চট্টগ্রাম নগরে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে। আজ বুধবার থেকে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ এই কাজ শুরু করছে। মহানগর পুলিশ নিজ উদ্যোগে এ জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে। নগরে ছিনতাই প্রতিরোধে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অটোরিকশা চালকদের সহযোগিতায় ছিনতাইকারীরা এসব অঘটন ঘটাচ্ছে বলে পুলিশের কাছে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, নগরে প্রায় ৩০ হাজার অটোরিকশাচালক আছে। পুলিশের কম্পিউটারে আঙুলের ছাপের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট চালকের নাম, গাড়ির নম্বর, গাড়ির ধরন ও মন্তব্য—এই পাঁচটি তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। নগরের টানা পার্টি, গামছা পার্টি, মলম পার্টি ও মরিচ পার্টি—এই চার শ্রেণীর ছিনতাইকারীদের বেপরোয়া গতিবিধি ও অপরাধ দমনে আঙুলের এ ছাপ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
জানা গেছে, একটি বিশেষ পেশার মানুষের আঙুলের ছাপ নেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম। তবে অপরাধ দমনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বড় শহরে পুলিশ বিভাগের এই কার্যক্রম অনেক আগে থেকেই চালু আছে। সেখানে সন্দেহভাজন লোকদের আঙুলের ছাপ ও ব্যক্তিগত তথ্যাবলি কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, বদলি চালকেরা বিভিন্ন সময় অটোরিকশার মাধ্যমে ছিনতাইয়ে অংশ নেন, যা অনেক সময় গাড়ির মালিক জানেন না। সংশ্লিষ্ট ওই বদলি চালকের আঙুলের ছাপ একবার সংগ্রহ করা হলে পরে আবারও তাঁর আঙুলের ছাপ নিয়ে পরীক্ষা করা হবে। নগরের মোড়ে আকস্মিক এই পরীক্ষা হবে। কম্পিউটারে সংরক্ষিত আগের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের তথ্যের, যেমন নাম ও গাড়ির নম্বরের অমিল পাওয়া গেলে তাঁকে আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বদলি চালকেরা অপরাধ করার সময় নাম-ঠিকানা ঘন ঘন পাল্টান। তবে আঙুলের ছাপ পাল্টানোর কোনো সুযোগ নেই।
পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) বনজ কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা বেশির ভাগ ছিনতাই বা অপরাধ করে থাকে। আর সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করেন অটোরিকশার বদলি চালকেরা। এসব অপরাধীর হাতে নগরে আইনজীবী, ছাত্র, সরকারি কর্মকর্তাসহ অনেক মানুষ খুনও হয়। তাই আমরা প্রত্যেক চালকের আঙুলের ছাপ ও প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি কম্পিউটারে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।’
পুলিশ সূত্র জানায়, বুধবার সকাল থেকে একটি ল্যাপটপ নিয়ে একদল পুলিশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ শুরু করবে। দ্রুত প্রত্যেক চালকের তথ্যাবলি কম্পিউটারে সংরক্ষণের লক্ষ্যে ঈদের আগেই ল্যাপটপের সংখ্যা বাড়িয়ে পাঁচ-ছয়টি করার চেষ্টা চলছে। নগরে ১৩ হাজার অটোরিকশা চলে বলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে।
নগর যানবাহন শাখার পুলিশের উপকমিশনার ফারুক আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ১৩ হাজার অটোরিকশার জন্য প্রায় ৩০ হাজার চালক আছেন। প্রকৃত চালকেরা লোভে পড়ে মালিকের অগোচরে বদলি চালকের কাছে কয়েক ঘণ্টার জন্য গাড়ি ভাড়া দেন। মাত্র তিন-চার ঘণ্টার জন্য প্রকৃত চালক বদলি চালক থেকে ৪০০-৫০০ টাকা ভাড়া পান। আর ওই সময় বদলি চালকের সহযোগিতায় সন্ত্রাসীরা নগরে অঘটন ঘটায়।’
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত রমজানের কেনাবেচা চলবে। ওই সময় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-বোনাস পাবেন। তখন বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে গেলে সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। তাই ঈদের আগেই এই কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে, যাতে চালকদের নজরদারিতে রাখা যায়।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক আবুল হাশেম বলেন, ‘অনেক সময় বদলি চালকের কাছে গাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়। প্রকৃত মালিকেরা সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আর বদলি চালকেরা অপরাধ ঘটিয়ে ধরা পড়লে মালিকদেরও আসামি করা হয়। সব চালকের আঙুলের ছাপ নেওয়া হলে নগরে অটোরিকশা ব্যবহারের মাধ্যমে ছিনতাই কমে যাবে। এমনকি গাড়ি চুরিও বন্ধ হবে।’
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ভাড়া করা সিএনজিচালিত অটোরিকশার মাধ্যমে নগরের অরক্ষিত জায়গায় তথা বিদ্যুতের আলো নেই ও জনচলাচল কম—এমন স্থানে ভাসমান ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। এর আগে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ছিনতাইয়ের সময় গ্রেপ্তার হওয়া বেশির ভাগ অপরাধী ভোলা, হাতিয়া, বাগেরহাট ও পিরোজপুরের বাসিন্দা ছিল।
No comments:
Post a Comment