Wednesday, March 27, 2013

সেনাবাহিনীকে নিয়ে মেঠো বক্তৃতা

‘বিরোধীদলীয় নেতা সংসদ অকার্যকর করার জন্য জোট সরকারকে অভিযুক্ত করেন। তিনি সতর্ক করেন যে সংস্কার করা ছাড়া নির্বাচন হবে না। তিনি আগামী নির্বাচনে কারচুপির পরিকল্পনা পরিত্যাগ করতে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি থাইল্যান্ডের সামরিক অভ্যুত্থান থেকে শিক্ষা নিতে এবং “ক্ষমতার লোভে” সংসদীয় সরকারব্যবস্থা ধ্বংস না করার আহ্বান জানান। বিরোধীদলীয় নেতা অবশ্য বাংলাদেশে থাই রাজনীতির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা নাকোচ করেন।’
বাংলাদেশের বিরোধী দলের নেতা এই উক্তি করেছিলেন সংসদে, ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর। আজ তিনি প্রধানমন্ত্রী। অথচ ওই মন্তব্য আজকের বিরোধী দলের নেতার বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এর অর্থ, সাত বছর আগে ও পরের রাজনৈতিক অবস্থার কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি। এ প্রসঙ্গের অবতারণা সেনাবাহিনীকে নিয়ে খালেদা জিয়ার অনভিপ্রেত উক্তির কারণে। তিনি বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীরও দেশের প্রতি কর্তব্য আছে। তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না। মানুষ খুন করবে আর তারা চেয়ে চেয়ে দেখবে। কাজেই সেনাবাহিনী সময়মতোই তাদের দায়িত্ব পালন করবে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়েরের হুমকি সম্পর্কে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, এটা তো রাজনৈতিক। সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমানও বলেন এটা তো ‘রাজনৈতিক’। এটা আসলে একটা স্বীকারোক্তি যে, রাজনীতি কতটা দায়িত্বহীন কিংবা ভয়ানক। অবশ্য এ নিয়ে উভয় পক্ষের বাক্যবাণ বিনিময় পরিণামে শূন্যগর্ভ। কিন্তু যা অশুভ তা হলো, মাত্রাভেদে উভয় বিবদমান পক্ষ ক্রমশ সেনাবাহিনীকে বিতর্কের কেন্দ্রে টানার জোরালো প্রবণতা দেখাচ্ছে। নির্বাচনকালে সেনার ভূমিকা নিয়ে এই তর্ক আরও উত্তাপ সৃষ্টি করতে পারে।
থাইল্যান্ডের নির্বাচিত সরকারের অপমানিত হওয়া থেকে আমাদের রাজনীতিকেরা কী শিখেছেন? থাই অভ্যুত্থান ঘটে ২০০৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার জনপ্রিয়তা কম ছিল না। অথচ পাঁচ বছরের মেয়াদ পুরো করার আগেই তিনি বিতর্কিত হন, দুর্নীতিগ্রস্তের তকমা তাঁর ললাটে অঙ্কিত হয়। বৌদ্ধ-অধ্যুষিত দেশটির প্রথম মুসলিম সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল সোনধিকে নিয়োগ করে থাকসিন প্রশংসা কুড়ান। অথচ এই জেনারেলই তাঁকে অপসারিত করেন। কিন্তু ক্ষমতার লোভেই তিনি তা করেছিলেন, সেই অভিযোগ জোরালো হয়নি। বলা হয়, থাই ক্যু আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার মতো সহিংস নয়। মৌলিক অধিকারও খর্ব করে না।
ব্যাংককে যেদিন সেনা অভ্যুত্থান ঘটে, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেদিন টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সেনানিবাসে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শুধু বাইরে থেকে নয়, দেশের ভেতর থেকেও স্বাধীনতার ওপর আঘাত আসতে পারে। সংঘাত, নৈরাজ্য ও বিভ্রান্তির কারণে এই হামলা হতে পারে। তিনি এ জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যদের সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানান। প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৬ থাইল্যান্ডে সামরিক অভ্যুত্থান শিরোনামে যে খবরটি ছাপা হয়েছিল, তার ঠিক পাশের শিরোনামটি ছিল ‘বিচারপতি হাসানের বাসায় কড়া পাহারা’। বিচারপতি কে এম হাসানকে মানতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এর চূড়ান্ত খেসারত হলো শেখ হাসিনার সম্মতিতে সৈয়দ আবুল মকসুদ বর্ণিত ‘তিনোদ্দীন’ সরকারের উত্থান।
খালেদা জিয়াকে থাই অভ্যুত্থান থেকে শিক্ষা নেওয়ার যে আহ্বান তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা এবং আজকের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তা যথার্থ ছিল বৈকি। সেনা দ্বারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর অপদস্থ হওয়া কারও কাম্য নয়। কিন্তু ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ থাকসিনের জন্য থাইল্যান্ড কান্না করেনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী চুয়ান লিকপাই মন্তব্য করেছিলেন, ‘রাজনীতিক হিসেবে আমরা কোনো ধরনের ক্যু সমর্থন করতে পারি না। কিন্তু গত পাঁচ বছরে থাকসিন এমন কতিপয় অবস্থার সৃষ্টি করেছেন, যা সামরিক বাহিনীকে অভ্যুত্থান ঘটাতে বাধ্য করে। থাকসিনই সংকট সৃষ্টি করেছেন।’ খালেদা জিয়া ও থাকসিনের আসা-যাওয়ার মধ্যে বেশ মিল ছিল। শেখ হাসিনা তা ধরতে পেরেছিলেন।
থাইল্যান্ডের শ্রদ্ধাভাজন বুদ্ধিজীবী আনন্দ পেনিয়ারাচুন। র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত আনন্দ একবার নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি অনেকটা থাইল্যান্ডের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন। থাকসিনের ক্ষমতাচ্যুতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন আনন্দ। ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘১৯৯২ সাল থেকে থাইল্যান্ড চারটি সাধারণ নির্বাচন দেখেছে। অভ্যুত্থানের কোনো চিন্তা বা গুজব মিলিয়ে গিয়েছিল। সেনারা ব্যারাকে ফিরেছিল। এবং তারা সত্যিকারের পেশাদার সেনা হয়ে উঠছিল। এ অবস্থায় যে অভ্যুত্থানটা ঘটল, তার কারণ সরকার একটা চরম দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা ডেকে এনেছিল, বেরোনোর রাস্তাটা শেষ হয়ে গিয়েছিল।’ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ নিউজ উইককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর আরও মন্তব্য ছিল, ‘গত পাঁচ বছরে থাকসিন ও তাঁর দল প্রবল প্রতাপশালী হয়ে উঠেছিল। সমগ্র সরকারি যন্ত্র ও সশস্ত্র বাহিনী এবং পার্লামেন্টের কতিপয় মহলের ওপর থাকসিন তাঁর কর্তৃত্ব সংহত করেছিলেন। সুতরাং আমি মনে করি, একটি অধিকতর আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।’
থাইল্যান্ডের চেয়ে বাংলাদেশ নির্বাচিত সরকারের ধারায় পুনরায় ফিরে আসতে কম সময় নিয়েছে। থাকসিন ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থাই রাজনীতিতে পাগলা ঘণ্টা বেজেই চলছিল। কেবল ২০০৮ সালই চারজন প্রধানমন্ত্রী প্রত্যক্ষ করে। এঁদের তিনজনই এসেছেন সাংবিধানিক আদালতের ডিক্রিতে। থাকসিনের আর ফেরা হয়নি। জনপ্রিয়তার মানদণ্ডই নির্বাচিত নেতা হিসেবে দীর্ঘকাল টিকে থাকার রক্ষাকবচ নয়। থাকসিন ক্ষমতাই শুধু হারাননি, দলও হারিয়েছেন। নির্বাচনে কারচুপির দায়ে আদালত থাকসিনসহ ১১১ জন বড় নেতা ও তাঁদের দলকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন। থাকসিনের অনুসারীরা দুবার দল পাল্টিয়ে ২০১১ সালে একটি নতুন দল নিয়ে জয়ের মুখ দেখলেন। থাকসিনের ছোট বোন ২০১১ সালে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন।
দুর্নীতির কালিমা নিয়ে থাকসিন রাজনীতিতে পরিত্যক্ত। বাংলাদেশের নেতা হলে তিনি উতরে যেতেন। এখানে কালি মুছতে বেশি সময় লাগে না। প্রধানত খালেদা জিয়ার অপরিণামদর্শিতার কারণে সেনা হস্তক্ষেপ অনিবার্য হয়েছিল। এর পরের ছয়-সাত বছরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন কিছু ঘটেনি, যাতে বিরোধীদলীয় নেতার উল্লিখিত মূল্যায়ন কোনো সরকারপ্রধানের জন্য একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল ও বিচারকদের বয়স বাড়ানোর সংশোধনীর চেতনা অভিন্ন। সেটা ক্ষমতা। ‘ক্ষমতার লোভ’। রাজনীতিকেরা সেটা স্বীকার করবেন না। বরং মওকা বুঝে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতেই তাঁরা ও তাঁদের চাটুকাররা সিদ্ধহস্ত।
এটা খুবই চিন্তার বিষয় যে সশস্ত্র বাহিনীকে ক্রমাগত রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। এই দুর্মতির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মেঠো বক্তৃতায় কে কত বেশি ক্ষতিকর ভূমিকা রেখেছে, তার একটা প্রতিযোগিতামূলক ফলাফল গবেষণার বিষয় হতে পারে। কিন্তু এ ধরনের মেঠো বক্তৃতার সূচনা করার সুযোগ হাতছাড়া না করা এবং তা থেকে সুবিধা নেওয়ার ঝোঁক বা প্রবণতার লাগাম টেনে ধরার সংযম আমরা দেখি না। গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সেনানিবাসে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাজনিত ছিল বলেই প্রতীয়মান হয়। তাঁর কিছু বক্তব্য ছিল কেবল জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য। যেমন ‘কনিষ্ঠ কর্মকর্তারা যাতে কোনো অপপ্রচারের শিকার না হন, সে জন্য জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার’ করে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কনিষ্ঠদের ‘শ্রদ্ধা ও আনুগত্য জ্যেষ্ঠদের অর্জন করতে হবে।’ এ ধরনের বিবৃতি জনসমক্ষে আসার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
অতীতেও আমরা দেখেছি, সেনানিবাসে আয়োজিত পেশাদারি অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধানেরা পরোক্ষভাবে হলেও দলীয় প্রতিপক্ষের উদ্দেশে ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন। যেমন প্রধানমন্ত্রী ওই সমাবেশে আশা প্রকাশ করেন যে সেনাবাহিনী তাদের সর্বশক্তি দিয়ে যেকোনো ‘অসাংবিধানিক কিংবা অগণতান্ত্রিক কার্যক্রম’ প্রতিহত করবে। তাঁর আহ্বান ছিল ‘সর্বোচ্চ সতর্কতায় নিজেদের সজাগ রাখুন, যাতে সেনাবাহিনীর ওপর ভর করে কেউ ক্ষমতা দখল করতে না পারে।’
তারিখটি মনে নেই। সময়টা ১৯৯৪-৯৫ সাল হবে। সিলেটের এক জনসভায় দেওয়া আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেই খবরটিও সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিতে অনমনীয় বিএনপিকে ঘায়েল করতে সেটাও একটা ‘উসকানি’ ছিল। খবরটি বিদেশি একটি পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়েছিল এবং সেটির ক্লিপিং সম্ভবত হংকং মিশন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বিস্মিত লেখক আওয়ামী লীগের একজন বড় নেতার কাছে জানতে চান, এটাই কি আওয়ামী লীগের অবস্থান? তিনি ত্বরিত উত্তর দেন: আলবৎ! মির্জা ফখরুলের মতো বলেননি, উসকানি নয়, প্রশংসা।
বগুড়ায় বিএনপি নেত্রীর দায়িত্বহীন উক্তির পর তাঁদের পলায়নপরতা দেখার মতো। অথচ এখানে অনুশোচনার কিছু নেই! জাতীয় ভান্ডার তো মহাসমৃদ্ধ। প্রতিপক্ষের ভান্ডার থেকে এ রকমের বা কাছাকাছি কোনো দৃষ্টান্ত খুঁজে বের করলেই হলো। খারাপের সঙ্গে খারাপের তুলনার একটা আত্মঘাতী প্রক্রিয়া চলছে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ভারে চিড়েচ্যাপ্টা মির্জা ফখরুল বেচারা। কেমন ডাহা মিথ্যা বলছেন। তবে প্রহসনের বিষয়, বিএনপির চেয়ারপারসনের নিন্দনীয় উসকানির দায়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরে প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞাতসারে কিংবা কথিতমতে অনাগ্রহী প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিচ্ছেন সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি তথাকথিত ‘জনতার মঞ্চের’ অনুঘটক। সেখানে অবশ্যই ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ গুরুতর উপাদান ছিল। এর সবটাই ‘রাজনৈতিক’ তবে সমাজ-রাষ্ট্রের জন্য বিষাক্ত। আশা করব, সব পক্ষই সেনাবাহিনীকে নিয়ে রাজনৈতিক মেঠো বক্তৃতা পরিহার করবে। এর আগে ব্যর্থ ক্যু চেষ্টার সঙ্গে বিএনপিকে কেবলই মেঠো বক্তৃতায় অভিযুক্ত করতে দেখা গেছে। কোথাও আইনের লঙ্ঘন হলে আইনের স্বাভাবিক গতিতে তার প্রতিকার হোক। কিন্তু বক্তৃতাবাজি পরিবেশ দূষিত করে। সেনাবাহিনীকে অহেতুক বিব্রত করে।

পাঁচ মাসে ৪০০ বাস-ট্রাকে আগুন, ৩০০০ ভাঙচুর

হরতাল ও রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হচ্ছে দেশের পরিবহন খাত। গত নভেম্বর থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত সময়ে সারা দেশে প্রায় ৪০০ যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে প্রায় তিন হাজার যানবাহন। নিরাপদ বাহন ট্রেনও নাশকতার তালিকা থেকে বাদ যায়নি। ৯২টি হামলা হয়েছে রেলের ওপর। পুলিশের ওপর হামলার পাশাপাশি তাদের যানবাহনও পোড়ানো হয়েছে। পোড়ানো হয়েছে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িও।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাস ও ট্রাক মালিক সমিতি, পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের হিসাবে গত বছরের নভেম্বর থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত ৩৫৬টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে মার্চের ১৮ দিনেই পোড়ানো হয়েছে ১২৪টি যানবাহন। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ৭১টি, জানুয়ারিতে ৪৪টি, গত বছরের ডিসেম্বরে ৮৩টি ও নভেম্বরে ৩৪টি যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে যানবাহন পোড়ানোর ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। বাস-ট্রাক মালিক সমিতি ও বিআরটিএর করা এক হিসাবে দেখা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ মার্চ পর্যন্ত চার দিনের হরতালে সারা দেশে শুধু বাস-ট্রাক পোড়ানো ও ভাঙচুরে ১৮ কোটি টাকার সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।
ডিসেম্বর থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত ১৪ দিনে বাস পোড়ানো ও ভাঙচুরের কারণে বিআরটিসির ক্ষতি তিন কোটি ৩৯ লাখ টাকা। বগি, রেললাইন ও স্টেশনে আগুনের ফলে ২ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্ষতি হয় নয় কোটি ৩৯ লাখ টাকার।
এর বাইরে প্রতিদিন ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ইজিবাইক, কিংবা স্থানীয়ভাবে পরিচালিত বিভিন্ন যানবাহন পোড়ানো কিংবা ভাঙচুরের শিকার হলেও সেগুলোর আর্থিক ক্ষতির হিসাব পাওয়া যায় না।
বিআরটিএ এবং বাস ও ট্রাক মালিক সমিতির হিসাবে, শুধু ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত সময়েই সারা দেশে ৯৫৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আগুন দেওয়া হয় ১৩০টি বাস-ট্রাকে। মূলত পত্রিকায় প্রকাশিত খবর ধরেই গত প্রায় পাঁচ মাসে তিন হাজারের মতো গাড়ি ভাঙচুরের হিসাব পাওয়া যায়।
আর পুলিশের হিসাবে, গত সাড়ে চার মাসে তাদের ১২৯টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৩৭টি। জামায়াত-শিবিরের হাতে আট পুলিশ সদস্য নিহত এবং পাঁচশ র বেশি আহত হয়েছেন।
আর ফায়ারব্রিগেড জানিয়েছে, আগুন নেভাতে গেলে তাদের চারটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে দুটি।
পোড়ানো এবং ভাঙচুর ছাড়াও হরতাল কিংবা সহিংসতার সময় অলস বসে থাকার কারণে বেসরকারি বাস-ট্রাক মালিকেরা দৈনিক গড়ে ৫৪ কোটি টাকা মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন। বিআরটিসির হিসাব হলো, সব গাড়ি না চললে প্রতিদিন তারা ৩০ লাখ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হয়। আয় থেকে বঞ্চিত হন চালক ও শ্রমিকেরা।
এরপর গত সোমবার চট্টগ্রামে জামায়াতের ডাকা হরতালে এবং গতকাল স্বাধীনতা দিবসেও ঢাকাসহ সারা দেশে চোরাগুপ্তাভাবে যানবাহন ভাঙচুর ও পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে।
চলমান সহিংসতা যে অন্য রাজনৈতিক কর্মসূচির তুলনায় বেশি ধ্বংসাত্মক, তার প্রমাণ মেলে বিভিন্ন স্থানে থামিয়ে রাখা গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা থেকে। বিশেষ করে হরতাল-সমর্থকেরা আগের দিন থেকেই চড়াও হওয়ার কারণে অনেকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় ভাঙচুর ও আগুনের শিকার হয় যানবাহন। যাত্রীর জানমালের পরোয়াও করছেন না এই তথাকথিত রাজনৈতিক কর্মীরা।
গত ১৮ মার্চ থেকে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল শুরুর আগের দিন বিকেলে কল্যাণপুরে পার্ক করা অবস্থায় সংগ্রাম পরিবহনের দূরপাল্লার একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। কোনো রকমে দৌড়ে প্রাণ বাঁচান চালক-শ্রমিকেরা। এর আগে ঈগল পরিবহনের একটি বাস রাতে মালিবাগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে বাসে ঘুমিয়ে থাকা চালকও পুড়ে মারা যান।
এভাবে যানবাহন পোড়ানো ও ভাঙচুরের ঘটনায় কত যাত্রী আহত হয়েছে, সে হিসাব কোথাও পাওয়া যায়নি।
গত বছর জানুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত ৫৪ দিন হরতাল হয়েছে। এর মধ্যে দেশব্যাপী হয়েছে ২৪ দিন। নভেম্বর থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত পাঁচ মাসেরও কম সময়ে হয়েছে ৩৩টি হরতাল। এই পাঁচ মাসের হরতাল কিংবা বিক্ষোভ কর্মসূচিতেই আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। এর সবগুলোর সঙ্গেই জামায়াত-শিবির ও বিএনপি জড়িত ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা দাবি করেছে।
হরতাল ছাড়াও জামায়াত ও বিএনপির বেশ কিছু বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সহিংসতা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
শুধু চার দিনের ক্ষতি: গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত চার দিনের হরতালের ক্ষয়ক্ষতির একটা হিসাব তৈরি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি। এই হিসাব বিআরটিএর কাছেও জমা দিয়েছে তারা। ওই চার দিনের হরতালে সারা দেশে ৮৯টি বাস-মিনিবাস পোড়ানো হয়। এর মধ্যে ঢাকায় ২৫টি, রাজশাহীতে ২০টি, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ১৬টি এবং রংপুরে ১০টি। পুড়ে যাওয়া বাস-মিনিবাসের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় নয় কোটি টাকা। ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে ৫২৫টি এবং ক্ষতির পরিমাণ দুই কোটি ৬২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে বাস-মিনিবাসে ক্ষতি সাড়ে ১১ কোটি টাকা।
ওই চার দিনে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পোড়ানো হয় ৪১টি এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে ৪৩০টি। ক্ষতি প্রায় ছয় কোটি ২৫ লাখ টাকা।
সব মিলিয়ে বাস-মিনিবাস ও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পোড়ানো এবং ভাঙচুরের কারণে চার দিনে ক্ষতি হয়েছে পৌনে ১৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, গাড়ি চালালে পোড়ানো হয় কিংবা ভাঙচুরের শিকার হতে হয়। আর বন্ধ রাখলে আয় না করেই ব্যাংকের সুদ এবং শ্রমিকের বেতন গুনতে হয়। এখন বিকল্প কিছু খুঁজে বের করতে হবে রাজনীতিকদের।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি মাহবুব চৌধুরী বলেন, হরতালে ক্ষতি পোষানোর জন্য তাঁদের ভাড়া বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। আগে দিনাজপুর থেকে প্রতি বর্গফুট পাথর পরিবহন করতেন ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। এখন ৬৫ টাকা নিতে হচ্ছে।
বিআরটিসির ক্ষতি: হরতালে বিআরটিসির বাস পোড়ানো ও ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষতি হয়েছে তিন কোটি ৩৯ লাখ টাকার। এ সময়ের মধ্যে গাজীপুরের শিববাড়িতে বিআরটিসির নতুন একটি দ্বিতল বাস পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাসটির দাম প্রায় ৮০ লাখ টাকা।
১৪ দিনে বাস চলাচল না করার কারণে লোকসানের ভারে নিমজ্জিত সংস্থাটি প্রায় চার কোটি ৩১ লাখ টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। ভাঙচুর, বাস পোড়ানো এবং রাজস্ব হারানোসহ বিআরটিসির মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সাত কোটি ৭০ লাখ টাকা।
বিআরটিসির উপমহাব্যবস্থাপক খান কামাল বলেন, বিআরটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয় আয় থেকে। ঋণের সুদ দিতে হয় সেখান থেকেই। বাস পোড়ানো হলে কিংবা চলাচল বন্ধ থাকলে বেতন দেওয়াও কঠিন হয়ে যায়।

নাশকতাকারীদের দেখামাত্র গুলি!

মহাসড়কে বা রেলপথে যারা অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাবে, তাদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বিরোধী দলের হরতাল এবং দেশের চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বনানীর বাসভবনে জরুরি এ বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত সহিংসতা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি প্রথম আলোকে জানান, হরতালের সময় যারা ভাঙচুর করবে, গাড়ি পোড়াবে, রেললাইন উপড়ে ফেলবে শুধু তাদেরই নয়, যারা হরতাল ডেকেছে এবং যারা এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে মদদ দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে। এ জন্য সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, যারা হরতালের নামে মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে, জানমালের ক্ষতি করবে, মহাসড়ক ও রেলপথে আগুন দেবে, ভাঙচুর করবে তাদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি, ফৌজদারি ব্যবস্থাসহ কঠোর পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হামলাকারী ও অগ্নিসংযোগকারীদের দেখামাত্র গুলি করা হলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে কি না—জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের মানবাধিকার রক্ষা করার জন্য সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে তাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে না। তিনি বলেন, ‘তারা হরতাল দিয়ে গাড়ি পোড়াবে, মানুষ মারবে আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বসে থাকবে, তা তো হবে না। আমরা মহাসড়ক, রেলপথ উন্মুক্ত রাখতে চাই। যারা বাধা দেবে, রাস্তাঘাটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান দেখামাত্র গুলির সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদি এমন সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তবে আমি একমত নই। সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নানাভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, নানা কৌশলে তাদের প্রতিহত করা যেতে পারে। কিন্তু গুলি করা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।’ তিনি বলেন, সরকার চাইলে তাদের বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করে আটক করে রাখুক। কিন্তু চরম বাড়াবাড়ি করা যাবে না।
গতকালের বৈঠকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়েও আলোচনা হয়। রাজধানীতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য এসব নেতাকে দায়ী করা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা ও বেআইনি সমাবেশ প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া স্বাধীনতাবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী শক্তির ত্রাস সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় কৌশল প্রয়োগের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি মনে করি, এ ধরনের সিদ্ধান্ত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। সম্পদ এবং ব্যক্তির প্রাণ রক্ষার জন্য যতটুকু প্রয়োজন শুধু ততটুকু ক্ষমতার প্রয়োগ করতে পারবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যেকোনো ব্যক্তির ধ্বংসাত্মক কাজ নিবৃত্ত করার জন্য আইনগত প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে, এরপর সতর্ক করা যাবে। কিন্তু জীবনহানি করা যাবে না। কোনোভাবেই বিনা বিচারে শাস্তি দেওয়া যাবে না।

Tuesday, March 26, 2013

ভারতে আবার চলন্ত গাড়িতে গণর্ধষণ!

এবার ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসরে চলন্ত গাড়িতে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার রাতে ২১ বছর বয়সী এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। আজ মঙ্গলবার ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র খবরে এ কথা জানানো হয়।
পুলিশ সুপার হরজিত্ সিং ব্রার ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’কে বলেন, পুলিশের কাছে ওই তরুণীর অভিযোগ, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনি অমৃতসর বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন ধাতব-ছাই রঙের একটি গাড়ি তাঁর কাছ ঘেঁষে দাঁড়ায়। আরোহীদের একজন জোর করে তাঁকে গাড়ির ভেতরে তুলে নেন।
ওই নারীর ভাষ্য, গাড়িতে এ সময় দুজন ব্যক্তি ছিল। একজন চালক ও অন্যজন গাড়ির পেছনের আসনে বসা ছিল। গাড়িটি কিছু দূর যাওয়ার পর আরেকজন গাড়িতে ওঠে। গাড়িটি ভারকার দিকে যাওয়ার পথে চতুর্থজনকে তুলে নেয় তারা।
পুলিশ সুপার জানান, পুলিশকে দেওয়া ওই নারীর ভাষ্যমতে, চলন্ত গাড়িতে চারজন তাঁকে ধর্ষণ করে। পরে গাড়িটি সেনানিবাস এলাকায় যায়। ওই নারীকে চিকিত্সা-সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তবে এ ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি বলে জানিয়েছে।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হয়ে এক মেডিকেলছাত্রীর মৃত্যু হয়।

‘আজ দোয়া পড়ে দেইনি বলেই পুড়তে হলো মুসাকে’

‘প্রতিদিন সকালে মুসা বের হওয়ার সময় দোয়া পড়ে দেই। আজ মুসা আমাকে ঘুমে রেখে চুপচাপ বেরিয়ে পড়ে। আজ দোয়া পড়ে দেইনি বলেই আগুনে পুড়তে হলো মুসাকে! আমি সরকারের কাছে বিচার চাই, বিচার চাই আল্লাহর কাছে।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন ইজিবাইকের চালক মোহাম্মদ মুসার (২৫) মা বিবি সখিনা।
গতকাল সোমবার জামায়াতের ডাকা হরতাল চলাকালে সকাল নয়টায় চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকায় যাত্রীবাহী ইজিবাইক নিয়ে রাহাত্তারপুলে যাচ্ছিলেন মুসা। নূরনগর হাউজিং সোসাইটির সামনে একদল যুবক তাঁর গাড়িটি থামান।
প্রত্যক্ষদর্শী মিজানুর রহমান বলেন, যুবকেরা প্রথমে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে পেট্রল ঢেলে গাড়িতে আগুন দেন। মুসার গায়েও পেট্রল দিয়ে আগুন দেন। মুসার বাড়ি পার্শ্ববর্তী পূর্ব বাকলিয়া ওয়াজেরপাড়া এলাকায়। ফলে অনেকেই তাঁকে চিনে ফেলেন। তাঁরা আগুন নিভিয়ে মুসাকে উদ্ধার করেন। ততক্ষণে গায়ের পোশাক পুড়ে যায়। বাসায় নেওয়া হয় অজ্ঞান মুসাকে। পরে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসকেরা যখন চিকিৎসা দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর শরীর ছিল নিস্তেজ, কথা বলতে পারছিলেন না। তিনি এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আশিকুর রহমান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুসার শরীরের ৭৫ শতাংশই দগ্ধ। এত বেশি পোড়া রোগীর চিকিৎসাও বেশ জটিল। আমরা তাই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
পাঁচ বোন, তিন ভাই আর মা-বাবাকে নিয়ে ১০ জনের সংসারে মুসাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দুই ভাই ছোট। বাবা আবদুল মোনাফ (৫৫) অসুস্থ, কাজ করতে পারেন না। বোনদের কারও বিয়ে হয়নি। মুসার মা সখিনা বলেন, ‘মুসা ছোটবেলা থেকে নিয়মিত নামাজ আদায় করত, দাড়িও রেখেছিল। ওরা আমার ছেলের দাড়ি পুড়িয়ে দিল কেন?’ বাবা আবদুল মোনাফ বলেন, ‘আমার ছেলে বাঁচবে কি না আল্লাহ জানেন। যারা এভাবে মানুষ খুন করে, আমি তাদের বিচার চাই। অভাবের কারণে ছেলে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিল। তা না-হলে বের হতে হতো না।’
হাসপাতালে মুসাকে দেখতে আসা আত্মীয়রা বলেন, মুসার চিকিৎসার ভার বহনের খরচ পরিবারের নেই। কাল কীভাবে তাদের খাবার জুটবে, তা কেউ জানে না। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিকেটাররা চোরাগোপ্তাভাবে এই হামলা চালিয়েছে। এর পরও আমরা হাতেনাতে তিনজনকে ধরেছি।’

আজ গুগল সেজেছে বাংলাদেশের লাল-সবুজে

আজ ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস; আর ঠিক এই মহান দিনটিতেই প্রথমবারের মতো ডুডলের মাধ্যমে বাংলাদেশকে তুলে ধরল গুগল।
২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গুগলের হোম পেজে সবুজের পটভূমিতে বাবা মায়ের সঙ্গে একটি শিশু ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এ ডুডলে ফুটে উঠেছে। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহর থেকেই এ বিশেষ ‘ডুডল’টি গুগলের হোম পেজে প্রদর্শিত হচ্ছে।
বিশেষ বিশেষ দিন, ঘটনা ও ব্যক্তিকে নিয়ে হোমপেজে বিশেষ ‘লোগো’ ফুটিয়ে তোলে গুগল। গুগলের এ বিশেষ লোগোকে বলা হয় গুগল ডুডল।
১৯৯৮ সাল থেকেই গুগলের হোমপেজে এই বিশেষ ডুডল প্রদর্শনের চল শুরু হয়েছে। তবে ১৫ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম গুগল বাংলাদেশকে নিয়ে কোনো ডুডল তৈরি করল। অবশ্য বিশেষ এ ডুডলটি শুধু বাংলাদেশের ডোমেইন হোমপেজ গুগল ডটকম ডটবিডিতে দেখা যাচ্ছে।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পতাকা গুগল হোমপেজের বিশেষ ডুডলের মাধ্যমে তুলে ধরেছে গুগল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে বিশেষ ডুডল তৈরি করায় সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক, বিভিন্ন ব্লগ, টুইটারে অসংখ্য ব্যবহারকারী গুগলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ডুডল কি?

বিভিন্ন ব্যক্তি, ঘটনা, বিশেষ দিন ও বিজ্ঞানীদের আশ্চর্য ঘটনা নিয়ে মজার ও অবাক করা বিশেষ লোগো অনুসন্ধান সেবাদাতা গুগলের হোমপেজে ফুটিয়ে তোলা হয়। বিশেষ এ লোগোটিই ‘ডুডল’ নামে পরিচিত।

কীভাবে এল ডুডল?

১৯৯৮ সালের আগেই গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন গুগলের বিশেষ লোগো পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, গুগলের বিশেষ মজার লোগোর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ঘটনা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া আর প্রতিটি লোগোতে গুগলকে বিশেষভাবে তুলে ধরা। ২০০০ সালে ল্যারি পেজ, সের্গেই ব্রিন ও গুগলের ওয়েবমাস্টার ডেনিস হুয়াং মিলে ‘বাস্তিল ডে’র বিশেষ ডুডল তৈরি করেছিলেন। শুরুর দিকে বিশেষ বিশেষ ছুটির দিনগুলোর ডুডল তৈরি করত গুগল। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও গুগলের বিশেষ ডুডল জনপ্রিয় হতে শুরু করে। এরপর থেকেই ডুডল তৈরিতে বিশেষ আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছিল গুগল কর্তৃপক্ষ।

গুগলের ডুডল সংখ্যা

এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি ডুডল তৈরি করেছে গুগল। তবে বাংলাদেশকে নিয়ে এবারই প্রথম কোনো ডুডল তৈরি করল অনুসন্ধান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি।

গুগল ডুডল কারা তৈরি করে?

গুগলের একদল কর্মী মিলে আলোচনার মাধ্যমে তৈরি করে গুগলের বিশেষ বিশেষ ডুডল। তবে ডুডল তৈরির ধারণা বিভিন্ন উত্স থেকে গ্রহণ করে। গুগল ব্যবহারকারীদের আগ্রহ ও গুগলের কর্মীদের ধারণা থেকেই ডুডল তৈরি হয়। গুগলের ডুডলারস বা ইলাস্ট্রেটরের একটি বিশেষ দল ডুডল তৈরি করে থাকে।

কারা ডুডলের জন্য আবেদন করতে পারেন?

গুগল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিদিন অসংখ্য ডুডল তৈরির আবেদন জমা হয়। ব্যবহারকারীরাই এ আবেদন ইমেইলের মাধ্যমে গুগলকে পাঠান। ইমেইল ঠিকানাটি হচ্ছে proposals@google.com

বাংলাদেশের বিশেষ লোগোটির পেছনে

বাংলাদেশের অসংখ্য গুগল সার্চ ব্যবহারকারী দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশকে নিয়ে ডুডল তৈরির আবেদন করছিলেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ডুডল তৈরি করতে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটসহ অসংখ্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাও গুগলের কাছে আবেদন করেছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি নিয়ে সাড়া না দিলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৬ মার্চ এ ডুডল শুভেচ্ছা জানিয়েছে গুগল।

খুশির খবর

২৬ মার্চের প্রথম প্রহরের শুরুর দিকে গুগলে সার্চ করার সময় বাংলাদেশকে নিয়ে বিশেষ একটি লোগো চোখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাশেদুল ইসলামের। রাশেদুল জানিয়েছেন, আমার অসম্ভব ভালো লাগছে। গুগলকে ধন্যবাদ। আশা করব বাংলাদেশের বিশেষ দিন ও বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ভবিষ্যতেও ডুডল তৈরি করবে গুগল।

Monday, March 25, 2013

একজন ডিআইজি, তিন এসপি ও ১২ ওসিকে প্রত্যাহার

জামায়াত-শিবিরের সাম্প্রতিক সহিংসতায় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে পুলিশের একজন ডিআইজি, তিনজন পুলিশ সুপার এবং ১২ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র এ তথ্য জানায়। তাঁরা হলেন, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মেজবাহ উদ্দিন, গাইবান্ধার পুলিশ সুপার এ কে এম নাহিদুল ইসলাম, সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান, দিনাজপুরের পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য এবং ১২টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।

ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক থেকে বিরত থাকে পুরুষ

বিবাহিত নারীর সঙ্গে অনুচিত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা পুরুষের জীবনে বিরল নয়। তাঁরা প্রতিবেশী বা অন্য কারও স্ত্রীর প্রতি ঘটনাচক্রে দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন। কিন্তু ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে এ ধরনের সম্পর্ক তৈরি থেকে পুরুষেরা সাধারণত বিরত থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসে অবস্থিত মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএমএসএল) একদল গবেষকের দাবি, সম্ভবত মানসিক গঠনের কারণেই তাঁরা বন্ধুর প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকেন।
ইউএমএসএল কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মার্ক ফিনের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণের পরিমাণের তারতম্য নিয়ে গবেষণা করেন। মানসিক অবস্থাভেদে পুরুষের শরীরে এই হরমোন নিঃসরণে তারতম্য হয়। হিউম্যান নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্ভাব্য প্রেমিকা বা শত্রুর স্ত্রীর সান্নিধ্যে অবস্থানকালে পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায়। কিন্তু ঘনিষ্ঠ কোনো বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে অবস্থানকালে টেস্টোস্টেরন নিঃসরণের পরিমাণ তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। এমনকি সুযোগ পেলেও বন্ধু এবং বন্ধুত্বের প্রতি শ্রদ্ধা অটুট রাখার স্বার্থে অনুচিত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া থেকে পুরুষ নিজেকে সংযত রাখেন। গোটা ব্যাপারটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবেই নিয়ন্ত্রিত হয়।
গবেষকদের দাবি, মানুষের প্রকৃতিগত এই বিশ্বস্ত মানসিকতাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য জাতিসংঘ বা ন্যাটোর মতো সংগঠনও মানুষের এই মনস্তাত্ত্বিক কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে।

নারীকে আবেদনময়ী দেখালেই পুরুষ ধর্ষণ করবে?

দিল্লিতে গত ডিসেম্বরে চলন্ত বাসে মেডিকেলের এক শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ। গত সপ্তাহে মধ্যপ্রদেশে এক সুইস নারীকে গণধর্ষণ। একই সপ্তাহে আগ্রায় হোটেলের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে এক ব্রিটিশ নারীর ধর্ষণ থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা। সম্প্রতি ভারতে সংঘটিত আলোচিত ধর্ষণকাণ্ডের অন্যতম এগুলো।
সরকারি হিসাব মতে, ভারতে প্রতি ২১ মিনিটে একটি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের ব্যাপারে ভারতীয় পুরুষেরা কী ভাবেন? এ প্রশ্নটি মাথায় রেখে ভারতের গোয়া রাজ্যের কয়েকজন ব্যক্তির মতামত জানতে চেয়েছিল ব্রিটিশ সাপ্তাহিক ‘অবজারভার’। মতামত দেওয়া ব্যক্তিদের প্রায় সবার বক্তব্য ছিল, মেয়েদের আবেদনময়ী দেখালে ছেলেরা ধর্ষণ করবে—এটাই স্বাভাবিক।
‘ধর্ষণ একটা সমস্যা। এটা নারীদের দিক থেকেই শুরু হয়। ওরাই পুরুষদের উত্তেজিত করে তোলে।’ বলছিলেন ৩২ বছর বয়সী এক পানশালার মালিক পাপি গঞ্জালেস। মাথা নেড়ে তাঁর কথায় সম্মতি দিলেন পানশালার কর্মী রবিন শ্রীঠা। ২১ বছর বয়সী এ তরুণের বক্তব্য, ‘মেয়েদের আবেদনময়ী দেখালে ছেলেরা নিজেদের আর ধরে রাখতে পারে না।’
২৮ বছর বয়সী অভিজিত্ হারমালকার পেশায় গাড়িচালক। ধর্ষণের ব্যাপারে তাঁর মতামত, ‘ধর্ষণের জন্য শুধু পুরুষকে দোষারোপ করা হচ্ছে। অথচ তরুণীদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কেউ কথা বলছে না। আমাদের এটা বোঝা উচিত যে, রাতের বেলায় মেয়েদের বাড়ির বাইরে যাওয়া উচিত নয়। আমাদের সংস্কৃতি ভিন্ন।’
হারমালকারের ছোট ভাই অবিনাশের (২৪) ভাষ্য, মা-বাবার উচিত বেশি রাতে মেয়েদের বাইরে যাওয়া বন্ধ করা। তাহলে এ ধরনের অপরাধ ঘটবে না।
২৬ বছর বয়সী ভিভরেশ বানাওলিকার একটি প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষক। তিনি বলেন, ‘আমার এক বোন আছে। ও যদি রাতে বাইরে যায়, আমি চিন্তায় পড়ে যাই। সাতটা পেরিয়ে গেলে আমি দুশ্চিন্তায় পড়ি। পুরুষেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’
শুধু সাধারণ মানুষ নয়, ভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও বিশ্বাস করেন, ধর্ষণের দায় শুধুই পুরুষের নয়। চলন্ত বাসে মেডিকেলছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার পর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল অনেকে। এ অবস্থার মধ্যেও মেয়েদের সাজগোজ ও পোশাক নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ছেলে এবং পার্লামেন্ট সদস্য অভিজিত্ মুখার্জি। ভারতের ধর্মীয় গুরু আসারাম বাপু বলেছিলেন, ‘ধর্ষণের শিকার নারী নির্দোষ ছিল না। এক হাতে কখনো তালি বাজে?’
গঞ্জালেস বলেন, দেশে যদি আরও বেশি যৌনকর্মী থাকত, তবে তরুণীদের সমস্যা হয়তো কমত। তিনি বলেন, ‘যৌনকর্মীরা পুরুষদের আনন্দ দেন। বোম্বেতে এমন ২০টি জায়গা আছে, যেখানে আমি মাঝেমধ্যে যাই। ওখানে এমন শত শত জায়গা আছে। কিন্তু গোয়ায় এমন কিচ্ছু নেই। সাদা চামড়ার কেউ যদি নিজের শরীর দেখায়, তবে গোয়াবাসী অনেক কিছু করে।’
তিনি বলেন, ‘নারীদের ওপরে যৌন নিপীড়ন ঠেকানোর একটি উপায় হতে পারে মা-বাবার কড়া শাসন, রাতে বাড়ির বাইরে যেতে না দেওয়া। এটা অনেক দিন ধরে প্রচলিত একটি উপায়। ভারতীয় সংস্কৃতিতে, আমাদের প্রজন্ম বেড়ে উঠেছিল পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে। এ জন্য আমরা মা-বাবাকে সম্মান করতাম। তাঁরা আমাদের যা বলতেন, আমরা তাই করতাম। মা-বাবা চিত্কার করে বলতেন, “এটা কর, ওটা কর”, আমরা করতাম। কিন্তু এখনকার প্রজন্মে ওসব বদলে গেছে।’
হারমালকার বলেন, যে পুরুষেরা বাসে নারীদের ওপরে নিপীড়ন করে, তারা একা থাকে না। তাদের বাঁচানোর জন্য আরও অনেকে থাকে বলেই তারা এমনটা করার সাহস পায়। আবার এমনও হয়, তারা যে ভুল করছে, এটা তারা বোঝে না।
কারখানার শ্রমিক বৃন্দাবন সালগাওকর বলেন, ‘এদের কোনো মেয়েবন্ধু নেই। যদি কোনো মেয়েবন্ধু থাকত, তারা এমনটা করত না। যদি তাদের একটা বোনও থাকত, তাহলেও এমনটা হতো না।’
যাঁদের মত নেওয়া হচ্ছিল, তাঁরা কেউ সমাধানের ব্যাপারে একমত হতে পারছিলেন না। বানাওলিকার বলেন, ধর্ষণ বন্ধের একমাত্র উপায় হলো ছেলেদের কাজে ব্যস্ত রাখা এবং পথ থেকে সরিয়ে নেওয়া। তিনি বলেন, ‘আমি যে কাজ করি, তাতে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। ওসব করার সময় আমার নেই। যদি আপনি তাদের (ছেলেদের) ব্যস্ত রাখেন, তবে তাদের সামলাতে পারবেন। বেকার ছেলেরাই ওসব কাজ করে।’
বানাওলিকার বলেন, ‘যদি তারা (ছেলেরা) কাউকে কিছু করতে দেখে, তাহলে নিজেরাও সেটি করতে চায়। মেয়েদের বেলায়ও এমনটি ঘটে। দিনের বেলা সে সুবোধ বালিকা, কিন্তু রাত হলেই সে বুঝে যায় কী করতে হবে। এ জন্য সে তার বন্ধুদের পটায়।’
সবার মত হলো, মা-বাবা ও স্কুলের উচিত ঠিক-বেঠিক শিক্ষা দেওয়া।
এ মানুষগুলোর কাছে উচ্চশিক্ষার জগিট খুবই আলাদা। তাঁরা মনে করেন, উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলো পাপাচারের আখড়া। অবিনাশ বলেন, ‘কলেজজীবন একেবারে আলাদা। ওখানে যা ইচ্ছা ঘটতে পারে। মেয়েরা যৌনতা সম্পর্কে সব জেনে যায়। একের পর এক ছেলে বদল করে।’
বানাওলিকার বলেন, ‘কিছু কিছু নারী টাকার জন্য এসব করে। ওরা ছেলেটাকে ব্যবহার করে, পরে ছুড়ে ফেলে দেয়। এ জন্য কিছু কিছু ছেলে প্রতিশোধ নেয় (ধর্ষণ করে)। ওদের যদি যৌনকর্ম করতে চায়, কেউ ঠেকাতে পারে না। যদি আপনি যৌনকর্মে লিপ্ত হতে না চান, লোকে বলবে আমি খোঁজা।’
ভারতে যাঁরা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য এ আলোচনাটি আশঙ্কাজনক ও ভীতিকর। গত সপ্তাহে দেশটির লোকসভায় ধর্ষণবিরোধী আইন পাস হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। নারীদের হয়রানি বা উত্ত্যক্ত করার জন্যও কড়া শাসনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ওই আইনে। তবে গোয়ার সমুদ্রতীরে কিছু ব্যক্তির সঙ্গে অবজারভারের আলাপে এতটুকু বোঝা গেছে, যাঁরা যৌন নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে প্রচার চালাচ্ছেন, তাঁদের জন্য খুব বেশি আশা নেই। অবিনাশ বলেন, ‘কিচ্ছু বদলাবে না। প্রতিদিন এসব হচ্ছে। তবু কিছু হবে না। দুনিয়াটা ধ্বংস হলে যদি কিছু হয়!’

২৭ ও ২৮ মার্চ ৩৬ ঘণ্টার হরতাল

আগামী ২৭ ও ২৮ মার্চ সারা দেশে হরতাল ডেকেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট। বুধবার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত টানা ৩৬ ঘণ্টা হরতাল চলবে।
আজ সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হরতালের এ ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল দাবি করেন, ১৮-দলীয় জোটের গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের মুক্তি, ‘গণহত্যা’ বন্ধ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এ হরতাল ডাকা হয়েছে।

হরতালের কবলে দেশ
১১ মার্চ বিকেলে নয়াপল্টনে ১৮ দলের সমাবেশের শেষপর্যায়ে সমাবেশস্থলের কাছে ছয়টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনার পরপরই ১২ মার্চ সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেওয়া হয়।
ককটেল বিস্ফোরণের পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নেন। কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে অভিযান চালিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাদেক হোসেন খোকা, রুহুল কবির রিজভী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুকসহ দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
১২ মার্চ মির্জা ফখরুল, খোকা ও আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ১৩ মার্চের মধ্যে বাকি নেতা-কর্মীদের মুক্তি না দেওয়ায় ১৮ ও ১৯ মার্চ সারা দেশে হরতাল পালন করে ১৮-দলীয় জোট।
৬ মার্চ বিকেলে ককটেল বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে দলের পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। সংঘর্ষে দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। এ ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে এর প্রতিবাদে ৭ মার্চ সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি দেয় বিএনপি। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে ঘোষিত গণবিক্ষোভ কর্মসূচিতে সারা দেশে বাধা ও মিছিলে গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে একই দিন সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করে জামায়াতে ইসলামী। পরে জানানো হয়, ১৮-দলীয় জোটের নামে ওই হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের নেতা সাঈদীর বিরুদ্ধে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ওই দিন সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে জামায়াত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাঈদীকে ফাঁসির আদেশ দিলে সারা দেশে সহিংসতা চালায় জামায়াত-শিবির। একই সঙ্গে এই রায়ের বিরুদ্ধে রোববার ও সোমবার (৩ ও ৪ মার্চ) সারা দেশে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকে দলটি।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৫ মার্চ মঙ্গলবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকেন। বিএনপির ডাকা হরতালে সমর্থন দেয় জামায়াত।