ভারতীয় কোবরাকে বলা হয় সর্প জাতির রাজা। কারণ এর মেজাজ-মর্জি, আকার, চলাফেরা, আক্রমণের ভঙ্গি এবং বিষের পরিমাণ সত্যিই তাকে দিয়েছে রাজা হওয়ার যোগ্যতা। দীর্ঘদিন তাই সে রাজা হয়েই আছে। কিন্তু এবার বুঝি আর সে আসন আর থাকল না। কারণ কেনিয়ায় এমন এক প্রজাতির কোবরা আবিষ্কৃত হয়েছে যা সাধারণ কোবরার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বিষ উৎপাদন করতে পারে এবং আকারেও বড়। এ কোবরার ক্রমাগত ছোবলে ২০ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। সাপটি লম্বায় ২ দশমিক ৬ মিটার। ২০০৪ সালের জুনে কেনিয়ার ওয়াটামু সমুদ্র এলাকার বায়োকিন সাপের খামার থেকে সর্পবিদ জেমস অ্যাশ এ সাপটি শনাক্ত করেন। এর গায়ের রং বাদামি, যা কিছুটা কালো গলা কোবরার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। কালো গলা কোবরাগুলো বড় জোর দুই মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, নতুন আবিষ্কৃত সাপটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কোবরা সাপ। জেমস অ্যাশের নামানুসারে সাপটির নাম রাখা হয়েছে 'নাজা অ্যাশেই'। সাপটির বিষ থলিতে জমা থাকে ৬.২ মিলি লিটার বিষ। সর্প বিশেষজ্ঞ উলফগ্যাং উস্টার ও ডোনাল্ড জি ব্রাডলি বলেন, এ নতুন প্রজাতি উত্তর ও দক্ষিণ কেনিয়ার শুষ্ক নিচু ভূমিতে, উত্তর উগান্ডা, দক্ষিণ ইথিওপিয়া ও দক্ষিণ সোমালিয়ায় দেখতে পাওয়া যায়। বায়োকিন সাপ খামারের মালিক রয়জান টেলর বলেন, কেনিয়ার উপকূলে এ ধরনের সাপ দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা জানান, এ সাপের আবিষ্কার পশ্চিম ও উত্তর আফ্রিকার প্রজাতিগুলো শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। আফ্রিকান কোবরা নিয়ে এতদিন কৌতূহলের শেষ ছিল না_ বিশ শতকে এসে এগুলোকে বিশেষভাবে শনাক্ত করা হলেও পাওয়া যায়নি আসল পরিচয়। আক্রমণাত্মক ও বিষাক্ত নাজা অ্যাশেই উৎপাদন করতে পারে প্রায় এক ডজন কোবরার মতো বিষ। এর অনুপাত প্রকৃতির সবচেয়ে বড় কিং কোবরার চেয়েও বেশি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ নতুন প্রজাতিটি একটি খরগোশকে নির্দ্বিধায় গিলে ফেলতে পারে। এছাড়া আড়াই ফুট লম্বা গিরগিটি ও ৫ ফুট লম্বা বিষধর সাপ খেতে পারে। খামারের মালিক টেলর বিবিসিকে বলেন, সর্প দংশনের চিকিৎসায় অ্যান্টিভেনম উৎপাদনের জন্য সর্প বিষয়ের ওপর আরও অধিক গবেষণা করা দরকার। টেলর একজন প্রকৃতিবিদ, যার অবদান নতুন উদ্ভাবনে বিপ্লব ঘটিয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত সংরক্ষক রিচার্ড লিকি বলেছেন, 'বৃহৎ প্রজাতির ওপর এ আবিষ্কার সত্যি উত্তেজনাকর।'
No comments:
Post a Comment