Thursday, March 21, 2013

২০ হাজার গাছ নিধন করেছে জামায়াত-শিবির

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের দুই পাশে বিশাল যে রেইনট্রিগুলো এত দিন প্রকৃতির কোলে পর্যটকদের স্বাগত জানিয়ে আসছিল, সেগুলোর একটা বড় অংশ এখন আর নেই। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী ওই গাছগুলোর ছায়ায় প্রাণ জুড়াত পথচারীরা। পাখপাখালির আশ্রয়ও ছিল তারা। সে গাছগুলো কেটে ফেলেছে জামায়াত-শিবির।
এই অবস্থায় আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক বন দিবস। এ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য— জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে বন। বাংলাদেশে গাছের ওপর আঘাত করে ঠিক যেন জীবন-জীবিকার ওপরই আঘাত করা হলো। প্রকৃতিবিদেরা একে রাজনীতির নামে প্রকৃতির প্রতি প্রতিহিংসার এক নিকৃষ্ট নজির হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বন বিভাগের সূত্র ও প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সড়ক অবরোধের নামে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে একই কায়দায় দেশের ১০টি জেলার প্রধান সড়কের পাশের প্রায় ২০ হাজার ছায়াবৃক্ষ ধ্বংস করেছে জামায়াত-শিবির। এই ২০ হাজার গাছের সঙ্গে আরও কাটা গেছে লাখ খানেক গাছের লতাগুল্ম ও বড় গাছের ডালপালা। আর্থিক হিসাবে এতে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সর্বশেষ এই প্রকৃতি ধ্বংসে যুক্ত হয়েছেন বিএনপির কর্মীরা। গত মঙ্গলবার কুমিল্লা-চাঁদপুর মহাসড়কের ওপর তাঁরাও গাছ কেটে অবরোধ তৈরি করেন। নোয়াখালী ও সাতক্ষীরায় মঙ্গলবার জামায়াত-শিবির আবারও গাছ কেটেছে।
বন বিভাগের কর্মী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাপক হারে এই গাছ কাটতে বিশেষ ধরনের যান্ত্রিক করাত ব্যবহার করা হয়েছে। কক্সবাজার ও সাতক্ষীরার কয়েকটি করাতকলের মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাতে বহনযোগ্য ও দ্রুত গাছ কাটা যায় এমন করাত সাম্প্রতিক সময়ে চীন থেকে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসছে। বিশেষ করে টেকনাফ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সুন্দরবন এলাকায় এই করাত গাছচোরেরা সম্প্রতি ব্যবহার করছে বলে একাধিক সূত্র জানায়। কক্সবাজারের সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে চীনের তৈরি এই করাতগুলো বাংলাদেশে ঢুকেছে। বন বিভাগের কোনো কোনো কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো মনে করছে, সড়ক অবরোধের জন্য এই ব্যাপক বৃক্ষ নিধনের পরিকল্পনা নিয়ে জামায়াত-শিবির আগেই এমন বিপুলসংখ্যক করাত সংগ্রহ করেছে।
হাতে বহনযোগ্য তিন থেকে নয় ফুট পর্যন্ত লম্বা যান্ত্রিক এই করাত দিয়ে একজন মানুষ ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে একটি গাছ কেটে ফেলতে পারে। এই ধরনের করাতের সামনের দিকে একটি ধারালো ব্লেড থাকে, যা রাবারের বেল্টের মাধ্যমে সচল হয়। সাধারণ বনের গাছ দ্রুত কাটতে গাছচোরেরা এটি ব্যবহার করে থাকে।
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা ও রাজশাহী জেলার প্রধান সড়কের গাছ নির্বিচারে কেটে অবরোধ করেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। আর অবরুদ্ধ এলাকায় চালানো হয় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট।
সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে নোয়াখালী জেলায়। সেখানে প্রায় আট হাজার গাছ নিধন করা হয়। এই গাছগুলোর মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজারই ছোট গাছ। বাকিগুলো ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী। সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, সাতক্ষীরা জেলা শহরে প্রবেশের প্রধান সড়কগুলোর দুই পাশের প্রায় তিন হাজার গাছ কাটা হয়। সাতক্ষীরার আশাশুনি সড়ক, কলারোয়া সড়ক ও সাতক্ষীরা-খুলনা প্রধান সড়কের দুই পাশে আকাশমণি, বেলজিয়াম, মেনজিয়াম, রেইনট্রি ও কড়ইগাছের শোভাও এতে ধ্বংস হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগের বয়সও ১০ থেকে ১৫ বছর।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, বাঁশখালী ও লোহাগাড়ায় প্রায় দুই হাজার গাছ কাটা হয়েছে। এগুলো প্রায় সবই পুরোনো গাছ। কক্সবাজারে প্রায় ২০০ এবং বাকি সাতটি জেলায় প্রায় তিন হাজার গাছ ধ্বংস করা হয়। কক্সবাজারের গাছগুলো দেশের অন্যতম পুরোনো। স্থানীয় করাতকল মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, এ রকম একেকটি গাছের দাম প্রায় এক লাখ টাকা। আর ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী গাছের দাম স্থান ও প্রকৃতিভেদে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বলে সূত্রগুলো দাবি করেছে।
নিধনের শিকার গাছের বেশির ভাগই সামাজিক বনায়নের আওতায় গ্রামের গরিব মানুষ সরকারের সহায়তায় রোপণ করেছিল। গ্রামের গরিব মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এই গাছ লাগানো হয়েছিল। গ্রামবাসী বছরের পর বছর গাছগুলোর পরিচর্যা ও পাহারা দিয়ে আসছিল। সামাজিক বনায়নের এসব গাছ নিলামে বিক্রি করার পর পরিচর্যাকারী গরিব মানুষদের মোট দামের ৫৫ ভাগ পাওয়ার কথা ছিল।
সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা আবদুল খালেক তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের তিন হাজারের মতো গাছ নিধনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথম আলোকে বলেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসি রায় ঘোষণার পর তাঁর ভক্তরা গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করেছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবনের চেয়ে তো আর গাছ বড় না।’
জানতে চাইলে প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুছ আলী প্রথম আলোকে বলেন, গাছ কাটার ঘটনায় বন বিভাগ থেকে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। হরতাল ও অবরোধ সৃষ্টিকারীরাই গাছগুলো কেটেছে এবং সেগুলো চুরিও হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে এখন তার অনুসন্ধান চলছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘গাছ চুরির ঘটনায়’ ১০টি জেলায় এ পর্যন্ত মোট ৫০টি মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ৫০০ জনকে। এর মধ্যে সাতক্ষীরায় ১৫টি, চট্টগ্রামে ১০টি, নোয়াখালীতে ১০টি, রাজশাহীতে পাঁচটি, রংপুরে ১০টি মামলা করেছে বন বিভাগ।
বন বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোতে তাদের ভয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা হয়েছে। অনেক এলাকায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের কেটে ফেলে যাওয়া গাছ নিয়ে গেছে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা। ফলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন মামলা নিতে চাচ্ছে না।
স্থানীয় লোকজনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানায়, সাতক্ষীরায় জামায়াত-শিবিরের বাইরে গাছ কাটার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ (সাতক্ষীরা-৪) আসনের সাংসদ ও জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত নেতা গোলাম রেজার কর্মীরাও। তাঁরা শতাধিক গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করেন।
বন বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার একাধিক বন কর্মকর্তা জানান, ৬ মার্চের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে সাংসদ গোলাম রেজার অনুসারী জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা গাছগুলো নিয়ে যান। স্থানীয় এলাকাবাসী বিষয়টি বন বিভাগকে জানায়। কিন্তু এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না থাকায় সেখানে পুলিশ বা বন কর্মকর্তা কেউই যেতে পারেননি।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কালীগঞ্জে গাছ চুরির সঙ্গে স্থানীয় সাংসদ গোলাম রেজার লোকজন জড়িত ছিল বলে আমাদের কাছেও খবর এসেছে। আর জেলার অন্যান্য স্থানে জামায়াত-শিবিরের গাছ কাটার নেতৃত্ব দিয়েছিল আগড়দাড়ি কামিল মাদ্রাসার ছেলেরা।’
গোলাম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, বন বিভাগের কর্মীদের যোগসাজশে সুন্দরবন থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার গাছ চুরি হয়ে যাচ্ছে। আর তাঁরা সামান্য ৫০-৬০টা গাছ নিয়ে মাতামাতি করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখন সরকারি বা বিরোধী—কোনো দলেই নেই। তাই আমার দিকে সবাই অভিযোগের আঙুল তুলছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার নেতা-কর্মীরা ওই ঘটনায় যুক্ত ছিল না।’
সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি ও কলারোয়ায় গাছ কাটায় নেতৃত্ব দিয়েছিল আগড়দাড়ি কামিল মাদ্রাসার ছেলেরা। সাতক্ষীরা সদর আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সাংসদ আবদুল জব্বার ওই মাদ্রাসার সভাপতি।
আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির অনেক কর্মীর বাড়িতে হামলা হয়েছে। আর আমি আগড়দাড়ি মাদ্রাসার সভাপতি হলেও সেখানে আমার কথায় সব কাজ হয় না। সেখানকার কোনো ছাত্র যদি গাছ কাটা ও জামায়াতের অবরোধের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বসে আছে কেন? তাদেরকে ধরুক।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন, কক্সবাজার থেকে আবদুল কুদ্দুস, চট্টগ্রাম থেকে প্রণব বল, লোহাগাড়া থেকে পুষ্পেন চৌধুরী, নোয়াখালী থেকে মাহাবুবুর রহমান, সাতক্ষীরা থেকে কল্যাণ ব্যানার্জি, বগুড়া থেকে মিলন রহমান, গাইবান্ধা থেকে শাহাবুল শাহীন, রাজশাহী থেকে আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আনোয়ার হোসেন।]

আ.লীগ এলেই কেন শেয়ার কেলেঙ্কারি হয়


আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই পুঁজিবাজারে কেলেঙ্কারি ঘটে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে এর কারণ জানতে চেয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। গতকাল বুধবার সংসদ ভবনে কমিটির এই বৈঠক হয়।
একই সঙ্গে কমিটি বিএসইসিকে ১৯৯৬ সালের পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারিসংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলেছে। বৈঠক শেষে সভাপতি এ বি এম গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে সাম্প্রতিক সময়ের পুঁজিবাজারে ধস এবং ১৯৯৬ সালের পুুঁজিবাজার কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিটি বিএসইসির কাছে জানতে চেয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই কেন পুঁজিবাজারে ধস নামে, কেলেঙ্কারি হয়।
কমিটির সভাপতি জানান, বৈঠকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি জানিয়েছে, ১৯৯৬ সালের পুঁজিবাজারে যে ঘটনা ঘটেছিল, তা বেআইনিভাবে করা হয়েছিল। আর বর্তমান সরকারের আমলে যেসব অনিয়ম ঘটেছে, তা আইনি কাঠামোর মধ্যে হয়েছে। যে কারণে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে কমিটির সদস্যরা পুঁজিবাজার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁঁরা পুঁজিবাজারের ওপর বিএসইসির নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন এবং যেসব নতুন কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে চায়, তাদের আসার সুযোগ দেওয়ারও সুপারিশ করেছেন। এ ছাড়া বৈঠকে সাংসদসহ অন্য যাঁরা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছ থেকে একাধিক প্লট গ্রহণ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে রাজউকের গৃহীত পদক্ষেপ জনসমক্ষে প্রকাশ করার সুপারিশ করা হয়।
এ বি এম গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরী, খান টিপু সুলতান, এস কে আবু বাকের ও আমিনা আহমেদ অংশ নেন। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নতুন রাষ্ট্রপতি কে হবেন?


রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পর থেকেই নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা চলছিল।
আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে। তবে নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দুজনের নাম আলোচনায় আছে বলে ওই সূত্র বলছে। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং বর্তমান স্পিকার ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এঁদের মধ্যে সাজেদা চৌধুরীর ব্যাপারে দলের শীর্ষ পর্যায়ের আগ্রহ বেশি।
সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতির মৃত্যু হলে স্পিকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আবার সংবিধানের ১২৩(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সে হিসাবে আগামী ১৯ জুনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের ফলে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে পদটি শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে, তাহা পূর্ণ করার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
রাষ্ট্রপতি সরাসরি ভোটে নয়, সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। তবে তফসিল ঘোষণাসহ এই নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, দলের প্রতি অনুগত এবং অঙ্গীকারবদ্ধ এমন কোনো প্রবীণ নেতাকেই এ পদে বসানোর চিন্তাভাবনা হচ্ছে। বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বর্তমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে দলের শীর্ষ পর্যায়ের ওপর বিশ্বস্ত এমন কাউকেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে দলীয় নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে। তা ছাড়া সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নেওয়ার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। সে হিসাবে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে এসে নতুন রাষ্ট্রপতির আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
সংবিধানের ৫০(১) অনুসারে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদে তাঁর পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। তবে শর্ত হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. এম জহির প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপতি পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন, যদি না তাঁকে অভিশংসন করা হয়। তবে অভিশংসন করা খুব সহজ নয়।
সংবিধানের ৫২(১) অনুযায়ী, সংবিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসিত করা যেতে পারে। এ জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে অনুরূপ অভিযোগের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের কাছে প্রদান করতে হবে। স্পিকারের কাছে নোটিশ প্রদানের দিন থেকে ১৪ দিনের আগে বা ৩০ দিনের পর এই প্রস্তাব আলোচিত হতে পারবে না এবং সংসদ অধিবেশন না থাকলে স্পিকার অবিলম্বে সংসদ আহ্বান করবেন। ৫২(৪) অভিযোগ বিবেচনার পর মোট সদস্যসংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে অভিযোগ যথার্থ বলে ঘোষণা করে সংসদ কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করলে প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার তারিখ থেকে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হবে।

রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক


রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান আর নেই। গতকাল ২০ মার্চ, বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটা ৪৭ মিনিটে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশেষ বিমানযোগে রাষ্ট্রপতির মরদেহ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাবে। দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে আজ থেকে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এই তিন দিন (বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার) বাংলাদেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
গতকাল রাতে পাঠানো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ রাষ্ট্রপতির মরদেহ গ্রহণ এবং যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। রাষ্ট্রপতির আত্মার মাগফিরাত কামনায় আগামীকাল শুক্রবার দেশের সব মসজিদে দোয়া এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
কাল শুক্রবার বেলা আড়াইটায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বেলা সাড়ে তিনটায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে মরদেহ নেওয়া হবে মরহুমের গুলশানের বাসভবনে। বিকেল পাঁচটায় বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রপতিকে দাফন করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পৃথক এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের স্পিকার মো. আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
শুধু আওয়ামী লীগেই নয়, দেশের গোটা রাজনৈতিক অঙ্গনেই জিল্লুর রহমান ছিলেন অভিভাবকের মতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় বা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ছুটে যেতেন তাঁর কাছে। দেশের দ্বিধাবিভক্ত রাজনৈতিক পরিবেশে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও তাঁর আমন্ত্রণ উপেক্ষা করতে পারেননি। সর্বশেষ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে জিল্লুর রহমানের ডাকে বঙ্গভবনে যান খালেদা জিয়া।
জিল্লুর রহমান দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করার পর রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। এই পদে থেকেই ইন্তেকাল করলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও স্নেহধন্য জিল্লুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা চাচা বলে ডাকতেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দুবার এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে দুবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় তিনি স্ত্রী আইভি রহমানকে হারিয়েছেন। এক-এগারোর সময় (২০০৭ সাল) দলের চরম দুঃসময়ে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন প্রবীণ এই রাজনীতিক। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার আগে জিল্লুর রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে যান। এ সময় তিনি দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনাকে কারামুক্ত করতে আইনজীবীর গাউন পরে বৃদ্ধ বয়সেও ছুটে গেছেন সংসদ ভবনের বিশেষ আদালতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার দিন তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই দিন থেকে এক মুহূর্তের জন্যও তিনি আওয়ামী লীগের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।
জিল্লুর রহমান মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় চল্লিশের দশকের শুরুর দিকে স্কুলের ছাত্র থাকাকালেই। ১৯৪৬ সালে ঢাকা কলেজের ছাত্র থাকাকালে সিলেটে গণভোটের প্রচারকাজে অংশ নিতে গিয়ে তিনি সেখানে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচিত হন। এরপর ভাষা আন্দোলনসহ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সব আন্দোলন-সংগ্রাম এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তথা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামের পুরোভাগে ছিলেন তিনি।
শোক প্রকাশ: রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ শোক প্রকাশ করেছেন।
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘জিল্লুর রহমান ছিলেন আমাদের অভিভাবক। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন দেশপ্রেমিক, নিবেদিতপ্রাণ ও প্রবীণ রাজনীতিবিদকে হারাল। ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে তাঁর দৃঢ় ও প্রাজ্ঞ ভূমিকা জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘পঁচাত্তর-পরবর্তী দুঃসময়ে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে জিল্লুর রহমানের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। প্রিয়তমা স্ত্রী ও রাজনৈতিক সহকর্মী আইভি রহমানকে ২১ আগস্ট মর্মান্তিক গ্রেনেড হামলায় হারানোর পরও তিনি নতজানু হননি। এক-এগারোর পর দুঃসময়ে জিল্লুর রহমান দলের হাল ধরেছিলেন। তিনি আমাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছিলেন। মুক্তি দিয়েছিলেন গণতন্ত্রকে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের মানুষ চিরদিন জিল্লুর রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জিল্লুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে তাঁর ইতিবাচক ভূমিকা জাতীয় ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। জিল্লুর রহমান ছিলেন ভদ্র, নম্র ও ভালো মানুষ। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্পর্কে তিনি কখনো আক্রমণাত্মক ও অশালীন মন্তব্য করতেন না। তাঁর মৃত্যুতে জাতি একজন সুবিবেচক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হারাল। রুচি ও প্রজ্ঞার প্রকট অভাবের এই সময়ে তাঁর মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো, তা পূরণ হওয়ার নয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: জিল্লুর রহমানের জন্ম ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায়। তাঁর বাবা আইনজীবী মেহের আলী মিয়া ময়মনসিংহ জেলার লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। জিল্লুর রহমান ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ভৈরব, কুলিয়ারচর ও বাজিতপুর থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর সব সময় ওই আসন থেকে নির্বাচন করে আসছিলেন। ভৈরব-কুলিয়ারচর আসন থেকে তিনি ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ওই আসনে এখন প্রতিনিধিত্ব করছেন তাঁর ছেলে নাজমুল হাসান।
ছাত্রজীবনেই জিল্লুর রহমান রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ভাষা আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ এমএ ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি ১৯৫৪ সালে আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৫৬ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন।
ষাটের দশকে ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেও রাজনীতিতে তিনি মনোনিবেশ করেন। ১৯৬২ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ছিষট্টির ছয় দফা আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এরপর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র পরিচালনা এবং জয় বাংলা পত্রিকার প্রকাশনায় যুক্ত ছিলেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। এরপর ১৯৭৪, ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। দীর্ঘদিন তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে নবম জাতীয় সংসদে সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
জিল্লুর রহমানের এক ছেলে সাংসদ নাজমুল হাসান এবং দুই মেয়ে তানিয়া রহমান ও তনিমা রহমান।

Monday, March 18, 2013

জাবিতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর হল তল্লাশি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল রবিবার রাতে ছাত্রলীগের দুই হলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর ছাত্রলীগের ৩ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আজ সোমবার সকালে হলে তল্লাশি চালিয়ে তাদের আটক করে পুলিশ। ‌আটক ছাত্রলীগের তিন নেতা-কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মী হওয়ার পরও শিবির বলে চালানোর চেষ্টা করেছে ছাত্রলীগের একাংশ।

ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি দাবি করেছেন এরা পদপ্রাপ্ত কেও না। এদের সাথে ছাত্রলীগের কোন সম্পৃক্ততা নেই। উপচার্য ড. আনোয়ার হোসেনও দাবি করেছেন আটককৃতরা ছাত্রলীগের কেউ নয়, তারা ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী। পুলিশের অভিযানের পর উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ওরা উপরে উপরে ছাত্রলীগ কিন্তু ভেতরে শিবিরের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, গত রবিবার রাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হল ও শহীদ রফিক জব্বার হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় ৯ ছাত্রলীগকর্মী গ্ররুতর আহত হন। আজ সোমবার সকাল ৭টার দিকে আশুলিয়া থাকার ওসি বদরুল আলমের নেতৃত্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উভয় হলে তল্লাশি চালায় পুলিশ।

এ সময় মওলানা ভাসানী হলের ১০৮ নম্বর কক্ষ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ৬ রাউন্ড গুলিসহ আটক করে বোরহান উদ্দিন সুলতান ইমনকে। ইমনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ি মোরশেদুর রহমান নামের অপর ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। বোরহান উদ্দিন ইমন পুলিশকে বলেন, পিস্তলটি মোরশেদুর রহমানের। তবে মোরশেদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন তিনি রাজনীতির স্বীকার।

একই সময়ে রফিক জব্বার হল থেকে রামদা ও দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করেছে আবদুল মাজেদ সীমান্ত নামে এক ছাত্রলীগকর্মীকে। সীমান্ত ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মিঠুন কুণ্ডুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। ছাত্রলীগের প্রস্তাবিত হল কমিটিতে সীমান্ত সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছে বলেও একটি সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশের তল্লাশির নেতৃত্ব দেওয়া আশুলিয়া থানার ওসি বদরুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। অভিযানের সময় একটি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি, রামদা ও প্রচুর রড উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃতদের রিমান্ডের জন্য আদালোতে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।

শেষ বিকালের হতাশা

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ২৪০ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কার ৩৪৬। প্রথম ইনিংসের ১০৬ রানের ব্যবধানটা ঘুচিয়ে এখন পর্যন্ত ৫২ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ, হাতে আছে ছয়টি উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ভালোই হয়েছিল বাংলাদেশের। তামিম ইকবাল ও জহুরুল হকের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৯১ রান। তবে শেষ বিকালে হঠাত্ জহুরুল ও মাহমুদউল্লাহর ফিরে যাওয়া হতাশা ছড়িয়েছে বেশ ভালোমতোই।
টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ চার উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান। মমিনুল হক ৩৬ ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ৭ রানে অপরাজিত আছেন। ৫৯ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে সবার আগে সাজঘরে ফেরেন তামিম। দলীয় ৯৬ রানে বোল্ড হন ব্যক্তিগত ৪ রানে থাকা মোহাম্মদ আশরাফুল।
মাত্র পাঁচ রানের ব্যবধানে দুটি উইকেটের পতন ঘটায় অস্বস্তিতে পড়ে যায় বাংলাদেশ। মমিনুল হককে সঙ্গে নিয়ে কিছুটা আশা জাগিয়েছিলেন জহুরুল। কিন্তু ৪৮ রান করে জহুরুল ফিরে যাওয়ার পরই নেমে আসে বিপর্যয়; ঠিক পরের বলেই রঙ্গনা হেরাথের বলে বোল্ড হন মাহমুদউল্লাহ। জহুরুলের বিদায়ের ঠিক পরের বলেই বোল্ড হয়ে ফেরেন তাঁর জায়গায় খেলতে আসা মাহমুদউল্লাহ।
৬ উইকেটে ২৯৪ রান নিয়ে আজ টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে শ্রীলঙ্কা। আগের দিন ১২৭ রানে অপরাজিত থাকা কুমার সাঙ্গাকারা আজ ফিরে যান ব্যক্তিগত ১৩৯ রানে। লঙ্কানদের ইনিংসটাও বেশিদূর এগোয়নি। মধ্যাহ্নবিরতির আগেই শ্রীলঙ্কার ইনিংসের ইতি টেনে দেন বাংলাদেশের বোলাররা।
উইকেটের বিচারে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সোহাগ গাজীই সবচেয়ে সফল। ১১১ রানের বিনিময়ে তিনটি উইকেট তুলে নেন তিনি। এ ছাড়া রবিউল ইসলাম, রুবেল হোসেন ও আবুল হাসান প্রত্যেকেই দুটি করে উইকেট নেন।

সিরিজ ৩-০ করল ভারত

চেন্নাই, হায়দরাবাদের পর মোহালি টেস্টেও বড় জয় পেল স্বাগতিক ভারত। চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মহেন্দ্র সিং ধোনিরা এগিয়ে ৩-০-তে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্টটি মাঠে গড়াবে আগামী ২২ মার্চ।
মোহালি টেস্টের শেষ দিনে আজ সোমবার ভারতের জয়টা এসেছে ৬ উইকেটে। জয়ের জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয়দের প্রয়োজন ছিল ১৩৩ রান। চারটি উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় স্বাগতিকেরা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কেউই খুব একটা জ্বলে উঠতে পারেননি। লক্ষটা অল্প ছিল বলেই রক্ষা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেন বিরাট কোহলি। উদ্বোধনী দুই ব্যাটসম্যান মুরালি বিজয় ও চেতেশ্বর পূজারার সংগ্রহ যথাক্রমে ২৬ ও ২৮ রান। শচীন টেন্ডুলকার করেন ২১ রান। দলের জয় নিশ্চিত করে ধোনি ১৮ ও রবীন্দ্র জাদেজা ৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
এ টেস্টে অস্ট্রেলিয়া হারের মূল কারণ, দ্বিতীয় ইনিংসে দলটির ব্যাটসম্যানদের সীমাহীন ব্যর্থতা। ৯১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার পর গতকাল চতুর্থ দিনে ভুবনেশ্বর কুমারের বোলিং তোপের মুখে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। ৩ উইকেট হারিয়ে ৭৫ রান সংগ্রহ করে চতুর্থ দিন শেষ করে সফরকারীরা।
আজ পঞ্চম দিনে অস্ট্রেলিয়াকে রীতিমতো নাজেহাল করেন তিন ভারতীয় স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন, প্রজ্ঞান ওঝা ও রবীন্দ্র জাদেজা। তাঁদের ঘূর্ণিজাদুতে বড় কোনো জুটিই গড়তে পারেননি অসি ব্যাটসম্যানরা। ৬৯ রানের ইনিংস খেলে একাই প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন ফিলিপ হিউজ।
প্রথম ইনিংসে ৪০৮ রান করে অলআউট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে শিখর ধাওয়ান ও মুরালি বিজয়ের দুটি দুর্দান্ত ইনিংসে ভারতের ইনিংস শেষ হয় ৪৯৯ রানে।

দ্রুত চিকিৎসায় ১০ শতাংশ এইডস রোগী সুস্থ হয়


আক্রান্তের পরপরই চিকিৎসা করা গেলে প্রতি ১০ জনের একজন এইচআইভি আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন ফ্রান্সে একদল গবেষক। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এক শিশু এইচআইভি সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই নতুন এ আশার কথা শোনালেন তাঁরা।
গবেষকরা জানান, হাসপাতালে অন্য কোনো পরীক্ষা করাতে এসে এইচআইভি পাওয়া গেছে_এমন ১৪ জনকে তাঁরা গবেষণার নমুনা হিসেবে নেন। আক্রান্ত হওয়ার ১০ সপ্তাহের মধ্যেই এদের চিকিৎসা শুরু হয়। গবেষকদের দাবি, এদের অধিকাংশের শরীরেই গত ১২ বছরে নতুন করে এইচআইভির সংক্রমণ দেখা যায়নি। বিজ্ঞানীরা জানান, এইচআইভি প্রতিরোধ সফলতার মূল রহস্যই হচ্ছে এটা কত দ্রুত শনাক্ত করা যায়, তার ওপর। অতি দ্রুততার সঙ্গে দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া গেলে ১০ জন রোগীর মধ্যে অন্তত একজনের দেহের ভাইরাস সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া সম্ভব। এর ফলে ইমিউন সিস্টেমের ভেতরে লুকনো জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে দেহের অন্যান্য জায়গায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে না ওই ভাইরাস। ফলে সংক্রমিত রোগীটি কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই দীর্ঘদিন স্বাভাবিক জীবনযাপন করার সুযোগ পেতে পারেন। এইচআইভির চিকিৎসায় সাধারণত ওষুধের মাধ্যমে ভাইরাসকে দমিয়ে রাখা যায়, কিন্তু পুরোপুরি বিলুপ্ত করা যায় না। ওষুধ খাওয়া বন্ধ করলে ভাইরাস আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ড. এসিয়ের সায়েজ-সিরিয়ন বলেন, 'এ পদ্ধতিতে সবাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও অনেকের ক্ষেত্রে সম্ভব।' সবার ক্ষেত্রে কেন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, তা এখনো পরিষ্কার নয় বলে জানান গবেষকরা। সায়েজ-সিরিয়ন জানান, ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরপরই চিকিৎসা নিলে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ রোগী পুরোপুরি আরোগ্য হতে পারেন।

চীনে ৪০ বছরে ৩৩ কোটি গর্ভপাত

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচি গ্রহণের পর গত ৪০ বছরে চীনে প্রায় ৩৩ কোটি গর্ভপাত হয়েছে। চীনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সরকার ১৯৮০ সালে গৃহীত এক সন্তান নীতি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নীতি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরো এগিয়ে নেবে বলে মনে করছে তারা।
চলতি বছরের শুরুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে জনসংখ্যার বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ তুলে ধরে। এতে দেখা যায়, ১৯৭১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মোট ৩২ কোটি ৮৯ লাখ গর্ভপাত ঘটানো হয়েছে। এর কিছু দিন আগেই সরকার সন্তান কম নিতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। এসব কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৯৮০ সালে কার্যকরি হয় এক সন্তান নীতি। তবে প্রত্যন্ত কিছু অঞ্চল, নৃ-তাত্তি্বক জনগোষ্ঠী এবং স্বামী-স্ত্রী উভয়ই মা-বাবার একমাত্র সন্তান হওয়ার ক্ষেত্রে এ নীতি শিথিল করা হয়। বিশেষ করে প্রথম সন্তান মেয়ে হলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্বিতীয় সন্তানের অনুমতি দেওয়া হয়।
২০১০ সালের সর্বশেষ আদমশুমারিতে বলা হয়, এক সন্তান নীতি না থাকলে দেশের বর্তমান জনসংখ্যা আরো ৪০ কোটি বেশি থাকত। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা ১৩৫ কোটিরও বেশি।
এদিকে গত রবিবার জাতীয় আইনপ্রণয়নকারী পরিষদের বার্ষিক সভায় পরিবার পরিকল্পনা নীতিমালার কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়। তবে নীতিমালায় এক সন্তান নীতি অব্যাহত রাখা হয়। জাতীয় জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কমিশন (এনপিএফপিসি) জানায়, এক সন্তান নীতি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখায় এটি অব্যাহত থাকবে। মন্ত্রীসভার কেন্দ্রীয় পরিষদের মহাসচিব মা কাই নীতিমালা পরিবর্তন সম্পর্কে বলেন, 'এটি পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে আরো এগিয়ে নেবে।' সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।

গাজীপুরে ব্যবসায়ীর ৩৫ লাখ টাকা ছিনতাই

গাজীপুরে এক পাইকারি ব্যবসায়ীর ৩৫ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে। বাসা থেকে টাকা নিয়ে দোকানে প্রবেশের মুহূর্তে একদল ছিনতাইকারী বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে দুটি ব্যাগে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে গুলি ছুড়তে ছুড়তে মোটরসাইকেলে করে পুলিশের সামনে দিয়েই টঙ্গীর দিকে চলে যায়। ফিল্মি স্টাইলে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে আজ সোমবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ব্যস্ততম বোর্ডবাজারে। খবর পেয়ে র‍্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও টাকা উদ্ধার বা জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

জানা গেছে, ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্যে বোর্ডবাজারের আরপি ট্রেডর্সের মালিক রতন মল্লিক (৪৮) দুটি ব্যাগে করে ৩৫ লাখ টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হন। এ সময় তিন কর্মচারি ছাড়াও স্ত্রীর তিন ভাই রোকন সরকার, রতন সরকার ও শোকান সরকার তার সঙ্গে ছিলো। সকাল সোয়া ৮টার দিকে তালা খুলে দোকানে প্রবেশের মুহূর্তে ৮ যুবক এসে শত শত মানুষের সামনেই তাদের বুকে অস্ত্র এবং ঘাড়ে চাপাতি ঠেকিয়ে টাকার ব্যাগ দুটি ছিনিয়ে নেয়। এ সময় চারটি মোটরসাইকেলে আরো চার যুবক এসে দাঁড়াতেই ছিনতাইকারীর গুলি ছুড়তে ছুড়তে টাকা নিয়ে টঙ্গীর দিকে চলে যায়।

রতন মল্লিকের শ্যালক রোকন সরকার (২৮) জানান, ওই আট যুবক স্বাভাবিকভাবে হেটে এসে কোমর থেকে পিস্তল ও চাপাতি বের করে আমাদের দিকে তাক করে। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা টাকা ছিনিয়ে নেয়। চলে যাওয়ার সময় আমরা চিৎকার করলে পাঁচ রাউন্ড গুলি ছুড়ে চলে যায়। ছিনতাই করতে তাদের সময় লেগেছে মাত্র দুই মিনিট।

ব্যবসায়ী রতন মল্লিক জানান, তিন দিন বন্ধ থাকার কারণে বিক্রির টাকা বাসায় নিয়ে রেখেছিলেন। দোকানের ওপরই অগ্রণী ব্যাংকের শাখা। ওই শাখায় জমা দেওয়ার জন্যেই বাসা থেকে টাকা নিয়ে বের হয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ছিনতাইকালে একশ গজ দূরেই পুলিশ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। ছিনতাই শেষে টাকা নিয়ে পুলিশের সামনে দিয়েই গুলি করতে ছিনতাইকারীরা চলে গেছে।

জয়দেবপুর থানার এসআই মাহফুজুর রহমান জানান, পুলিশ ওই এলাকায় হরতাল ডিউটি করছিল। গুলির শব্দকে পিকেটারদের নিক্ষেপ করা ককটেল ভেবে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছিনতাইয়ের কথা জানতে পেরে ছিনতাইকারীদের পিছু ধাওয়া করে। কিন্তু তাদের পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, জড়িতদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চলছে।