পিরামিড বলতেই যে দেশটির নাম আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে তার নাম মিসর। কিন্তু পিরামিড শুধু মিসরীয়রাই তৈরি করেনি। আরও অনেক দেশের মানুষ পিরামিড তৈরি করেছেন। হয়তো পৃথিবীর ইতিহাসে সেসব দেশের নাম সেভাবে লিখে রাখা হয়নি। চীন এমনই একটি দেশ_ যে দেশের প্রাচীন নাগরিকরা আজ থেকে প্রায় ২ হাজার বছর আগে তৈরি করেছিলেন অপার সৌন্দর্যের প্রতীক চীনা পিরামিড। হার্টউইক-হাউসডরফ নামক একজন গবেষক তার Chinese Roswell (১৯৯৮) নামক গ্রন্থে চীনের হারিয়ে যাওয়া পিরামিড ঐতিহ্যের কথা নিপুণভাবে বর্ণনা করেছেন। হাউসডরফ (Hausdorfs) প্রায় ৫০ বছর আগের ডকুমেন্টারি, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, বই, উপন্যাস, চলচ্চিত্র ইত্যাদি গবেষণাপূর্বক গ্রন্থটি রচনা করেছেন। হাউসডরফ বলেন, প্রায় ২ হাজার বছরের এই পুরনো পিরামিড দেখতে ছিল সাদা-লালচে ও ধূসর বর্ণের। গাউসম্যানস নামক আরেক আমেরিকান গবেষক হারিয়ে যাওয়া চীনা পিরামিডগুলোর ওপর গবেষণা করেছেন প্রায় ১০ বছর। তিনি চীনা পিরামিডগুলোর নাম দেন 'The white pyramid। তিনি 'Gaussman's Story (২০০২) নামক গ্রন্থে চীনা পিরামিডের কথা বর্ণনা করেছেন। চীনা এসব পিরামিডের অবস্থান ছিল সিয়ান (Sian) পর্বতের পাদদেশে। মিসরীয় পিরামিডগুলোর মতো দেখতে এসব পিরামিডের উচ্চতা ছিল ১ হাজার ফুট প্রস্ত ১ হাজার পাঁচশ ফুট সর্বনিম্ন পিরামিডটির উচ্চতা ছিল প্রায় ৪৫০ ফুট। সে তথ্যগুলো বিভিন্ন গবেষণার প্রেক্ষিতে পাওয়া যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো_ চীনে যদি পিরামিড থাকতই তাহলে তার অস্তিত্ব নেই কেন? গবেষকরা এক্ষেত্রে বলেন, চীনা পিরামিডগুলো চীনের যে রাজ্যে তৈরি করা হয়েছিল তা ছিল স্থাপত্য বা স্থাপনা তৈরির সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত জায়গা। যে কারণে পিরামিডগুলো স্থায়ী হয়নি। পিরামিডগুলোর অস্তিত্ব যেভাবে সিয়ান প্রদেশে না থাকলেও এখনও ধ্বংসাবশেষ রয়ে গেছে। যার মাধ্যমে প্রাচীন চীনা সভ্যতার অনেক নিদর্শনই খুঁজে পাওয়া যায়। প্রত্নতাত্তি্বকরা নানা গবেষণার মাধ্যমে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন যে, চীনা পিরামিডগুলো কোনো রাজার আমলে তৈরি করা হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব-১৫৭-৮৭ অব্দে সম্রাট 'Liu che' চীনা পিরামিডগুলো তৈরি করেন। তবে তৎকালীন এগুলো মন্দির হিসেবেই পরিচিত ছিল। সিয়ান পাহাড়ের পাদদেশে সম্রাট 'Liu che শত শত মন্দির তৈরি করেন। প্রাচীন এসব প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শনের ছবি দেখে অনুধাবন করা যায়, পিরামিডগুলো ছিল অস্বাভাবিক সুন্দর ও নিপুণ হস্তে তৈরি করা। গবেষকরা হারিয়ে যাওয়া এই পিরামিডের মাঝে খুঁজে পেয়েছেন হাজার বছরের পুরাতন কাঁসা, পিতল, লৌহ, মুদ্রাক্ষর ও নাম না জানা অনেক উপকরণ। যে উপকরণের সঙ্গে মিশে আছে হাজার হাজার বছরের পুরাতন চীনা ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সভ্যতা।
No comments:
Post a Comment