থাইল্যান্ডের ব্যাংককে একটি স্কুলে পড়ত ১৭ বছরের তরুণী মল্লিকা। একদিন
বাবা-মাকে জানাল, সে মা হতে যাচ্ছে। অপরিণত বয়সে মেয়ে সন্তানসম্ভবা হওয়ার
বিষয়টি বেশ দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয় মল্লিকার বাবা-মাকে। লজ্জায় তাঁরা
মল্লিকার স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেন। মল্লিকাকে তাঁরা এই অনাগত সন্তানের
বাবাকে বিয়ে করতে বলেন। কিন্তু দুজনই অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে ওই ছেলের পরিবার এই
বিয়েতে রাজি নয়। তাঁরা মল্লিকার মুখ বন্ধ করতে অর্থ দিতে চেয়েছিলেন। তাকে
তাঁদের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যেতে পরামর্শও দেন। শেষে বাবা-মায়ের কাছেই
ফিরে আসে মল্লিকা।
এ ঘটনা শুধু মল্লিকার একার জীবনের নয়। থাইল্যান্ডের বেশির ভাগ
কিশোরী-তরুণীর জীবনের ঘটনা এটি। কারণ, সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এশিয়ার
মধ্যে থাইল্যান্ডে কিশোরী-তরুণীদের সন্তানসম্ভবা হওয়ার হার অসম্ভব বেড়েছে।
প্রতিবেশী দেশ লাওসের পরই এখন থাইল্যান্ডের অবস্থান বলে দেশটির
গণস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যুরোর তথ্যে জানা গেছে।
রয়টার্সের এক খবরে জানানো হয়, থাইল্যান্ডে কম বয়সী মেয়েদের গর্ভবতী হওয়ার
হার দিন দিন বেড়ে চলেছে। জন্ম নেওয়া প্রতি এক হাজার জীবিত শিশুর মধ্যে
৫৪টির মা কিশোরী-তরুণী, যাদের বয়স ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। তাদের মা হওয়ার
এই হার যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি এবং সিঙ্গাপুরের চেয়ে তা প্রায় ১০ গুণ
বেশি।
থাইল্যান্ডের বার্ষিক গণস্বাস্থ্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ থেকে ২০১১
সাল পর্যন্ত থাইল্যান্ডে কিশোরী-তরুণীদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার হার ৪৩ শতাংশ
বেড়ে গেছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এর পেছনে বিভিন্ন কারণের কথা বলছেন। সামাজিক ও
সাংস্কৃতিক লোকাচারের কারণেই এমনটি ঘটছে। এসব বিষয়ে খোলাখুলি আলাপ-আলোচনা
না হওয়ায়ও একটি কারণ।
থাই ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের (এনএইচআরসি) কমিশনার ভিসা
বেঞ্জামানো বলেন, ‘নারীদের কৌমার্য রক্ষা করার কথা বলা হয়, কিন্তু যাঁরা
বিভিন্ন ধরনের যৌনাচারে লিপ্ত, এ ব্যাপারে তাঁদের কোনো ভাবনা নেই।’ তিনি
আরও বলেন, ‘নারীরা তাঁদের যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে এখনো
লজ্জা পান। থাইল্যান্ডে স্কুলের পাঠ্যবইয়ে যৌন শিক্ষার একটি অংশ থাকলেও তা
অপর্যাপ্ত। বছরে এ বিষয়ে মাত্র আট ঘণ্টা পাঠ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে
শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ইউনাইটেড ন্যাশনস পপুলেশন ফান্ড (ইউএনএফপিএ) ও থাইল্যান্ডের ন্যাশনাল
অ্যান্ড ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (এনইএসডিবি) ২০১১
সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু গর্ভপাত ঘটানোর জন্যই অনেক নারী
হাসপাতালে আসেন। এই হার ১৯৯৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১৬ শতাংশ বেড়েছে। আর
২০০৯ সালেই ৬০ হাজার নারী গর্ভপাত ঘটিয়েছেন। যদিও দেশটিতে গর্ভপাত ঘটানো
অবৈধ, তবে অনূর্ধ্ব ১৫ বছর বয়সী কিশোরীদের ক্ষেত্রে ধর্ষণ ও নিকট আত্মীয়ের
মাধ্যমে সন্তানসম্ভবা হলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভেবে গর্ভপাতে
অনুমতি মেলে। এ ছাড়া গর্ভপাত ঘটালে তা অবৈধ এবং এর শাস্তি হিসেবে পাঁচ
বছরের কারাদণ্ড বা ৩৪০ মার্কিন ডলার জরিমানা হতে পারে। এমন আইন থাকার পরও
থাইল্যান্ডের অলিগলিতে গর্ভপাত ঘটানোর জন্য অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক এখনো
গড়ে উঠছে।
অধিক হারে বেড়ে যাওয়া কিশোরীদের সন্তানসম্ভবা হওয়া রোধে থাইল্যান্ড বেশ
কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। দেশটির সরকার গর্ভনিরোধক জন্মনিয়ন্ত্রক
সামগ্রী ও কনডম খুব সহজলভ্য করে মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা
করছে। তবে এ ক্ষেত্রেও বেশ কিছু সমস্যা আছে। যেমন—যখন কোনো কিশোরী মেয়ে
ওইসব গর্ভনিরোধক সামগ্রী কিনতে আসে, তখন আশপাশের মানুষ তাদের দিকে ভিন্ন
দৃষ্টিতে তাকায়। আর ওই কিশোরী এতে লজ্জা পেয়ে তা না কিনেই ফিরে যায়।