Thursday, September 30, 2010

হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি নিষিদ্ধ হচ্ছে

শব্দ ও পরিবেশদূষণ রোধে হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক শেষে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। যোগাযোগসচিব মোজাম্মেল হক খান ও স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান শিকদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সম্পর্কে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘রাজধানীর যানজট নিরসন এবং পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়নে বাস-র‌্যাপিড-ট্রানজিট (বিআরটি) পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ছয়টি করিডরও চূড়ান্ত করা হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে উত্তরা-টঙ্গী-গাজীপুর করিডর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। ২০১২ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হবে।
প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা অন্য পাঁচটি করিডর হচ্ছে যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর, শ্যামপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ, দারুস সালাম থেকে সাভার, টঙ্গী থেকে আশুলিয়া ও খিলক্ষেত থেকে পূর্বাচল।
মন্ত্রী বলেন, রুট পারমিটের যেসব আবেদন রয়েছে, সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যানবাহনে এফএম রেডিও সংযোগের বিষয়ে আগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা হাইওয়েতে চলতে না পারার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।
বৈঠকে বিআরটিএকে দক্ষ ও শক্তিশালী করতে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস এবং আরও জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া রাজধানীতে মিনিবাসের পরিবর্তে বড় বাস নামানোর জন্য মালিকদের প্রতি অনুরোধ করা হয়।

সোনার পুতুলের নামে প্রতারণা

ঘটকের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ানগর সোনারপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। আমজাদ হোসেনের মেয়ের সঙ্গে বিয়ের কথাবার্তা পাকাপাকি হলে ঈদের আগে আমজাদ হোসেন জানান, মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার মতো টাকা তাঁর নেই, তবে একটি সোনার পুতুল আছে। পুতুলটির দাম অনেক। তিন লাখ টাকা দিয়ে ওই পুতুল নিয়ে বাকি টাকা যৌতুক হিসেবে গ্রহণ করবেন।
সেই কথামতো গত ১১ সেপ্টেম্বর আমজাদ হোসেনকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে সোনার পুতুল নিয়ে যান সিরাজগঞ্জের মিরপুর সদর রেল কলোনির বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম। কিন্তু দোকানে নিয়ে জানতে পারেন পুতুলটি তামার। পরে টাকা উদ্ধারের জন্য আমজাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ভয়ভীতি, এমনকি প্রাণনাশেরও হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে থানায় মামলা করেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ানগর ইউনিয়নের সোনারপাড়া ও গুনাহার ইউনিয়নের তালুচবাজারসংলগ্ন কয়েকটি গ্রামের অনেকেই নকল সোনার পুতুল ব্যবসায় জড়িত। এসব ব্যবসায়ী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক ও পুলিশ প্রশাসনকে হাত করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই সব গ্রামের লোকজন সোনার পুতুলের লোভ দেখিয়ে বিভিন্নজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এলাকায় নিয়ে আসে। তারপর সোনার প্রলেপ দেওয়া পুতুল ক্রেতাদের হাতে দিয়ে পুতুলের সোনার সামান্য টুকরো ক্রেতাদের ভেঙে দেয়। ওই অংশ পরীক্ষা করে সোনার প্রমাণ পাওয়ার পর ক্রেতারা ওই পুতুল লাখ লাখ টাকা দিয়ে কিনে নেন। কিন্তু প্রতারিত হয়ে টাকা উদ্ধার করতে এলে স্থানীয় লোকজনের হাতে নির্যাতনের শিকার হন অথবা কোনো ক্রেতা পুতুল না কিনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় দুর্বৃত্তরা তাঁদের টাকা কেড়ে নেয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রতি মাসেই চার-পাঁচজন মানুষ সোনার পুতুল কিনতে এসে প্রতারণার শিকার হন। তবে গত এক বছরে এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়ে থানায় মাত্র আট-নয়টি মামলা হয়েছে। পুলিশ ১৪-১৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু প্রতারকেরা খুব সহজেই ছাড়া পেয়ে আবার ব্যবসা শুরু করে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের জয়দেবপুরের শিরিন আকতার সোনার পুতুল কিনতে এসে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা খুইয়ে থানায় মামলা করেন। একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনাসদস্যের মা ও গোপালগঞ্জের এক পুলিশ কর্মকর্তার আত্মীয়। এই দুই ঘটনায় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের চাপে থানার পুলিশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় কিছু টাকা উদ্ধার করে দিয়েছে, তবে কোনো মামলা হয়নি।
উপজেলার তালুচবাজার পরিচালনা কমিটির সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, স্থানীয় রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে ম্যানেজ করেই এলাকায় এ ব্যবসা চলছে। গুনাহার ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম খান এলাকায় পুতুল ব্যবসার কথা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যবসায় পুলিশ সরাসরি জড়িত। পুলিশ ইচ্ছা করলেই এ ব্যবসা বন্ধ করতে পারবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, নকল পুতুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজনীতিকদের কোনো সম্পর্ক নেই।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, থানার কোনো পুলিশ কর্মকর্তা এ ঘটনায় জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি সুফিয়া নাজিম বলেন, এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও পোস্টার সাঁটিয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ ঘটনা রোধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের পরামর্শ এবং প্রতারিত ব্যক্তিরা থানায় এলে পুলিশকে মামলা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

দুর্গাপূজায় ইভ টিজিং ও মাদক বন্ধে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত

আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় ইভ টিজিং ও মাদকের অপব্যবহার বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবেন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আদালত তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে এসব অপরাধের শাস্তি দেবেন। এ ছাড়া নিরাপত্তার দায়িত্বে নগরে থাকবে দুই হাজার পুলিশ ও আনসার সদস্য। নগরের ২১৮টি পূজামণ্ডপের মধ্যে ৭৫টিকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সম্মেলনকক্ষে পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কাশেম। কমিশনার বলেন, শারদীয় উৎসব শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এর মাধ্যমে পূজামণ্ডপে ইভ টিজিং ও মাদক ব্যবহার বন্ধ করা হবে। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা ঠিক করা হবে।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, নগরে সবচেয়ে বেশি পূজামণ্ডপ রয়েছে কোতোয়ালি থানা এলাকায়। এখানে ৯৬টি মণ্ডপ আছে। এর মধ্যে ২৫টিকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পূজামণ্ডপ রয়েছে চান্দগাঁও থানায়। নগরে গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপের তালিকায় রাখা হয়েছে ৫৩টিকে। এ ছাড়া সাধারণ রয়েছে ৯০টি।
অধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি মণ্ডপে দুজন পুলিশ কনস্টেবলের পাশাপাশি আটজন আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপের প্রতিটিতে নিরাপত্তা সদস্য থাকবেন আটজন। সাধারণ মণ্ডপের প্রতিটির নিরাপত্তায় থাকবেন ছয়জন সদস্য। এ ছাড়া র‌্যাবের টহল থাকবে বলে জানানো হয়। পূজা চলাকালে যানজট কমাতেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মতবিনিময় সভায় পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি তিমির বরণ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক রানা বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।

ট্রেন-বাস সংঘর্ষ

ট্রেনটি আসছিল নারায়ণগঞ্জ থেকে। কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছাতে আর অল্প সময় বাকি। তখনই ঘটে গেল মর্মান্তিক ঘটনাটি। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে সায়েদাবাদ রেলক্রসিংয়ে দুটি বাসকে ধাক্কা দেয় ট্রেনটি। বাস দুটি গিয়ে পড়ে পাশের ফল ও হালিম বিক্রেতার দোকান আর রিকশার ওপর। ঘটনাস্থলেই মারা যান চারজন। পরে হাসপাতালে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নারী। আহত ১৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসগুলো টিকাটুলি থেকে যাত্রাবাড়ীর দিকে যাচ্ছিল। এর একটি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ ও অন্যটি মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচল করে। দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে বাসযাত্রী ছাড়াও পথচারী ও ঘটনাস্থলে অবস্থানকারী ব্যক্তি রয়েছেন।
দুর্ঘটনার পর টিকাটুলি থেকে সায়েদাবাদের দিকে যাওয়া-আসার সড়ক বন্ধ থাকে প্রায় দেড় ঘণ্টা। ট্রেনের চালক ট্রেন ফেলে পালিয়ে যাওয়ার পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিকল্প চালকের মাধ্যমে ট্রেনটি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার সময় সরিয়ে নেয়। এরপর যান চলাচল শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ ঘটনার জন্য সায়েদাবাদ রেলক্রসিংয়ের লাইনম্যানকে দায়ী করেছেন। লাইনম্যান সময়মতো টিকাটুলির পাশের প্রতিবন্ধক দণ্ড না নামানোয় দুটি বাস রেললাইনের ওপরে উঠে যায়। এ সময় লাইনম্যান সায়েদাবাদের দিকের প্রতিবন্ধক দণ্ডটি ফেলে দেওয়ায় বাসগুলো আর এগোতে পারেনি। এ সময়েই ট্রেনটি হুইসেল বাজাতে বাজাতে আসতে থাকে। কিন্তু বাসগুলোর তখন না ছিল এগোবার উপায়, না পেছানোর উপায়। কারণ পেছনে তখন গাড়ি আর রিকশার লম্বা সারি। ফলে দুর্ঘটনা ছিল অবধারিত।
ট্রেনটি নারায়ণগঞ্জগামী বেকার পরিবহন (নারায়ণগঞ্জ-ব ১১০০৩৯) ও মিরপর থেকে যাত্রাবাড়ীগামী বিকল্প পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-জ ১১৩১১৬) গাড়িটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে বেকার পরিবহনের বাসের এক পাশ দুমড়েমুচড়ে যায়। বিকল্প পরিবহনের বাসটির ক্ষতি ছিল অপেক্ষাকৃত কম। ট্রেনের ধাক্কায় বাস দুটি রেললাইনের পাশের কয়েকটি ফলের দোকান, একটি হালিমের দোকান, একটি রিকশা ও কয়েকজন পথচারীর ওপর গিয়ে পড়ে।
রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহত তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন পথচারী লিসা বেগম (৩৮)। তিনি যাত্রাবাড়ীর করাতিটোলার বাসিন্দা। সায়েদাবাদে মেয়ের বাসা থেকে ফিরছিলেন তিনি। অপরজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের ছাত্র নাজিম উদ্দিন। বাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে। আরেকজন হলেন ফুটপাতের হালিম বিক্রেতা আবেদ আলী (৫৫)। তাঁর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরায়, থাকতেন গেন্ডারিয়ার ঘুণ্টিঘর এলাকায়।
আহত ব্যক্তিরা হলেন আলী আকবর (৩০), জামাল হোসেন (৩৮), তারিকুল ইসলাম, (৩৮), আক্তার হোসেন (৩০), শারমিন (১৮), তাঁর স্বামী সোহেল (২৫), কমল সরকার (৫০), ইমন (২২), ঊর্মি (২৫), আমেনা বেগম (৫০), মামুন (২২), মোস্তফা (৩৫) ও নটর ডেম কলেজের ছাত্র তারেক (২৩)। তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার তৌফিক মাহবুব চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, হতাহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বাসযাত্রী। কয়েকজন পথচারী।
দুর্ঘটনার পরপরই ট্রেন ও দুটি বাসের চালক এবং তাঁদের সহকারী, রেলক্রসিংয়ে লাইনম্যান ও ট্রেনের চালক পালিয়ে যান।
ঘটনাটি কীভাবে ঘটল, জানতে চাইলে র‌্যাব-৩-এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মো. রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, লাইনম্যান সময়মতো বার ফেলেনি। ফলে বাস দুটি রেললাইনের ওপর উঠে পড়ে। আর ট্রেনের ধাক্কায় বাস দুটি আশপাশের দোকান ও রিকশার ওপর গিয়ে পড়ে।
সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনাটি দেখছিলেন বাবু নামের এক ব্যক্তি। ঘটনার তিনি এ রকম বর্ণনা দেন, ‘বাসগুলো রেলক্রসিংয়ের ওপর দাঁড়ানো ছিল। কিন্তু সামনের বাঁশ (প্রতিবন্ধক দণ্ড) ফালানো ছিল। এ কারণে ট্রেন হুইসেল বাজালেও বাসগুলো সরতে পারে নাই। ট্রেনটা ধাক্কা দিয়া বাসগুলানরে ফুটপাতের ফলের দোকান আর রিকশার ওপর নিয়া ফেলল।’
দুর্ঘটনার পর টিকাটুলি থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল দেড় ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকে। ট্রেনের চালক পালিয়ে যাওয়ায় ট্রেনটি সরানোর কেউ ছিল না। ফলে এই রুটের গাড়িগুলো ঘুরে আশপাশের বিভিন্ন সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এতে করে গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, মতিঝিল এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সন্ধ্যা ছয়টা ২০ মিনিটের দিকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিকল্প চালকের মাধ্যমে ট্রেনটি সরিয়ে নিলে যান চলাচল আবার শুরু হয়।
আহতদের মুখে ঘটনার বর্ণনা: আহত বাসযাত্রী গিয়াস উদ্দিন সরকার বলেন, তিনি বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের মতিঝিল অফিসে কাজ করেন। অফিস শেষে নারায়ণগঞ্জের বাসায় যাওয়ার জন্য বেকার পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। ৫২ আসনের এই বাসে কয়েকজন যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাসটি সায়েদাবাদ রেললাইন অতিক্রম করার আগেই যানজটে আটকে যায়। কিছুক্ষণ পর তাঁদের বাসটি সায়েদাবাদ রেলক্রসিং পার হচ্ছিল। বাসটির সামনের অংশ রেলক্রসিং পার হওয়া মাত্র পেছনের যাত্রীরা ট্রেন ট্রেন বলে চিৎকার করে ওঠেন। অনেকে গেট ও জানালা দিয়ে দ্রুত নেমে যান।
গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘জীবন বাঁচাতে আমি হতাহত ব্যক্তিদের ওপর দিয়ে লাফিয়ে পালাচ্ছিলাম।’ তখন পাশেই তাঁর প্রতিবেশী আমেনা বেগমকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। আশপাশের লোকজনের সহায়তায় আমেনা বেগমকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি।
আহত আক্তার হোসেন বলেন, তিনি একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। গাজীপুর থেকে সায়েদাবাদ এসে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। অনেকে ভেবেছেন, হয়তো কোথাও মারামারি লেগেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনিও দৌড় দেন। ওই সময় একটি বাস উল্টে তাঁর ওপর পড়লে তিনি আহত হন। আহত শারমিন আক্তার জানান, তিনি কুমিল্লা থেকে ঢাকার সায়েদাবাদে নামেন। পরে তিনি একটি রিকশায় ওঠেন। রেলক্রসিং অতিক্রম করার সময় বাসের নিচে চাপা পড়েন।
গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আহত ব্যক্তিদের কয়েকজনকে জরুরি অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়েছে। জরুরি বিভাগের বিছানায় আমেনা বেগম ব্যথায় ছটফট করছিলেন। তিনি চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘বাজান, আমার বাজান কই?’ অস্ত্রোপচার শেষে তাঁকে পর্যবেক্ষণ কক্ষে নেওয়া হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক এইচ এ নাজমুল হাকীম প্রথম আলোকে বলেন, আহত ব্যক্তিদের অধিকাংশের আঘাত গুরুতর।
হাসপাতালে মন্ত্রী ও মেয়র: রাতে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন পৃথকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যান। এ সময় তাঁরা চিকিৎসার খোঁজখবর নেন ও আহত ব্যক্তিদের সুষ্ঠু চিকিৎসা দেওয়ার পরামর্শ দেন।
মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ট্রেন-বাস সংঘর্ষের ঘটনায় চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মেয়র এ ঘটনার জন্য রেলওয়ের গেটম্যানকে দায়ী করেন। তিনি প্রয়োজনে ওষুধপত্র দিয়ে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা-সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।

Saturday, September 25, 2010

তিন বছরের মধ্যেই অচল হবে পৃথিবী!







মানবজমিন ডেস্ক: আর মাত্র তিন বছরের মধ্যে পৃথিবী অচল হবে! সূর্যে প্রচণ্ড এক শক্তির বিস্ফোরণে পুরো পৃথিবীতে দেখা দেবে ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খলা। সব বিদ্যুতের তার গলে গলে পড়ে যাবে মাটিতে।
অন্ধকারে ডুবে যাবে চারদিক। যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বিকল হয়ে যাবে। বিমান উড়বে না আকাশে। ইন্টারনেট ক্যাফেগুলোতে খুঁজে পাওয়া যাবে না কাউকে। এমন সতর্কতা জারি করেছেন নাসার একদল বিজ্ঞানী। গতকাল এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য সান। এতে বলা হয়েছে, সূর্যের চুম্বকীয় শক্তির বলয় তার চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছেছে বলে দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সূর্যে সৃষ্ট দাগ বা স্ফীতিগুলো ইতিমধ্যে বিপুল পরিমাণ বিকিরণ ঘটানোর মতো ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে। সূর্যকে ঘিরে গড়ে ওঠা আগুনের বলয়গুলো বিধ্বংসী ১০০টি হাইড্রোজেন বোমার সমান শক্তি ধরে। বিজ্ঞানীদের মতে, সূর্যের ওই বলয়ের চক্র সম্পন্ন হয়ে তিন বছরের মধ্যেই বিকিরণ শুরু হতে পারে। সূর্যের সৌর কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হয় উচ্চ ও নিম্ন পিরিয়ডের ১১ বছরের দু’টি চক্রের মাধ্যমে। বর্তমানে এটি খুবই শান্ত অবস্থায় রয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এখন খুব দ্রুতই সূর্যের স্ফীতিগুলো বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে চুম্বকীয় শক্তিও। এ হিসাবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, ২০১৩ সালেই চৌম্বক ঝড় দেখা দিতে পারে। তখন চুম্বকীয় শক্তির বিকিরণে পৃথিবীর সব কিছু অচল হয়ে পড়বে। দেখা দেবে ভূ-চৌম্বক ঝড়। আকাশ জুড়ে দেখা দেবে লাল বর্ণের আলোকচ্ছটা। পুরোপুরি বিকল হয়ে পড়বে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ ও স্যাটেলাইটসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিমান চলাচল, রেডিও সমপ্রচার। থমকে পড়বে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাও। এ ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবস্থা। এ অবস্থা চলতে পারে কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের জন্য। তবে তা এক মাসের বেশি সময়ও স্থায়ী হতে পারে। পৃথিবীকে এ ঝড় থেকে রক্ষা করতে অনেক আগে থেকেই গবেষণা শুরু করে নাসা। পৃথিবীকে ঘিরে কয়েক ডজন স্যাটেলাইট স্থাপন করেছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি। নাসার বিজ্ঞানীদের সামপ্রতিক এ ঘোষণায় রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বৃটিশ সরকার। গতকাল বৃটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিয়াম ফক্স জরুরি সভা ডেকেছিলেন। এতে তিনি দুর্যোগ এড়ানোর সম্ভাব্য পথ খুঁজে বের করতে বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানান। ইলেক্ট্রিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি কাউন্সিল এ সভার আয়োজন করে। এতে ফক্স বলেন, মহাকাশে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কোন বৈরী শক্তিও এ ধরনের দুর্যোগ ডেকে আনতে পারে। তার মতে, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো কিছু দেশ পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চাইছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যেভাবে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল, এ দেশগুলো হয়তো তার ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে পারে। তারা হয়তো মহাকাশে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, যার কারণে পৃথিবীতে বিদ্যুৎ-চৌম্বক ঝড় দেখা দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানান, প্রতি ১০০ বছর পর পর সূর্যে শক্তির এ বিস্ফোরণ দেখা দেয়। আধুনিক সময়ে সর্বশেষ এ ঘটনা ঘটেছিল ১৮৫৯ সালে। ওই সময় ইউরোপ ও আমেরিকা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছিল। দু’ মহাদেশের মধ্যে বিস্তৃত টেলিগ্রাফের তারগুলো ওই সময় পুড়ে বিকল হয়ে পড়েছিল। লন্ডন, প্যারিস ও নিউ ইয়র্কের মতো বড় শহরগুলো তখন ধূলিঝড়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল বিশ্বের সর্বাধুনিক শহরগুলো। অচল হয়ে পড়েছিল জনজীবন। আগুনরঙা লালে ঢেকে গিয়েছিল দুই-তৃতীয়াংশ আকাশ। ১৯৮৯ সালে কানাডার কিউবেকে ছোট মাত্রায় দেখা দিয়েছিল এ সৌর বিস্ফোরণ। তখন কিউবেকের সবগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র অচল হয়ে পড়েছিল।

মহাকাশ স্টেশনে ফিরে গেলেন তিন নভোযাত্রী

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে পৃথিবীতে আসার সময় প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে তিনজন নভোযাত্রী আবার ওই স্টেশনে ফেরত গেছেন। রাশিয়ার সয়ুজ নভোযানে করে দুই রুশ ও এক মার্কিন নভোযাত্রী পৃথিবীর দিকে রওনা হওয়ার কথা ছিল। আজ শনিবার পর্যন্ত তাঁদের যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় মহাকাশ সংস্থা রসকসমস জানায়, তিন নভোযাত্রী পৃথিবীর পথে যাত্রা করলে হঠাৎ করেই বিভিন্ন কম্পিউটার প্রযুক্তিগত সমস্যার সংকেত দেয়। এ ধরনের সংকেতের কারণ এখনো অস্পষ্ট। রসকসমসের প্রধান আনাতোলি পারমিনভ সাংবাদিকদের জানান, প্রযুক্তিবিদদের প্রাথমিক বিশ্লেষণে জানা গেছে, কম্পিউটার কোনো কারণে ভুল সংকেত গ্রহণের কারণে এ সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। মহাকাশ স্টেশন থেকে নভোযান সয়ুজের প্রবেশের দরজা বন্ধ করার পর এ সমস্যা হয়।

৪০০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ভাষার সন্ধান




ভাবের আদান-প্রদানের স্বার্থেই ভাষার আবির্ভাব ঘটে মানবজীবনে। কালের বিবর্তনে পৃথিবীতে যেমন বহু ভাষার আগমন ঘটে, তেমনি নানা কারণে বহু ভাষা হারিয়েও যায়। তেমনি কয়েক শ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া একটা ভাষার সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতাত্তি্বকরা। ৪০০ বছরের পুরনো একটি চিঠির উল্টোদিকে ভাষাটির লিখিত রূপ পাওয়া গেছে। পেরুর ১৭ শতকের একটি খনন এলাকা থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা চিঠিটি আবিষ্কার করেন। চিঠির উল্টোদিকের আঁকিবুকি দেখে তাঁরা ধারণা করছেন, পেরুর উত্তরাঞ্চলীয় আদিবাসীদের হারিয়ে যাওয়া ভাষা এটি।
পেরুর রাজধানী লিমার ৩৪৭ মাইল উত্তরে ত্রুজিল্লোর কাছে এল ব্রুজো প্রত্নতাত্তি্বক খনন এলাকায় ১৭ শতকের ম্যাগদালেনা ডি কাও ভিয়েজো গির্জার ধ্বংসাবশেষে অনুসন্ধান চালান আন্তর্জাতিক প্রত্নতত্ত্ববিদদের একটি দল। চিঠিটি পাওয়া যায় গির্জার ধ্বংসাবশেষের ইটের স্তূপের ভেতরে। গির্জাটিতে ২০০ বছর ডোমিনিকান খ্রিস্টান ভিক্ষুদের বসবাস ছিল। চিঠিটি ২০০৮ সালে পাওয়া গেলেও এত দিন বিষয়টি গোপন রাখা হয়। কারণ, প্রত্নতাত্তি্বকরা ভাষাটির ব্যাপারে সঠিক তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করতে সময় নিতে চেয়েছেন। চলতি মাসে আমেরিকান নৃতত্ত্ববিদদের জার্নালে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে।
হার্ভার্ডস পিবডি মিউজিয়াম অব আর্কিওলজি অ্যান্ড এথনোলজির প্রত্নতাত্তি্বক জেফরি কুইল্টার বলেন, 'গবেষণা থেকে এটাই প্রতীয়মান যে চিঠিটিতে একটি ভাষার প্রমাণ মেলে, যা কয়েক শ বছর আগে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে। ভাষাটি সংখ্যাতাত্তি্বক।'
প্রত্নতাত্তি্বকরা চিঠিটির একটি কপি প্রকাশ করেছেন। তাতে দেখা যায়, স্প্যানিশ ভাষায় লিখিত কতগুলো সংখ্যার একটি কলাম এবং ওই সংখ্যাগুলোর সামনে তার অনুবাদ রয়েছে। তবে যে ভাষায় অনুবাদ হয়েছে সেই ভাষাটির অস্তিত্ব এখন আর নেই।
কুইল্টার বলেন, 'যে ভাষাটি আবিষ্কৃত হয়েছে, তা ১৬ কিংবা ১৭ শতকেও কেউ দেখেনি বা শোনেনি।' তবে তিনি জানান, ভাষাটিতে 'কোয়েচুয়া' নামের একটি প্রাচীন ভাষার প্রভাব রয়েছে।
কোয়েচুয়া ভাষায় এখনো আন্দেজ এলাকার কয়েক লাখ লোক কথা বলে। তিনি এও জানান, এটা স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক যুগের একটা ভাষার লিখিত রূপও হতে পারে। পেরুর উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলের জেলেরা (স্প্যানিশ ভাষায় যাদের পেসকাদোরা বলা হয়) ওই ভাষায় কথা বলত। তবে পেসকাদোরা ভাষার কোনো তথ্য সংরক্ষিত নেই।

আপাতত চলচ্চিত্রেই




নওশীনের প্রথম চলচ্চিত্র সুয়া চান পাখি। এই ছবির কাজের সময় তিনি বলেছিলেন, ভালো চরিত্র পেলে চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ করবেন। প্রথম ছবির কাজ শেষ হওয়ার আগেই নওশীন হ্যালো অমিত নামের আরও একটি ছবির কাজ শুরু করেছেন। এ দুটো ছবির কাজ নিয়ে তিনি ভীষণ ব্যস্ত। তিনি বললেন, ‘এখন এই দুটো চলচ্চিত্রেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছি।’
নওশীন জানালেন, চলচ্চিত্রের ব্যস্ততার কারণে নাটকের জন্য আলাদা করে তেমন সময় দিতে পারছেন না। তিনি বললেন, ‘আগামী ১ অক্টোবর যেতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকে ফিরেই আবার চলচ্চিত্রের শুটিং। নাটকে অভিনয় করব, তবে এখন নয়। ছবি দুটি শেষ হওয়ার পরই নাটকের কাজ শুরু করব। তবে খুব বেশি নাটকে কাজ করতে চাই না।’
এবার ঈদে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি কাজ করেছেন নওশীন। তিনি বললেন, ‘ভালো মানের অল্প নাটকে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। কারণ, এবার ঈদে যে কটি নাটকে কাজ করেছি, অনেকের কাছ থেকেই এর প্রশংসা পেয়েছি।’

পরীক্ষায় প্রতিবন্ধীরা ১৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় পাবে

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাসহ দেশের সব পাবলিক পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ১৫ মিনিট সময় বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ বছর প্রথম অনুষ্ঠেয় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেএসসি) এবং জুনিয়র স্কুল দাখিল পরীক্ষা (জেডিসি) থেকে এই সুযোগ পাবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। এ পরীক্ষায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি সেরিব্রাল পালসিজনিত (অপরিণত মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধিতা) এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও প্রথমবারের মতো শ্রুতিলেখক নিয়োগের সুযোগ পাবে।
গত বুধবার আন্তশিক্ষা বোর্ডের সভায় এ বিষয়টি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পেয়েছে।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ফাহিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, গত মে মাসে উপকমিটির সভায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত সময় হিসেবে ১৫ মিনিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। গতকাল শ্রুতিলেখক নিয়োগ এবং অতিরিক্ত ১৫ মিনিট সময় বরাদ্দের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে।
জেএসসি পরীক্ষাসংক্রান্ত নীতিমালাতেও এ বিষয় দুটির উল্লেখ আছে। পাবলিক পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সময় বাড়াতে প্রতিবন্ধীদের সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে আবেদন জানিয়ে আসছিল। অন্যদিকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সঙ্গে অন্য প্রতিবন্ধীদের জন্য স্ক্রাইবার বা শ্রুতিলেখক নিয়োগের বিষয়টিও বিভিন্নভাবে সরকারের দৃষ্টিতে আনা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এক চিঠিতে জানানো হয়, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের (হাত নেই বা হাতের গঠন এমন যে সেই হাত দিয়ে লেখা সম্ভব নয়) তাদের জন্য শ্রুতিলেখক নিয়োগের ব্যাপারে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটিতে বিষয়টি আলোচনা হয় এবং সবাই এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন। সভা সূত্র জানায়, এখন থেকে সব পাবলিক পরীক্ষায় সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাও শ্রুতিলেখক নিয়োগের সুযোগ পাবে। তবে এ জন্য তাদের যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রবেশপত্র হাতে পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদন করার এক বা দুই কর্মদিবসের মধ্যে এ-সংক্রান্ত অনুমতিপত্র দেওয়া হবে।
তবে প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত ১৫ মিনিট সময় বরাদ্দ দেওয়াকে পর্যাপ্ত মনে করছেন না জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি খন্দকার জহুরুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত এক ঘণ্টা সময় দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। কেননা, শ্রুতিলেখকের সাহায্যে পরীক্ষা দিতে অনেক সময় বেশি লাগে। তার পরও সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, প্রথম উদ্যোগ হিসেবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষায় ১৫ মিনিট সময় বাড়ানো হয়েছে। ভবিষ্যতে বিষয়টি আরও পর্যালোচনা করা হবে।

সজিনা' ফলবে বারো মাস




কাপ্তাই উপজেলার নারানগিরি এলাকায় রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে উদ্ভাবিত ভেষজ গুণসমৃদ্ধ মৌসুমি সবজি সজিনা এখন সারা বছরই গাছে ধরবে। একটি মৌসুমি সবজি সারা বছরের উৎপাদন লাভের সাফল্যে দেশে এক দুর্লভ অর্থকরী ফসলের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে বলে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা মত প্রকাশ করেছেন।
সজিনা ভেষজ গুণসমৃদ্ধ একটি ঔষধি সবজি ফসলের জাত। সাধারণ মানুষের নৈমিত্তিক আহারে সজিনা একটি প্রিয় সবজি। সুস্বাদু, পুষ্টিকর তদুপরি ঔষধি গুণান্বিত এ সবজির চাহিদা এবং দামি হলেও দেশে এর আবাদে তেমন উদ্যোগী ভূমিকা না থাকায় সজিনা প্রায় বিলুপ্ত ফসলের জাতে পরিণত হয়। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে সজিনা গাছে ধরে এবং পুরো বছরে মাত্র ৮-১০ দিন এ সজিনা চড়া দামে বাজারে পাওয়া যায়। সম্প্রতি রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সজিনার ওপর গবেষণা চালিয়ে এ দুর্লভ উদ্ভিদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি এর বারোমাসি জাত উদ্ভাবনে সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়।

সজিনা তরকারির তালিকায় অনেকের প্রিয় একটি সবজি। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই জাতীয় সবজি অনেকের প্রত্যাশা থাকলেও দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্যের কারণে বাজারে সহজে এ সবজি মেলে না। তদুপরি মৌসুমি ফসল হিসেবে যখন তখন এটি বাজারে পাওয়াও যায় না। বাংলা নববর্ষে মিশ্র সবজির তরকারি রান্নায় সজিনার সমন্বয় ঘটাতে প্রত্যয়ী হয়ে পড়ে অনেকে। বাজারে তখন আঁটি আকারে সজিনা সবজির প্রতিযোগিতামূলক বিকিকিনিও দেখা যায়। ভরা মৌসুমেও সজিনার অপর্যাপ্ততায় বাজারে সজিনার চাহিদায় ক্রেতাদের মধ্যে কেনার প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে।
রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে সরেজমিনে সজিনার ওপর গবেষণা ক্ষেত্র পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সজিনা ধরার মৌসুম ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল হলেও গবেষণা বাগানের গাছে ফুল আর ফসলের পর্যায়ক্রমিক উৎপাদনের সমারোহ। একদিকে ফুল অপরদিকে কচি সজিনা এবং অন্যদিকে পরিপক্ব সজিনা শিম জাতীয় ফসল। একই গাছে পর্যায়ক্রমে সজিনা ধরার এই আবহ আগামীতে এ জাতীয় ফসলের বারোমাসি উৎপাদনের সম্ভাবনার পরিবেশ তৈরি করেছে।
রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম হারুনুর রশিদ জানান, গবেষণাকৃত সজিনার গাছে ফুল আর ফল দুটোই এক সঙ্গে ধরেছে। দেশে কোথাও একই গাছে এই ধরনের ফলনের অবস্থা দেখা যায়নি। নতুনভাবে এখানে সজিনার ফলনের পরিবেশ বারোমাসি জাতের উদ্ভাবনের সম্ভাবনা বিরাজমান। দেশের মাটি ও আবহাওয়ায় সজিনা আবাদের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। এ অবস্থায় সজিনার বারোমাসি আবাদের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সজিনার বর্তমান চাহিদা এবং এর বাজার দাম হিসেবে এই সবজি আবাদে সহজলভ্যতার পাশাপাশি আর্থিক উপার্জনেরও সম্ভাবনার দিক উন্মোচিত করবে।
সম্ভাব্যতাকে সার্থক করতে দেশের মাটি ও আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশে সজিনা আবাদ প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দিতে রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে ইতিমধ্যে সজিনার গবেষণা ও আবাদের ব্যাপ্তি ঘটাতে ব্যাপক প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। বারোমাসি সজিনার বাণিজ্যিক চাষাবাদে কৃষকদের মাঝে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনা বিরাজমান বলে কৃষি বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।