Friday, March 29, 2013

পুলিশ কি আঙুল চুষবে—প্রশ্ন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, ‘পুলিশের সামনে, নিরাপত্তা কর্মীদের সামনে যদি সাধারণ মানুষকে খুন করা হয়, তবে কি পুলিশ আঙুল চুষবে? পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এগুলো বন্ধ করার জন্য।’ আজ শুক্রবার দুপুরে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার আলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চাঁদের মধ্যে ছবি রেখে এত বড় একটি মিথ্যা কথা বলে দেশের মধ্যে এতগুলো লোক তারা মারল। এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এর ক্ষতিপূরণ বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর জামায়াতে ইসলামীকে দিতে হবে।’ জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে দাবি উঠলে জামায়াত নিষিদ্ধ করা হবে।
ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কচুয়ার বিতারা ইউনিয়নের উত্তর শিবপুর গ্রামে বিদ্যুত্সংযোগ উদ্বোধন করেন। এ সময় চাঁদপুরের পুলিশ সুপার আমির জাফর, কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী পাটোয়ারী, ভাইস চেয়ারম্যান কামরুন নাহার, ৩ নম্বর বিতারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইসহাক শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


রাজ্জাকের ২০০

টেস্টে ব্যাটসম্যানদের জন্য যা সেঞ্চুরি, বোলারদের জন্য তা ইনিংসে ৫ উইকেট। কিন্তু ওয়ানডেতে কি দ্বিতীয়টিকে একটু এগিয়ে রাখা উচিত?
টেস্টের বিচার এক রকম, ওয়ানডের অন্য রকম। টেস্টে যতক্ষণ ইচ্ছা ব্যাটিং-বোলিং করা যায়। ওয়ানডেতে তা ওভার-নির্দিষ্ট। তা ৫০ ওভারের মধ্যে সেঞ্চুরি করা বেশি কঠিন নাকি ১০ ওভারের মধ্যে ৫ উইকেট নেওয়া? তর্ক হতেই পারে। সাহায্যে আসতে পারে একটা তথ্য। টেস্টে ইনিংসে ৪ উইকেটের হিসাব থাকে না। ওয়ানডেতে কিন্তু থাকে। তার মানে কি ওয়ানডেতে ৪ উইকেটই টেস্টে ৫ উইকেটের সমান?
তা-ই যদি হয়, তাহলে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব টেস্টের চেয়ে ওয়ানডেতে বড় হয়ে যায়। তার মানে তো সেঞ্চুরির চেয়েও। এই বিচারে কাল পাল্লেকেলেতে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষে তিলকরত্নে দিলশানের চেয়ে আবদুর রাজ্জাকই এগিয়ে!
সেঞ্চুরি বা ৫ উইকেট উদ্যাপন করার মতোই ব্যাপার। দুজনই তা করলেন। তবে রাজ্জাকের উদ্যাপনটা ৫ উইকেট পাওয়ার আনন্দ ছাপিয়ে আরও বৃহত্তর মাত্রা পেল। এই ৫ উইকেটেই যে ছুঁয়ে ফেললেন ওয়ানডেতে ২০০ উইকেটের মাইলফলক।
ওয়ানডে ইতিহাসে রাজ্জাকের এই অর্জন বুদ্বুদ তুলেই মিলিয়ে যাবে। খুব বড় কিছু তো নয়, তাঁর আগে আরও ৩৩ জন বোলার সদস্যপদ পেয়েছেন এই ‘টু হান্ড্রেড ক্লাব’-এর। তবে শুধুই বাংলাদেশ ক্রিকেটের আয়নায় আবদুর রাজ্জাকের এই অর্জন প্রতিবিম্বিত ‘কীর্তি’ বলে। বাংলাদেশের কোনো বোলারের ২০০ উইকেট তো এই প্রথম।
শুধু বাঁহাতি স্পিনারের প্রজাতিটা আলাদা করে নিলে রাজ্জাক ছাড়া আর মাত্র দুজন আছেন এই ক্লাবে। সবার ওপরে যাঁর নাম, তিনি কাল ম্যাচের মাঝখানে সংবাদ সম্মেলন করলেন। শ্রীলঙ্কার টি-টোয়েন্টি দলে রামিথ রামবুকওয়ালে নামের এক তরুণকে নেওয়া হয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে বলার মতো তেমন পারফরম্যান্স নেই। তথ্যমন্ত্রীর ছেলে পরিচয়টাই তাঁর দলভুক্তিতে বড় ভূমিকা রেখেছে সাধারণ ধারণা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে তীব্র সমালোচনাও হয়েছে। সেটির জবাব দিতেই সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন প্রধান নির্বাচক সনাৎ জয়াসুরিয়া। ‘জবাব’ যা দিলেন, তাতে অবশ্য স্থানীয় সাংবাদিকদের কেউই আগের ধারণা থেকে সরে আসার কোনো কারণ দেখছেন না।
বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের আড়ালে তাঁর বোলার পরিচয়টা প্রায়ই হারিয়ে যায়। অথচ বাঁহাতি স্পিনে জয়াসুরিয়ার ৩২৩ উইকেট। কালকের আগ পর্যন্ত জয়াসুরিয়া ছাড়া আর যে একজন বাঁহাতি স্পিনারের ২০০ উইকেট ছিল, তাঁর নাম ড্যানিয়েল ভেট্টোরি (২৮২)। রাজ্জাকের গল্পটা এই দুজনের চেয়ে অনেক বেশি রোমাঞ্চকর। অনেক বেশি সংগ্রামমুখরও। মুত্তিয়া মুরালিধরনকে যে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সেটির সঙ্গে তুলনা চলে না। কিন্তু মুরালির দেশে রাজ্জাকের ২০০ উইকেটের কীর্তি মনে করিয়ে দিচ্ছে দুজনের মিলটা। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে রাজ্জাককেও তো কম ভুগতে হয়নি। এক দিক থেকে তো একটু বেশিই। মুরালি তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কখনো ‘নিষিদ্ধ’ হননি, যে বিড়ম্বনা বিনিদ্র অনেক রাত্রি উপহার দিয়েছে রাজ্জাককে।
রাজ্জাককে আবিষ্কারের কৃতিত্বটা সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের। নিজে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সময় দেখেছেন, রাজ্জাককে মারা কত কঠিন। ২০০৪ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের ওয়ানডে দলে তাই নিয়ে নিলেন তাঁকে। পরদিন গ্রেনাডায় সিরিজের শেষ ম্যাচে অভিষেক হচ্ছে জেনে রাতে ঘুমুতে গেলেন রাজ্জাক। সকালে বৃষ্টিতে ম্যাচ কমে গেল ২৫ ওভারে। পেস-সহায়ক কন্ডিশনে একজন বাড়তি পেসার খেলানোর সিদ্ধান্তে রাজ্জাকের আর খেলাই হলো না। শুধু যাওয়া আর আসাই হয়ে থাকল তাঁর সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের স্মৃতি।
ওয়ানডে অভিষেকের জন্য বেশি দিন অবশ্য অপেক্ষা করতে হয়নি। সেটি এই মুরালির দেশেই। এশিয়া কাপে হংকংয়ের বিপক্ষে অভিষেকেই ৩ উইকেট। পাকিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচে ১০ ওভারে ৩৬ রানে ২ উইকেট, কিন্তু সেই ম্যাচের পর প্রশ্ন উঠল বোলিং অ্যাকশন নিয়ে। সেটি শুধরে-টুধরে ফিরলেন। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের এক নম্বর বোলারের স্বীকৃতি এবং চাপ দুটিই বয়ে চলারও সেই শুরু। বড় ধাক্কাটা ২০০৮ সালে। যখন দ্বিতীয়বার ‘রিপোর্টেড’ হয়ে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ হয়ে গেলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ১৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হাত বাঁকানো আইনসিদ্ধ, তাঁর বেঁকে যায় ২৮ ডিগ্রি। ক্যারিয়ার নিয়েই তখন বড় প্রশ্ন।
কিন্তু আবদুর রাজ্জাক বড় শক্ত ধাতুতে গড়া। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেটে কাটিয়ে আবারও শুধরেছেন নিজেকে। ফিরতে পারবেন কিনা, সংশয় ছিল অনেকের মনেই। রাজ্জাকের নিজের বুকও কি দুরুদুরু করেনি! শেষ পর্যন্ত দুঃসহ সেই সময়কে জয় করে ঠিকই ফিরেছেন এবং বলতে গেলে ফেরার দিন থেকেই আবার বাংলাদেশের এক নম্বর স্পিনার।
রেকর্ডই তাঁর পক্ষে কথা বলে। কিন্তু পুরোটা কি বলে? মারদাঙ্গা ক্রিকেটের এই যুগে ৪.৪৮ ইকোনমি রেটকে যথেষ্টই ভালো বলতে হবে। কিন্তু এতে তো আর লেখা নেই যে, রাজ্জাক তাঁর ১০ ওভারের ৬/৭ ওভারই করেন পাওয়ার প্লেতে। পেসাররা মার খাচ্ছেন, অধিনায়কের সহায় রাজ্জাক। কোনো ব্যাটসম্যান ঝড় তুলছেন, রাজ্জাককে ডাকো। দিনে দিনে রাজ্জাকের নামের প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছে ‘নির্ভরতা’।
২০০ উইকেটের মালাটা তাঁর চেয়ে ভালো আর কার গলায় মানাত!

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা চার বোলার
ম্যাচ রান উইকেট সেরা গড় ইকোনমি ৪/৫
আবদুর রাজ্জাক ১৪১ ৫৪৯৩ ২০০ ৫/২৯ ২৭.৪৬ ৪.৪৮ ৫/৪
মাশরাফি বিন মুর্তজা ১২৬ ৪৮৮২ ১৬১ ৬/২৬ ৩০.৩২ ৪.৬৩ ৫/১
সাকিব আল হাসান ১২৬ ৪৬১৭ ১৬০ ৪/১৬ ২৮.৮৫ ৪.২৯ ৪/০
মোহাম্মদ রফিক ১২৩ ৪৬১২ ১১৯ ৫/৪৭ ৩৮.৭৫ ৪.৩৯ ২/১

ভারতে হোলি ও দোল চলাকালে ৬১ জনের মৃত্যু

ভারতে গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার হোলি ও দোল উৎসব উদযাপনের সময় বিভিন্ন ঘটনায় ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে রাজধানী দিল্লিতে আটজন, ওডিশায় ১০ জন, অন্ধ্র প্রদেশ, গুজরাট ও উত্তর প্রদেশে ২৫ জন এবং পশ্চিমবঙ্গে ১০ জনসহ মোট ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। রং খেলা কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, জোর করে রং দেওয়া, রং খেলার পর গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে এবং মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া উত্তর প্রদেশে বিষাক্ত মিষ্টি খেয়ে আটজনের মৃত্যু হয়।
হোলি উত্সবের দিন দিল্লিতে ১০ হাজার ৩৩৯ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে দিল্লি পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে প্রকাশ্যে মদ্যপান, জোর করে রং দেওয়া, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে পুলিশ ৯৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ককটেলের স্প্লিন্টারে স্কুলছাত্রী আহত

‘রাস্তায় কয়েকজন পিকেটার টায়ারে আগুন দিচ্ছিল। পরিস্থিতি দেখে তাড়াহুড়ো করে হাঁটতে শুরু করি। আমি ছিলাম বাম দিকে। মেয়ে আমার ডান হাত ধরে হাঁটছিল। হঠাৎ পর পর দুইটা বিকট শব্দ। তারপর আমার মেয়ে ডান চোখ চেপে ধরে কান্না শুরু করে। দেখি ওর চোখ থেকে রক্ত ঝরছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন ককটেল বিস্ফোরণে আহত স্কুলছাত্রী অন্তু বড়ুয়ার (১৪) মা শিল্পী বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো সকালে অন্তু আমার হাত ধরে চেরাগী পাহাড় এলাকার কোচিং সেন্টারে যাচ্ছিল। এ সময় আমার মেয়ে হরতালের নির্মম শিকার হয়।’
জানা গেছে, অন্তু নগরের অপর্ণাচরণ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। ১৮-দলীয় জোটের ডাকা ৩৬ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন সকালে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার মোমিন রোডের হেমসেন লেনের মুখে টায়ারে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় ওই পথ দিয়ে মায়ের সঙ্গে সে কোচিং সেন্টারে যাচ্ছিল।
ঘটনার পর অন্তুকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে ৪৮ নম্বর বেডে ভর্তি করানো হয়। দুপুরে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করেন।
অন্তুর বাবা অঞ্জন বড়ুয়া ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমার কপালের দোষ। আমি ঈশ্বরের কাছে বিচার চাই। যারা এসব করছে তাদের যেন সুমতি হয়।’
গতকাল বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে আছে অন্তু। কেমন লাগছে জানতে চাইলে মুখ দিয়ে শুধু গোঙানির মতো শব্দ করে আবার নীরব হয়ে যায় সে। হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার সুব্রত দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্প্লিন্টারের আঘাতে অন্তুর ডান চোখের কর্নিয়ায় কিছুটা আঁচড় লেগেছে। চোখের ভ্রুতে সেলাই দিতে হয়েছে। ডান গাল থেকে স্প্লিন্টার বের করা হয়েছে। সে অসম্ভব ভয় পেয়েছে। ভয় না কাটায় সে কথা বলছে না।’
কোতোয়ালি অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মির্জা সায়েম মাহমুদ বলেন, ‘হরতাল-সমর্থকেরা যে টায়ারটিতে আগুন দেয়, তার ভেতরে একটি ককটেল ছিল। অন্য একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয় রাস্তায়। ককটেলের স্প্লিন্টারে স্কুলছাত্রী আহত হয়। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।’

মালালার মিলিয়ন ডলারের জীবনী

তালেবানের গুলি মালালা ইউসুফজাইকে আরও শাণিত করেছে। পাকিস্তানি এ কিশোরীকে যেন আরও তাতিয়ে দিয়েছে জঙ্গিদের হামলা। এবার সে স্মৃতিকথা প্রকাশের মাধ্যমে তার নারীশিক্ষা আন্দোলনকে আরও বেগবান করার পথ ধরেছে। আসছে শরতেই স্মৃতিকথা প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তার। বইটির নাম আই অ্যাম মালালা।
জীবনী প্রকাশের জন্য মালালা ইতিমধ্যে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ওয়েইডেনফেল্ড অ্যান্ড নিকলসনের সঙ্গে একটি বড় অঙ্কের চুক্তি সই করেছে, যার মূল্যমান প্রায় ৩০ লাখ মার্কিন ডলার (২৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা)। এর মধ্য দিয়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই ‘মিলিওনিয়ার’ বনে গেছে মালালা।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, এ বছরের শেষ নাগাদ মালালার স্মৃতিকথা প্রকাশিত হবে। যুক্তরাজ্য ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোয় বইটি প্রকাশ করবে ওয়েইডেনফেল্ড অ্যান্ড নিকলসন; বাকি বিশ্বে লিটল ব্রাউন।
স্মৃতিকথা প্রকাশের বিষয়ে মালালা বলেছে, ‘আমি আমার গল্প বলতে চাই। তবে এটা শুধু আমার একার গল্প নয়, এটা পৃথিবীর ছয় কোটি ১০ লাখ শিশুর গল্প, যারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত।’ সে আরও বলেছে, ‘আমি সেই প্রচারণার অংশ হতে চাই, যার মাধ্যমে পৃথিবীর সব শিশু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাবে। এটি তাদের মৌলিক অধিকার।’
মালালার কথা, ‘আমি আশা করছি, বইটি বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের কাছে পৌঁছাবে। এর মধ্য দিয়ে তারা জানতে পারবে, কিছু শিশুর জন্য শিক্ষার সুযোগ পাওয়া কতটা কঠিন।’
২০১২ সালের ৯ অক্টোবর তালেবানের গুলিতে মারাত্মক আহত হয় মালালা। প্রথমে কিছুদিন পাকিস্তানে চিকিৎসা দেওয়ার পর যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয় তাকে। লন্ডনের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত মাসে সে বাসায় ফিরে যায়। বর্তমানে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছে সে। সেখানকার একটি স্কুলেও সে ভর্তি হয়েছে।
মালালার স্মৃতিকথা প্রকাশের বিষয়ে ওয়েইডেনফেল্ড অ্যান্ড নিকলসনের ডেপুটি প্রকাশনা পরিচালক আরজু তাহসিন বলেন, সাহস আর ভিশনের প্রতীক হয়ে থাকবে এই বই। মালালা অনেক ছোট বয়সেই বেশি অভিজ্ঞলব্ধ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমার এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে তার জীবনের গল্প সব প্রজন্মের পাঠক, বিশেষ করে যারা শিক্ষার অধিকার ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, তাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করবে।’
তালেবানের গুলিতে আহত হওয়ার পর সাহসিকতার জন্য মালালার ঝুলিতে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু অর্জন যুক্ত হয়েছে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন তালিকায়ও তার নাম উঠেছে। এ ছাড়া ১২ জুলাইকে মালালা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। টাইম সাময়িকীর বর্ষসেরা ব্যক্তিত্বের সংক্ষিপ্ত তালিকায়ও উঠে এসেছে তার নাম। এপি, ডন ও গার্ডিয়ান।

বিন লাদেনকে কে গুলি করেছিলেন?

গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন নৌবাহিনীর বিশেষ শাখা নেভি সিলের এক সদস্যের দীর্ঘ একটি সাক্ষাৎকার এস্কয়ার সাময়িকীতে ছাপা হয়। এতে নেভি সিলের ওই সদস্য দাবি করেছিলেন, তিনিই আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনকে গুলি করে হত্যা করেছেন। কিন্তু সিএনএনের জাতীয় নিরাপত্তা ও আল-কায়েদা বিশেষজ্ঞ পিটার বারগেন নেভি সিলের ওই সদস্যের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, নেভি সিলের অন্য আরেক সদস্য বিন লাদেনকে প্রথমে গুলি করেন। আর এতেই তিনি মারাত্মক আহত হন।
২০১১ সালের ১ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে নিহত হন বিন লাদেন। পরে তাঁর লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
নেভি সিলের ওই সদস্য দাবি করেছিলেন, অ্যাবোটাবাদের আস্তানায় তিনিই প্রথম বিন লাদেনের কক্ষে প্রবেশ করেন এবং তাঁর মাথায় দুটি গুলি করেন। কিন্তু এস্কয়ার সাময়িকীতে ছাপানো এই সাক্ষাৎকারে নেভি সিলের অন্য সদস্যরা আপত্তি জানান। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই সদস্যের এই বক্তব্যে। শুধু তাই নয়, বিন লাদেনকে গুলি করে দাম্ভিকতা প্রকাশ করায় ওই সদস্যকে নেভি সিল থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়।
সিল টিম-৬-এর একজন সদস্য বারগেনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, নেভি সিলের তিন সদস্য প্রথমে অ্যাবোটাবাদের কম্পাউন্ডের ওপরতলায় যান। এঁদের মধ্যে ‘গুলিবর্ষণকারী’ ও ‘পয়েন্টম্যান’ও ছিলেন।
বারগেন বলেন, ‘পয়েন্টম্যানই’ প্রথমে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে যান এবং সেখানে গিয়ে দেখতে পান, বিন লাদের তাঁর শয়নকক্ষের দরজা দিয়ে চারদিকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছেন। পরে বিন লাদেনকে তিনিই প্রথম গুলি করেন। এতে আল-কায়েদার নেতা মারাত্মক জখম হন।
বারগেন বলেন, এরপর ‘পয়েন্টম্যান’ দ্রুত ওই কক্ষে অবস্থান করা দুই নারীকে জাপটে ধরেন। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, ওই দুই নারীর শরীরে আত্মঘাতী হামলার বিস্ফোরক রয়েছে। তাই বিস্ফোরণ ঘটানোর আগেই তাঁদের নিজ কব্জায় নেন ‘পয়েন্টম্যান’। এরপর অন্য দুই কমান্ডো কক্ষে ঢুকে বিন লাদেনের বুকে গুলি করে তাঁকে হত্যা করেন।

এএফসির নির্মম রসিকতা

বাংলাদেশের সঙ্গে একটা নির্মম রসিকতাই করল এশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা—এএফসি। চ্যালেঞ্জ কাপের চূড়ান্তপর্বে বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে—এমন কথা গতকাল মৌখিকভাবে জানালেও আজ তারা তাদের ওয়েবসাইটে জানাচ্ছে, বাংলাদেশ চূড়ান্তপর্বে জায়গা পায়নি!
মৌখিকভাবে জানালেও এএফসি কাল বাংলাদেশকে চূড়ান্তপর্বে জায়গা করে নেওয়ার ব্যাপারটি চিঠি দিয়ে জানায়নি। চিঠি পাওয়ার জন্য আজ দিনভর চেষ্টা থাকলেও এএফসির ওয়েবসাইটের তথ্যে এখন বাফুফেকে হতাশই হতে হচ্ছে।
এএফসির ওয়েবসাইট আজ জানাচ্ছে, বাংলাদেশ নয়, লাওস ও তুর্কমেনিস্তান বাছাইপর্বে সেরা দুই রানার্সআপ হিসেবে টিকিট পাচ্ছে মালদ্বীপে অনুষ্ঠেয় চূড়ান্ত পর্বে। আগামী বছর মার্চ মাসে মালদ্বীপে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের চূড়ান্তপর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, ‘ই’ গ্রুপের বাছাইপর্ব শুরু হওয়ার আগের দিন ব্রুনাই নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার অর্থ বাকি চারটি গ্রুপে (বাংলাদেশের গ্রুপ ‘ডি’) দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলটির (বাংলাদেশ ‘ডি’ গ্রুপে দ্বিতীয়) সঙ্গে চতুর্থ দলটির মধ্যকার শেষ ম্যাচটি হিসাবের বাইরে চলে যাচ্ছে। অর্থাত্ ডি গ্রুপের রানার্সআপ বাংলাদেশ গ্রুপের চতুর্থ মারিয়ানা আইল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-০ গোলে যে ম্যাচটি জিতেছে, সেটা এএফসি হিসাবে ধরছে না। এএফসি এটা করছে বাইলজের আর্টিকেল ১৬.১ অনুযায়ী।
যেহেতু এই ম্যাচগুলো আর ধর্তব্যের মধ্যে নেই, তাই পয়েন্ট ও গোলগড়ের হিসাবে লাওসকে তারা সেরা রানার্সআপ হিসেবে চূড়ান্তপর্বে জায়গা করে দিচ্ছে। দ্বিতীয় সেরা রানার্সআপ হিসেবে যাচ্ছে তুর্কমেনিস্তান। রানার্সআপ দলগুলোর মধ্যে লাওসের পয়েন্ট ৪। তুর্কমেনিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও তাজিকিস্তানের পয়েন্ট ৩ করে। গোলগড়ে চূড়ান্তপর্বে জায়গা করে নিচ্ছে লাওস ও তুর্কমেনিস্তান।

বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা জয়

১৯৮৬ সালের পর থেকে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ১৫টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। প্রতিটিতেই দেখেছে হারের মুখ। অবশেষে আজ ১৬তম ম্যাচে এসে সফল হলো টাইগাররা। জয় পেল শ্রীলঙ্কার মাটিতেও। আর পাল্লেকেলের বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৩ উইকেটের দুর্দান্ত এই জয় দিয়ে ওয়ানডে সিরিজেও সমতা ফিরিয়েছে সফরকারী বাংলাদেশ।
২৭ ওভারে ১৮৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করে এক ওভার হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় মুশফিক বাহিনী। ৩৩ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন নাসির হোসেন। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪০ রান এসেছে এনামুল হকের ব্যাট থেকে।
শ্রীলঙ্কা সফরের ওয়ানডে সিরিজের প্রতিটি ম্যাচেই ছিল বৃষ্টির বাধা। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশকে হারিয়েছিল ৮ উইকেটের ব্যবধানে। দ্বিতীয় ম্যাচটি পরিত্যক্তই ঘোষণা করতে হয়েছিল বৃষ্টির কারণে। আজ তৃতীয় ম্যাচও ছিল বৃষ্টিবিঘ্ন। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় বৃষ্টির কারণে দীর্ঘসময় খেলা বন্ধ থাকে। অবশেষে খেলা পুণরায় শুরু হলেও ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে ফেলা হয় ২৩ ওভার। ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের সামনে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ২৭ ওভারে ১৮৩ রান। বৃষ্টি শুরু আগ পর্যন্ত ১৩.৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ৭৮ রান। সেই হিসেবে জয়ের জন্য ৮০ বলে ১০৫ রানের লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় দফা ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ।
খেলা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই সাজঘরের পথ ধরেন এনামুল হক। ৪০ রান করে আউট হন এই ডানহাতি ওপেনার। উইকেটে নেমেই ঝড়ো ব্যাটিং করে ২৬ রানের একটা ইনিংস খেলেন জহুরুল ইসলাম। তিনি আউট হন দলীয় ১১৯ রানের মাথায়। এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ফিরে যান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ। স্কোরবোর্ডের চেহারা দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৪৪ রান। ষষ্ঠ উইকেটে ২২ রানের সময়োপযোগী জুটি গড়ে ভালোভাবেই জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন নাসির হোসেন ও মমিনুল হক। কিন্তু নিজের শেষ ওভারে বাংলাদেশকে বড় একটা ধাক্কা দেন লাসিথ মালিঙ্গা। ঐ ওভারেই তিনি তুলে নেন মমিনুল ও জিয়াউর রহমানের উইকেট। ১১ রান করে ফিরে যান মমিনুল। জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন ছিল ১২ বলে ১৭ রান। এই পর্যায়ে হয়তো জয়ের আশাই ভর করেছিল শ্রীলঙ্কান সমর্থকদের মনে। কিন্তু তাদেরকে চরমভাবে হতাশ করেন নাসির হোসেন। থিসারা পেরেরার করা পরবর্তী ওভারের তিনটি চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। জয়টা বিলম্বিত করতে চাননি বলেই বোধহয় শেষ বলটাতেও চার মেরে বসলেন সোহাগ গাজী। সিরিজে সমতা আনল টাইগাররা।
বৃষ্টি শুরুর আগে শুরুটাও ভালোভাবেই করেছিল বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতেই ৭৭ রান যোগ করেছিলেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ আশরাফুল ও এনামুল হক। ১৩তম ওভারে বাংলাদেশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন সেনানায়েকে। ২৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন আশরাফুল। পরের ওভারেই খেলা বন্ধ করতে হয় বৃষ্টির বাধায়।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে তিলকারত্নে দিলশানের ১২৫ রানের ইনিংসটির সুবাদে ৩০২ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। এছাড়া জানিথ পেরেরা ৫৬ ও কুমার সাঙ্গাকারা ৪৮ রান করেন। বাংলাদেশের পক্ষে পাঁচটি উইকেট শিকার করেছেন আব্দুর রাজ্জাক।

Thursday, March 28, 2013

হরতালে দুটি স্কুলে হামলা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আহত ১৪

লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের দুটি স্কুলে আজ বৃহস্পতিবার সকালে হামলা চালিয়েছে হরতালের সমর্থকেরা। এতে তিন শিক্ষক ও ১১ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
হরতালে স্কুল খোলা রাখায় ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতার নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে ১২-১৩ কিলোমিটার দূরে তিস্তা নদীর পাড়ে খুনিয়াগাছ ইউনিয়নে পাশাপাশি স্কুল দুটি অবস্থিত। আজ ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের দ্বিতীয় দিনে খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খুনিয়াগাছ উচ্চবিদ্যালয় খোলা ছিল।
স্কুল সূত্র ও স্থানীয় লোকজন জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হরতালের সমর্থক একদল দুর্বৃত্ত লাঠিসোঁটা নিয়ে স্কুল দুটিতে হামলা চালায়। এ সময় তাদের হামলায় খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল হাই, শিক্ষক নাজনীন জাহান ও সাবিনা ইয়াসমিন এবং অন্তত ১১ শিশু শিক্ষার্থী আহত হয়। আহত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে।
স্কুল এলাকায় বিএনপির স্থাপন করা দুটি বিলবোর্ড নষ্ট হওয়া এবং হরতালের দিন স্কুল খোলা রাখার অভিযোগে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে মারধর করে।
ঘটনা সম্পর্কে খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল হাই বলেন, ‘হামলাকারীরা অমানুষের মতো ক্লাস চলাকালীন সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। তারা বিদ্যালয়টিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। শ্রেণীকক্ষের বেঞ্চ, অফিসকক্ষের চেয়ার-টেবিলসহ অন্যান্য আসবাব ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। তারা অফিসের কাগজপত্র ও ফাইল ছিঁড়ে ফেলে।’
আবদুল হাই বলেন, ‘হামলাকারীদের বাধা দিতে গিয়ে আমি এবং স্কুলের অপর দুই শিক্ষক সাবিনা ইয়াছমিন ও তাজনীন জাহান লাঞ্ছিত হয়েছি। স্কুলের কমপক্ষে ১১ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। অনেকে ভয়ে বই-খাতা ও স্যান্ডেল ফেলে চলে যায়।’
একই সময় হামলাকারীদের অপর একটি দল খুনিয়াগাছ উচ্চবিদ্যালয়ে হামলা চালায়। এ সময় সেখানে অ্যাসেম্বলি চলছিল। হামলাকারীরা স্কুলের জাতীয় পতাকা নামিয়ে সেই বাঁশ দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তাড়া করে। এ সময় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি নেমে আসে।
খুনিয়াগাছ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘স্কুল এলাকায় লাগানো বিএনপির কয়েকটি বিলবোর্ড কে বা কারা নষ্ট করেছে। সেই কারণে এবং হরতালের দিন বিদ্যালয় খোলা রাখার অভিযোগে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। এই হামলায় স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রী আহত হয়েছে।’
হামলার ঘটনার একপর্যায়ে খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাজনীন জাহান স্কুলের মাইকে গ্রামবাসী ও অভিভাবকদের সাহায্য চান। মাইকিং শুনে শত শত অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
শিক্ষিকা নাজনীন জাহান বলেন, ‘নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে স্কুলের আমানত এবং দেশ ও জাতিসহ পরিবারের সম্পদ শিশু শিক্ষার্থীদের হামলার হাত থেকে বাঁচাতে বিদ্যালয়ের মাইকে এলাকাবাসীসহ অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, স্কুলে হামলা হয়েছে। ওরা আমাদের লাঞ্ছিত করছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মারছে। আমরা কিছুই করতে পারছি না। দয়া করে অভিভাবক ও এলাকাবাসী এখানে আসুন। হামলাকারীদের ঠেকান। আমাদের বাঁচান।’
নাজনীন জাহান বলেন, এই মাইকিংয়ের পর স্কুলের চারদিক থেকে গ্রামবাসী, অভিভাবক ও অন্যরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
হামলার শিকার খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র আহত মাসুদ রানা বলে, ‘ওরা স্কুলের স্যারোক মারছে, মোকো থাপড়াইছে, ধাক্কেয়া ফেলে দিছে, কইছে হরতালের দিনত স্কুলে আসলে আবার মারিম, তোমরা কন তাইলে আমরা কি স্কুলত পড়বার পাবারনং।’
মাইকিং শুনে এগিয়ে আসা অভিভাবক মো. নুরুন্নবী বলেন, ‘স্কুলের আপার মাইকিং শুনিয়া স্কুলোত আসি দেখোং সে এক ধুলায় অন্ধকার, ছাওয়া পাওয়া যায় যেদিকে পাবারনাকছে কান্দাকাটি করি দৌড়ে পালাবার নাগছে। আমরা আসলে হামলাকারীরা পালেয়া গেইছে।’
এ ঘটনায় জেলার শিক্ষক ও অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্কের পাশাপাশি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদ পেয়ে লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। লালমনিরহাট সদর থানার ওসি জমির উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। জেলা শহর থেকে সেখানে শিক্ষকতা করতে যাওয়া শিক্ষকদের পুলিশের গাড়িতে করে শহরে নিয়ে আসা হয়েছে। স্কুল দুটির পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম মোসলেম উদ্দিন এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. নবেজ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেন, এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন ও ন্যক্কারজনক। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া না হলে হরতালের দিন বিদ্যালয় খোলা রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
হামলার ঘটনার সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ মোতাহার হোসেন লালমনিরহাট জেলায় ছিলেন।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘ওই স্কুল এলাকায় আমাদের দলের বিলবোর্ড আওয়ামী লীগের লোকজন নষ্ট করেছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘আজকের ঘটনার সঙ্গে বিএনপি বা এর অঙ্গসংগঠনের কেউ জড়িত নয়। বিএনপির লোকজন হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করলেও কেউ হামলা বা ভাঙচুর করেনি। তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর হামলা চালিয়ে আমাদের দোষারোপ করছে।’

চিকিৎসক হয়ে ৩০০ রোগীকে হত্যা!

হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউয়ের বিছানা খালি করতে ৭ রোগীকে হত্যা করেছেন নারী চিকিৎসক ভার্জিনিয়া সোয়ারেস ডি সুজা। এমন অভিযোগ আগেই আনা হয়েছে। ব্রাজিলের ৫৬ বছর বয়সী এ চিকিৎসক তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ৩০০ রোগীকে হত্যা করে থাকতে পারেন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কর্মকর্তারা। এ ঘটনা ঘটেছে ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় কিউরিটিবা অঞ্চলের ইভানজেলিকো হাসপাতালে। গত মাসে ৭ রোগীকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। ভার্জিনিয়ার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ২০টি অভিযোগ আনা হয়েছে। আরও ৩০০ অভিযোগ আনা হতে পারে তার বিরুদ্ধে। একা নয়, সহযোগীদের নিয়ে এ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন তিনি। ৩ চিকিৎসক ও ৩ নার্সের বিরুদ্ধে তাকে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি ও তার সহযোগীরা রোগীদের দেহে পেশী শিথিল করা ওষুধ প্রয়োগ ও অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। টেলিফোনে রেকর্ড করা কথোপকথন থেকে তার এ ভয়াবহ ইচ্ছার কথা জানতে পেরেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। অবশ্য ভার্জিনিয়ার আইনজীবী তার মক্কেলকে নির্দোষ প্রমাণের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন।