Monday, March 18, 2013

চীনে ৪০ বছরে ৩৩ কোটি গর্ভপাত

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচি গ্রহণের পর গত ৪০ বছরে চীনে প্রায় ৩৩ কোটি গর্ভপাত হয়েছে। চীনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সরকার ১৯৮০ সালে গৃহীত এক সন্তান নীতি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নীতি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরো এগিয়ে নেবে বলে মনে করছে তারা।
চলতি বছরের শুরুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে জনসংখ্যার বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ তুলে ধরে। এতে দেখা যায়, ১৯৭১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মোট ৩২ কোটি ৮৯ লাখ গর্ভপাত ঘটানো হয়েছে। এর কিছু দিন আগেই সরকার সন্তান কম নিতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। এসব কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৯৮০ সালে কার্যকরি হয় এক সন্তান নীতি। তবে প্রত্যন্ত কিছু অঞ্চল, নৃ-তাত্তি্বক জনগোষ্ঠী এবং স্বামী-স্ত্রী উভয়ই মা-বাবার একমাত্র সন্তান হওয়ার ক্ষেত্রে এ নীতি শিথিল করা হয়। বিশেষ করে প্রথম সন্তান মেয়ে হলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্বিতীয় সন্তানের অনুমতি দেওয়া হয়।
২০১০ সালের সর্বশেষ আদমশুমারিতে বলা হয়, এক সন্তান নীতি না থাকলে দেশের বর্তমান জনসংখ্যা আরো ৪০ কোটি বেশি থাকত। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা ১৩৫ কোটিরও বেশি।
এদিকে গত রবিবার জাতীয় আইনপ্রণয়নকারী পরিষদের বার্ষিক সভায় পরিবার পরিকল্পনা নীতিমালার কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়। তবে নীতিমালায় এক সন্তান নীতি অব্যাহত রাখা হয়। জাতীয় জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কমিশন (এনপিএফপিসি) জানায়, এক সন্তান নীতি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখায় এটি অব্যাহত থাকবে। মন্ত্রীসভার কেন্দ্রীয় পরিষদের মহাসচিব মা কাই নীতিমালা পরিবর্তন সম্পর্কে বলেন, 'এটি পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে আরো এগিয়ে নেবে।' সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।

গাজীপুরে ব্যবসায়ীর ৩৫ লাখ টাকা ছিনতাই

গাজীপুরে এক পাইকারি ব্যবসায়ীর ৩৫ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে। বাসা থেকে টাকা নিয়ে দোকানে প্রবেশের মুহূর্তে একদল ছিনতাইকারী বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে দুটি ব্যাগে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে গুলি ছুড়তে ছুড়তে মোটরসাইকেলে করে পুলিশের সামনে দিয়েই টঙ্গীর দিকে চলে যায়। ফিল্মি স্টাইলে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে আজ সোমবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ব্যস্ততম বোর্ডবাজারে। খবর পেয়ে র‍্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও টাকা উদ্ধার বা জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

জানা গেছে, ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্যে বোর্ডবাজারের আরপি ট্রেডর্সের মালিক রতন মল্লিক (৪৮) দুটি ব্যাগে করে ৩৫ লাখ টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হন। এ সময় তিন কর্মচারি ছাড়াও স্ত্রীর তিন ভাই রোকন সরকার, রতন সরকার ও শোকান সরকার তার সঙ্গে ছিলো। সকাল সোয়া ৮টার দিকে তালা খুলে দোকানে প্রবেশের মুহূর্তে ৮ যুবক এসে শত শত মানুষের সামনেই তাদের বুকে অস্ত্র এবং ঘাড়ে চাপাতি ঠেকিয়ে টাকার ব্যাগ দুটি ছিনিয়ে নেয়। এ সময় চারটি মোটরসাইকেলে আরো চার যুবক এসে দাঁড়াতেই ছিনতাইকারীর গুলি ছুড়তে ছুড়তে টাকা নিয়ে টঙ্গীর দিকে চলে যায়।

রতন মল্লিকের শ্যালক রোকন সরকার (২৮) জানান, ওই আট যুবক স্বাভাবিকভাবে হেটে এসে কোমর থেকে পিস্তল ও চাপাতি বের করে আমাদের দিকে তাক করে। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা টাকা ছিনিয়ে নেয়। চলে যাওয়ার সময় আমরা চিৎকার করলে পাঁচ রাউন্ড গুলি ছুড়ে চলে যায়। ছিনতাই করতে তাদের সময় লেগেছে মাত্র দুই মিনিট।

ব্যবসায়ী রতন মল্লিক জানান, তিন দিন বন্ধ থাকার কারণে বিক্রির টাকা বাসায় নিয়ে রেখেছিলেন। দোকানের ওপরই অগ্রণী ব্যাংকের শাখা। ওই শাখায় জমা দেওয়ার জন্যেই বাসা থেকে টাকা নিয়ে বের হয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ছিনতাইকালে একশ গজ দূরেই পুলিশ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। ছিনতাই শেষে টাকা নিয়ে পুলিশের সামনে দিয়েই গুলি করতে ছিনতাইকারীরা চলে গেছে।

জয়দেবপুর থানার এসআই মাহফুজুর রহমান জানান, পুলিশ ওই এলাকায় হরতাল ডিউটি করছিল। গুলির শব্দকে পিকেটারদের নিক্ষেপ করা ককটেল ভেবে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছিনতাইয়ের কথা জানতে পেরে ছিনতাইকারীদের পিছু ধাওয়া করে। কিন্তু তাদের পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, জড়িতদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চলছে।

‘কে জানত, এটাই হবে শেষ চুমু?’

‘প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার আগে শোভা আমাকে চুমু দিত। শনিবারও দিয়েছিল। কিন্তু কে জানত, এটাই হবে শেষ চুমু?’ গত শনিবারের দুর্ঘটনায় নিহত জান্নাতুল মাওয়া শোভার শোকসন্তপ্ত বাবা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘মাত্র দেড় মাস আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছি। এর মধ্যেই বড় মেয়েকে হারালাম।’
কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাতিমারা গ্রামে গতকাল রোববার যেন নেমে এসেছিল রাজ্যের নীরবতা। দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামে ঢোকার পথে নিহত শিশুদের স্মরণে কালো ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছেন পার্শ্ববর্তী পুজকরা গ্রামের একদল তরুণ। মহাসড়ক লাগোয়া চায়ের দোকানে অন্যান্য দিনের তুলনায় মানুষের উপস্থিতি একেবারেই কম। পুরো গ্রামটিই যেন শোকে পাথর হয়ে আছে। অবুঝ সন্তানদের হারিয়ে ঘরে ঘরে কান্নার রোল উঠেছে।
‘কেমনে ওই মানিককে (রাকিব হোসেন) ভুলি থাকব। ছেলে আমার নামীদামি লোক অইত, আমার সেই স্বপ্ন ভেঙে গেল। আমার মনে হয়, ছেলে আমার কোনো জায়গায় গেছে, এখনই ফিরি আইব।’ এভাবে বলছেন আর বুক চাপড়ে বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন নিহত নাথেরপেটুয়া মডেল স্কুলের প্লে শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন শুভর মা লাকি আক্তার।
শনিবার কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের নাথেরপেটুয়া এলাকায় ট্রাকচাপায় সাত শিক্ষার্থী নিহত হয়। তাদের মধ্যে ছয়জন হাতিমারা ও একজন কাউলিপাড়া গ্রামের। সাত খুদে শিক্ষার্থীকে হারিয়ে হাতিমারা গ্রামের ঘরে ঘরে চলছে মাতম।
শিক্ষার্থীদের স্মরণে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। নিহত ফাহাদুল ইসলাম মিথনের ভাই নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ট্রাকচালকের বিরুদ্ধে গতকাল মনোহরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
লাকসাম-নোয়াখালী রেললাইন পার হয়ে প্লে শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন ও মোক্তাকিম হোসেন হূদয়, নার্সারি শ্রেণীর শিক্ষার্থী আল আমিনের বাড়ি। একই বাড়ির তিন শিক্ষার্থীকে হারিয়ে ঘরে ঘরে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আল আমিনকে হারিয়ে তার বাবা আবদুল মালেক ও আয়েশা বেগম পাগলপ্রায়। মোক্তাকিম হোসেনের বাড়ি পার্শ্ববর্তী কাউলিপাড়া গ্রামে। নানার বাড়ি হাতিমারা গ্রামে থেকে পড়াশোনা করত মোক্তাকিম। চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী টিপু সুলতান ওরফে স্বাধীনের মা সুরমা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তিনি খাটের মধ্যে গড়াগড়ি করছিলেন। তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাহাদুল ইসলামের মা নাছিমা আক্তার ও বাবা মাহবুব আলম ছেলের বই নিয়ে খাটের মধ্যে বসে আছেন।
ফাহাদুলের মা নাছিমা আক্তার বলেন, ‘প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার আগে বলতাম, আল্লাহর আমানত, আল্লাহর হাওলা করে দিলাম। এ কেমন বিচার হলো।’
প্লে শ্রেণীর শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান নিহাদ তিন বোনের একমাত্র ভাই। দুর্ঘটনায় হাসিবুল মারা যায়। ওই দুর্ঘটনায় তার ছোট বোন ফাহমিদা তাহের তমা আহত হয়।
সংশোধনী: মনোহরগঞ্জের নাথেরপেটুয়া এলাকায় শনিবারের সড়ক দুর্ঘটনায় আট শিক্ষার্থী নিহতের খবর গতকাল প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে। তাদের মধ্যে নাসির উদ্দিন নামের তৃতীয় শ্রেণীর একটি শিশুর মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ওই নামে কেউ ভ্যানে ছিল না বলে জানিয়েছেন নাথেরপেটুয়া মডেল স্কুলের অধ্যক্ষ আমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, নিহত শিশুদের প্রকৃত সংখ্যাটি হবে সাত।
মনোহরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল আনোয়ারও এই সংখ্যাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সাভারে রড কাটার যন্ত্র বিস্ফোরিত হয়ে নিহত ২

সাভারের হেমায়েতপুরে একটি কারখানায় রড কাটার যন্ত্র বিস্ফোরিত হয়ে দুই শ্রমিক নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হেমায়েতপুরে নির্মাণাধীন জালালাবাদ গ্রুপের টিনের কারখানায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন: দিনাজপুরের বীরগঞ্জের আনোয়ারুল ইসলাম (২২) ও ঠাকুরগাঁওয়ের কমল (১৮)। হতাহত ব্যক্তিরা ওই কারখানার শ্রমিক ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কারখানার শ্রমিক আবদুল বাসেত জানান, আজ সকালে কারখানায় চারজন শ্রমিক ওই যন্ত্র দিয়ে রড কাটার কাজ করছিলেন। এ সময় বিকট শব্দে যন্ত্রটি বিস্ফোরিত হলে এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ওই শ্রমিকদের শরীরে লেগে তাঁদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে আনোয়ারুল নিহত হন। আহত তিনজনকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে কমলের মৃত্যু হয়।
কারখানার প্রকৌশলী মো. মহসীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, লাশ দুটি এখন পুলিশ হেফাজতে আছে।

Sunday, March 17, 2013

ওবামা মিথ্যাবাদী: পেলিন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে মিথ্যাবাদী বলে অভিহিত করেছেন রিপাবলিকান দলের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সারাহ পেলিন।
আজ রোববার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গতকাল শনিবার ওয়াশিংটনের কাছে কনজারভেটিভ পলিটিকেল অ্যাকশন কনফারেন্সে পেলিন এ কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের সাবেক এই নেতা বলেন, ‘বারাক ওবামা সর্বকালের মধ্যে সবচেয়ে স্বচ্ছ প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বারাক ওবামা, আপনি মিথ্যে বলেছেন।’
এ বক্তব্যের পর সেখানে অবস্থিত রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল কর্মীরা হাততালি দেন।
পেলিন তাঁর ভাষণে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের এক রিপাবলিকান সদস্যের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন। ২০০৯ সালে কংগ্রেসে অবৈধ অভিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ভাষণ দেওয়ার সময় ওবামার বিরুদ্ধে ওই রিপাবলিকান সদস্য মিথ্যা বলার অভিযোগ তোলেন।
পেলিন তাঁর বক্তৃতায় রিপাবলিকান দলকে রক্ষণশীল মূল্যবোধ ধারণ করারও আহ্বান জানান।

অন্য মুশফিক

মুশফিকুর রহিমের এই সাহসটার কথা জানা ছিল না। নেটে ব্যাটিং করছিলেন। সেখান থেকে ব্যাট হাতে দৌড়ে গেলেন সাপ মারতে!
মুশফিক ভালো ব্যাটসম্যান। ভালো ছাত্র। জীবনের লক্ষ্য ভালো মানুষ হওয়া। এর বাইরে আবেগপ্রবণ আর অভিমানী তরুণ হিসেবেই তাঁর পরিচিতি। সেই মুশফিক কলম্বোর অনুশীলন মাঠের পাশে এঁকেবেঁকে চলে আসা সাপের মুখোমুখি হলেন ব্যাট হাতে। কী বিস্ময়! কী বিস্ময়!
আসলে বিস্ময়ের কিছু নেই। ব্যাট নিয়ে হয়তো এর আগে কাউকে মারতে যাননি, তবে কথার চাবুক মেরে সাহসের প্রমাণ অনেকই দিয়েছেন। সর্বশেষ ঘটনা তো অতিসাম্প্রতিক। গল টেস্টের সাফল্যের পর ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর পুরস্কারের ঘোষণা শুনে মুশফিক সবিনয়ে মনে করিয়ে দিলেন, এ রকম ঘোষণা প্রায়ই আসে। কিন্তু প্রতিশ্রুত পুরস্কার আসে না। এবার সেটা এলেই তিনি খুশি হবেন।
গল টেস্টটাকে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেই ঢুকিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। দেশের পক্ষে টেস্টে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির ইতিহাস লেখা হলো তাঁর ব্যাটে। অথচ পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতার এই তরুণকে দেখে ভেতরের সাহস অনুমানের সাধ্য কার! বিনয়ী, মুখে অমায়িক হাসি—বাইরে থেকে এমন মুশফিককে দেখে অভ্যস্ত সবাই। সেই মুশফিকই যখন বিপিএল নিয়ে ঠোঁটকাটা হয়ে ওঠেন, প্রতিশ্রুতি পারিশ্রমিক না পেয়ে ধুয়ে দেন ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিককে, অবিশ্বাস্য তো লাগেই।
গত এশিয়া কাপের আগের ঘটনা। মাত্রই শেষ হওয়া বিপিএলের প্রথম আসর নিয়ে বিসিবির পিত্তি জ্বালিয়ে দেওয়া এক মন্তব্য করে বসলেন মুশফিক। বিপিএলের মতো অগোছালো টুর্নামেন্ট নাকি আর হয় না। বিতর্ক আর সমালোচনায় বিপিএল নিয়ে তখন এমনিতেই জর্জরিত বিসিবি। এ অবস্থায় জাতীয় দলের অধিনায়কের মুখ থেকে ছুটে আসা তির সহ্য করা কঠিন। ঠোঁটকাটা মুশফিককে ‘শাসন’ করতে তাই এশিয়া কাপে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়ারও চেষ্টা হয়েছিল তাঁর কাছ থেকে। শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি সে চেষ্টা।
বিকেএসপিতে পড়তেন, স্বনির্ভর হয়ে ওঠার প্রথম পাঠ সেখানেই নেওয়া। তবে নিজের কথা স্পষ্ট করে বলার সাহস মুশফিকের চরিত্রে ঢুকে পড়েছিল আরও আগে। চার ভাই এক বোনের মধ্যে চার নম্বর হলেও পরিবারের অনেক কিছুতেই বড় ভাই-বোনদের কাছে গুরুত্ব ছিল তাঁর কথার। আর বগুড়ায় শৈশব-কৈশোরের বন্ধু মহলে তো এক রকম নেতাই ছিলেন। মুশফিক কিছু বললে ফেলতে পারতেন না সমবয়সীরা।
জাতীয় দলে আসার আগে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিলেন বলে নেতৃত্ব চর্চার ধারাবাহিকতাটা বজায় ছিল। এখন তো জাতীয় দলেরই অধিনায়ক! ২৪ বছর বয়সী কাঁধে ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশার ভার। মুশফিককে হয়তো এই দায়িত্বই সাহসী করে তুলেছে আরও। সে সাহসের প্রতিধ্বনি শোনা যায় ব্যাটে, কথায়।
অথচ, মুশফিকুর রহিম যেদিন অধিনায়ক হলেন, সেই রাতের সংবাদ সম্মেলনে একটা প্রশ্ন বিব্রত করল তাঁকে—
* দল হারলে বা নিজে খারাপ খেললে তো আপনি নিজেই ভেঙে পড়েন। ড্রেসিংরুমে নাকি কান্নাকাটিও করেন। অধিনায়ক হওয়ার পরও এ রকম চললে তো নেতৃত্ব দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে...।
খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন। বাজে আউট হলে বা উইকেট কিপিংয়ে ক্যাচ-ট্যাচ ফেললে ড্রেসিংরুমে ফিরে নিজের ওপর প্রচণ্ড অভিমানী হয়ে উঠতেন মুশফিক। কখনো হাত দিয়ে মুখ চেপে বসে থাকতেন চুপচাপ। কখনো আটকাতে পারতেন না কান্না। দল খারাপ খেললে সবারই মন খারাপ হয়। কিন্তু মুশফিকের আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ার মাত্রাটা এতই বেশি হতো যে সব ফেলে তাকে সান্ত্বনা দিতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ত অনেকে। অধিনায়ক হওয়ার পরও যদি মুশফিক এমনই থাকতেন, বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের অবস্থাটা কী হতো ভাবুন। খারাপ খেললে অধিনায়কের নেতৃত্বে হয়তো নিয়মিত শোক সভাই চলত সেখানে।
অধিনায়কত্ব পাওয়ার রাতে চরিত্রের এই দুর্বলতা আড়াল করেননি মুশফিক। প্রশ্নটা শুনে বিব্রত হলেও একগাল হাসিতে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল সেটা। স্বীকার করেছিলেন সত্যিটা, ‘হ্যাঁ, ও রকম সময়ে আমি একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি।’ সঙ্গে প্রতিশ্রুতি ছিল, অধিনায়কত্বের বর্ম আর বাষ্পায়িত হতে দেবে না ডুকরে ওঠা আবেগকে। ভেতরে যত ঝড়ই বয়ে যাক বাইরের ছবিটা থাকবে সাহসী সেনাপতির। আবেগের চেয়ে দায়িত্ব বড়। সে দায়িত্ব কাঁধে নিজের তো ভেঙে পড়ার প্রশ্নই ওঠে না, অন্যকেও ভেঙে পড়তে দেবেন না।
সাহস মুশফিককে সে রকমই এক অধিনায়ক করে তুলছে আস্তে আস্তে। এই অধিনায়ক ব্যাট দিয়ে শুধু ডাবল সেঞ্চুরিই করে না, সাপও মারতে যায়। কথার চাবুকে পেটায় কথার ফানুস ওড়ানোদের।

Friday, March 15, 2013

মা হলেন তিনি

কাতারের ২৬ বছর বয়সী নারী ফাতেমা আল আনসারি। যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামির জ্যাকসন মেমোরিয়াল হাসপাতালে তাঁর যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয়। তিনি একই হাসপাতালে পাঁচ বছর পর সম্প্রতি সুস্থ একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
শরীরে পাঁচটি অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, এমন কোনো নারীর সন্তান প্রসবের ঘটনা এটিই প্রথম বলে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন প্রেগনেন্সি রেজিস্ট্রি জানিয়েছে। চার পাউন্ড সাত আউন্স ওজনের নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে আলকাদি আলহায়াল। কম্বলে মোড়ানো শিশুটিকে নিয়ে মা ফাতেমার আনন্দের শেষ নেই। তিনি গত বুধবার নিজের ‘শ্রেষ্ঠতম অনুভূতি’ বর্ণনা করেন চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের কাছে।
ফাতেমার চিকিৎসক শালিহ্ ওয়াই ইয়াসিন বলেন, শরীরে একাধিক অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, এমন মায়েদের সন্তান প্রসবের নজির ইউরোপে আছে, তবে তাঁদের কারও শরীরেই ‘পাঁচটি’ অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়নি। বিশ্বের চিকিৎসাবিদ্যাসংক্রান্ত প্রায় সব বইপত্র ও সাময়িকী ঘেঁটেও এ রকম দৃষ্টান্ত দ্বিতীয়টি পাওয়া যায়নি। ফাতেমা আগে একবার অন্তঃসত্ত্বা হলেও চিকিৎসকের পরামর্শে গর্ভপাত করিয়েছিলেন। তিনি কখনো মা হতে পারবেন না বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন।

Wednesday, March 13, 2013

ওয়াটসনদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সঠিক

দলটি পাকিস্তান হলে কেউ অবাক হতেন না। সেখানে অন্তঃকোন্দল প্রায় প্রাত্যহিক ঘটনা, শৃঙ্খলাজনিত কারণে গৃহদাহের আগুনের আঁচ দলীয় ক্যাম্প পেরিয়ে যায় প্রায়ই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া? মাঠে তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের নিয়ামক যে মাঠের বাইরের শৃঙ্খলা, সেটি কে না জানে! অথচ সেই অস্ট্রেলিয়া দলের চার ক্রিকেটারকে কিনা এ কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টের দল থেকে। কপালে চোখ তুলে দেওয়ার মতোই ব্যাপার!
সময়টা যে তাই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের জন্য টালমাটাল, সেটি না বললেও চলছে। শেন ওয়াটসন, মিচেল জনসন, জেমস প্যাটিনসন ও উসমান খাজাকে অমন শাস্তি দেওয়ার পর ঝড় বইছে ক্রিকেট-বিশ্বে। সাবেক ক্রিকেটার অ্যালান বোর্ডার, মার্ক ওয়াহরা তো এর সমালোচনাও করতে ছাড়েননি। অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক অবশ্য সিদ্ধান্তটিকে বলছেন যথার্থ, 'যা খুশি হোক, এমন ভাবনায় দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাওয়া খুব সহজ। তবে সবাই জানে, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা আমি কত উপভোগ করি। আমি নিশ্চিত যে, ওই চারজনও তা করে। ওরা জানে, এই দলটির সাফল্য দেখার জন্য আমি কতটা মুখিয়ে আছি। ওরাও তাই। একটা উপায়েই আমরা অস্ট্রেলিয়াকে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিয়ে যেতে পারি। সবাই একসঙ্গে মিলে চেষ্টা করলেই কেবল তা সম্ভব।' ভারতের কাছে দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারের পর অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যেকের কাছে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় জানতে চেয়েছিলেন কোচ। ওই চতুষ্টয় বাদে প্রত্যেকেই তাতে সাড়া দিয়েছেন। এটি যে গ্রহণযোগ্য নয়, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক, 'আমাদের কাছে যে উপায়গুলো জানতে চাওয়া হয়েছিল, সেটি অমন কঠিন কিছু না। সেটি না করে ওরা দলকে ডুবিয়েছে, কোচের মাথা হেঁট করে দিয়েছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।' তবে শাস্তি যে এই এক ঘটনার কারণে নয়, তাও বলেছেন ক্লার্ক, 'খুব কঠিন সময় পার করছি আমরা। সমর্থক ও গণমাধ্যমকে আমি অনুরোধ করব এটি বুঝতে যে, শুধু একটি ঘটনার প্রতিফলনে এই শাস্তি নয়। সফরে এখন পর্যন্ত আমরা যেভাবে খেলছি, সেটি অগ্রহণযোগ্য। এর পেছনে মাঠের বাইরের নানান ঘটনার প্রভাবও রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের মানদণ্ড যথার্থ জায়গায় থাকবে না।'
সতীর্থদের শাস্তি দেওয়ার পরও ব্যক্তিগত সম্পর্কে ফাটল ধরবে না বলে ক্লার্কের বিশ্বাস, 'এ ঘটনার জন্য ওই চারজনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বে ফাটল ধরবে না। কারণ জানি, ওরা আমাকে কতটা সম্মান করে। আর আমিও যে ওদের সম্মান করি, তাও ওদের অজানা নয়। এমন ঘটনার মুখোমুখি হতে তাই আমার ভেতর অস্বস্তির খচখচানি নেই।' অভিমানে দেশে ফিরে যাওয়া সহ-অধিনায়ক শেন ওয়াটসন অবসর নিয়ে ফেলতে পারেন বলে যে গুঞ্জন, সেটিও হালে পানি পায়নি অধিনায়কের কাছে, 'ওয়াটো ও তার সহ-অধিনায়কত্ব নিয়ে অনেকে অনেক প্রশ্ন এখন তুলবে। তবে আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে ওর ওপর। আমি নিশ্চিত যে এই অবস্থা থেকে ও ফিরে আসতে পারবে। আবার হতে পারবে অস্ট্রেলিয়ার সহ-অধিনায়ক। ফর্মে থাকা ওয়াটো বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। তবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমরা ব্যক্তিগত কিছু বিবেচনায় আনিনি। দলের স্বার্থের কথা ভেবে নিয়েছি সিদ্ধান্ত।'
টেস্ট সিরিজের মাঝে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু ক্লার্ক যে দূর-ভবিষ্যতের কথাই ভাবছেন, 'এসব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সঠিক সময় বলে কিছু নেই। সঠিক শাস্তির নির্দিষ্ট কিছুও নেই। আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছি। আশা করি, এ ঘটনার পর আমরা দল হিসেবে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠব।' তৃতীয় টেস্টে সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বানও তিনি জানিয়েছেন সতীর্থদের প্রতি, 'পুরো দলের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ। এখন স্কোয়াডের অন্যদের সামনে সুযোগ এসেছে নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণের। তৃতীয় টেস্টে সেটি যদি তারা কাজে লাগাতে না পারে, কে জানে, হয়তো আর কোনো সুযোগ তারা পাবে না।'
এদিকে 'অপরাধী' চতুষ্টয়ের একজন প্যাটিনসন মাথা পেতে দোষ মেনে নিচ্ছেন। দলের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি, 'এখন বুঝতে পারছি যে, এটি কোচ-অধিনায়ক এবং বাকি দলের প্রতি একধরনের অসম্মান প্রদর্শন। ওদের জায়গায় থাকলে আমিও এমন স্বার্থপর আচরণের জন্য হতাশ হতাম। সফল এক দল হতে হলে এমন আচরণ করা যাবে না। কাল অনুশীলনে পুরো দলের কাছে তাই ক্ষমা চেয়েছি।' সফরে অস্ট্রেলিয়ার এই সফলতম ফাস্ট বোলারের কাছে শাস্তিটা মনে হচ্ছে যথার্থ, 'আমার জন্য এই অজুহাত দেওয়াই সবচেয়ে সহজ যে, শাস্তিটা বেশি কঠোর হয়ে গেছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যাপারটা তা নয়। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ক্রিকেট খেলতে হলে আপনাকে এসব মেনে নিতেই হবে। সব ঠিকঠাক মতো করতে হবে। হ্যাঁ, বাদ পড়ার কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে হতাশ। তবে দীর্ঘমেয়াদে এতে দলের উপকারই হবে।

মুক্তি না দিলে ২১ মার্চ ঢাকায় হরতাল

ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, সাবেক সাংসদ দেওয়ান সালাউদ্দিনসহ গ্রেপ্তার করা বিএনপির নেতা-কর্মীদের মুক্তির জন্য ২০ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে জেলা বিএনপি। দাবি পূরণ না হলে ২১ মার্চ ঢাকা জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা জেলা বিএনপি।
আজ বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মান্নান এ ঘোষণা দেন।
এ ছাড়া নেতাদের মুক্তির দাবিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা জেলার সব উপজেলা, থানা ও পৌরসভা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ১৬ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে জেলা বিএনপি।
গত সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেলের বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরপর পুলিশ বিএনপির কার্যালয়ে হানা দেয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে পুলিশ ওই ভবনের বিভিন্ন তলায় অভিযান চালিয়ে ও মহাসচিবের কক্ষের দরজা ভেঙে মির্জা ফখরুলসহ কার্যালয়ে থাকা নেতা-কর্মীদের আটক করে।
তবে প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সহসভাপতি সাদেক হোসেন খোকা ও আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এরপর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ধরে নেওয়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাঁদের আদালতে হাজির করে দুই মামলায় ১৭ দিন রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। কিন্তু পর্যাপ্ত কাগজপত্র না থাকায় এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। আদালত ২০ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

ভিটামিন ‘এ’ নিয়ে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক তৈরি

শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর দেশের বিভিন্ন স্থানে গুজবের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে শিশুদের বাবা-মা ও অভিভাবকেরা ছিলেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।
অনেক স্থানে গুজবে আতঙ্কিত বাবা-মা দিনে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো শিশুকে নিয়ে সন্ধ্যা বা রাতে ছুটে গেছেন হাসপাতালে। সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভিড় বাড়তে থাকে। তবে কোথাও থেকে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, মানসম্পন্ন, জীবাণুমুক্ত ও সম্পূর্ণ নিরাপদ ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল গতকাল শিশুদের খাওয়ানো হয়েছে।
সন্ধ্যার পর তিন শতাধিক শিশুকে নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন শহর ও এর আশপাশের এলাকার মানুষ। রাত ১১টার দিকে হাসপাতালে শিশু ও অভিভাবকদের ছিল প্রচণ্ড ভিড়। রংপুরের সিভিল সার্জন রিয়াজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গুজবের কারণে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে শিশুদের নিয়ে আসছে।
রাত সাড়ে নয়টার দিকে প্রায় এক হাজার বাবা-মা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। এঁদের প্রায় প্রত্যেকের কোলে ছিল ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানো পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। শিশুদের পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা কিছু হয়নি বলে জানান। পরে তাঁরা ফিরে যান। আরও বেশ কয়েকটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালেও ছিল একই অবস্থা।
রাত সাড়ে ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মো. সিয়ায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খেয়ে দেশের কোথাও কোনো শিশু মারা যায়নি। এমনকি গুরুতর অসুস্থ হওয়ারও কোনো খবর তাঁরা পাননি। তবে ভিটামিনের সঙ্গে কিছু শিশুকে কৃমিনাশক বড়ি দেওয়া হয়েছে। ওই বড়ির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কারও কারও বমি বা মাথা ঘোরা ভাব হতে পারে। পাতলা পায়খানাও হতে পারে। তবে ভয়ের কিছু নেই।
রাত সাড়ে নয়টায় ঢাকায় প্রথম আলোর কার্যালয়ে ফোন করে এক ব্যক্তি বলেন, ভিটামিন ‘এ’ খেয়ে গাইবান্ধায় ৩৫টি শিশু মারা গেছে। খুলনা প্রতিনিধিকে ফোন করে বলা হয়, সাতক্ষীরায় সাতটি শিশু মারা গেছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসবই গুজব। এভাবে গুজব ছড়ানো হয় মুঠোফোনে, ফেসবুকে ও ব্লগের মাধ্যমে।
সিফায়েত উল্লাহ বলেন, একটি বিশেষ মহল পরিকল্পিতভাবে এ গুজব ছড়িয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, কক্সবাজার-টেকনাফ এলাকার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের কাছের একটি এলাকা থেকে এই গুজবের শুরু বলে তাঁরা শুনেছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম এলাকায় একাধিক মাইক ব্যবহার করে এ ধরনের প্রচার চালানো হয় বলে তাঁকে জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এদিকে এ গুজবে বিভ্রান্ত না হতে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকেও মাইকিং করা হয়।
গতকাল সারা দেশে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানো হয়। এক লাখ ২০ হাজার স্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও ২০ হাজার ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের ভিটামিন খাওয়ানোর কথা ছিল। ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের ভিটামিন ক্যাপসুল ও দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের ভিটামিনের সঙ্গে একটি কৃমিনাশক বড়ি খাওয়ানো হয়।
তবে হরতাল ও গুজবের কারণে কর্মসূচি বেশ খানিকটা ব্যাহত হয়েছে। অনেক কেন্দ্রে ভিড় কম ছিল। অনেকে কেন্দ্রে এসেও গুজব শুনে আতঙ্কে ভিটামিন না খাইয়েও শিশুকে নিয়ে ফিরে গেছেন।
এ কর্মসূচি তত্ত্বাবধান করা জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এখলাসুর রহমান সন্ধ্যায় বলেন, সারা দেশে নির্বিঘ্নে শিশুদের বড়ি ও ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি সাতজন বিভাগীয় পরিচালক ও একাধিক সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলেছি। কেউ শিশুদের অসুস্থতার নজির পাননি।’
এই গুজব ছড়ায় খুলনা, সাতক্ষীরা, বগুড়া, রংপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, হবিগঞ্জ, ভোলা, গাজীপুর, বাগেরহাট, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, শেরপুরসহ বিভিন্ন জেলায়।
বেলা একটা থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে অভিভাবকেরা শিশুদের নিয়ে ভিড় করেন। বন্দর এলাকার নিমতলা খালেরপাড় থেকে রেহানা বেগম ছেলে মোবিন ও মেয়ে মীমকে নিয়ে মা ও শিশু হাসপাতালে এসেছিলেন। বহির্বিভাগ থেকে বের হওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘টিকা খেয়ে বাচ্চা মারা যাওয়ার কথা শুনে এসেছি। ডাক্তার দেখিয়েছি। কোনো সমস্যা নেই।’
মা ও শিশু হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, দুপুর থেকে বহির্বিভাগে বেপারিপাড়া, নালাপাড়া, বন্দরটিলা, নিমতলা, ছোট পোল থেকে প্রায় ৭০০ শিশুকে এখানে নিয়ে আসেন আতঙ্কিত বাবা-মায়েরা। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, শিশুরা সবাই সুস্থ। এটা গুজব ছাড়া কিছুই নয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগেও শিশুদের নিয়ে অনেকে আসেন। চিকিৎসকেরা জানান, ওই শিশুদেরও কোনো সমস্যা নেই।
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় কিছু মানুষ স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর মারমুখী হয়ে ওঠেন। অনেক জায়গায় টিকাদান কেন্দ্র লোকজন বন্ধ করে দেয়। একই গুজবে পটিয়ার শিকলবাহায় স্বাস্থ্য সহকারী জয়রাধা নাথকে বেলা তিনটা পর্যন্ত আটকে রাখে এলাকাবাসী। হাইদগাঁও আহমদ রহমান মেম্বারের বাড়িতে এক নারী স্বাস্থ্য সহকারীকে নাজেহাল করে লোকজন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মো. আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, পরিকল্পিতভাবে এই গুজব ছড়ানো হয়েছে। মারা যাওয়া দূরের কথা, কোনো শিশু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি নেই।
সংবাদ সম্মেলন: বিকেলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সিভিল সার্জনের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে সিভিল সার্জন বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সব টিকাকেন্দ্র এবং ১৪ উপজেলায় খোঁজ নিয়ে দেখেছি ভিটামিন ‘এ’ এবং কৃমিনাশক ওষুধ সেবনের কারণে কোথাও কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা হয়নি।’