবেলা থেকেই ধর্ম, সৃষ্টি, স্রষ্টা, প্রকৃতি আমাকে বেশি ভাবিয়েছে। এখনো ভাবায়। এ কারণেই আমার লেখালেখিতে এ ভাবনার প্রভাব বেশি।
সুদূর আমেরিকায় দীর্ঘদিন পাশ্চাত্য জীবনযাপনেও কিভাবে এ ভাব ও চিন্তা ধরে রেখেছিলেন?
ব্যাপারটি আসলে একেবারেই মানসিক। দেশ-প্রবাসের দূরত্ব এ ভাবনাকে বদলাতে পারে না। আমেরিকায়ও আমি বাংলাদেশকে খুঁজেছি। ফ্লোরিডার বোকারটনেও আমি দেখেছি নবাবগঞ্জের বারুয়াখালীকে। সেখানে গল্প, কবিতা, গান ইত্যাদি সৃষ্টিশীলতায় আমার এ জীবন ও প্রকৃতিবাদী ভাব- ধারণা কোনো অসুবিধা হয়নি। এতে প্রবাসীদের সহায়তা ও সমর্থন পেয়েছি। বিভিন্ন উপলক্ষে ও উৎসবে সেখানে বাঙালি সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় আমার কোনো সমস্যা হয়নি। আমেরিকানসহ অন্য বিদেশিরাও আমাদের বাঙালি সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় বিমোহিত হয়েছেন।
বিভিন্ন গান ও কবিতায় আপনি প্রেম-ভালোবাসাকে অতিমাত্রায় আধ্যাতিকতা ও ভাববাদী বিষয় হিসেবে তুলে ধরছেন। এর কারণ কি?
এর কারণও ভাবনায় আমার নিজস্বতা। স্রষ্টা, স্রষ্টার সৃষ্টি ও প্রকৃতির প্রতি বেশি শরণাপন্ন হওয়ায় এমনটি হচ্ছে। স্রষ্টা এবং প্রকৃতির কাছে আমাদের ফিরে যেতেই হবে। এর বাইরে আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই। আমার উপলব্ধি হচ্ছে প্রেম-ভালোবাসায় জোরাজুরি চলে না। জোর করে প্রেম হয় না। তা ভেতর থেকে আসতে হয়। এর মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতা, বিশ্বস্ততা এবং সর্বোপরি ঐশ্বরিক টান থাকতে হয়। এর নামই প্রেম।
এখন কি নিয়ে ব্যস্ত?
কবিতা ও গান লিখছি। একটি নাটকের গল্প ও সংলাপেও সময় দিচ্ছি। আর বাংলা নববর্ষে 'নোলক-মুহিনের মিক্সড 'শূন্য হয়ে পুণ্য', মনি জামানের 'কুড়ি টাকা' এবং জীবকের 'আরো আছে গান' অ্যালবামের একসঙ্গে প্রকাশনা উৎসব হবে। এ নিয়ে একটু ব্যস্ত আছি। আর বারী সিদ্দিকীর মিক্সড অ্যালবাম 'সুরের মূর্ছনা'র প্রস্তুতিও চলছে।
এর আগের অ্যালবামগুলোর কি অবস্থা? শ্রোতাদের রেসপন্স কেমন?
বারী সিদ্দিকীর 'মানব প্রেম' ও নোলকের 'আনন্দ দিন'-এ ভালো রেসপন্স পেয়েছি। মুহিন-নাজুর মিক্সড 'ছুঁই তোমাকে'ও বেশ ভালো হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই চমৎকার গায়।
শিল্পী নির্বাচনে আপনি নতুনদের বেশি প্রায়োরিটি দেন কেন?
নতুন হলেও এরা গায় ভালো। চেষ্টা করে আরও ভালো করতে। তাদের এই চেষ্টা ও উদ্যমকে কাজে লাগানো উচিত। এ জন্য তাদের ইন্সপায়ার করতে আমার বেশ ভালো লাগে।
পুরনোদের ব্যাপারে কি আপনার কোনো অনীহা আছে? বারী সিদ্দিকী ছাড়া পুরনো কাউকে তো আপনার কাজের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে না।
এ অভিযোগ একটুও সত্যি নয়। পুরনোরা তো এমনিতেই প্রতিষ্ঠিত। তাদের নাম, যশ, খ্যাতি সবই আছে। নতুনদের একটু সেই সুযোগ দেওয়া উচিত। আর বারী সিদ্দিকীর ব্যাপারে আমার ভাবনা ও মূল্যায়ন একটু অন্যরকম। কারণ আমার লেখা কিছু গানের ভাব ও বাণী তার কণ্ঠে বেশি মানানসই হয়।
আমাদের কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ আপনার রান্নাবান্নার কথা লিখেছেন তার 'কাঠপেন্সিলে'। সেখানে তিনি এনেছেন আপনার 'ডিজিটাল জাউ'-এর কথা। ডিজিটাল জাউ আসলে কি?
হুমায়ূন ভাই চমৎকার মানুষ। তিনি শুধু লেখক, সাহিত্যিকই নন, একজন ভাবুকও। আমি পাটশাক দিয়ে একটি ভেষজ রেসিপি করেছিলাম। তা তিনি তার কলমের তুলিতে এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে, আমি বিস্মিত হয়েছি। মনে মনে একটু লজ্জাও পেয়েছি।
No comments:
Post a Comment