Thursday, April 11, 2013

ফটিকছড়িতে সংঘর্ষ, গুলিতে একজন নিহত, ১৪৪ ধারা জারি

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানা এলাকায় ছাত্রলীগের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময়ে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহত লোকজনের মধ্যে অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ফটিকছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহত এক ব্যক্তির মৃতদেহ ভুজপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে ঠিক কতজন নিহত বা আহত হয়েছেন, তা শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায়নি।সংঘর্ষ চলাকালে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক গাড়ি পোড়ানো হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জনা খান মজলিশ ফটিকছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন বলে জানা গেছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ফটিকছড়িতে ১৪৪ ধারা বজায় থাকবে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময় চলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের ভাষ্য, হরতালবিরোধী একটি মিছিল নিয়ে আজ ফটিকছড়ি থেকে ভুজপুর যাচ্ছিলেন ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। বেলা দেড়টার দিকে ছাত্রলীগের মিছিলটি ভুজপুর এলাকায় পৌঁছায়। ওই সময় একটি মসজিদ থেকে জোহরের নামাজ আদায় করে বের হচ্ছিলেন মুসল্লিরা। এ সময় মুসল্লিদের মধ্য থেকে কেউ একজন ছাত্রলীগের মিছিল লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়েন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। একপর্যায়ে মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, এলাকায় সন্ত্রাসী এসেছে। এ ঘোষণা শুনে গ্রাম থেকে লোকজন বেরিয়ে মিছিলকারীদের ঘেরাও করে হামলা চালায়। এখনো সেখানে গুলিবিনিময় চলছে। অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় বেশ কয়েকটি লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ধর্ষণ ঠেকাবে অন্তর্বাস

ভারতের নয়াদিল্লিতে গত ডিসেম্বরে চলন্ত বাসে মেডিকেলের ছাত্রীকে গণধর্ষণ করার ঘটনা সারা বিশ্বে হইচই ফেলে দেয়। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ভারতের সরকারের প্রচেষ্টার কোনো কমতি নেই। এ নিয়ে বসে নেই সে দেশের প্রকৌশলীরাও। তাঁরা এক অভিনব অন্তর্বাস উদ্ভাবন করেছেন। এই অন্তর্বাসের বৈদ্যুতিক শক ধর্ষণ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
নতুন এই অন্তর্বাস বাজারের সাধারণ অন্তর্বাস থেকে একটু আলাদা। এর নামকরণ করা হয়েছে সোসাইটি হারনেসিং ইকুইপমেন্ট (এসএইচই)। এতে এক ধরনের বিশেষ সংবেদী যন্ত্রাংশ থাকবে, যা ৩৮০০ কিলো ভোল্টের শক দিতে পারবে। কারও মাধ্যমে আক্রান্ত হলে যন্ত্রাংশটি চালু হবে। আর আক্রমণকারীকে ৮২ বারের চেয়ে বেশি শক দেওয়া যাবে। এই অন্তর্বাসের ভেতরের অংশে বিশেষ পলিমার থাকবে। এতে অন্তর্বাস পরা ব্যক্তির শরীরে শক লাগবে না।
অন্তর্বাসটির অন্যতম উদ্ভাবক চেন্নাইয়ের এসআরএম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মনীষা মোহন। এই উদ্ভাবনে তাঁকে সাহায্য করেছেন তাঁরই সহপাঠী রিম্পি ত্রিপাঠি ও নীলাদ্রি বসু পাল।
মনীষা আরও জানান, চলতি মাসের মধ্যে এই অন্তর্বাসের বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণের কাজ চলছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া।
 অবস্থান শনাক্তকরণ যন্ত্রের সঙ্গে অন্তর্বাসের এসএইচই যন্ত্র যুক্ত থাকে।
 অন্তর্বাস পরা কোনো মেয়েকে আক্রমণকারী নিগৃহীত করার চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক পুলিশ ও পরিবারের কাছে এসএমএস পাঠাবে।
 যন্ত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে আক্রমণকারীকে নিবৃত্ত করতে শক দেবে। যার মাত্রা ৩৮০০ কিলোভোল্ট
 আক্রান্ত হওয়া মাত্র টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যন্ত্রটি সক্রিয় হবে।

Tuesday, April 9, 2013

দ্বিতীয় নারী ছত্রীসেনা হলেন মেজর নুসরত

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে দ্বিতীয় নারী ছত্রীসেনা (প্যারাট্রুপার) হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন মেজর নুসরত নুর আল চৌধুরী। সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসের পানিছড়া প্রশিক্ষণ মাঠে আজ সোমবার তিনি সফলভাবে আকাশ থেকে অবতরণ করেন।
এর আগে দেশের প্রথম নারী ছত্রীসেনা ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌস গত ১২ ফেব্রুয়ারি সফলভাবে এ প্রশিক্ষণ শেষ করেন।
আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শারীরিক উত্কর্ষ যাচাই ও ভূমি প্রশিক্ষণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ৪ এপ্রিল নুসরত আকাশ থেকে ভূমিতে নেমে আসেন। ওই দিন এএন ৩২ বিমান থেকে তিনি দুটি জাম্প করেন। এরপর আজ সেসনা গ্র্যান্ড ক্যারাভান বিমান থেকে করেন তিনটি জাম্প। পাঁচটি জাম্পেই তিনি চীনে তৈরি টাইপ-৯ প্যারাস্যুট ব্যবহার করে আড়াই হাজার ফুট ওপর থেকে নেমে আসেন। নুসরতের স্বামী মেজর মঞ্জুরুল হকও একজন ছত্রীসেনা। নুসরতের বাবা এন আই চৌধুরী ইনস্টিটিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সাবেক সচিব।

Monday, April 8, 2013

কালকের এইচএসসি পরীক্ষা ১৩ এপ্রিল

হরতালের কারণে আগামীকাল মঙ্গলবারের অনুষ্ঠেয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এই পরীক্ষা আগামী ১৩ এপ্রিল সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে।
আজ সোমবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলো ডটকমকে এ তথ্য জানান।
আগামীকাল এইচএসসিতে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডেরও পরীক্ষা ছিল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদসহ আরও কয়েকটি দাবিতে ১৮-দলীয় জোট কাল মঙ্গলবার ও পরশু বুধবার টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে।

Sunday, April 7, 2013

অনলাইনেই ধর্ষণ !!!

অনলাইনের বদলতে পৃথিবী জুড়ে ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভাবনা সৃষ্টি হলেও, এর বিপরীতে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে অহরহ।

বাড়ছে শিশু-কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা।অনলাইনে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, নতুন বিড়ম্বনা হিসেবে এখানেই শেষ নয়। নিপীড়নের পাশাপাশি অপরাধ প্রবণতার মাত্রা বেড়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে প্রতিদিনই।

এএনআই-এর সূত্রমতে, গত চার বছরে এ অপরাধ বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। ইংল্যান্ড ও ওয়্যালস পুলিশের প্রায় ২৫টি দলের করা এক তদন্তে জানা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুরাই এ ধরনের হামলার শিকার হচ্ছে।

ইংল্যান্ড পুলিশের এ তদন্তে অনলাইন হামলা-সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য উঠে আসে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত অনলাইন যৌন নিপীড়নের মোট ১ হাজার ৬৪২টি অভিযোগ রয়েছে পুলিশের কাছে।

তথ্য স্বাধীনতা আইনের আওতায় করা এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, চার বছর আগে যেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল ১৩৯টি, গত বছর এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬১৪টিতে। ২০০৯ সালে যেখানে ২২ জন ধর্ষণের শিকার হয়, সেখানে গত বছর আক্রান্ত হয় ১১৭ জন।

তাদের তদন্তে জানা যায়, হামলাকারীরা সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোয় বিপুলসংখ্যক অ্যাকাউন্ট খুলছে। ব্যক্তিগত তথ্যের সাহায্যে হামলাকারীরা মেয়েদের চিহ্নিত করে তাদের বিশ্বাস অর্জন করে। তাদের জানানো তথ্যমতে, হামলার শিকার মোট ১ হাজার ৩৯৫ জনের অর্ধেকেরই বয়স ১৬ বছরের নিচে।

বর্তমান নিয়মানুযায়ী ১৩ বছরের নিচে কেউ সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোয় অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে না এবং ১৩ থেকে ১৮ বছরের

ব্যবহারকারীদের বার্তা পোস্টে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা থাকে। কিন্তু প্লাইমাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর অ্যান্ডি ফিপেনের চার হাজার প্রাথমিক স্কুল পড়ুয়া শিশুর ওপর করা এক জরিপে দেখা যায়, এদের প্রায় ৪০ শতাংশের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

Saturday, April 6, 2013

written test schedule of Bangladesh Bank Assistant Director -Ex-Cadre, Graphics Designer, Prof Reader, Photographer


জন্মবিরতিকরণ বড়ি নিয়ে ৫ প্রশ্ন

জন্মবিরতিকরণ বড়ি সেবন নিয়ে নারীদের মধ্যে রয়েছে নানা দ্বিধা, প্রশ্ন ও সংশয়। এমন ৫ প্রশ্ন নিয়ে এ আয়োজন।
১: জন্মবিরতিকরণ বড়ি সেবন করলে কি পরে গর্ভধারণ করতে সমস্যা হয়?
জন্মবিরতিকরণ বড়ি নিয়মিত খেলে তা ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে। বড়ি খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার পর ডিম্বাশয় আবার নিয়মিত ডিম্বাণু উৎপাদন শুরু করতে পারে। কেউ টানা বেশ কয়েক বছর বড়ি খেলে এই উৎপাদন-প্রক্রিয়া পরিপূর্ণভাবে শুরু হতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে এবং গর্ভধারণে কয়েক মাস দেরি হতে পারে। বড়ি খাওয়া ছেড়ে দিয়ে অন্তত দু-তিনবার নিয়মিত রজঃস্রাব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে গর্ভধারণের চেষ্টা করা ভালো।
২: বড়ি খেলে মেয়েরা মোটা হয়ে যায়?
পুরোনো দিনের উচ্চমাত্রার প্রজেস্টেরন হরমোনযুক্ত বড়িগুলো খেলে মোটা হওয়ার আশঙ্কা থাকত। কিন্তু বর্তমানে স্বল্পমাত্রার চর্বিবান্ধব হরমোনযুক্ত বড়ি ব্যবহার করা হয়। এতে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা অনেকটাই কম। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ নারীর ওজন এতে বড়জোর দু-এক কেজি বাড়তে-কমতে পারে।
৩: এটি কি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়?
জন্মবিরতিকরণ বড়ি মেয়েদের ডিম্বাশয় ও জরায়ুর ভেতরের আবরণ বা অ্যান্ডোমেট্রিয়ামের ক্যানসারের ঝুঁকি বরং অনেক কমিয়ে দেয়। তবে দীর্ঘদিন খেলে জরায়ুর মুখ ও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কিছুটা বাড়ে বলে মনে করা হলেও শক্ত কোনো তথ্য-প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
৪: বড়ি খেলে কি মাসিকের সময় বেশি রক্তক্ষরণ হওয়ার প্রবণতা বাড়ে?
বড়ি খেতে শুরু করার পর প্রথম দু-এক মাস অনিয়মিত রক্ত যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত কিছুদিন খেলে এবং প্রতিদিন একই সময় খেলে দু-এক মাসের মধ্যে এটি ঠিক হয়ে যায়। আবার একেবারে শুরুর দিকে বমি বমি ভাব বা মাথা ঘোরার মতো সমস্যাও হতে পারে। অচিরেই এটি মানিয়ে যায়। বর্তমানে এ-জাতীয় সমস্যা হয় না বললেই চলে।
৫: বড়ি সেবনের আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত?
পরিবারে কারও অল্প বয়সে স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, স্তন ক্যানসার, তীব্র মাইগ্রেন, হাঁপানি, গত এক বছরে জন্ডিস ও যকৃতের প্রদাহ, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ইত্যাদি থাকলে বড়ি সেবনের আগে আপনার চিকিৎসককে অবহিত করুন।
স্ত্রীরোগ ও প্রসুতিবিদ্যা বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ।
ডা. মুনা সালিমা জাহান

Friday, April 5, 2013

ঝরনা বেগম আমাদের মান বাঁচালেন

রাজশাহীর ঝরনা বেগম ও একজন আহত রক্তাক্ত পুলিশের গল্পটা এখন সবারই জানা। ঘটনাটা কেন আমাদের টানে? কেন আমরা এ ধরনের ঘটনা জেনে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি? বারবার ফিরে তাকাই রাজশাহীর সেই ছবিটির দিকে? পুলিশকে তো আর জনগণের বন্ধু মনে হচ্ছিল না আমাদের। পুরুষপ্রধান পুলিশ বাহিনীকে খুব কমই নারীবান্ধব হতে দেখা গেছে। মানুষের বিপদে যদি পুলিশ না আসে, তাহলে পুলিশের বিপদে মানুষ কেন যাবে? শিবির বনাম পুলিশের মারামারিতে সাধারণ মানুষের যেখানে দূরে দাঁড়িয়ে দেখার কথা, সেখানে ঝরনা বেগমের মতো একজন বিউটি পারলারের কর্মীর ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ বাঁচানোর দরকার কী ছিল?
এত সব প্রশ্ন আর সিদ্ধান্তকে গলিয়ে দিল রক্তাক্ত পুলিশের জীবন বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নেওয়া ঝরনা বেগমের মানবিক ‘অ্যাকশন’। তাঁর এই অ্যাকশনের ভাষা যদি ঠিকঠাক বুঝে থাকি, তাহলে দেখতে পাব: ১. বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে পুলিশের বিপদকে পুলিশের একার বিপদ মনে করছেন না অনেক মানুষ। তাঁরা হয়তো ভাবছেন, পুলিশ পরাজিত হলে জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার আর কেউ থাকবে না। পুলিশ অতীতে জনগণের বন্ধু যদি না-ও হয়ে থাকে, বর্তমানে তারাই জনগণের নিরাপত্তার জন্য লড়াই করে প্রাণ দিচ্ছে, আহত হচ্ছে। সুতরাং, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। ২. অনেক পুরুষ পুলিশ নারীদের প্রতি অসদাচরণ করে এলেও অনেক নারীই পুরুষ পুলিশের প্রতি দয়াবান ও ক্ষমাশীল হতে পারেন। ৩. দুর্বৃত্ত রাজনীতির খেলায় জনগণ নীরব দর্শক নন, জনগণের লোকও দায়িত্ব নিতে জানেন।
ঝরনা বেগম তাই একটি ঘটনা। যেমন ঘটনা ছিলেন রংপুরে উত্ত্যক্তকারীদের কবল থেকে তরুণীকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হওয়া শিক্ষক। যেমন ঘটনা ছিলেন ঢাকার মিরপুরের হজরত আলী, যিনি ছিনতাইকারীদের হাত থেকে একজন নারীকে বাঁচাতে জীবন দিয়েছিলেন। এই ‘ঘটনা’গুলো জনগণের নিজস্ব অস্তিত্বের, নিজস্ব সক্রিয়তার প্রমাণ। এ কারণে বলছি যে নিজেকে বিপন্ন করে মানুষের ভালো করার নজির উচ্চমহলে কম, নিচের মহলে বিস্তর। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই সুনীতি জনগণের কীর্তি, আর মানুষের বিপক্ষে দাঁড়ানোর দুর্নীতি ও দুর্বৃত্ত নীতিই শাসকদের কীর্তি। দুই পক্ষের স্বভাবও তাই আলাদা। তাই আজকে ক্ষমতাবান কোনো নেতা-নেত্রী-কর্তাব্যক্তি যখন বলেন, ‘আমি জনগণের লোক;’ তখন সঠিক বলেন না। যাঁরা সত্যিকার জনগণের লোক, তাঁরা দাবি করেন না কিছুই, কেবল কাজটা করে ফেলেন। তাই দেখি, সাধারণ মানুষ বলে যাঁদের জনসংখ্যার একেকটি সংখ্যা করে রাখা হয়, তাঁরাই বারবার পরিসংখ্যানের কারাগার ভেঙে একেকজন হূদয়বান মানুষের চেহারায় দাঁড়িয়ে পড়েন। তাঁদের আচরণকে তখন আমরা আদর্শ মানুষের আচরণ বলে চিনতে পারি। তখনই আমাদের বিশ্বাস হয় যে মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ। এই দুর্দিনে এই বিশ্বাস যাঁরা বাঁচিয়ে রাখেন, তাঁরা সাধারণের অসাধারণ বীর।
রাজশাহীতে সেদিন সারা দেশের মতোই হরতাল চলছিল। বাড়ির মধ্যেই কাজ করছিলেন ঝরনা। হঠাৎ বাইরে বিকট শব্দ শুনে ঘরের বাইর হলেন। দুটি ছোট ছেলে তাঁর, তারা বাইরে খেলছিল। তাই মায়ের মন নিয়ে তিনি বেরিয়ে এসে মায়ের মন নিয়েই দেখতে পেলেন নৃশংস ঘটনাটি। রাস্তায় ফেলে ইট দিয়ে পিটিয়ে থেঁতলে দেওয়া হচ্ছে এক পুলিশকে। রক্তে ভিজে যাচ্ছে তাঁর মাথা। আশপাশে মানুষ ছিল, কিন্তু সহায় ছিল না কেউ। ঝরনা বেগম পুলিশ দেখলেন না, দেখলেন মানুষ মরছে। তিনি দৌড়ে এসে পড়ে থাকা লোকটিকে তুলতে গেলেন। তাঁর ডাকাডাকিতে দুজন ‘সাংবাদিক’ও মানুষের মতো ‘মানুষ’ হয়ে গেলেন। ছবি তোলা ফেলে ঝরনার মতোই রক্তাক্ত মানুষটিকে তুলে প্রমাণ করলেন মানুষ মানুষের জন্য। মানুষের রক্ত দেখে খুনি-সন্ত্রাসী বিচলিত না হলেও মানুষ বিচলিত হবেই। ঝরনা বেগম সে ধরনের মানুষের প্রতীক হয়ে গেলেন।
কোনো কোনো অন্যায় একজন করলেও সবাই কমবেশি অপরাধী হয়ে যায়। কোনো কোনো ভালো কাজ একজন করলেও সবাই দায়মুক্ত হন। পুলিশ সদস্যটি যদি সাহায্যের অভাবে সেদিন মারা যেতেন, তাহলে আমরা সবাই-ই দায়িত্বহীনতার দায়ে দায়ী থাকতাম। ঝরনা বেগম সেই দায় থেকে আমাদের রক্ষা করলেন। বুঝিয়ে দিলেন এই বাজারি পরিবেশে এই সন্ত্রাসের রাজত্বে মানুষ হারিয়ে যায়নি। মানুষ এখনো আছে।
জনগণকে অদৃশ্য, নিষ্ক্রিয় ও ভীত করে রাখার দাপট আমরা দেখছি দেশজুড়ে। মাসের পর মাস জামায়াত ও বিএনপি হরতাল আর নাশকতায় জনগণকে কোণঠাসা করে রেখেছে। আগুন আর মৃত্যু দিয়ে তারা দেশ বাঁচাতে চায়। সরকারও গুলি দিয়ে গণতন্ত্র বাঁচানো সম্ভব বলে ভাবছে। এই আগুন আর গুলির রাজনীতি জনগণকে জিম্মি করে ফেলছে। সেই অবস্থায় গত মাসে কানসাটসহ বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষ সন্ত্রাস-নাশকতার বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। এখন দেখলাম, ঝরনা বেগমের সাহসিকতা। এভাবে কানসাট, ফুলবাড়ী, আড়িয়ল বিলে বারবারই লক্ষ লক্ষ মানুষের মানবিক ও সাহসিক ‘অ্যাকশন’ বুঝিয়ে দিয়েছে, ‘আমরা জনগণ, আমরা মরে যাইনি আজও।’
জনগণকে সবাই ভয় পায়, সবাই তাদের খোপে খোপে আটকে রাখতে চায়। ভোটব্যাংকের খোপ, বাজারের ক্রেতা বানানোর খোপ, দলীয় আনুগত্যের মিছিলের খোপ, টেলিভিশনের খোপ, বাসযাত্রীর খোপ, শবযাত্রীর খোপ। জনগণের নিজস্ব চাওয়া-পাওয়া, চলাফেরা—কত কত রকমের খোপে আটক আর নির্বাক। এসব ছাপিয়ে তাই যখন কেউ ‘সাধারণ’ মানুষ নামের ‘ভীরুতা-দুর্বলতা-নিষ্ক্রিয়তার’ তকমা খুলে ফেলে অসাধারণ কোনো কাজ করে ফেলেন, তখন তাঁকে আমাদের ভালোবাসতেই হয়। তখনই মনে হয়, মানুষে বিশ্বাস হারানো আসলেই পাপ, মানুষে ভরসা রাখতেই হবে আমাদের।
ঝরনা বেগমদের সুবাদে তাই বলতে চাই, যাঁরা সবকিছুর জন্য জনগণকে দোষারোপ করেন, বলেন মানুষই আসলে খারাপ, বলেন মানুষ অসচেতন, মানুষ নিষ্ক্রিয়, তাঁরা ভুল বলেন। যাঁরা জনসাধারণ, যাঁরা সব অর্থেই নিচুতলার বাসিন্দা, যাঁরা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত, যাঁরা অধিকাংশ নারী, যাঁরা কৃষকসমগ্র, যাঁরা সাধারণ স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, যাঁরা গ্রাম-শহরের পেশাজীবী, তাঁরাই জনগণ। সব সংকটে তাঁরাই উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করেন। সুযোগ পেলে তাঁরা তাঁদের সবচেয়ে ভালোটাই দেশ ও মানুষকে দিতে আসেন। সমাজতত্ত্বের আর রাজনীতির ছাই দিয়ে এঁদের জীবনবাদিতা আর কষ্ট সহ্যের ক্ষমতার পরিমাপ করা যাবে না। তাঁরা আছেন বলেই এখনো দেশটা আছে। তাই এ কথা ঠিক নয়, যে জাতি যেমন সেই জাতি তেমন নেতৃত্বই পায়।
বরং আমাদের দুঃখটা এখানেই, আমাদের মানুষগুলো যতটা নিষ্ঠাবান ও সাহসী, আমাদের সব রকমের কর্তাব্যক্তিরা ততটা নন। আমরা আমাদের উপযুক্ত কান্ডারি পাইনি। পেলে ঝরনা বেগমদের এভাবে রাস্তায় পুলিশকে বাঁচাতে নামতে হতো না। পুলিশ নিজেই নিজের ও জনতার রক্ষক হতে পারত। পুলিশ যেন কথাটা মনে রাখে, রাজনীতিবিদেরা যেন কথাটা মনে রাখেন, দেশের কর্তাব্যক্তিরা যেন কথাটা মনে রাখেন।

একসঙ্গে ব্ল্যাকআউটে ১০ ব্লগ

‘সরকারের মৌলবাদতোষণ। ব্লগার গ্রেপ্তার। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ। ব্ল্যাকআউট।’ এভাবেই ব্লগারদের মুক্তির দাবি ও ব্লগগুলোর হয়রানি বন্ধে আজ দুপুর ১২টা থেকে ব্ল্যাকআউটে গেছে ১০টিরও বেশি বাংলা ব্লগ।
প্রতিটি ব্লগের হোমপেজ কালো করে সেখানে ব্ল্যাকআউটের কারণ ও তথ্য লিখে দেওয়া হয়েছে।
ব্ল্যাকআউটে যাওয়া ব্লগগুলো হচ্ছে—সচলয়াতন, আমার ব্লগ, নাগরিক ব্লগ, মুক্তাঙ্গন, মুক্তমনা, আমরা বন্ধু, চতুর্মাত্রিক, ক্যাডেট কলেজ ব্লগ, ইস্টিশন ব্লগ, সরবসহ আরও কয়েকটি ব্লগ।
ব্লগগুলোর পক্ষ থেকে কালো ব্যানারের ওপর লাল রঙে লেখা হয়েছে ‘প্রতিবাদ করুন। প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।’
প্রসঙ্গত, ইসলাম ধর্ম নিয়ে ব্লগে উসকানিমূলক মন্তব্য ও কটূক্তির অভিযোগে এ পর্যন্ত চারজন ব্লগারকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

লংমার্চ প্রতিরোধেসন্ধ্যা থেকে ২৪ ঘণ্টার হরতাল

শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা দেশে ২৪ ঘণ্টার হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন।
নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির গতকাল বুধবার রাতে বলেন, ‘জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা এবং হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ প্রতিরোধে হরতাল ডাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে হরতালের ঘোষণা দেওয়া হবে।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, জুমার নামাজের কারণে সন্ধ্যা থেকে হরতালের সিদ্ধান্ত হয়েছে।